ভগবান কেমন করে গড়েছেন
আমায় অথবা তোমায়,
সে খবর আমার জানা নাই,
সে খবরে আমার কোনদিন ছিলো না মন,
তবে দশ মাস কষ্টের গর্ভধারণ,
খেয়ে না খেয়ে সৃষ্টির লালন পালন,
এ শুধু তোমাতেই পাই, নারী,
মা আমার, গর্ভধারিণী মা।
সৃষ্টির উষা লগ্নে বীজ থেকে গাছ,
মাটির
বলেছিলে পাশে থাকবে সুখে অথবা দুঃখে,
বলেছিলে সম্পর্কের বাঁধনে থাকো বা না থাকো,
আমরা পাড়ি দিবো অনেকটা পথ,
সম্পর্ক বিহীন এক সম্পর্কে আমরা হবো
অনাদি কালের ভেসে বেড়ানো হংসমিথুন।
সেসব কথা এখন শুধুই মনের কড়িকাঠে ঝুলানো অপ্রয়োজনীয় শিকা, হঠাৎ হাওয়ায় মাঝে মাঝে দোল খেয়ে যায় মনের বারান্দায় ।।
সম্পর্কের বাঁধন
আমি প্রতিনিয়ত ভুলে যাচ্ছি,
ভুলে যাচ্ছি আশেপাশের মানুষজন,
ভুলে যাচ্ছি পরিবেশ প্রতিবেশ, চিরচেনা এই দেশ, এই শহর- নগর,
বন্দর, বাজার ঘাট, লোকালয়,
একটা আবছায়া মননে মাঝে মাঝে
দাগ কেটে যায়, মনে হয় একদিন
মানুষ ছিলাম এই ভুবনে। অথচ এখন
আমার শুধুই পরিচয় আমি হিন্দু অথবা মুসলমান
১।
খুব ইচ্ছে ছিলো, খুব জানার ইচ্ছে ছিলো,
তোমার মনের পাঠে আমার মতো এক অল্পদামের মানুষের কতটুকু স্থায়ী, কতটুকু দাগ ফেলা, কতটুকু গভীরে শিকড় গজিয়ে ছিলাম,
তোমার ঐতিহ্যশালী হৃদয়ের গভীরে।
তোমার সাথে আমার পথচলায় ছিলো না
কোন মিছিল, ছিলো না লাল পতাকায় জড়ানো,
পবিত্র শপথ, হাতে
কোন এক আধো অন্ধকার ভোরে,
শিউলী ঝরা সকালে, চলে যাবো অজান্তে,
অন্যলোকে, অন্য ভুবনে।
চলে যাবো নিশ্চয়।
সাদা সাদা শিউলী তে ভরা রাংগা ধুলার পথ,
শিশির ভেজা ঘাসের ডগা,
অথবা রাতভোরে-
ডেকে উঠা কোন এক গৃহস্থের মোরগ,
আমার চলে যাবার সাক্ষী হয়ে রবে নিরবে।
এই ঘর, এই সংসার,
এই রাষ্ট্র, এই রাজনীতি,
এই জন্মে তোমাকে নাই বা পেলাম,
অন্য জন্মে তোমাকে পাবোই পাবো
এমন বিশ্বাসের মুখে ঝাঁটা মেরে,
ভালোবাসার এমন বানীতে না ভুলে,
তোমাকে ভুলেই যাবো এমন কথা ভাবি,
প্রতিদিন, প্রতিক্ষন। আর অস্পষ্টতার ঘেরাটোপে নিজেকে মুড়িয়ে রাখি নিরন্তর।
অথচ প্রতিদিন বেহেয়ার মতো একবার হলেও
ঢুঁ মেরে দেখে নেই তোমার এফবির পাতা,
ইনষ্ট্রোগ্রামের ছবি অথবা
একটা পহেলা বৈশাখ আসে,
একটা নববর্ষের বারতা নিয়ে,
নতুন এক দিনের আশায়,
নতুন এক সুর্যের আলোয়,
নিজেদের রাংগিয়ে নেওয়ার শপথে।
এমন দৃঢ়তায় শুরু হয় প্রভাত ফেরী,
রমনার বটমূল থেকে বাংলার আনাচ কানাচ।
শাসকের রক্তচক্ষু আর দালালের বেঈমানী,
আর সব বাধা ডিংগিয়ে,
এক নদী রক্তের স্রোত পেরিয়ে,
মা
আজকাল হেরে যাচ্ছি,
প্রতিনিয়ত নিজের কাছেই,
হেরে যাচ্ছি বন্ধু – পরিজন,
স্বজন অথবা দুরের চেনা – অচেনা
পরিবেশ প্রতিবেশ থেকে,
বিনয়ে বিগলিত হতে হতে নতজানু হয়ে নিজেকে নিঃশেষ করার বিমোহিত যাদুটোনা,
এসব কিছুই আসে না আমার
এই একগুয়ে যাপিত জীবন প্রবাহে,
হেরে যাচ্ছি তাই, হেরে
তোমার চোখের আলোয় এই বিশ্ব দেখার
লোভে নিজে হতে চেয়েছি অন্ধ,
ভালোবাসার বেসুমার ভালো লাগার জালে
নিজেকে আটকাতে চেয়েছি অবিরাম।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি
মুগ্ধ হতে চেয়েছি বারংবার,
আমি আমার শারিরীক ভালোবাসা,
আমার কল্পনায় থাকা তোমার দেহ সৌষ্ঠব,
নুপুরের মতো নাভি,
কাঠবেড়ালীর মতো আদুরে চঞ্চলতা,
তোমার চকিত চাহনী,
কৃষ্ণপক্ষের
এক বসন্তের কোকিল তার মধুময় গানে
চৈত্রের প্রখরতাকে ছাপিয়ে দিয়ে,
উদাস করা দুপুরকে,
নিয়ে যেতে যায় শেষ বিকেলে।
তপ্ত দুপুর, অস্থির সময় আর এই জ্বালাময় অবসর আর হতাশ ভাবনাগুলো
উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক।
প্রকৃতিতে যখন এলো –
লাল হলুদের রঙের ছোঁয়া লাগা বসন্ত,
চারিদিকে যৌবনের গান,
ক্লান্তিহীন
আজ থেকে একশত বছর আগে,
জন্ম নিয়েছিলে তুমি এই সবুজের দেশে,
শ্যামলিমায় ঘেরা এক সুদুর পল্লী,
পথঘাট চলাচলে নিতান্তই জংলী।
অখ্যাত গ্রামে তুমি এসেছিলে,
এসেছিলে মৃত্যুহীন প্রাণ হাতে নিয়ে,
জন্মভুমি বাংলা, মাতৃভুমি দেশ,
শোষনে খাচ্ছে তখন বেনিয়া বিদেশ।
তুমি এলে বাংলার নদী ঘেরা গ্রামে,
তুমি এলে মধ্যবিত্ত এক
মধ্যরাতের ট্রেন টা হুইশেল বাজিয়ে চলে যায়,
চলে যাওয়ার ক্ষণটায় প্রতিদিন ঘুম ভেংগে যায়,
আর মনে পড়ে তোমাকে,
এক সুতোয় গাঁথা হয়ে গেছে আমার বাঁধাধরা রুটিনে।
একদল সারমেয় প্রতিদিন এই সময়টাতেই কেঁদে
উঠে করুণ বীভৎসতায়,
থেকে থেকে না জানি কোন এক অজানা
শংকায়, কেঁপে যায় উথাল পাতাল।
বুকের ভিতর
প্রতিদিন দেখতে দেখতে বদলে যায় পৃথিবী,
বদলে যায় ষড় ঋতুর ছয়টি
চেনা জানা দিনগুলো,
গ্রীষ্মের প্রখরতা বাড়ে,
বর্ষা আসে নিয়ম অনিয়মের বাইরে,
শরতেও নেই আজ শুভ্র মেঘের আনাগোনা।
হেমন্ত আর হাসে না শীতের আগমনীতে,
শীতের তীব্রতা আর ঘন কুয়াসা ঘেরা সকাল,
বহুদিন দেখা হয় না এই