আদিকবি হিসেবে সূর্যস্বীকৃতি
অনেক মা বাবাই জানেন না তার সন্তান কবিতা লিখে। অনেক পুত্র-কন্যাও
বলে- মাঝে মাঝে তাদের পিতা কাগজ ও কলম নিয়ে বসেন। কী লিখেন
সেটা জানে না তারা। এমন কি অনেক মাতৃকাব্যকথাও পড়ে’নি তার সন্তান
-এমন বর্ণনা শুনতে শুনতে আমি যখন নদীর কাছে পৌঁছলাম,
দেখলাম কয়েকটি ঢেউ
আপনারা হাত ভেতরে ঢুকিয়ে দিন।
আপাতত হাতগুলো বাসের ভেতরে রাখুন।
হ্যাঁ, হাত ভরে দিন বাস ড্রাইভারদের কলজের ভেতর।
সুযোগ পেলে-
হাত ঢুকিয়ে দিন বাস মালিকদের পাঁজরে
যারা কিছুই শুনবে না, কিংবা যারা
থেঁতলে দিতে চাইবে রাজীবদের হাত,
তাদের হাত টেনে ধরুন। সম্ভব হলে
কান টেনে ধরে ম’লে দিন।
যেখানে কেউ কারো কথা শুনে
কিছুই বাঁচানো গেল না
কিছুই বাঁচানো গেল না
সন্তান, সম্ভ্রম, স্বাধীনতা
বাঁচানো গেল না সময়, শরত ও শবদেহ
বাঁচানো গেল না সূর্যের প্রথর আলো, শিয়র, শয্যা
কিংবা বাঁচানো গেল না সন্ধ্যাও। সমুদ্রও হয়ে গেল দখল।
বাঁচানো গেল না কিছুই। রক্তের দাগ, রিক্ত শিশুর আর্তনাদ
বাঁচানো গেল না, পিতার শোকার্ত পুরোনো কোর্তা
অথবা
ভৈরব
আমাদের সামনেই হারিয়ে গেল মহান সন্ধ্যা। স্মৃতিচূড়ায় ধারণকৃত গুল্মরোদ
বলে গেল, আবার দেখা হবে বন্ধু ! আবার কাছে এসে ছায়া দেবে প্রাণের
ভৈরব। সবকথা বলা হবে অথবা নাও হতে পারে। যা জরুরী নয়, এমন
শঙ্খস্বর্ণ ছুঁয়ে গ্রহগামী মানুষেরা জেনে যাবে বিনোদনের দ্বাদশ জলকলা।
নেভানোর আনন্দ নিয়ে বয়ে গেল
যে কলম দূরে রেখে দিয়েছিলাম
এক বসায় আমি অনেকগুলো চিতা দেখি। চিতাবাঘ, শবদেহের জন্য তৈরি চিতা,
দেখতে দেখতে আমি যে বাগান পার হই- দেখি সেখানেও ঝুলে আছে ক’টি
চৈত্রের আগুন। দেখা পেলে আবার জড়িয়ে ধরবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে
বৈশাখি ঝড়-শুনি তার আগমন ধ্বনিও। কে ডাকে ! কে
রেখে যাবো না
কিছুই রেখে যাবো না। শ্লোক, শিলা, শিশ্ন- কিছুই
রেখে যাবো না পৃথিবীর জন্য। এমন কি শিকড়-ও
উপড়ে ফেলে এই চাঁদকে বলবো- তুমি গ্রহণ করো
অাঁধারের পরিচ্ছদ- আমি কোনো আলো চাই না আজ,
বরং গণিকালয়ের মধ্যসত্ত্বভোগীর মতো, তারাগুলোকে
পাশে রাখো হে চন্দ্র, তারপর নিজকে বিসর্জনে ভাসাও।
রেখে যাবো না
প্রবাদ পিয়াসী এক পাহাড়ের কোলে
ধ্বনির দূরত্ব জেনে গুহাগুলো সারিবদ্ধ হয়। প্রলয় এসেছে ভেবে গা ঝাড়ে
পিপীলিকাগণ। শমন কি জারী হবে মৃত্যুর, ঘোর নিমজ্জন ! ভ্রমণ সম্পন্ন
হলে ঝিনুকেরা সমুদ্রে হারায়। পায় কি নতুন দিন, অথবা রাতের শঙ্খনাদ?
প্রবাদ পিয়াসী এক পাহাড়ের কোলে গিয়ে ভাবে। তবে কি গুহার
বসন্তের খরাকাল
বসন্ত চলে গেল। ডাকলো না কোকিল। কিছু কুকুর
আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে গেল। আমি শুধুই-
জানতে চাইলাম চৈত্রের খরাকাল বসন্তঋতুর আওতায়
পড়ে কী না! চৌচির মাঠ দিয়ে যে পথিক হেঁটে যায়,
তার পায়ের গোড়ালিতে, লাগে কী না ধুলোর ধ্বনি
অথবা শনিগ্রহ ভেদ করে যে আমি পার করছি
মুক্তি চাই, স্বাধীনতা নয়
আমাদের চোখের সামনেই নিহত হচ্ছে শিশু গৃহকর্মী
আমাদের সাক্ষী রেখেই কেউ দখল করে নিচ্ছে-
নদী, নদীবন্দর এবং মালবাহী জাহাজ। কাপ্তানকে
বলছে; অন্য ঘাটে ভিড়াও নোঙর।
দখল হয়ে যাচ্ছে মাটি,পাথর, বৃক্ষ, বিষ্ঠা-
অনেক আগেই,
দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাত, যেখানে স্বাধীন
নিশ্বাস নিয়ে আমার প্রজন্মের হেঁটে যাওয়ার কথা ছিল।
ধর্ষিতা কিশোরী
অগ্নি সংক্রান্তি
জীবন আদিষ্ট থাকে সনাতন লৌহনৃত্যঘুমে। জাগার যৌবন নিয়ে
উনুনের উদর থেকে তাকিয়ে দেখে ইস্পাতের সহস্র সবুজ। কী এক
তন্দ্রার আলো, ছুঁয়ে আছে সমুদ্র নোলক ! এসব ব্রাত্যকথা ভেবে
কলমও লিখে রাখে নম্বরবিহীন খাতার জবানী। আদৌ সুড়ঙ্গ নেই।
তবুও যেন পাতালের পদরেখা এসে শেষ হয়েছে এই নিরক্ষর পথে।
আর
যে দৃশ্যগুলো ফিরিয়ে নিতে পারো
পোড়া কর্পুরের গন্ধ স্পর্শ করছে মমির শরীর,
ভাঙা কলমের নিব ছুঁতে পারছে না ভরা কালির দোয়াত,
অচেনা সাগর অথবা ভূতলে বিনা নোটিশে হারিয়ে গেল
২৩৯ জন যাত্রী সহ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের যে ফ্লাইট-
এমএইচ৩৭০,
আমার সামনে থেকে তুমি সেই দৃশ্যগুলো সরিয়ে নাও।
সরিয়ে নাও এই বসন্তে- হত্যাকারী
নাট্যনীড়
নগ্ন আকাশ দেখি দ্বিতীয় আভায়। প্রাচীন পতঙ্গগুলো গোল
হয়ে তাকাচ্ছে সেই নগ্নতার দিকে। আমি দশর্ক নই, তবু
উঁকি দিয়ে দেখি, কারা এসে মিলিত হয়েছে এই আশ্রম
সীমানায়। কীভাবে লিখিত হচ্ছে বিশ্রামের তন্দ্রানিয়মাবলী।
আরো এসেছেন দেখতে যারা, তারা সবাই বিশিষ্ট নাট্যজন।
নীড় নিয়ে খেলা করাই কাজ তাদের। কখনও হাসিয়ে যান।
কখনও