মন ভালো রাখতে ব্রহ্মপুত্রের কাছে এসেছিলাম
এখানেও তিল রাখার মত জায়গা নেই
পঙ্গপালের মত গিজগিজ করা মানুষ
দুই চোখ চার চোখ
কোনটা ছেলে কোনটা মেয়ে কোনটা
বুড়ো আর কোনটা আইবুড়ো বুঝা মুশকিল
লাল ফিতার দৌরাত্মার চেয়েও মেকাপের দাপট বেশি!
সেই কবে পড়েছিলাম- শস্যের চেয়ে আগাছা বেশি
আজ
যে কীর্তিমান মহাপুরুষের জন্ম না হলে বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ থাকতো, তিনিই আমাদের বাঙ্গালি জাতিসত্তার কবি, প্রাণের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার সম্পর্কে অল্প কথায় কিছুমাত্র বলার সাধ্য আমার নেই। এক সমুদ্র জল থেকে এক ‘আজলা ভরে যতটা তুলে
আখাম্বা সময় একদিন একটা গাধা ছিলো
এখন সে দুরন্ত টগবগে ঘোড়া হয়েছে;
ছায়াপথের মায়া ছেড়ে সে এখন আমার
এই শহরে এসে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে!
তবুও আমি পিতলের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ করি
ভাগ্যিস ভাগ্যের চাকা এখন যত্রতত্র ওড়ে
আর আমার বুভুক্ষু সময় কেবলই মাটি খুঁড়ে!
এতোকিছুর পরেও আমার হৃদয় ফুঁড়ে
একটি কবিতার
কলমের নিব ঘষে যে পাখি বের হয়ে আসে
পতপত করে ওড়ে যায় সাদা কাগজের গায়
গায়ের জোরে হয়ত কামড় বসায় কোনো না
কোনো কোরা, আনকোরা পত্রিকার
পাতায়
হয়ত ছাতাও বিস্তার করে বৈসাবি রোদের মাথায়!
আমার কাছে কেনো জানি কেবলই মনে হয়
সে আর যা-ই হোক সে কবিতা নয়;
কথা প্রসঙ্গে এবার ভাদ্রের কথায় আসি
আগে যখন কালে-ভদ্রে ভাত বাসি হতো
এখন বাসি হয় নগদ টাকায় কেনা হাসি
তবুও আমি এই ভাদ্র মাস বড় ভালোবাসি!
আগের দিনে ভাদ্রের গরমে পাকতো তাল
এখন কথায় কথায় গরম হয় মাথার চাল
আগে চুল পাকলে ফকফকা সাদা হতো
আর এখন হয় নিঁখুত কালো অথবা
আজ আর কোনো কবিতা লেখা হয়নি
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে কেবল কাজ আর কাজ
রেললাইনের মতোন একটা সর্পিল জীবন
এতো যে হারে তবুও নেই লাজতবুও
সামনে-পেছনে দলা পাকায় কাজ আর কাজ!
আজ সারাদিন নুন ছিলো না রান্নার ঘর
আমি ইতি যাই উতি যাই কে রাখে খবর
তবু দেবদারু গাছ
রেললাইনের পাশেই চায়ের স্টলে বসে আছি
মাঝেমধ্যে সাপের মতোন ট্রেন আসে-যায়
আমি তাকিয়ে থাকি এই আছি এই না-ই!
এখানে হাজার কিসিমের মানুষও আসে
কেউ কেউ চা খায়—
আর কেউ নাক দিয়েমুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়ায়!
ওড়াতে ওড়াতে মানুষগুলো রঙিন ঘুড়ি হয়
মুখে মুখে কথার খৈ ফুটে
রাজনীতি, সমরনীতি কাঁচাবাজারে ছুটে!
আমি
একদিন বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাওয়া কিছু কথা
আজ বৃষ্টির জলের সাথেই ফিরে এসেছে
দৈবাৎ কোনো শকুনের চোখ পড়েনি
দৈবাৎ কোনো প্রকাণ্ড দেহি চিল ছোঁ মারেনি!!
হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে পড়শির অধিকার
হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে বাপ-দাদার উত্তরাধিকার!
ওদের কারো কারো চুনকাম করা অদ্ভুত মুখ
কেউ কেউ বিপন্ন প্রজাতির গুটি বসন্তে
জন্ম আর মৃত্যু সব সময় মুখিয়ে থাকে
সে ব্রহ্মপুত্রের নাদান চর হোক কিংবা রাজপ্রাসাদ!
কালেভদ্রে কেউ কেউ দ্বিগুণ হয় জন্মসাল
আর কেউ জন্মের আগেই কুড়িয়ে নেয় মহাকাল!
প্রতিটি জন্মের মতো কবিতারও জন্ম হয়
প্রসব বেদনায় শিরোনাম খুঁজে নেয় পাগল পাঠক
শব্দ ও ভাবের কারাগারে যখন হয় সে আটক!
অতঃপর
হামাগুড়ি না দিয়েই যে শিশু হাঁটে সে কতোটা শিশু?
বাবা বলতেন, কালের আগে আগে চলতে শিখো
সবকিছুর মতো কালও নাকি রুপান্তরিত শিলাস্তর!
আমার পাললিক প্রেম মাঝেমধ্যে পথিক হয়
তখন পৌষের চিরকেলে কেবল চাকার শ্লোগান
দাদা বলতেন, সাদ্দামের প্রতিটি আঙুলই এক একটি
স্টেনগান!
আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মতোন শুনে যেতাম উত্তর পুরুষ
অতঃপর পুরো মাঠ
নিস্পৃহ সময়ের কথা খুউব মনে পড়ে
তখন অকবিতারাও বেসুরো গান হয়
নদী আর নারী একই সুরে কথা কয়!
আজকাল দীঘির কালচে জলে নক্ষত্র জ্বলে
জোনাকিরা বেজায় ভয় পায়
ওদের কে বুঝাবে?
যখন সাপ আর ব্যাঙ একসাথে ঘুমায়
তখন মহাবিশ্বের কারো কোনো ভয় নাই!!
তবে ক্ষয় আছে মহাসমুদ্র কিংবা পাহাড়
আজকাল নিজের থেকে নিজেই যখন পালিয়ে বেড়াই
তখন দেখি হাঁচি লুকানোর মত জায়গাও নেই
অথচ সবকিছু আগে যেমন ছিল, এখনো সেই!
তবুও শুন্যতা দিয়ে শুন্যতা ভরাই
তেলাপোকার মতো নিজেকে সান্ত্বনা দিই
নিজেকে ছাড়া আমি আর কাকে ডরাই!
তথাপি মাঝে-মধ্যে কবিতায় জেগে উঠি
রাতদুপুরে নিজেই চেপে ধরি নিজের টুটি!
তখন অভিধানের সব অপয়া