লেনিন
জুয়াখেলা শেষে বাইরে বেরিয়েই দেখি, দাঁড়িয়ে আছেন
মহামতি লেনিন। ঠিক আমাদের সামনেই পনেরো ফুট
উচ্চতা নিয়ে আলোকিত করছেন রেডস্কোয়ার ক্যাসিনো
আটলান্টিক সিটি জুড়ে বুলিয়ে যাচ্ছেন নতুন পুঁজির পরশ।
মনে হলো, সারারাত জুয়া খেলে খুবই ক্লান্ত তিনি। তার
ডান পাশে জ্বলছে গ্লাসনস্ত নামের একটা জলেভেজা সিগ্রেট,
আর বাম পাশে পড়ে
মৃত পাখির হাড় থেকে জন্ম নিয়েছিল যে পাথর
অলক্ষ্যেই অনেক কিছু আমার দেখা হয়ে যায়। মৃত পাখির হাড় থেকে
জন্ম নিয়েছিল যে পাথর তার উপর জন্মেছে একটি বৃক্ষ, সেই বৃক্ষে ফুটে
আছে একটি নামহীন ফুল। ফুলটি কী তবে সেই পাখির ডানাচিহ্ন! আর
বৃক্ষটি কী তবে পাখির সহদোরা! যে
ভুলে যাওয়া উষ্ণতার গান
আর কোনও দিন বৃষ্টি এসে আমাদের ডাকবে না তাদের কাফেলায়।
বলবে না- চলো সমুদ্র দেখে আসি। দেখে আসি পাখিদের সংসার, আর
লাঙল কাঁধে যে পিতামহ প্রত্যুষে ছুটে চলতেন মাটির টানে-তার পদছাপ।
আর কোনও দিন আমাদের ডাক দেবে না কোনও প্রতিবেশী আগুন।
বলবে না- উষ্ণতা নেবে,
রহিত বিষয়ক
পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে
কবিতার সংবিধান। পরবর্তী কুচকাওয়াজ শেষ
না হওয়া পর্যন্ত, সবগুলো ফুল, মাতৃখোঁজে-
প্রদক্ষিণ করবে জীবনের ব্যারাক। ঘাস ও মাটির
আড়ালে লুকিয়েছে যে শূন্যস্থান – তা পূরণে
আকাশের দিকে উড়ে যাবে একটি লালপাখি।
আমি ওই পাখিটিকে ছুঁবো বলে উড়বো,
যে কোনো মুহুর্তে –
চব্বিশ হাজার মাইল,
খাদ্যতালিকা সংক্ষিপ্ত হয়ে এলে
ব্যাপক অনাহার। উদরে, উষ্মায়, উনুনে। দানবতন্ত্র কেড়ে নেয়
খাবার। যে প্রিপেইড জীবন শুরু করেছিলাম-তাও ক্রমশ
সংক্ষিত হয়ে আসে। কী বিষাদ ঘেরা এই আগুন! কী বেদনার
সাথে বসবাস করতে করতে জিরিয়ে নিতে চাই, এই লোকালয়ে।
না আনন্দে-না উপাসনায়, কিছুতেই যখন মনযোগ থাকে না,
তখন বৃষ্টির জলই নিবারণ
হিংসের শহর থেকে
এ শহর আমার নয়। আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ
সংরক্ষিত নয় এখানের আর্কাইভে, তবু কিছু হংস
হিংসের ডানা দেখিয়ে ডুব দিতে চাইলো আমার পুকুরে,
কিছু ঈগল- তাদের ভাষাচক্ষু দেখিয়ে ছিঁড়তে চাইলো
আমার শব্দকেতন।
এসব নষ্টমহড়া দেখেছি আগেও। দূর দিয়ে উড়ে যাওয়া মেঘ
আমাকে বলেছে- আমরাও আছি কবি,
তুমিও থাকো।
ক্রমশ পৃথক
অপহরণের আগে
আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে একটুকরো মেঘ,
আমাকে গুম করে ফেলতে চাইছে মৃত নদীর চর
যে চরে একদিন জন্মেছিল সবুজ ঘাস— যে তীরে একদিন
উড়েছিল হলদেপাখি, তারাও আজ ছাড়ছে বিষাদ-নিঃশ্বাস।
যে মানুষ একদিন রাখালের বেশে এই নদীপাড়েই বাজাতো বাঁশি
তার রুদ্ধকন্ঠ দেখে ভয় হচ্ছে আমারও,
এই ভূখণ্ডে— মানুষ কীভাবে
দূরে গেলে প্রিয় হয় মর্গের সব কোলাহল
মিথের মর্গ দেখে বড় করুণা হয়। অনেকটা দূরেই থাকি আজকাল কোলাহল থেকে।
তবু এই সিঁড়ির সংসার দেখে মায়া হয় খুব। এই রাত সুবর্ণ জয়ন্তীর।
এই দিন মুখোশের প্রথম পালক। সবই লেখা আছে আমার অভিধানে। তার
পরও খুলে দেখতে মন চায় মুছে
পথিক ও পরাণপর্ব
কতটা পথ হাঁটলে হওয়া যায় পথিক! কতটুকু ভূমি
পেলে নির্মাণ করা যায় একটি সড়ক, তা ভেবে আমি,
কখনোই পথে দাঁঁড়াই’নি। বরং কয়েকটি হাসনা-হেনার
ডাল রুয়ে রেখেছি, পথের দু’পাশে। কেউ এসে
নেবে সেই সুবাস।
অথবা কেউ পাঠ করবে মমিচিত্র, মনচিত্র, মানচিত্র
এমন আরাধনায় সাজিয়েছি ভোর, সেরেছি
পরাণপর্বের পঞ্চম সুরবীক্ষণ।
মানুষেরা অনেক
আমার চারপাশে এখন গলিত মাংসের দোকান-
ঝরে পড়ছে লাল মাংস থেকে রক্তের ফোটা
কাঁপছে মাংস, ঢেউ তোলে ভ্রমণ করছে আমার দক্ষিণ
উত্তরে, বাড়ন্ত আলু ক্ষেতের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে,
নতুন মাংসমূল।
থেতলে যাওয়া বাহু থেকে নীল মাংসের
ক্ষত, চিহ্নায়নে এগিয়ে আসছে না কেউ-
কেউ উপুড় হয়ে পড়ে থাকা পাঁজরের মাংসের
পাশে দাঁড়িয়ে তুলে
নগর নগ্ন হয়ে মুছে দেবে এই কৃষ্ণপক্ষ। আর ছায়া কুড়ানি
মানুষেরা মুদ্রিত লোকায়ন চোখে দেখবে সব নমস্য সুন্দর।
বিবর থেকে এর আগে যারা স্থানান্তরিত হয়েছিল অন্য দ্বীপে,
তারাও আসবে ফিরে। ফিরতেই হয়, শতাব্দীর শবদেহ থেকে
যে জ্যোতি থেকে যায় অম্লান – তার চূর্ণ ভেদ করে আবারও
জন্ম নেয় মাঘের
এখন আর কোনো বিষাদই স্পর্শ করে না আমার বুক। চোখে
কোনো অশ্রুই জমাট হয়ে থাকে না। শিশু কিংবা নারী,
বৃদ্ধ কিংবা যুবক- যে কোনো প্রার্থনারত মানুষের দিকে
তাকালেই নিজেকে অসহায় ভাবি, মনে হয় এই পৃথিবী আমার নয়!
ইস্টারের এই ভোরে রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কা’র দিকে তাকাবার সাহস
আর নেই আমার। যে