একদিন বেষ্টসেলার হয়ে আগুনও দেখাবে তার সহস্র নিমরাজি শক্তি। পরিচয়হীন
পাখিরা পাশে দাঁড়িয়ে দেখবে, কোনো প্রাণীই জানতে চাইছে না তাদের কুশল।
যারা ভালোবাসার জন্য এতদিন পথে নামতে রাজী ছিল, তারাও গৃহসন্ধানে
ভুলে যাবে পুরনো প্রতিশ্রুতি। এই গ্রামের বিস্তীর্ণ সবুজে কোনো যুদ্ধচিহ্নই আর
খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ কথা
বিজ্ঞাপনের শ্রমগল্প
ডায়লগটা একটা বিজ্ঞাপনের। আমাদের চারদিকে এখন দাদ, বিখাউজ,
কোমরের মোটা দাগ মিইয়ে দেবার বিজ্ঞাপন। আমাদের গোটা পরিকল্পনা
জুড়েই এখন রাজপথ। ফুটপাথ নেই। ফলে হেঁটে যাবার রাস্তা নেই। যারা
গাড়ির মালিক তাদের যাবার পথ আছে। আমাদের নেই। আমরা শ্রমজীবি
মানুষেরা জানি না, শিলাবৃষ্টি আমাদের বোরোধান তলিয়ে নিলে
তুমি অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারো।
‘জল’কে কেউ কেউ কেন ‘পানি’ বলে,
‘গোরস্থান’ কে ‘কবরস্থান’- কিংবা ‘খোদা হাফেজ’কে ‘আল্লাহ হাফেজ’। কেন কেউ
কেউ মাঝে মাঝে ‘তস্কর’ কে ‘লস্কর’ বানিয়ে বাজারে সেরে নিতে পারে মামুলি
বেচাকেনা। ‘বাতাসা’ খেতে গিয়ে যারা ‘বাতাস’ খেয়ে তৃপ্ত হয়ে নগরে ফিরেছিল
আমি তাদের গন্তব্য
কিছুই রেখে যাবো না। শ্লোক, শিলা, শিশ্ন- কিছুই
রেখে যাবো না পৃথিবীর জন্য। এমন কি শিকড়-ও
উপড়ে ফেলে এই চাঁদকে বলবো- তুমি গ্রহণ করো
আঁধারের পরিচ্ছদ- আমি কোনো আলো চাই না আজ,
বরং গণিকালয়ের মধ্যসত্ত্বভোগীর মতো, তারাগুলোকে
পাশে রাখো হে চন্দ্র, তারপর নিজকে বিসর্জনে ভাসাও।
রেখে যাবো না কিছুই। বিচ্ছেদ,
বিপুল আনন্দ নিয়ে ভেসে যায় হেমন্তের ফুল। পাতাগুলো
কাছে দাঁড়িয়ে দেখে ওইসব গমন। আর যে প্রাজ্ঞ আলো
সাথী হবে বলে কথা দিয়েছিল, তারাও পথ পাল্টে
অন্য সড়কে উড়ায় নিশান। রাত্রিচরী পাথর জেগে থাকে একা।
জেগে থাকে অগ্রহায়ণের নক্ষত্র। ঝুমকোলতার ছায়ায়
বিগত মুখ দেখে কান্নারত পাখি ভাবে-
দেখতে কেমন
ফুরিয়ে যায় জেনারেটরের আয়ু। থেকে যায়
মানুষের প্রাণশক্তি, যারা সারারাত দাঁড় বেয়ে নদীকে করেছিল
কাবু, তারাও এসে দাঁড়ায় পাশে- চারদিকে বেজে উঠে
মায়াময় অন্ধকারের গান।
মানুষ অসাধ্য সাধন করে এর আগেও দাঁড়িয়েছে সকল
প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, রুখে দিয়েছে বাণের কালোথাবা।
এবং আঁধারের ছায়ায় দেখেছে প্রিয়তমা রমণীয় ভোর,
আলো ঘরে তুলবে বলে
কয়েকটি বিলাপ গেঁথে গেঁথে মেঘও রেখে যায় তার ভূমিষ্ট ছায়াডোর
পৃথক কোনো স্বার্থ নেই নিমগ্ন মাটিরও,
মেঘ ও মাটি পরস্পরের দেখা পেলে নিমিষেই মিতা হয়ে যায়
সবগুলো মিথ অস্বীকার করে তারা পরে নেয় একই পোশাক।
ভোরের পরিষেবা গ্রহণ করে সেরে উঠে সমগ্র ক্রান্তিকাল থেকে।
নদীরা নিরক্ষর নয়। তাই তারাও
রেখার কাজকারবার
দক্ষ হাতের ছোঁয়া থামিয়ে দেয় সকল ভেঙে পড়া। এই আকাশও
একদিন ভেঙে পড়তে চেয়েছিল ঠিক তোমার সামনে। তুমি মগ্ন
চাহনী দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলে দ্বিতীয় পতন।
যারা রঙ নিয়ে করে রেখার কাজ-কারবার, যোগ বিয়োগ তাদের কাছে সঞ্চয় সমান। পূরণ-ভাগের পরিমাণ বেড়ে গেলে দৃশ্যপটে বদলে যায়
ভাজ্য-ভাজক।
কোনো কথা না বলেই রাত কাছে এলো। অথচ এখনও দুপুর-
কোনো সায় না দিয়েই পাতারা নড়ে উঠলো, আর
পাখিরা জানিয়ে দিল- তারা আর আমার সঙ্গে থাকছে না।
মানুষ একা হলে আশ্রয় নিতো পাতার ছায়ায়,
কথাটা ভুলে গিয়ে আমি ঘাটের দিকে পা বাড়ালাম।
ঘাট সরিয়ে নিল তার ছায়া
পাখিদের নীরবতা
‘ইহা একটি মুদ্রিত ছোটকাগজ’- শব্দগুলো দেখার পরই আমি জেনে যাই
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই গঞ্জে অনলাইন ভার্সনের কোনো অস্তিত্ব
ছিল না। ডিজিটাল ধ্বনি কন্ঠে নিয়ে কোনো কোকিল এখানে গাইতো না
গান। রিমিক্সড গীটার বাজিয়ে কেউ রুদ্ধ করে দিত না সানাইয়ের অপূর্ব
মিলনসন্ধ্যা। পরস্পরকে ভালোবেসে যারা হাত
দিবসকে পাশে রেখে আমি খুঁজি তরল আকাশ
যে আকাশ চিরদিন ছায়া হয়ে থেকে যাবে পাশে,
পাখিদের গানে গানে, পুষ্পদের
স্বতন্ত্র বিন্যাসে
এ জীবন সম্মিলিত- এ জীবন
প্রেমের প্রকাশ।
তোমাকেই ধ্যানী জেনে, পাপড়িগুলো দেবো প্রিয়তমা
অক্ষরের অনুরাগে যে ঋতু অপেক্ষায় থাকে
বসন্তে সুবাস ছড়ায়, বর্ষায় ঢেউচিত্র আঁকে
জলাচলে এই প্রেম চিরদিন রেখে
হে অতীত, হে মেঘের ভবিষ্যত
তুমি উড়ে যাবে বলো না—
ধীর ছায়ার মতো সাথে থাকো এবং
রাখো এই লোকালয়ে পদছাপ, কররেখা, তর্জনী
তালুতে জমে থাকা জলের মতো
টলটলে বারুদ, বিস্ফোরণ-
রাখো সবকিছু সাথে।
আমি আলো জ্বালাবো বলে যেদিন পথে নেমেছিলাম
সেদিন থেকেই তোমাকে বলছি—
আমার চোখ পাহারা দেয়া তোমার কাজ নয়।
তুমি বরং
মূলত স্মৃতিলেখাই মৌলিক মেঘের ছায়া। যেসব ঘটনা
আত্মজীবনীর সাক্ষী হয়ে থাকে, তার পাশাপাশি উড়ে
যায় শাদা শালিকের ঝাঁক। তারা বলে যায়- আমরাও
সাথী ছিলাম বিগত সকল মৃৎশিল্পের। ঝিনুকের
বুকে লুকিয়ে থাকা মুক্তোর মতন, উজ্জ্বল ছিল বেশ-
আমাদের সংসার।
লিখিত আখ্যান নিয়ে যে গোলাপ রৌদ্র সাজায়, মূলত
সেই পর্বই মানুষের মৌলিক প্রেম।
ছাদহীন,
আমার সংগ্রহে এখনও রয়েছে কিছু গোপন পাথর। গায়েবি
ডাক জানা পাখির পালক। আছে কিছু জলরশ্মি— যে জলে
আলোর মশাল হারিয়ে গিয়েছিল একদিন। অপরিচিত নৌকো
তার গলুই ডুবাতে ডুবাতে, রেখেছিল যাত্রীদের নাম লিখে
কাঠের তলানিতে। ফুটো হয়ে ভরে যাওয়া জল,হরণ করেছিল
একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম চুম্বনের দীর্ঘ বিবরণ।
গায়েবি এলেম শিখে যে