যা যা চোখে পড়ছে []
যা অবশিষ্ট থাকছে সবটুকু মেদ। পুষ্টিহীন পাঁজর কিংবা
ধ্যানহীন মুণ্ডুকে আমরা মেধাবী বলবো কী না –
তা বিবেচনা করছি পুনর্বার। দেখছি, আগেই যাদের
মুণ্ডুপাত ঘটেছে, তারা এখনও দখল করে রেখেছে
সংবাদের শিরোনাম। আর যারা জল তুলতে নদীঘাটে গিয়ে,
আর ফিরতে পারেনি- তাদের প্রতিই জগতের
সকল
চারদিকে অপহৃত আনন্দ সন্ন্যাস। সওয়ারহীন ঘোড়ার
ক্ষুর স্পর্শ করছে দ্রষ্টব্য ধাতু। কেতু হাতে আমরা
এগুচ্ছি নবম সূর্যের দিকে, জন্মান্ধ হরিণ যেমন
অরণ্যের ওপাশে খুঁজে সর্বশেষ দাঁড়াবার জায়গা।
অনুসারী গ্রহগুলো একদিন আমাদের
হবে। এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে যেদিন
পৃথিবী থেকে মহাপ্রস্থান করলেন আমার
পিতামহ, সেদিনই প্রথম আমি
অপহরণ করতে শিখি আলো ও
বিসর্গ
অনেকগুলো দাগ পড়ে আছে
অনেকগুলো দাগ,
জলের ভেতরে জমে আছে হীরে
ঘুমের ভেতরে ঘুম
তুমি বললে—
আসলে ওগুলো কিছু নয়
এতোটুকু কামের পরাগ !
আমি আবার তাকালাম
নতুন করে চিহ্নায়নের সূত্র
সাজাবো বলে—
দেখলাম পুরনো মুদ্রার কোণে
লেগে আছে,
সহস্র বছরের পুরোনো বিরাগ !
গহীনের ঘুমসমাবেশ
( চিকিৎসক, লেখক, কবি হুমায়ুন কবির- সুজনেষু )
আমরা হাত রাখছি আগুনের প্রশাখায়। পরখ করছি
যোজন জলবীজ। শীতলতার বিমুগ্ধ চরণ। আর যে
বর্ষা আমাদের জন্য বয়ে আনছে পলি, তার দিকে
তাকিয়ে নবায়ন করছি চোখের জ্যোতি, অক্ষরের ভালোবাসা।
গহীনের জন্য আমরা আয়োজন করছি যে ঘুমসমাবেশ
বৃষ্টিরাও যোগ দিতে চাইছে সেই
মাদুলী ও বৃক্ষমাটি
মাটির নীচ থেকে পাওয়া মাদুলী’টি হাতে নিয়ে দেখি
তাতে কারো নাম লেখা। দেখি-এটি একদিন যে কারও
গলায় ছিল, সেই কন্ঠদাগও লেগে আছে রূপোর গায়ে।
আমি বৃক্ষের শিথান থেকে পৈথানে যাবার জন্য উঠে
দাঁড়াই। এ বৃক্ষটি গতরাতেই কেটে গেছে কেউ! তার
প্রশাখাগুলো সাক্ষী দিচ্ছে, এই বন দিয়ে হেঁটেছে
বদল বিষয়ক
বদলে যাওয়া মানেই বর্জ্যের শেষ তলানিটুকু নয়-
বদলে যাওয়া মানেই- পরে নেয়া নয় পশুত্বের খোলস
বদলাবার নামে যারা পান করতে চাইছে ধুমকেতুর সিগ্রেট
অথবা যারা গাইতে চাইছে দেহদক্ষিণার গান,
তাদের কাছে বদলে যাওয়া মানেই-
গায়ে জড়ানো একটি মৌসুমি হাওয়ার প্রলেপ।
বানর বদলে মানুষ হয়েছে
অথবা মানুষ বদলে হয়েছে পাথর-
এমন
কথা
—————————-
তোমাকে আগুন দেবো, দেবো কৃষ্ণ বরণ রাগ
দেবো- ঘোরের রেখামাখা ঘর, আষাঢ়ের নবীন পরাগ
চাইলে আরও দিতে পারি- উত্থানের আমূল বিরহ
রেখে দিতে পারো যতন করে-এইসব জং ধরা গ্রহ
যা কেউ কোনোদিন ভালোবেসে নেয়নি কাছে
অথবা আকুল হয়ে যে ঝড় ফালগুনে নাচে
ঠিক তার মতোই মহাকাল বুকে নিয়ে যে
আমার জীবনের ভেতর
অনেকগুলো জীবন লুকিয়ে থাকে আমার জীবনের ভেতর
অনেকগুলো সবুজ চারা,জাগিয়ে রাখে এই নবীন চর
অনেকগুলো পাখি নির্বিঘ্নে পালক ফেলে ফেলে
ঢুকে পড়ে অরণ্যে, আশ্বিনের মেঘজোসনাজলে।
যায় কোথায় তারা ! কে লিখে ওড়ার ইতিহাস
কিংবা যারা আজীবন পথে পথে, থাকে মায়াদাস
তাদের ছায়া কি সাথে যায় কবিতার অক্ষরে
যদি প্রয়োজন হয়
যে শাপলা শালুক ফুটে আছে হাকালুকি হাওরে, তাকে সাক্ষী রেখে
আমি লিখতে পারি আমার কবিতা। যে শহীদ মিনারের পাদদেশে
ছায়া রাখছে দুপুরের চড়ুই- কিংবা যে স্মৃতিসৌধের চূড়ায় স্মৃতি
উড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবেশী দোয়েল, আমি তার স্বরসঙ্গীত নিয়েও
লিখতে পারি গানের অন্তরা। অথবা ভৈরবী সুর দিয়ে এই
আধুনিক গান :: আবার পৃথিবীকে আমি
আবার পৃথিবীকে আমি ক্ষমা করে দেবো
যদি তুমি ডেকে নাও কাছে,
আবার চন্দ্রের দেশে স্মৃতি রেখে যাবো
যদি সবুজ বৃক্ষ বাঁচে।।
* জলের আঙিনা খোলা রেখে রেখে
গেয়েছি যে গান,
কবিতার সুরে ডেকে ডেকে তারে
ভাঙিয়েছি অভিমান
সে ও তো তুমি, জীবনের পরিধান
তোমার কীর্তন, পাখিরা গায় গাছে
আধুনিক গান :: কিছু ধ্বনি স্মৃতি হয়ে থাকে
কিছু ধ্বনি স্মৃতি হয়ে থাকে
কিছু প্রেম দূর জানালায়
পাখিদের সাথে কথা বলে
কিছু জল তৃষ্ণা জাগায়।।
* যে সড়ক একা একা হাঁটে
বুকে নিয়ে ঘোর কথামালা
জানতে চাই কি তার কাছে
মাধবী কি আজও বেঁচে আছে
ছেড়ে যাওয়া ভাদ্রের সন্ধ্যায়
একা একা যারা গৃহ ছেড়ে
চাহনীর দূরমালা
আজকাল আমার, আমাকেই মনে পড়ে খুব-
আর মনে পড়ে সেই সড়ক, যে তার নাম ভুলে
গেছে অনেক আগেই। সবুজ শুশ্রূষা পেয়ে সেরে
উঠেছে যে নগর, তার চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে একাকী
বেহালা বাজায় যে বিবাগী বাউল, মনে পড়ে তার
চাহনীর দূরমালা, কীভাবে স্পর্শ করে আকাশের মেঘ।
আজকাল নিজের নাম লিখে