তপ্ত নিশ্বাসে উবে যায় ঘুম
অধীর ত্রাসে
মিশে থাকে নিঝুম পর্যটন
অচিন পর্বতারোহণের নেশা;
জ্যোৎস্নার বনে
পুনমী আলো ছায়া
সুগন্ধি মোহন মৃগ
অস্থির
ঠুমরীর তালে নাচে নটরাজ
গোপন মুদ্রায়
স্ফুরিত মধুপের সুক্ষ্ণ কারুকাজ!

মানুষ অন্ধ হয়
হতেই হয়- প্রেমান্ধ, ধর্মান্ধ, ধনান্ধ, ক্ষমতা কিংবা শোষোণান্ধ
কেউ কেউ আবেগান্ধ, কেউ কেউ রাগান্ধ
আবার কেউ কেউ ডুবে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় মোহান্ধতায়
অন্ধত্ব মানুষকে নিয়ে আসে চারিত্রিক এককে-
অন্ধত্বে আত্মস্থ হয়ে উঠা মানুষ গুলো একে একে ধারণ করে
বিশেষ বিশেষণ,
অন্ধত্ব জুড়ে থাকে তাদের জীবনের

চাপা ক্রোধে
চপলা চাপাতি উন্মত্ত করি নৃশংস নৃত্যে
যতক্ষণ না
দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে কাধে চাপানো ক্রোধানল
শানিত বুকে
শোণিতের শীৎকার
মুখরিত শ্লোগান চাপিয়ে
নিংড়ে তুলি অতলের শেকড়, আসল অস্তিত্ব!
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতায় চেপে থাকা ঝড়
মুখোমুখি বেধড়ক হাঙ্গামা, অজস্র শব্দ-স্বর নিড়ানি পেয়ে উঠে আসে বিবস্ত্র যুগ
কালের গহ্বরে ডুবন্ত আবেগ, পুরনো অসুখ! হয়তো

ছাই রঙা মাঠের কোমর্য জুড়ে
কিলবিল করে উঠে শিশিরমন্ডিত শস্যফুল,
আশ্চর্য এক নিসর্গ ধ্বনিতে নেমে আসে সূর্যকণা-
ঐশ্বরিক আদরে আপ্লুত প্রজাপতি, পতঙ্গকুল। আজ তবে ভেস্তে যাক যাবতীয় নিয়ম-নখর
স্নান ঘরে পড়ে থাক বাসি কাপড়,
মহুয়ার ঘ্রাণ মেখে চলো ছুঁয়ে আসি নন্দিত উদ্যান।

আমি আর কই যামু-
যহন আমারে চিনে না আমার খেতি জমিন
যহন আমারে সে ফিইরা চাহে না, কাদা জলে
মাখতে দেয়না- গড়তে দেয়না কস্তূরী হরিণ
আমি এখন কোন ক্ষেতে চালামু হালের লাঙ্গল
চাষের কলা কৌশল মেনে চিনে- কোন আশায়
দিমু নিড়ানি সাফ করমু আগাছার জঙ্গল;
আমি না

আমি অকর্মা বলে- বাকীরা লুটাইতো গাছে ছড়ার মুনাফা সুকৌশলে। বরই পাকলে বরই, জাম পাকলে জাম, গাছে ছড়তে পারতাম না বলে ঢিল ঢাল ছুড়ে যা পড়তো তাই খাইতাম।
ওরা মচকা মেরে খেতো কচকচে পেয়ারা, কাঁচা আম।
তলায় থেকে আমি হুদাই চিল্লাইতাম। শীতের মৌসুমে আমাদের খেজুর গাছ খোদাই হতো।

এসো,
আমাকে ঋণী করো
মনে প্রাণে
যৌবনে প্লাবনে
করো ঋণে ঋণে জর্জরিত,
বিদীর্ণ করো
অঙ্গার করো
করো জীর্ণ কুন্তল, নিষ্প্রভ;
বিবাগী করো
উদগ্রীব করো
এই জন্মে যা শোধ অসম্ভব!
করো ঘায়েল
রুদ্ধ পায়েল
ঋণের শৃঙ্খলে হই দেউলিয়া প্রেমিক
প্রেমে- উদ্যমে
গুপ্ত সঙ্গমে
তোমাতেই করো সুরলিয়াজমের সৈনিক! দাউদুল ইসলাম।

পরমা প্রকৃতিতে
ডুবে যাও
কৃতজ্ঞতায় নতজানু থেকে
তলিয়ে যাও
মিলিয়ে মিশে যাও
মৌন শিলাস্তরের বুকে,
অশ্রু পতনে, রুধীরাক্তের হিমাঙ্কে
শূন্য হয়ে যাও…
বিলিয়ে দাও আপনাকে
অমিয় মধুরত্বে
… তারপর বধির হয়ে যাও!

নির্ঝর ঝর্না
অভিমানে ভুলেছে প্রাণচর্চা, সুরের মূর্ছনা; ভোমরা মেলেছে ডানা,
ফুলেরা লুকিয়েছে পাতার ঘোমটায়
মিটিমিটি হাসছে শ্যামা প্রথম যৌবনা। পাথর গলিয়ে নামছে বরফের স্রোত
বুকে হিমালয় কন্যার গুপ্ত প্রেম
দহনের তোরণ ফেরিয়ে ভিড়ছে সবুজ স্মরণ,
বহুকাল আগের চুম্বন স্মৃতি, প্রবল বরিষণ! আয়োজন যজ্ঞে ব্যতিব্যস্ত সমস্ত পক্ষিকূল,
আরণ্যক মন্থনে

নরক থেকে উঠে আসছে
দাহ্য উত্তাপ
তেজস্বী রোদ্দুরে
নামছে গনগনে রশ্মি
নিটোল বৃক্ষ, নীরব
গোমড়ামুখো পত্র পল্লবে
জমেছে
পৃথিবীর সমস্ত কায়া কালিমা;
বায়ুশূন্য
গনগনে আকাশে জ্বলজ্বলে উষ্মা
চোখ রাঙাচ্ছে মানুষের চারণভূমে
মানুষের পাপে
মানুষের ঘৃণায়
অবর্ণনীয় অভিশাপে!
যেনো
মৃয়মান হয়ে আসছে পৃথিবী
থেমে যাচ্ছে পাখিদের কোলাহল
উধাও বন,বৃক্ষরাজি,তৃণের জঙল
চুকে যাচ্ছে –
জীববৈচিত্র্যের আনাগোনা
মিছে লেনদেন
পতঙ্গভুক
মানুষের মোহ মায়া
চিরন্তন ক্ষুধা তৃষ্ণা…

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে – কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৫, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬), (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ – ভাদ্র ১৪, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ), অগ্রণী বাঙালি

এভাবে ফিরে আসে অতীত,
প্রাচীন ঘোর
নামে শৈল প্রপাত
অন্তরে রঙ্গীন প্রভাবরি ভোর।
সহস্র রজনী কাটে নির্ঘুম
কেটেকুটে রচিত হয় কবিতা
কাটে দ্বিধা, সুধা স্বপ্নচারিতা
কাটেনা কেবল-
তোমাকে দেখার নেশা শ্রুতি মনোহর! এই যে বাজছে শুনি
শঙ্খের চুম্বনে তুমুল শঙ্খ ধ্বনি,
ধ্রুপদ রাগ,
সমুদ্র মন্থনে জেনে গেছি
তোমার সনে আগুনের গোপন প্রণয়!
জলও

বৃষ্টি পতনোন্মুখ পরাগকে উসকে দেয়
স্খলনের নেশা, লাজুক রেণু ঝেড়ে
ধূম্রল আড়ালে খুলে দেয় সঙ্কোচের ফটক,
কামান্ধ প্রলয়ের সৌষ্ঠবে বাজে বজ্রনিনাদ,
তুলে নেয় আদ্রক চুম্বন
ঘামের ঝর্নায় রচনা করে সায়েরি, প্রেম-প্রবাদ! রাগিনীর অক্ষিসারে জ্বলজ্বলে কবিতা,
বৃষ্টির নন্দনে একাকার নদীটির আপন নাগমা
একজীবনের সমস্ত

আমি চলে যাচ্ছি প্রস্থানের পথ ধরে, নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি বাধ্যতামূলক অবসরে
তুমি থাকো দিগ্বিজয়ের নেশায় বুদ হয়ে আরো কিছু স্বপ্ন আঁকো। তুমি একা নও জৌলুস ভরা জলসায় ; তোমাকে রেখে যাচ্ছি ভীড়ের নিভৃতে! অনেকেই ফিরে গেছে আঁধার বনে, কেউ কেউ বেছে নেয়

আজ রোদনের দিন
অশ্রুত কজ্জলে শোকের সাগরে ভাসার দিন
প্রাণের বাঁকে সহস্র ‘রাব্বির হাম হুমা’
কামনার দিন!
ইস্পাত কঠিন চেতনায় পুনঃশপথে লীন হবার দিন! স্মরণ করো সেই ধ্বনি,
চিৎকার- বুকে ছিলো রক্তের জোয়ার
স্মরণ করো সেই তর্জনী, দরিয়ার গর্জন
আরক্ত হুংকার-
ভিড়ছে তরঙ্গ উর্বশী ফণায়, জনস্রোত ;
প্রকম্পিত আসমান জয়