কলিজার ভেতর লাল গালিচা বিছাইছি।
আইসবা? কামরাঙা ফুলের এক জোড়া ঝুমকা,
এক জোড়া বকুলের নূপুর,
আর
একখানা শঙ্খমালা গাঁথি রাখছি আইসবা?
আমি দোতারা বাজাইলে তুমি গান ধইরবা,
চন্দ্রমল্লিকার বাগে জোছনা বইবে,
ডানা মেলে ভাসবা। আইসবা ? আমি দিয়ে যাইতে চাই-
হাজার বছরের

আমরা প্রতিদিন স্বাগত জানাচ্ছি বিবর্তনবাদকে, প্রতি মুহূর্তে গত হচ্ছে আমাদের বর্তমান, প্রতি নিয়ত গমন করছি নবীন পটে। আমরা যা শিখেছি পাঠক্রমে, যা কিছু আমাদের মুখস্থ, জানা অজানায় , ঘুরে ফিরে হাজির হচ্ছি স্মৃতিপটে! সোজা পথ হেঁটে যাচ্ছি, হেঁটে যাচ্ছি বাঁক-

ধূম্রজালে
বুঁজে আছে পথ
বক্র নীলে
নিঃসীম জলদি
অন্তিম শয়নে
রিক্ত তরণী
বিমর্ষ নদী বিষাক্ত নখ
আদিম বুকে
এঁকে দেয় কষ্টের আঁচড়!
অনুক্ত আর্তনাদ
ছুঁয়ে যায়
দীঘল ক্রোধ দিগন্ত অবধি! আহত মন
পরতে
পরতে
অগাধ শূন্যতা নিরঞ্জন মিথ
ব্যাকুল রাতে
বেরিয়ে পড়ে
অজানা পথে
অনিশ্চিত ভবিষ্যত!

বিকেলের বিষণ্ণ চোখ থেকে ঝরে পড়ে লাল অশ্রু
মাটি শ্রমিকের কোদালে এঁটে থাকা মাটি, চিটচিটে বগলে
ছেঁড়া ব্লাউজে প্রতীয়মান সংগ্রামী ইতিহাস!
যুদ্ধ কোন খেলা নয়, স্নান ঘাটে ভেসে যাওয়া বুকের পঙ্কজল
অথবা গুমরে উঠা অন্ত্রের ক্ষুধা… হাহাকার ক্ষুধা বোঝেনা কবিতা
ক্ষুধা বোঝে গ্রাস, ভোগ…… ক্ষুধা বোঝে

আমরা আমাদের স্বতন্ত্র ভাবনা গুলোকে হত্যা করছি স্বৈর নীতির কষাঘাতে।
স্বপ্নগুলো বিক্রি করা হয়েছে সে-ই কবে;
বাস্তবে
আমরা বন্দি হয়ে আছি জন্ম জন্মান্তর। তবে
কেউ কেউ বেচে আছে
বিকৃত রুচিবোধের কাছে নিজেকে বিক্রি করে!
না না আমি একদমই বেশ্যালয়ের কথা বলছি না।
বেশ্যালয় তো সেখানে চলে
যেখানে পুরুষ

তোমাকে চিনেছি আমি
ভোরের শিশির
নৈশব্দের দীর্ঘশ্বাস তুমি
কান্না নিরবধির ছুঁয়েছো কবির অন্তর
আতপ্ত হাতে
যৌবনন্ধ দাবীর দুর্মার
অনল নেভাতে, প্রজ্বলিত চিত্তে বেমালুম
হই মুখোমুখি
সুডোল বুকের উষ্ণতার
দিয়েছো ফাঁকি! নাকি এমনিই তোমার
স্বভাব? মমতার
হাতছানিতে পোড়াও কাবাব।
সারা রাত
নির্ঝর শিশির প্রপাত,
আমি চিনেছি তোমাকে-
বুকের ভেতর বেহিসাব আঘাত।

দায়মুক্তি দিলাম
উড়ে যা পরিযায়ী, নাইবা পেলাম ফিরে
দূর অতীতের ধানসিঁড়ি,
আলের পথে ওম মাখা ঘাসফুলের যৌবন;
যে বুকে তীক্ষ্ণ ঠোঁট ঠুকে ঠুকে
অজস্র কবুতর করেছে শস্য আহরণ-
ধরে নিলাম অসংখ্য রক্ত কণার মত
সঞ্চয়েতে ঠায় নিয়েছে একটি ধ্রুপদী চুম্বন!

প্রায়শই অভিযোগ শুনি
করোটিতে আগুন ধরিয়ে আমি নাকি আত্মখুনি!
গনগনে আগুনে
অনেকেই তো ঢেলেছো জ্বালানি
পুড়িয়েছ অসংখ্য রজনী, জ্বলজ্বলা মদ,
মনে মনে আজো ঢালছো দহনের রসদ! অভিযোগের বিপরীতে
কখনোই করা হয়নি অভিবিয়োগ!
যদিও
পোড়া লাভা স্রোতে ডুবেছে সবুজ উদ্যান
ডুবেছে অবুঝ হৃদয়, বিগলিত জ্যোতস্না রাত
প্রাণের অভ্যন্তর
ডুবে গেছে অসংখ্য স্বপ্ন; কবিতার

বহুকাল পুরোনো তরবারি টি
শান দিচ্ছি নুনে জলে
ধারালো বুকটি চকচক করছে
ঝিলিকমারা চোখে
ব্যাক্ত করছে শাণ ধার
আসলে- এবার সে চলতে চাইছে
চলতে চাইছে রক্তের অববাহিকায়
প্রাণের প্রকোষ্ঠে
এবার ছড়েছে তার কতল কর্মক্ষুধা
শাণের সোপানে
খুনের কলা কৌশলে
বলি হোক জগত সংসার
বলি হোক রক্তবিষ
ঘৃণ্য

বৃথা রক্তপাত,
বৃথা এই ঘাত প্রতিঘাত-বিষাদের জ্বালা
অশ্রুস্নাত
কাজলা চোখে চোখ পড়তেই
ভুলে যাই সব
সমস্ত বিবাদ!
স্বর্ণচাঁপা রোদ্দুর
মিষ্টি গন্ধে ভুলে যাই দহন জ্বালা
এলোমেলো চুলে
সনির্বন্ধ মশগুলে
অনায়াসে ডুবে যায় উষ্ণীষ রাত
চিত্ত উন্মাদ
নির্ঝর
কুয়াশার চাদরে অংকিত চিত্র
মত্তযৌবন
প্রাণপাত!

কার জন্য ঘুম ভাঙ্গে
কার বিহনে জ্বর আসে অঙ্গে? কোঁকড়ানো ভেজা চুলে স্নিগ্ধা লাগে বলে
কার জন্য স্নান করো সাত সকালে? কার জন্য জন্য খুঁজো নীল টিপ
সাঁঝের বেলায় কার অপেক্ষায় জ্বালাও প্রদীপ। কার সাথে ডুবো নিবিড় কথোপকথনে?
ভুলে যাও সকালের নাস্তা দুপুরের খাবার গ্রহণে। কার বুকে আঁকো

তীর ভাঙ্গা আর্তনাদ শুনে
কস্তুরী প্রাচীর ঢেউর অভিমুখে মেলে ধরে বুক
কর্তৃত্ব রুখে দেয়ার মত-সে এক বিপ্লবী চেতনা
জলের শৃঙ্খলে হানা দেয়া এক অসীম তৃপ্তি, সুখ অথচ; যতক্ষণ জল ততক্ষণ সমুদ্র
ততক্ষণই তার শিল্প-অস্তিত্ব!
কে না জানে- ভাঙনে পরিধি বাড়ে, কখনো দূরত্বও
ওপারেপলি মন্থনের

এখানে কোন আড়াল রেখোনা
অথবা
ধর্মের দেয়াল!
কেউ তো আড়াল চায়নি
দ্যাখো নক্ষত্রের ছায়া
শিউলির ঘ্রাণ
কিংবা দেখতে পারো বৃষ্টি
সকাল
সূর্যস্নান
শুদ্ধ ধরা
এরা কেউই
তথাকথিত বিভাজন সৃষ্টি করেনি
কেউইনা! আমরাই মুর্খ
রুক্ষ্ম দেমাক আর-
সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে
মুখে ফেনা তুলি ধর্ম বয়ানে! অথচ
কেউ কখনো খুঁজে দেখেনি আত্মার আলো
বর্ণিত সত্য!
সত্যকে

ঘুমিয়ে আছি
অনাদিকাল থেকে
ঘুমের বুকে
অতল যাপনের তৃপ্তিতে, বিভোর সুখে
ঘুম ঘুম চোখে জাগি মাঝে মধ্যে
ক্ষুধার ‘খ’
তৃষ্ণার ‘ত’
আর মোহের ‘ম’ কে মেখে মেখে
এই আমি গমন করতে থাকি পরম মধুসূদনে
অনন্ত উদ্যানে
তলাতে থাকি
যতক্ষণ না পারদের ফোয়ারা হতে
জন্মনিচ্ছে আত্মস্থ জোয়ার, ত্রিমাত্রিক

মদ্যপ নই
তবু বারবার মাতাল হই পিঙ্গল নয়নে
জানি অ-ঠাই
তবু উদ্ধার পাবার লোভে ঝাঁপ দিই অথই আগুনে!
উন্মাদ হই
যদিও জানি, ফুল হলেও বিষাক্ত হেমলক
মরণ ফাঁদ! তবুও
ওষ্ঠে জেগে রয় আমূল তৃষ্ণা, অগাধ বিষাদ!