বিশ্বস্ত বন্ধুদের প্রতি
এখন রপ্ত করতে চাই কীভাবে পালাতে হয়, কীভাবে দীর্ঘ করা যায়
বিভিন্ন ছুটিদিবস- কীভাবে অন্য কোনো গ্রহে পৌঁছে নেয়া যায়
মুক্ত নিশ্বাস। জানি সেদিন হয়তো থাকবে না আর এই শ্বাসকষ্ট,
এই পোড়ামাটিচিহ্ন লেগে থাকবে না আমার হাতে, অথবা যে ছবিগুলো
একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, সেগুলোও জোড়া লাগাবার
মধ্যরাতে চাঁদবৃষ্টি হবে, সবগুলো জোনাকী সারিবদ্ধভাবে নিভিয়ে দেবে লাইটভাল্ব
আর বৃদ্ধ কৃষক লাঙল-জোয়াল ফেলে আকাশ থেকে তুলে আনবে বৃষ্টির ফুলকি-
এমন ঘোষণা লিখে আমিও সাজাবো বিলবোর্ড- লিখে দেবো এ শহরে
ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋতুবদল হয়। শ্রাবণে গান গায় ভিনদেশি কোকিল।
একটি তালা ঝুলিয়ে আমিও চাবি তুলে দেবো মেঘনার গর্জনের
হারিয়ে যাওয়া ঘুম
কেউ চুল্লির বিবরণ লিখে রাখতে চাইলে, আমি
থামিয়ে দিতে চাই তার কলম।
বলি, হিরোশিমার আচে এখনও বিকলাঙ্গ যে জীবন,
তাকে জাগিয়ে লাভ কী! চোখের আয়তন থেকে
চিরতরে হারিয়ে যাওয়া ঘুমের স্মৃতি নিয়ে,
যারা বেঁচে আছে- কী দরকার তাদের তত্ত্ব -তালাশের
তার চেয়ে বরং নবাগত প্রেমিকার চিঠি নিয়ে
বিশ্লেষণধর্মী
গর্তে যারা লুকিয়ে থাকে, তাদের অন্য কোনও
পরিচয় আছে। কিংবা যারা ভালোবাসে রক্ত –
আমি তাদের পিশাচ বলতেই পারি। পারি, ওদের
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে, এখানে
স্বাধীনতার জন্য এর আগেও এই ভূমি-সমতলে
ঝরেছিল রক্ত। সড়কে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন হাত হারা মা।
যারা জনস্রোতের বিপরীতে বেছে নেয় উল্টোপথ,
আমি তাদের বলতেই পারি,
আমি বরাবরই নদীকে বিশ্বাস করেছি,
ভাঙনকে নয়। বরাবরই আমলে নিয়েছি
মহৌষধি বৃক্ষের গুণাগুণ। পর্বতের সমান
উচ্চতায় সাজিয়েছি বুকের পাঁজর।
যারা নিজ মাটি ছেড়ে দেশান্তরি হয়, যারা
পেছনে ফেলে আসে নিজ রক্তরেখা-
তাদের সাথে কণ্ঠসম্প্রদান করতে করতে
ভুলে গিয়েছি বিশ্বের তাবৎ,
অস্ত্র বিক্রি চুক্তির কথা।
আমি বরাবরই বিজলীকে বিশ্বাস করেছি,
বজ্রকে নয়। অথচ এই বদ্বীপে
দূরে, হারিয়ে যাওয়ার আগে
আমাকে বহন করে নিয়ে চলেছ তুমি,
জলঝাপ্টা এসে পড়ছে গাড়ির সামনের গ্লাসে,
হুড খোলা গাড়ি আমার পছন্দের নয় জেনে
তোমার গাড়ির মিররেই ধারণ করেছ,
আমার জন্য সূর্যালোক।
সিলভার কালারের টয়েটো ছুটে চলেছে
তীব্র গতিতে, ঘন্টায় পঁচাত্তর মাইল
ভেদ করে মিটার ছুঁয়েছে পঁচাশি মাইল!
বুঝাই যাচ্ছে না কে কা’কে স্পর্শ
উন্মাদ বিকেলকে আমার হাত ধরতে বলেছিলাম। খুব কানে কানে
উত্তরের হাওয়াকে বলেছিলাম থামো! সাথে নিয়ে যাও। অথবা
পুনরায় সুযোগ দাও ক্ষমা চাইবার। তোমার শরীরে ছিটিয়ে দিয়েছিলাম
যে কার্বন ডাইঅক্সাইড— তার কালো ধোঁয়া এখন আমাকেও
দংশন করছে হে মাটি !
যে বুলেট আমিই তৈরি করেছিলাম, তা এখন বিদ্ধ হচ্ছে আমার
বৃষ্টিবতী ভোরে
এলে ভোর, দিও তারে একটি জবাফুল
এলে সন্ধ্যা, সাগরজলে খুলে দিও চুল।
এলে দু’খ, বাতাসের দিকে চেয়ে
পরে নিও মেঘ- বিজলীকে কাছে পেয়ে।
আবার আকাশে দেখে নিও গর্জন
যেমন পাখিরা ভয় পায় না ঝড়ে
নতুন নিবাস খুঁজতে গিয়েই নদী
চিনে নেয় গতি- স্রোতের নামতা পড়ে।
বর্ষার ছবি বুক পকেটে রেখে
এই
চারদিকে অপহৃত আনন্দ সন্ন্যাস। সওয়ারহীন ঘোড়ার
ক্ষুর স্পর্শ করছে দ্রষ্টব্য ধাতু। কেতু হাতে আমরা
এগুচ্ছি নবম সূর্যের দিকে, জন্মান্ধ হরিণ যেমন
অরণ্যের ওপাশে খুঁজে সর্বশেষ দাঁড়াবার জায়গা।
অনুসারী গ্রহগুলো একদিন আমাদের
হবে। এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে যেদিন
পৃথিবী থেকে মহাপ্রস্থান করলেন আমার
পিতামহ, সেদিনই প্রথম আমি
অপহরণ করতে শিখি আলো ও আনন্দ।
যারা অগ্নি কুড়াতে ভুলে যায় []
আমার, তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। যারা জন্মমুর্খ-
কিংবা যারা বেঁচে আছে কিছুটা মোহান্ধ হয়ে। অথবা পা থাকতেও
খুঁড়িয়ে হাঁটতে ভালোবাসে। না- তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ
নেই আমার। যারা আছে কুয়োর জলাবদ্ধতায়, আর ভাবছে এটাই-
মহাসাগর, যারা কোনোদিন দেখেনি সবুজ পাতার রঙ,
চার হাজার বছর
আমাদের চারপাশে পুড়ে গেছে
চার হাজার বছর
আমরা দেখেছি কঙ্কাল আর কালের
বৈভব , কীভাবে
এসেছে অভিমানের অনন্ত নিকটে ,
কী এক যাপিত মিশ্রণ
হিমাগারে পুড়িয়েছে মন
আবার আসবে ফিরে ঝাঁকের পাখিরা
এই আশাবরে
আকাশও খুলেছে বুক
সেরেছে অন্তিমে, আরো কিছু বিরহ বয়ন।
হাঁক দেয় হাকালুকি
সতীর্থ নদীনিদ্রা ঘোরে কেটে গ্যাছে ছয়ত্রিশ বছর। যে স্বর্ণালী রোদের ব্যাপৃতি হতে চেয়েছিল আমাদের নিজস্ব জীবন, হারিয়েছে ভিন্ন মেরুতে। প্রতারক সূর্যসমক্ষে, শুধুই বয়েছি ছিন্ন সময়ের দায়।
কখন উঠবে জেগে এই কটি উষ্ণ আঙুল? কখন শাপলা সোহাগে আবার জড়াবে এই হাওর চত্বর? হাঁক
চাঁদনগর
টেনে যাচ্ছি আর ক্রমশ’ই দীর্ঘ হচ্ছে সুতোসন্ধ্যা
পিয়ানোটাতে বসেছে যে পতঙ্গ, সে’ও বার বার
গেয়ে যাচ্ছে বেদনার গান
সুরঘোরে আমিও ডুবে যাচ্ছি মদের মধ্যমায়।
বারিবৈষম্য জেনে এই দিগন্তে বৃষ্টিপাত থেমে
যাবার পর, আকাশও থামিয়ে দিয়েছে ছায়ার
পরিমাণ। তাই যে সব প্রেমিক-প্রেমিকা
ভেজার আগুন নিয়ে খেলতে চেয়েছিল,
তারাও সংক্ষিপ্ত করেছে তাদের ভ্রমণ