চারহাজার বছর
আমাদের চারপাশে পুড়ে গেছে
চার হাজার বছর
আমরা দেখেছি কংকাল আর কালের
বৈভব, কীভাবে
এসেছে অভিমানের অনন্ত নিকটে,
কী এক যাপিত মিশ্রণ
হিমাঘারে পুড়িয়েছে মন
আবার আসবে ফিরে ঝাঁকের পাখিরা
এই আশাবরে
আকাশও খুলেছে বুক
সেরেছে অন্তিমে, আরো কিছু বিরহ বয়ন।
আঙুলে আঁকা ছবি
এই যে ছবিটি তুমি দেখছ, তা আমার
আঙুল দিয়ে আঁকা। এই যে রঙ তুমি
দেখছ- তা আমার হাতে মেশানো।
কিংবা এই যে আগন্ত নতুন বছর, তার
জন্য স্বগত বাণীগুলোও আমিই এঁকেছি আঙুলে
আমি অনেক কিছুই আঁকতে পারি। কারুপল্লীর
দেবদারু গাছটির সমান উচ্চতায় আঁকতে পারি
তোমার মুখ, গ্রীবা,চিবুক। চিরন্তন চাঁদের
জনমে জনমে জমা যে আলো
প্রতিদিন আমি জন্ম নিতে থাকি তোমার
বুকের উত্তাপের ভেতর।
প্রতিরাতে যে নিশ্বাস আমি গ্রহণ করি,
তার উৎসে জমে থাকে তোমার উপাত্ত-
একদিন এই বাংলার ঘন শ্যামলে যে ছবি
আমি এঁকে রেখেছিলাম;
তোমার শিয়রেই খুঁজে পাই তার তৃণসূর্য-
আর বলি, কী অপূর্ব আলোয় আমায়
ঘিরে রেখেছ প্রভূ!
মানুষের জন্য –
দ্রবণের প্রতিবেশী
নিশ্চয়ই পূর্বজনমে আমরা একই সমুদ্রে বসবাস করেছিলাম।
দ্রবণে ছিলাম তবে নোনাজল,
আর আমাদের প্রতিবেশী ছিল মনুষ্যপাথর সকল।
পাথরের ভিন্নচোখে দেখা হয়, যে ভবিষ্যত
মানুষের পদরেখা সে ছায়ায় একা হয়ে থাকে
কেউ পড়ে শিরোনাম, কেউ বসে মুখছবি আঁকে।
আমরা কি তবে সেই এঁকে রাখা জীবনের আলো
কালি আর রঙ মাখা- নগরের
কবিতাটি একাত্তর পরবর্তী ♥
যে তুমি জানতে চাওনি, আমি কি কবিতা লিখি
অথবা আমার চোখে কি পড়ে গেছে ছানি,
ভুলে গেছি অশ্রুপাত এবং পিতৃহারার কাহিনি-
কিংবা অর্ধেক অন্ধ হয়ে বেঁচে আছি কী না
কেঁদে উঠি কি! দেখলে শাপলা ফুল কিংবা একটি সবুজ পাখি
যে তুমি জানতে চাওনি, আজীবন কেমন
ছায়ামনে, মেঘের সংসার
ভেসেছিলাম একক সায়রে, সাথে নিয়ে পিতল বরণ মেঘ
নিধুয়া নদীর বাঁকে জমে থাকা বিরহ অপার
বলেছিলো সাথে যাবে, যদি যাই হিজল জমিনে
হতে পারে দেখাদেখি— ছায়ামনে, মেঘের সংসার।
আঁকড়ে যে জন থাকে ভিটেজল, ঢেউয়ের আকর
টেনে নেয় কাছে ঝড়, বসন্তের অরূপ মহিমা
বীমাহীন জীবনের যতসব লেন-দেন সেরে
অতিক্রম করে
দেবনগর ♦
মানুষের পা ভিজিয়ে দেয় যে কুয়াশা, তার কোনো
পরিচয় নেই। পৌষ কিংবা মাঘ তার জন্মমাসও নয়।
ভালোবাসার ভোর থেকে ঝরে বিন্দু, কিছুটা হিম
আর কিছুটা অসীম আনন্দ নিয়ে, মানুষ খালি পায়ে হাঁটে।
এখানে দেবীরা আগুন হাতে অপেক্ষা করতো উষ্ণতার;
এখানে শীত হাতে রাইকিশোরী, একাই গাইতো-
প্রাণের কৃষ্ণগীতি। আর
একাত্তরের জোসনাকথা
‘চিঠি দিও না। আমি পাবো না কিছুই। না গামছা, না চিড়া, না ছবি।’
লিখতে লিখতে চিরকুট ভিজে যায় মুক্তিযোদ্ধা আরশ আলীর।
কমাণ্ডার হাঁক দেন- ‘অপারেশন কয়টায় আরশ ?’
রাত দুইটায় স্যার। বলে থমকে দাঁড়ান বীর এই সংগ্রামী।
আজ জোসনার জন্মদিন। যে প্রিয়তমা জোসনা ‘ফিরে এসো’—
বলে পুকুর পাড়
১২॥ ১২॥ ২০১২
বারোটি ফুলের কাছে জমা রেখে সবগুলো ভুল
বারোটি আকাশ থেকে তুলে আনি আলোর খোয়াব
বারোটি জোনাকী জানে তুমি-আমি করেছি যে ভাব
বারোটি কবিতা আঁকে সেই ছবি, প্রেমের সমূল।
বারোটি দূরের রেখা কাছে এসে বলে- লিখে যাই
বারোটি ঘুমের রাত আমাদের রক্তমাংস ছুঁয়ে
বারোটি বিরহী পাখি উড়ে যায়,
জলের জন্মদাতা
তুমি চেয়েছিলে জলতন্ত্র
আর আমি শুধু বৃক্ষের পাতায়
লিখে রাখতে চেয়েছিলাম রাতগুলোর জন্মবার্ষিকী,
কিন্তু এখন দেখি – এ কী !
ঝরে যাচ্ছে পাতা
আর কিছু ভুল জমা করে করে
কেবলই দেশান্তরি হচ্ছে জলের জন্মদাতা
তুমি চেয়েছিলে পর্বত
আমি যে ক্ষত বুকে নিয়ে
ভেসেছিলাম সমুদ্রে,
তারপরও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে
আমি পান করেছিলাম ভোর
একান্তই মঙ্গলগ্রামের
অরণ্যে অন্তহীন রোদে
যে ভয়ের কথা তোমরা বলছো, সে ভয় থাকে পশুদের।
কারণ তাদের ধাওয়া করতে পারে মানুষ
যে অনিশ্চিত জীবনের কথা তোমরা লিখছো, তা-
হতে পারে নদীদের,
কারণ তার বক্ষদেশ ভরাট করে দিতে পারে কোনো কালোহাত।
আমি হাতবিহীন ভোরের কথা বলছি,
বলছি রোদমাখা অরণ্যের কথা-
কিংবা অন্তহীন দুপুরের ছায়াসমগ্রের কথা
যে
মঙ্গলজলের গান
ভেতরে শূন্যতা নিয়ে দোলে উঠে নদী। জোয়ার নেই,
তবু মুগ্ধ কোলাহলে কাছে টানে রাতের বিনয়, যারা
দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল – তারাও হাতিতালি দেয়।
আহা সভ্যতা!আহা নগ্নতার ভোর, তুমি কী দেখাচ্ছ
আদিমতার ছায়া!
ভাবতে ভাবতে ক্রমশ জেগে উঠে
রোদের দক্ষিণা,
মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে
বলে-যে জীবন কাটাও তুমি
চুমু ও চিতায়,
শোকপ্রান্তগুলো
অনেক কান্নাই এখন আর আমাদের অপরাধী করে না !
অনেক বুকের উত্তাপকে বরফ মনে করে, আমরা এগোই
কফিনের দিকে। আহা! শাদা কাপড়, আহা! মুখাগ্নি!
বিদায়ের বৈশ্য শিকল হাতে পায়ে প’রে নিতে নিতে
আমরা ভুলে যাই আমাদের মানবিক পরিচয়।
বাঁশের টুকরিতে ঘাসগুচ্ছ মাথায় তুলে যে রোজশ্রমিক
বাজারে বিক্রি করতে যায়,
আমি
কালের করায়তন
বিপুল আনন্দ নিয়ে ভেসে যায় হেমন্তের ফুল। পাতাগুলো
কাছে দাঁড়িয়ে দেখে ওইসব গমন। আর যে প্রাজ্ঞ আলো
সাথী হবে বলে কথা দিয়েছিল, তারাও পথ পাল্টে
অন্য সড়কে উড়ায় নিশান। রাত্রিচরী পাথর জেগে থাকে একা।
জেগে থাকে অগ্রহায়ণের নক্ষত্র। ঝুমকো লতার ছায়ায়
বিগত মুখ দেখে কান্নারত পাখি ভাবে-
দেখতে