ভ্রূণের শহর ছেড়ে চলে আসা নদীর কাছে জানতে চাই,
পুষ্পেরা কেমন আছে। উত্তরে হাসে নদী, বলে –
ভাসাই বলেই আমি জোয়ারের জনক
আর যারা ভালোবাসার মর্মার্থ জানে,
তারাই বলতে পারে- কী মহান বিরহের ত্বক।
উজানের উৎস থেকে উঠে আসা মেঘের কাছে
জানতে চাই, তুমি কি পারো হে বন্ধু
পুঁতে যেতে ভাসানের
নিশ্চয়ই পূর্বজনমে আমরা একই সমুদ্রে বসবাস করেছিলাম।
দ্রবণে ছিলাম তবে নোনাজল,
আর আমাদের প্রতিবেশী ছিল মনুষ্যপাথর সকল।
পাথরের ভিন্নচোখে দেখা হয়, যে ভবিষ্যত
মানুষের পদরেখা সে ছায়ায় একা হয়ে থাকে
কেউ পড়ে শিরোনাম, কেউ বসে মুখছবি আঁকে।
আমরা কি তবে সেই এঁকে রাখা জীবনের আলো
কালি আর রঙ মাখা- নগরের আদিম
পর্দা নামার আগেই সরে যাচ্ছে খলনায়কের দল। যারা
বাঁশি বাজিয়েছিল, পরিচালক কেড়ে নিচ্ছে তাদের হাতের
বাঁশি। নেপথ্যের সুরে যারা দিয়েছিল কণ্ঠ- ধমক দিয়ে
কেউ থামিয়ে দিচ্ছে তাদের গলা।
কেউ কেউ বদলে দিতে চাইছে রক্তদাগ মুছে ফেলার পদ্ধতি।
বলছে, একাত্তরেও রক্তাক্ত হয়নি এই মাটি,
যারা’ ভুল করে যুদ্ধ করেছিল, এখন বরং
তোমাদের সংলাপ থেকে আমার নাম মুছে ফেলতে পারো নি,
সে কৃতিত্ব আমার নয়। বরং সেই সমুদ্রের গান শোনে যে পাখি
উড়ে গিয়েছিল উত্তরে, আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম
আমার প্রিয় পতঙ্গেরা যেন নীলান্তেই খুঁজে পায় আমার নাম,
তাদের রিসাইকেল বিনেও যেন খুঁজে পায় আমার সদ্য
ডিলিট করা ছবি
কিংবা আমার
‘তোমরা সবাই ভালো থেকো’- বলতে বলতে একটি ছায়া
আচমকা মিলিয়ে যায়। একশত সতেরো বছর,
বেঁচেছিলেন লালন- ডাক তুলে একটি টিয়ে এসে
বসে সবুজ কার্নিশে। একটি ভোর তার সমগ্র যৌবন নিয়ে,
লিখেছিল যে কবিতা, সেই কবিতাটি কেবল
‘কবি,কবি’ বলে সারা দুপুর ভরে কাঁদে।
আসলে কান্নাকামী সমুদ্রই কেবল জানে সকল
প্রাণের দুঃখবাদ। নতুন
তোমার কোনো পরিচয় নাই,
আমি যদি ডাক না দেই
আমি তোমার ছবির বাহক
সাথেই আছি- কোথায় নেই!
১। সব কর্তৃত্ব আমায় ঘিরে
পাপ আর পূণ্যের সব বিচার,
তোমার হুকুম পালন করি-
আমার তো নাই অধিকার,
আমি ছাড়া তুমি বেকার,
লুকিয়ে আছ আলোতেই ।।
২। যুগে যুগে তোমায় খুঁজে
করছে যারা আত্মদান,
কোথায়
আপনার ছবির দিকে তাকালেই
অনেকগুলো আকাশ এসে আমার
হাতের মুঠোয় ধরা দেয়!
অনেকগুলো পথ, পথের মিছিল,
আর মিছিলের মানুষেরা,
‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে দিতে
অতিক্রম করে বিশ্বের না না প্রান্ত
‘লিটল বাংলাদেশ’ কিংবা
‘শেখ মুজিব ওয়ে’ তে দাঁড়িয়ে
এই প্রজন্ম, মার্কিনী হাওয়ায়
ওড়ায় বাংলাদেশের পতাকা।
আপনার ছবির দিকে তাকালেই
অনেকগুলো কবিতা,
আমার মগজের
কবিতা|
১টি মন্তব্য
| মন্তব্য বন্ধ রাখা আছে
|
৬৮ বার দেখা
| ৯১ শব্দ ১টি ছবি
এত বৃষ্টি চারদিকে,
তবু ধুয়ে নিতে পারছে না আমাদের সম্মিলিত পাপ
এত আগুন চারদিকে
তবু পুড়ে যাচ্ছে না অজগরের লকলকে জিভ
ঘূর্ণির প্রতিবেশী হয়ে থাকি
তবু উড়িয়ে নেবার শক্তি দেখি না
সবাই আমার চোখের দিকেই তাকায়
তবু পরিচিত কোনও মানুষ দেখি না
পাখিভাষ্য শিখতে পারে না মানুষ। কিন্তু মানুষ পোষে পাখি,
উড়ে যেতে চায় পাখির ডানায়- চলে ও চালায়
জীবন, জীবনের ছায়া- জলের একান্ত প্রতিবিম্ব।
মানুষ যে অক্ষর ধারণ করে বুকের পাঁজরে- তার মাঝে
কি থাকে পাখির জন্য সামান্য ভালোবাসা!
অথবা যারা বৃক্ষ হত্যা করে, নগর পোড়ায়,
দখল করে নদী- তাদের
হর্সরেস শেষ হয়ে গেছে বেশ আগেই। যারা দেখতে এসেছিল ঘোড়দৌড়
তারা সবাই ফিরে গেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি।
আমার নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য না থাকায়— পথ থেকে পথে দীর্ঘদিন বড়
সুখে বাজিয়েছি সানাই। উৎসব নয়, তবু আনন্দে নেচেছি নদীর মতো।
আর আকাশের সীমানা থেকে ধার নিয়ে
দূরের পাখিরা জানে এই আষাঢ়ের অন্যনাম- তোমার চিঠি। অথবা ভালোবাসার
পুরনো খাম- নতুন অক্ষরে সাজানো একটি কদমফুল। ভুল করে উজানে বয়ে
যাওয়া নদীর প্রশ্বাস জমা রাখা দুপুর।
হতে পারে ভোর- কিংবা বাঁশির সুর। যে সময়ের কাছে রেখে এসেছি আলোর অতীত।
মনে পড়ে ? এই আষাঢ়েই আমরা গেড়েছিলাম আরেকটি
যে কাঁটা গলায় বিঁধার কথা ছিল, তা বিঁধেছে চোখে
কিছুই দেখছি না আর,
কিছুই মনে করতে পারছি না, আদৌ
মানুষ ছিলাম কী না, কোনো জনমে
দাঁড়িয়েছিলাম কী না- কোনো মানুষের পাশে।
উড়ে যাচ্ছে পাথর। উড়ছে রক্ত- বাষ্প হয়ে
তারপরও আমাদের নিষ্ক্রিয় নাসারন্ধ্র, পাচ্ছে না
কোনো গন্ধ, পরখ করতে পারছে না বর্ণের
মানুষের দিকে তাকালেই, আমার চোখের দিকে
উড়ে আসে একগুচ্ছ ছাই,
বৃক্ষের দিকে কান পাতলেই, বেজে ওঠে
একটি পুরনো করাতের ক্রন্দন ধ্বনি-
আর নদীর দিকে!
না, কী দেখি তা আর বলা যাবে না।
বলতে পারছি না অনেক কিছুই,
দেখতে পাচ্ছি না কবি কিংবা চিত্রশিল্পীদের
মুখ। যারা বাঁশি বাজায়, কিংবা যারা একান্তই
একলা থাকতে
এখন রপ্ত করতে চাই কীভাবে পালাতে হয়, কীভাবে দীর্ঘ করা যায়
বিভিন্ন ছুটিদিবস- কীভাবে অন্য কোনো গ্রহে পৌঁছে নেয়া যায়
মুক্ত নিশ্বাস। জানি সেদিন হয়তো থাকবে না আর এই শ্বাসকষ্ট,
এই পোড়ামাটিচিহ্ন লেগে থাকবে না আমার হাতে, অথবা যে ছবিগুলো
একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, সেগুলোও জোড়া লাগাবার প্রয়োজন
পড়বে
আজকাল আমার, আমাকেই মনে পড়ে খুব-
আর মনে পড়ে সেই সড়ক, যে তার নাম ভুলে
গেছে অনেক আগেই। সবুজ শুশ্রূষা পেয়ে সেরে
উঠেছে যে নগর, তার চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে একাকী
বেহালা বাজায় যে বিবাগী বাউল,মনে পড়ে তার
চাহনীর দূরমালা,কীভাবে স্পর্শ করে আকাশের মেঘ।
আজকাল নিজের নাম লিখে বর্ণিল অক্ষরে সাজাই তার
চারপাশ।