শখের বশে কবিতা লেখা শুরু, কিন্তু নিজেকে কবি বলে পরিচয় দেন না। প্রচুর বই পড়েন, বই পড়া পছন্দ করেন, শুধুমাত্র কবিতার বই নয় যেকোন বই। আর মাঝে মধ্যে টুকিটাক লেখালেখি। বর্তমানে শখের বশেই সম্পাদনার সাথে যুক্ত আছেন “দ্বিপ্রহর” কবিতা ও গল্প সংকলন এবং “দ্বিপ্রহর” ম্যাগাজিনের সাথে।
প্রিয় কবি জীবননান্দ দাশ, এছাড়া রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, হেলাল হাফিজ, শামসুর রাহমান, সুনীল, আবুল হাসানের কবিতাও প্রিয়। প্রিয় উপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পড়ালেখা ছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, পছন্দ করেন একা একা বেড়াতে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ঘুম আর অপ্রিয় জিনিস ধর্মীয় তর্ক….
-বিশুর পড়ার রুমের পেছনের আম গাছটা
কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে যে, অরুণ।
-কেন, নতুন কুড়াল কিনেছিস নাকি,
না ঐ গাছটার আম টক?
– সে সব কিছু না
– তাহলে?
– আম গাছটার জন্যে জানালা দিয়ে
বিপাশাকে ঠিক মতো দেখা যায় না!
– গাছটা তো তাহলে তোর জন্য
আশীর্বাদ রে, নিরঞ্জন।
– তোর
পীত সাগরের তীরে আবীর রাঙা আকাশটা
যেমন রংধনুর নিশ্চয়তা দেয় না, তেমনি
পৃথিবীর সব কলি শেষ পর্যন্ত ফুল হয় না।
প্রতিটা নতুন সম্ভাবনাই আমাদের
নতুন করে বেঁচে থাকার আশা যোগায়,
তাপমাত্রা যদিও বদলায় ইচ্ছা-অনিচ্ছায়।
সংজ্ঞাহীন অলীক ভাবনায়
যুধিষ্ঠিরও আপন পথ হারায়।
ব্যার্থতা আছে বলেই
মানুষ সামনে এগোয়,
মিথ্যা আছে বলেই
সুখ তব
প্রণয়ে মত্ত মানুষ ঠিকই জানে
মৃত সাপেরও লেজ ধরতে নেই,
মেহেদী-হলুদ কিংবা অগ্নি স্বাক্ষী
ধাপে ধাপে করে পার,
জড়ায় সেই মানুষই আবার
অচেনা এক আলোকিত অন্ধকারে !
আসে মিথ্যার ঝড়
ভাঙে খেলাঘর ;
স্বপ্নগুলো যায় রয়ে
সময়ের সব অপূর্নতায়।
তবুও সেই মানুষই
দেখে নতুন স্বপ্ন,
হাজার আশা-নিরাশার
দোলাচলে
এ শহরের ল্যাম্পপোস্ট গুলো
কখনো ঘুমায় না জানি,
ঝড় – বৃষ্টি – রোদে পুঁড়ে
কাটায় জীবন একাকী,
কখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে
কখনোবা সে নিজেই হয়
এক নিশ্চুপ ইতিহাস।
সকালে যার পায়ের কাছে
বসে খোলা হাট-বাজার
সেখানেই আবার গভীর রাতে
শোনা যায় কাঁচের চুড়ির ঝঙ্কার।
মানুষ আজ রাস্তায় বিকায়
মানুষ মানেই পাপ,
মানুষের কাছেই
মানুষ যে আজ ;
অর্থহীন অভিশাপ
অন্ধকার কোলাহল থামলো বটে,
মানুষ তো আজো হয়নি মানুষ।
নীরবতা তো মৌন সম্মতি নয়
তবে কেন শুনি আর্তনাদ?
ক্রিয়া সমাপিকা কিংবা অসমাপিকা
হলেওবা কী যায় আসে ইতিহাসের,
ঝরাপাতার গল্পতো মর্মরই হয়।
সমুদ্র আছে বলেই
মানুষ হারায় বিশালতার মাঝে,
মরুভূমির তাতে থোড়াই কেয়ার!
পরাজয় আছে বলেই
জয়ী হতে চায় মানুষ,
আবার মৃত্যু আছে বলেইতো
মানুষই সাজায় জীবন
সৌমেনদের বাড়ির পেছনের ঝিলটা
বরাবরই নিস্তব্ধ থাকতো,
কেউ খুব একটা যেতোনা ওদিকটায়।
কালীপুঁজো শেষে
যেদিন স্কুল খুললো,
সেদিন সব মেয়েরা
ছেলেদের ভাই ফোঁটা দিচ্ছে।
চন্দন বাটিটা সামনে আসতেই
হঠাৎ নিরঞ্জনের ঝড়,
অপ্রস্তুত বিপাশার দু’চোখ
তখন জলে থৈ থৈ!
স্কুল শেষে ঝিমমারা বিকেলটায়
শতবর্ষী বটগাছটার নিচে বসে
সেদিন, দেখছি আর ভাবছি
কার ধৈর্য্য বেশি, নিরঞ্জন
না ওই নিঃসঙ্গ মাছরাঙাটার?
ঝিলপাড়ের
পৃথিবীটা গোল থেকে গোলতর
হয়ে যাচ্ছিলো সে সময়, মাঠগুলো
ছুটতো সমান থেকে সমান্তরাল।
তখন আমরা এক সংগেই
ত্রিকোণমিতি করতাম;
“একটি গাছের শীর্ষ বিন্দুতে
সূর্যের অবনতি কোণ ষাট ডিগ্রী,
গাছের উচ্চতা দশ মিটার হলে
ছায়ার দৈর্ঘ্য কত? ”
নিরঞ্জনের দেখাদেখি লিখলাম–
ট্যান সিক্সটি ইকুয়াল টু
উচ্চতা বাই ভূমি
সমাধান প্রায় শেষ
দেখি তখন নিরঞ্জন
একই উচ্চতায় ভূমিহীন,
নির্লিপ্ত চোখ
শেষ কবে চাঁদের ভরা আলোয়,
একাকী হেঁটেছি মনে নেই।
বিপাশার বাড়ির পথ,
অমাবশ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারেও
ভুল হতো না নিরঞ্জনের।
শীতের শেষে শিউলী ঝরা
এক নিঝুম ভোরে-
নিরঞ্জনের হঠাৎ আগমন,
চোখে সারা রাত্রি জাগা ছাপ।
হেতু কি জানতে চাইলাম,
যথারীতি নিরঞ্জন নিশ্চুপ।
ঈষৎ কাঁপা গলায় শুধু বললো-
সারমেয় এনে কি লাভ বল,
বাঁকা লেজটাই শুধু দেখলো
চোখের
– আমার ছুঁড়ির একটা নেশা আছে, জানোস মতি?
– কি নেশা, বাংলা না গাঞ্জা, মজিদ ভাই।
– মসকরা করার কথা কই নাই মতি, রক্তের তিয়াস অনেক আজিবরে মতি, বড়ই আজিব।
ভাড়াটে খুনি হওয়ার আগে থেকেই মজিদের পকেটে ছোট্ট একাট্টা ফ্লোডিং ছুঁড়ি থাকতো। বৈশাখে হাওলাদারদের বাগানের
গৌতম বুদ্ধের ঘর ছাড়ার রহস্যটা
আজো অজানাই রয়ে গিয়েছে,
অনেকটা নিরঞ্জনের না বলা
কথাগুলোর মতোই।
উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শেষে
একে একে বাড়ি ফিরতো সবাই,
শুধু একজন ছাড়া।
চৈত্র-বর্ষার রোদ বৃষ্টি গায়ে মেখে
ছুটতো বিপাশার পেছন পেছন!
দেখে আমরা হাসতাম
ইকোনমিক্স ক্লাস শেষে
একদিন জিজ্ঞেস করে ফেললাম —
‘তোর নিরপেক্ষ রেখায়
বিপাশা পৌঁছুতে আর কত দেরী?’
নিরঞ্জনের