আবার বৃষ্টি এলে সারারাত জলের জোনাকে
লিখে নাম, দেবো ভাসিয়ে কাগজ
কেউ জানবে না এই হেমন্তে, কে ছিল গোলাপ বাগানে
কে ছিল প্রথম শ্রোতা, ভূপেনের পদ্মা- গঙ্গা – গানে
কে ছিল স্বীকৃত আলো- কে ছিল পাখা হাতে বসে
পাশে রেখে স্মৃতিঠোঙা, বুকে নিয়ে পুষ্পব্যানার
কে এমন কার্তিকের
ভেতরে শূন্যতা নিয়ে দোলে উঠে নদী। জোয়ার নেই,
তবু মুগ্ধ কোলাহলে কাছে টানে রাতের বিনয়, যারা
দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল – তারাও হাতিতালি দেয়।
আহা সভ্যতা! আহা নগ্নতার ভোর, তুমি কী দেখাচ্ছ
আদিমতার ছায়া!
ভাবতে ভাবতে ক্রমশ জেগে উঠে
রোদের দক্ষিণা,
মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে
বলে- যে জীবন কাটাও
ক্যাটায়ারের ক্যাটগুলো ♣
দারোয়ানরা তাহার ঘাড় ধরিয়া বাহির করিয়া
দিতে দিতে বলিল, তুমি তাড়াতাড়ি চলিয়া যাও।
‘আই এম দ্যা গ্রেট, আই এম দ্যা গ্রেট বলিতে বলিতে
সে বাহির হইলো। এবং বলিল, তাহারা আমার হাতে
ধরে নাই। পিটাইতে পারিত। তাহাও করে নাই। বরং
সম্মানের সাথেই বাহির করিয়া দিয়াছে।
অথচ এই সিনারিও
আমাকে উপেক্ষা করে শিশিরগুলো উড়ে গেল আকাশে। তারপর
তারা গড়ে তুললো যে বাষ্পসমাজ, আমন্ত্রণ করলো আমাকেও-
মিশে যেতে সে সমাজে। আমি সমাজ পরিবর্তনের চতুর্থপাঠ
পুনরায় বিবেচনা করতে আরম্ভ করলাম।
এমন বিবেচনা আমি এর আগেও বহুবার করেছি। ঝাড়বাতির
সৌরভ দেখে লিখেছি গল্পের পেছনের গল্প। আর শীতবিরোধী
বিকেলের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পড়েছি
গতকাল গভীর রাতে স্বপ্নের মাঝে আমার,
আবার ফকির ওমর শাহ’র সাথে দেখা হয়ে যায়!
হাতে সেই লাঠি, পরনে সেই গেরুয়া কোর্তা,
মাথায় লাল পাগড়ি! কিছুটা ঝুঁকে থাকা বটবৃক্ষ
যেমন দাঁড়িয়ে থাকে-
ঠিক তেমনি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন আমার সামনে!
খোলা মরুভূমি। কয়েকটা অর্ধ পোড়া গাছের শাখা
অনেক দিন থেকে হাওয়াহীন!
কেমন আছেন দাদাজান!
বাঁশি বাজিয়ে কে যেন বলছে,
আগুন! আগুন!
বৃক্ষ থেকে কেউ ছিঁড়ে ফেলছে পাতা
আর বলছে, এই তো তোমাদের আয়ু বিয়োগের
বিকেল! এই তো তোমাদের সর্বনাশের ভোর!
আমরা সবাই সেই আওয়াজ শুনছি,
আমরা দেখছি চোখের সামনেই
ডুবে যাচ্ছে আমাদের তরী! অথচ কিছুই
করছি না! কিছুই বলছি না!
মুনাফার ঘোর গ্রাস
পর্দা নামার আগেই সরে যাচ্ছে খলনায়কের দল। যারা
বাঁশি বাজিয়েছিল, পরিচালক কেড়ে নিচ্ছে তাদের হাতের
বাঁশি। নেপথ্যের সুরে যারা দিয়েছিল কণ্ঠ- ধমক দিয়ে
কেউ থামিয়ে দিচ্ছে তাদের গলা।
কেউ কেউ বদলে দিতে চাইছে রক্তদাগ মুছে ফেলার পদ্ধতি।
বলছে, একাত্তরেও রক্তাক্ত হয়নি এই মাটি,
যারা ‘ভুল করে যুদ্ধ করেছিল, এখন বরং
তোমাদের সংলাপ থেকে আমার নাম মুছে ফেলতে পারো নি,
সে কৃতিত্ব আমার নয়। বরং সেই সমুদ্রের গান শোনে যে পাখি
উড়ে গিয়েছিল উত্তরে, আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম
আমার প্রিয় পতঙ্গেরা যেন নীলান্তেই খুঁজে পায় আমার নাম,
তাদের রিসাইকেল বিনেও যেন খুঁজে পায় আমার সদ্য
ডিলিট করা ছবি
কিংবা আমার
এই ভূমিতে লুটিয়ে পড়া শিশুদের মাথার খুলি
পাথর হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই!
যে পাখিটি সিরিয়া থেকে উড়ে এসেছিল—
একটি পা হারিয়ে সে’ও এখন আর নির্বাক
তাকায় না আকাশের দিকে!
গাজা উপত্যকার আনাচে কানাচে যে গোলাপগুলো
তুমি দেখছ—
তা’তে লেগে আছে বিধবার সর্বশেষ রক্তের দাগ!
সাদা ভবনটির লনে দাঁড়িয়ে চার বছর পর পর
খুনির
আমার চারপাশে এখন গলিত মাংসের দোকান-
ঝরে পড়ছে লাল মাংস থেকে রক্তের ফোটা
কাঁপছে মাংস, ঢেউ তোলে ভ্রমণ করছে আমার দক্ষিণ
উত্তরে,বাড়ন্ত আলু ক্ষেতের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে,
নতুন মাংসমূল।
থেতলে যাওয়া বাহু থেকে নীল মাংসের
ক্ষত, চিহ্নায়নে এগিয়ে আসছে না কেউ-
কেউ উপুড় হয়ে পড়ে থাকা পাঁজরের মাংসের
পাশে দাঁড়িয়ে তুলে রাখছে
একটি নাটকের জন্যই আটত্রিশ বছরের জীবন
পর্যাপ্ত নয়। কিংবা একটি কবিতা লেখার জন্য-
অথবা বলতে পারো; যে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে
সমুদ্রের গায়ে লবণ ছড়ায় কোনো পর্যটক-তার
হাতে-চোখে-বুকে জমে থাকে যে হাজার বছরের
ঘুম, পর্যাপ্ত নয় তার ধ্যানে থাকা রাতের মধ্যপ্রহর।
বন্দুক উঠছে,বন্দুক নামছে- এমন দৃশ্য দেখার
প্রয়োজনে সে সময় দরকার,
চারদিক বন্দনা করি শূন্যে নিলাম ঠাঁই। পাই কি না পাই
দেখা অগ্নি গগনের। ভুলের নগরে দাস, আমিও ছিলাম।
লেখিলাম সেই কথা আদি-জনমের। ঘরের চৌকাঠগুলো
খড়িমাটি দিয়ে। দাগিয়ে আমিই গেলাম শুদ্ধি নগরে। পারে
যারা ভেসে যেতে আগুন-পরবে। নিবে এই দানটুকু অতি
আপন করে। এরপরে নিভৃতে নৈঋতের নিয়ম। বিভ্রম কাটিয়ে
তারা খুঁজিবে
ঢেউগুলোর হারিয়ে যাওয়াকে কী নামে ডাকবে তুমি!
ভূমি তার বুকের খনিজে যে বীজ লুকিয়ে রাখে, তা ও
কি বিবর্তন নয়! ভয় কিংবা সংশয়ের অন্তরালে যে চাঁদ
আকাশে দেরীতে ওঠে, তবে কী সে ও বাস্তুচ্যুত! দ্রুত
রঙ পাল্টানো মেঘ, যেভাবে পাহাড়ের ওপারে। ঝরে
ঘুমবৃষ্টি হয়ে, আর কিছু স্মৃতি এঁকে রাখে
ভাবি, বনবাসের প্রতীক হবো। নেবো সকল সৎকারের
ভার। আমার যা কিছু সঞ্চয়, সবকিছু বৃক্ষদের মাঝে
বিলিয়ে দিয়ে, খুঁজবো নিরুদ্দেশ। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য
নেই আর। খামার পুড়ে গেলে যে কৃষক গালে হাত দিয়ে
হাসে- তার আবার দুঃখ কি! ফাঁকি দিয়ে যে পাখি পিঞ্জর
ভাঙে, তাকে কে ফেরাতে পারে! যারে আঁঁকড়ে