একটি গালি ও একটি উচ্চাভিলাষী চিন্তভাবনা

একটি গালি ও একটি উচ্চাভিলাষী চিন্তভাবনা

FB_IMG_1741931625398
ফকির আবদুল মালেক ১৪/০৩/২০২৫

জ. ই. মামুনের স্ট্যাটাস থেকে শুরু করি। তিনি লিখেন-

Off the Record বলে একটা কথা আছে ইংরেজিতে, যার মানে হলো রেকর্ডের বাইরে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা। আমরা যারা টেলিভিশনে ক‍্যামেরার সামনে কাজ করি, যে কোনা লাইভ টক শো বা সংবাদের বিজ্ঞাপন বিরতিতে কিংবা অনুষ্ঠানের আগে-পরে স্টুডিওতে বসে অতিথি বা কন্ট্রোল রুমের সহকর্মীদের সাথে নানারকম কথা বলি। তার মধ্যে কাজের কথার বাইরে অকাজের কথাও থাকে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সংবাদ কর্মীরা অফ দ‍্যা রেকর্ডে মাঝে মধ্যে গালাগাল‍িও করে থাকে। বেশিরভাগ সময় গালাগালির প্রধান টার্গেট থাকে নিজের কপাল, নিউজরুমের বস, অথবা টিভির মালিক কিংবা কখনো কখনো নেতা- মন্ত্রী থেকে শুরুর করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যক্তি।

শুনলাম, সেরকম একটা অফ দ‍্য রেকর্ড বক্তব‍্যের জন‍্য আজ এখন টেলিভিশনের একজন সংবাদ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

উনি হয়ত ঠিকই শুনেছেন। আমরা অনেকেই শুনেছি। তবে আমাদের শুনা আর জ. ই. মামুনের শোনার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। তার শোনাটা আমাদের থেকে বেশি অথেনটিক হবে এটা স্বাভাবিক।

এখন অনলাইনের যুগ। অডিওটি আমরাও শুনেছি। সেখানে সারসিজ ও হাসনাত আবদুল্লাহকে শুয়র বলে গালি দেয়া হয়েছে।

জ.ই. মামুন সবশেষে একটি কথা বলেছেন যা আমার খুবই নজর কেড়েছে। তিনি লিখেন-

সবচেয়ে বড় কথা, একজনের গালি টেলিভিশনের টেকনিক‍্যাল ভুলের কারণে আপনি শুনে ফেলেছেন বলে তাকে চাকরিচ‍্যুত করলেন, কিন্তু যাদের গুলো শুনছেন না- তাদের মুখ বন্ধ করবেন কি করে!

এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বেড়িয়ে আসছে গালিগালাজ অনেকেই করছেন। এখন আমি যে বিষয়টা আলোচনায় আনতে চাইছি সেখানে প্রসঙ্গিক ভলতেয়ার ও আমাদের দেশের সমসাময়িক আলোচিত সমালোচিত শুয়র গালি খাওয়া হাসনাত আবদুল্লাহ।

অনেকে হয়ত বলে বসবেন কিসের সাথে কি পান্তভাতে ঘি! অনেকে হয়ত হাসতে পারেন কিন্তু যে যাই বলুক, আমারও স্বাধীনতা থাকতে হবে নিজের মত প্রকাশের।

মত প্রকাশের প্রচলিত পথগুলো যখন সংকুচিত হয়ে আসে, তখন মনে পড়ে ফরাসি লেখক, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক ম্যারিক আরোয়েট ভলতেয়ারকে। যিনি বিশ্বব্যাপী ভলতেয়ার নামেই পরিচিত। যাঁকে বলা হয় অষ্টাদশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরাসি সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক।

ভলতেয়ারের যে উক্তি সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক তা হলো, “তোমার মতের সঙ্গে আমি হয়তো একমত নাও হতে পারি; কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে যাব।”

এখন আসি খালি খাওয়া আমাদের সেই ছেলে কি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সে তার স্ট্যটাসে লিখেছে-

“এখন” টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা এই দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আপনার এই গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম।

শুধু মত প্রকাশ নয়,দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক।’

এখন যারা তাদের গালি দিচ্ছেন আরও উচ্চস্বরে দিন। কিন্তু এই গালি খাওয়া ছেলেমেয়ের চিন্তাভাবনাকে আমি সন্মান জানাই। কেউ হয়ত বলবেন এটা চমক। আমাদের চমকে দেয়ার আর ভালোবাসা পাওয়ার মত কাজ আর মতামত তারা অব্যাহতভাবে দিয়ে যাক এই কামনা রইল।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

কোন মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন