নপুংশক জাতীর অহংকার: প্রসঙ্গ কিছু আলোচিত মন্তব্য

শ্রদ্ধেয় একজন ব্লগার পূর্ববর্তী এক পোস্টে তার মূল্যবান মন্তব্য করেছেন এবং তাতে আরেকজন ব্লগার সমর্থনও করেছেন। আমার কাছে মনে হলো এটা নিয়ে কিছু তথ্যবিভ্রাট সম্পর্কিত আলোচনার দাবী রাখে।

১৯৪৭, ৬৬, ৭১ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্রচুর বাঙ্গালী হিন্দু মাইগ্রেশন নিয়েছে ভারতে। হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়। প্রণামে আর ঈশ্বর কৃপায় মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে ফেলেন আর কি। বৃষ্টি হয় এখানে আর মাথায় ছাতা তুলে দেশে।

“দাঙ্গার ইতিহাস” লিখেছেন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রকমারীতে পাবেন। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। বেশ বস্তুনিষ্ঠ দলিল এজন্য বলবো যে ততকালীন পত্র পত্রিকা ও দস্তাবেজ ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়েগেছে এবং সে খবরে বাংলাও বেশ গরম। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর নোয়াখালীর পীর গোলাম সারোয়ার হুসেনী জনসমাবেশে হিন্দুদের ওপর সরাসরি আক্রমন করার নির্দেশ দেন নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান ও বানু কুরায়জার গনহত্যার রেফারেন্স টেনে। তখন তার নিজস্ব মিঞা বাহিনী ও এলাকার মুসলমান অনুসারীরা হিন্দুদের ওপর আক্রমন করে হাটের মধ্যে। শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। পুরো দাঙ্গায় মৃত্যু হয় প্রায় ৫০০০০ হিন্দু এবং ধর্ষিতা হয় লক্ষাধিক নারী। কখনো কখনো নবী মোহাম্মদের সাফিয়া ধর্ষন অনুসরনে সেখানকার বনেদী ব্যাবসায়িক পরিবারের প্রধান কর্তা, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করে যুবতী ও কিশোরী নারীদের ধর্ষন করা হতো গনিমতের মাল হিসেবে এবং তাদেরকে উপহার হিসেবে বন্টন করে দেয়া হতো। প্রতিবেশী হিসেবে থাকা মুসলমানেরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের ঘরে ঢুকে হত্যা ধর্ষন কিছুই বাদ রাখেনি। পরে যখন নোয়াখালী ছেড়ে রায়টের ভয়াবহতা কুমিল্লা চাঁদপুর ছড়িয়ে পড়ে তখন মুসলিম লীগের পান্ডারা তাতে যোগ দেয় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম আক্রান্ত হয়।

ততকালীন মাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী এটাকে তুচ্ছ সন্ত্রাসী ঘটনা বলে উড়িয়ে মুসলমান জঙ্গিদের আরও সুযোগ করে দেন সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে। যখন কেন্দ্রিয় সরকার থেকে প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে এবং স্বয়ং গান্ধীজি স্বদ্যোগী হন তখন তিনি মেনে নেন। কতটা চশমখোর হলে এটা সম্ভব, চিন্তা করা যায়? এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের টাকা মেরে খাওয়া আরেক জোচ্চর শেরে বাংলা ফজলুল হক বলে বসেন হিন্দু নারীদের ধর্ষন সম্পর্কে: হিন্দু নারীরা প্রাকৃতিক ভাবেই বেশী সুন্দরী।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে কম্যুনিস্ট ধরবার নামে এক হিন্দু বাসায় গিয়ে স্ত্রী কন্যাকে একি বিছানায় ধর্ষন করতে উদ্যোত হলে জয়দেবের বর্শায় খোচায় দুই ধর্ষক মুসলমান কনস্টেবল জায়গায় অক্কা পায় এবং শুরু হয় ৫০ এর রায়ট যা ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল খুলনা পর্যন্ত। নাচোলের গনহত্যার নাম শুনে থাকবেন হয়তো। এরকম আপ্যায়নের কথার সাথে “হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়।” এ কথাটি যায় না।

সত্যিকারের অত্যাচারিত কত জন সেটা বলা যাবে না। আমি তো অন্তত বিশ্বাস করি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব দেশেই আছে।

মন্তব্যে এ কথাটা তৎকালীন বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী বললেও যখন গান্ধীজি এবং কেন্দ্রিয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী আকাশযোগে উপদ্রুত এলাকা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে সেসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে নামসর্বস্ব তদন্তকমিটি গঠন করলেন। কিন্তু সেসব এলাকার জঙ্গি মুসলমানরা এক অদ্ভুত টেকনিক হাতে নিলো। তারা ধর্ষিতা ও গনিমতের মাল হিসেবে রেখে দেয়া নারীদের দ্রুত কাগজ কলমে টিপসই নিয়ে ধার্মান্তরীত করে বোরখা পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে স হসা না চেনা যায়। এবং যারা বেচে গেছেন তাদের কাছ থেকে মুসলিম লীগের জিহাদী ভাইয়েরা জিজিয়া করের নামে চাঁদা ওঠাতে লাগলেন। পরে যখন কেন্দ্রীয় সরকার স হ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন রিপোর্ট দেয়া শুরু করলো তখন বাঙ্গালী জঙ্গি মুলসমানদের হত্যাকান্ডগুলো বানু কুরায়জার ওপর নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান বা আলির খাওয়াজিরী গনহত্যা বা বক্কর উমরের রিদ্দার যুদ্ধে অনুসৃত নৃশংস ও বর্বরতম পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা হয়েছে যেসবের বর্ননা দেখলে আতকে উঠতেই হয় এবং শুধু শৈলেশের বই নয়, ১৯৬০ সালে লেখা মোকসেদের লেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নামের বইতেও সেটা উঠে এসেছে। এরপরও প্রচুর দাঙ্গা হয়েছে এবং সেসবে বাঙ্গালী জঙ্গি মুসলমানদের বর্বরতা পাকিস্থানীদের হার মানায়। আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই পাকিস্থানী মুসলিম ভাইয়েরাই ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি মুসলমানদের একই রকম ফিদায়ী ধর্ম যুদ্ধ শুরু করে যার ফলাফল হয় রক্তাক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু যে জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফিদায়ী অভিযান, আমাদিয়া ইশতিশাদী, ইন ঘিমাসের মতো জিহাদী চেতনা সে দেশ কিভাবে সাম্প্রদায়িক না হয়ে থাকতে পারে?

কাগজে কাগজে যতই সেক্যুলারিজমের কথা বলা হোক না কেন; বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ আপনিও ভালো জানেন। ভারত এখন আর অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। হিংসাত্মক অত্যাচার কতটা আর এর চেহারা কতটা ভয়াবহ তা কিন্তু বাংলাদেশের নব্য মাথামোটাদের ধারণায়ই আসবে না। বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

ভারতের কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক হলেও তার কিছুটা ধরে রেখেছিলো বলেই আবুল কালাম আজাদ নামের মুসলিম বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। সেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। এটা ঠিক মোদীর থিওক্রেটিক চেহারার ভারত কখনোই কারো কাছে কাম্য নয় এবং সেজন্যই সেখানে এর জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ভারত বিজ্ঞান স হ অন্যান্য বিষয়ে যতটা এগিয়েছে সেটা আপনি ভাবতে পারবেন না। আবার বাংলাদেশের যত মানুষ ভারতে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়, শোনা যায় না কাশ্মীর বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে মুসলমানরা নিগৃহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতে মুসলমানরা যদি খারাপ হয়েই থাকবে তাহলে চলচ্চিত্র তারকা নুসরাত কিভাবে লোকসভায় আসন পায় এবং ধুমধাম করে শাদী করে। অথবা সালমান খান শাহরুখ খান? আপনি হয়তো বলবেন এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আসুন পরিসংখ্যান। অন্তত মানুষের মুখের গুজব ও মিথ্যা কথার জবাব পরিসংখ্যান ভিন্ন কিছু হতে পারে না
উইকির এই পেজ অনুসারে আপনি বাংলাদেশ থেকে কত হিন্দু, এমনকি মুসলমানরাও সেখানে যাচ্ছে। বারাকাত সাহেবের পরিসংখ্যান আপনাদের বিশ্বাস হবে না কারন উনি নিজে কিছু অন্যান্য দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার সবকিছুই এখন প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু উইকির ঐ পেজে বেশ কিছু একাডেমিক ও স্বাধীন পরিসংখ্যান আছে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাওয়া হাস্যকর। যদিও বাঙ্গালী যেখানে এখনও বিশ্বাস করে চাঁদে নবী মোহাম্মদের দ্বিখন্ডনের দাগ আছে বা চাঁদে নাসা যাইনি কিন্তু সাঈদিকে দেখা গেছে, তাদের কাছে একাডেমিক গবেষনা মানেই নাপাকী জিনিস, তাই না?

আরেক জায়গায় বলা হয়েছে

আমার আশেপাশে মুসলিম যারা রয়েছেন, আমি দেখেছি তারা কখনও ভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হবার চিন্তাই করে না।

ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন কাউন্সেলিং এর তথ্যমতে ইউরোপে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিমরা অভিবাসী হয়। এদের বেশীরভাগই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো মাইগ্রেশন পলিসির তথ্যমতে লিবিয়া দুবাই হয়ে সাগর পথে পাড়ি দেয়া সবচেয়ে অবৈধ অভিবাসী হলো বাংলাদেশীরা। ইউরোপীয়ানরা এই পরিসংখ্যান এজন্য অবাক হন যে বাংলাদেশে নেই কোনো দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বা কোনোকিছু। আবার আপনিও বলছেন এদেশে হিন্দু মুসলমান সবাই ভারতের থেকে অনেক ভালো।

আবার কমেন্টের সাথে সহমত জানিয়ে আরেক সহব্লগার যে কমেন্ট করেছেন, প্রোফাইল ঘেটে দেখলাম উনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী। তবে এটা ঠিক ব্যাক্তিগত জীবনে আমরা সবাই এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হই যেটা কিনা আমাদের ভাবনার মানসপটে এবং চিন্তা চেতনায় প্রভাব ফেলে

গতকাল বাবাকে ফোন দিলাম দেশের পরিস্থিতি জানার জন্য উনি বললেন গুজব নাকি ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র। আমি তার উত্তরে বললাম, গুজব সবচেয়ে বেশী হয় পুরান ঢাকায় এটা তুমি নিজেও জানো। এবং এসব অশিক্ষিত লোকজন কি ভারত থেকে টাকা খাইছে? এটা তোমার মনে হয়?

তখন সে একটু চিন্তা করে বললো, তুমি ঠিক বলছো। অশিক্ষিতদের দোষ দিয়ে হবে, শিক্ষিতরাও তো করতেছে। সবাই করতেছে। আমি বুঝি না দোষটা তো সব তো দেখি আমাদের। আমরা এমন হইলাম কেন?

বাবার এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। কিন্তু তাকে দিতে মন চাচ্ছে না। উনি আবার আগামী বছর দ্বিতীয় হজ্ব করার স্বপ্ন দেখছেন।

শুভ ব্লগিং

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৭টি) | ৯ জন মন্তব্যকারী

  1. শাহাদাত হোসাইন : ২৬-০৭-২০১৯ | ১৯:১৫ |

    আপনি সামুর মডু নন এটা আমি জেনেছি পরে, ভুল হয়েছে আমার আমি জানি। আপনি আপনার আইসো গাজা টানি শিরোনামে পোস্ট কি বলেছেন আপনি ভুলে গেছেন মনে হয়! আপনি বলেননি যে বিবর্তন তত্ব কোনো বিশ্বাস না, এটা এখন প্রতিষ্ঠিত তত্ব। এটা এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে আপনা পেট খারাপ মাথা ব্যাথা থেকে শুরু করে নতুন নতুন ফসলের জেনেটিক ও হাইব্রীড উৎপাদন তথা আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্ম ও তার টিকার মধ্যেও বিবর্তনের সফল প্রয়োগ আছে।

    আপনি যদি বিশ্বাস না করেন সেটা আপনার ব্যাপার তবে সেখানে প্রশ্ন আসতে পারে আপনি যদি বিবর্তন বিশ্বাস নাই করেন তাহলে এ্যামোক্সিলিন ফাইমক্সিল অথবা জ্বর জারীর জন্য প্যারাসিটামলের শরনাপন্ন হোন কেন? আপনার তো ডাকাতের লেখা বই অনুসারে কিছু আয়াত পাঠ বা সুন্নতী উস্টমুত্র বা কালিজিরা বা খেজুর পান করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় তাই না?? আপনার বলা শেষের বাক্যগুলো কি বুঝায়? (আপনার তো) এ কথাটি কি আমাকে বলা হয়নি??

    সুন্নতী উস্টমুত্র বলতে কি বুঝিয়েছেন? ডাকাতের লেখা বই বলতে কি বুঝিয়েছেন? আর আপনি এসব মিথ্যা তথ্য কোথায় পেয়েছেন? ডাকাতের লিখা বই, সুন্নতী উস্টমুত্র এগুলো কোথায় পেয়েছেন?? মনগড়া আর বানোয়াট কথা বলবেন না সব জায়গায়। সাময়িক পোস্টে আপনি ব্লগারদের জঙ্গি ও বেয়াদব বলেছেন! আপনি ঐ সমস্ত ব্লগারদের কয়টি পোস্ট পড়েছেন? তাদের পোস্টে কি জঙ্গি সুুুূত্র পেয়েছেন? নাকি কোথাও বোম মারা হবে এমন তথ্য পেয়েছেন?

    GD Star Rating
    loading...
    • উদাসী স্বপ্ন : ২৬-০৭-২০১৯ | ১৯:৩৪ |

      আমার কি এই কমেন্টের জবাব দেয়া উচিত হবে? যদি ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ না করে তাহলে দিতে পারি হাদিস তাফসীরের সুত্র আর অন্য ব্লগে তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের স্নাপশট দিয়ে।

      GD Star Rating
      loading...
      • শাহাদাত হোসাইন : ২৭-০৭-২০১৯ | ০:৫০ |

        আমি প্রস্তুত আপনার করা মন্তব্যের শেষ বাক্যগুলো নিয়ে ডিবেট করতে। সবাই জানুক আপনার করা মন্তব্যটি কতটুকু সঠিক ও যুতসই? প্রমাণ ও দলিলের ভিত্তিতে কথা হবে, তর্ক হবে, ডিবেট হবে।

        GD Star Rating
        loading...
      • উদাসী স্বপ্ন : ৩১-০৭-২০১৯ | ৬:৪৭ |

        মুত্র পান প্রসঙ্গে: 

        সহী বুখারীর এই লিংকে ৫৯০ নম্বর হাদিস (এই সহী হাদিসটা বুখারীর মেডিসিন পার্টেও আছে) আসুন তার আগে স হী মুসলিমে দেখে নেই আসলে সেখানে কি বলা আছে: আনাস ইবনে মালিক বর্নিত কিছু লোক যারা কিনা উড়াইনা গোত্রের নবী মোহাম্মদের সাথে দেখা করতে মদিনা আসে কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের জন্য উপযুক্ত ছিলো না। তাই নবী মোহাম্মদ তাদের বললেন যে যদি তোমরা পছন্দ করো সদকা করা উটের কাছে গিয়ে তার দুধ ও মুত্র পান করো। তারা তাই করলো এবং সুস্থ বোধ করলো। তারপর তারা রাখালের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে হত্যা করলো এবং ইসলাম ত্যাগ করলো এবং নবীর উটগুলোকে তাড়িয়ে দিলো। যখন নবীর কাছে এই খবর এসে পৌছালো তখন তাদেরকে খুজে বের করার জন্য লোক পাঠালেন এবং টাদের পাকড়াও হলে স্বয়ং তাদের হাত ও পা কাটলেন এবং চোখ উপড়ে ফেলেন। এরপর তাদেরকে পাথুরে মাটিতে নিক্ষেপ করলেন যতক্ষন না তারা মারা যায়।

        হাদিসের বোল্ড করা অংশে দেখুন স্পস্ট লেখা তারা ইসলাম ওখানেই ত্যাগ করে তার মানে নবীর আগে জানার কথা না যে তারা মূ্তি পুজাড়ী ছিলো বা তাদের মনে কি আছে। 

        আসেন ব্যাপারটা সম্বন্ধে অন্যান্য স্কলারদের বইয়ে দেখি। বুখারীর এই লিংকের ভলিউম ১ বই ৪ হাদিস ২৩৪ নম্বরে বলা আছে তারা উকলা অথবা উড়াইনা এবং এটার বর্ননা দিয়েছেন আবু কিলাবা তাও আনাস মারফত এবং হাদিসের শেষে বলেছেন যে মোহাম্মদ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছে চুরি হত্যা এবং ইসলাম ত্যাগ করে আল্লাহ ও তার নবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য। 

        এখন এই হাদিসগুলো থেকে স্পস্ট যে নবী মোহাম্মদের কাছে তারা যখন আসে মুসলমান ছিলো এবং তাদের মনে কি ছিলো সেটা তার জানা ছিলো। আর তাই নিরীহ রাখালের কাছে পাঠিয়েছিলেন যাতে তারা দুধ ও মুত্র পান করতে পারে।

        এখনো বিশ্বাস হয় না তাহলে তাবারীর এই লিংকে গিয়ে ৯৭, ৯৮ পৃষ্ঠায় পাবেন যে মুহাম্মদ বিন উমার< আল আকাদী বর্নিত বানু উড়ায়নার বিরুদ্ধে অভিযানে কুর্জকে ২০ জন অশ্বারহী সহ পাঠান যাদের সদস্যরা তার রাখাল হত্যা করেছে এবং তার উট তাড়িয়ে দিয়েছে হিজরী ৬ সালে।

        এখন ইবনে ইশাকের ৬৭৭-৬৭৮ নম্বর পেজে দেখুন: Some men of Qays of Kubba of Bajila came to the apostle suffering from an epidemic and enlarged spleens, and the apostle told them that if they went to the milch camels and drank their milk and their urine they would recover, so off they went. When they recovered their health and their bellies contracted to their normal size they fell upon the apostle's shepherds Yasar and killed him and stuck thorns in his eyes and drove away his camels.

        এখানে স্পস্ট মুত্রের কথা লেখা আছে।

        আর তাদের শাস্তির ব্যাপারে এবং যখন তারা নবী মোহাম্মদের কাছে এসেছিলো উনি ঘুনাক্ষরেও জানতেন না তারা মোনাফেক। বরংচ অন্যান্য মুসলমানদের মতোই আচরন করেছেন। এবং তাদের শাস্তির মূল কারন চুরি, খুন ও ইসলামত্যাগ করার জন্য এসব খুব পুংখানুপুংখ লেখা আছে ইবনে সা'দের কিতাবাল তাবকাত আল কবীর, ভলিউম২, পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫

        তার মানে উপরোক্ত দলিল সমূহ প্রমান করে যে উটের মূত্র মুসলমানদের জন্য ওষুধ হিসেবে পান করতে বলেছেন। এর প্রমান স্বরূপ এই লিংকে গেলে জানতে পারবেন যে ইবনে আল কাইয়িম বর্নিত ইবনে সীনার আল কানুন বইতে লিখেছেন যে বেদুঈন উট যাকে নাজীব বলে পরিচিত তার মুত্র পান করা সবচেয়ে বেশী উপকারী। জাদ আল মাদের ৪/৪৭, ৪৮।

        এবং এরই ধারাবাহিকতায় মিডল ঈস্টের বিজ্ঞানীরা একই গবেষনা করে বের করেছেন যেটা কিনা বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছিলো। এবং সৌদীর আরবে ইসলামিস্ট হুজুররা যে নিয়মিত এই মুত্র পান করছে তার খবর ভিডিও স হ এখানে পাবেন।

         

        নব্যুয়তের পর নবী মোহাম্মদ তিনভাবে তার জীবিকা উপার্জন করতেন

         

        ১) দাস দাসী উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। এরমধ্যে যেসব দাসী যৌনদাসী হিসেবে ছিলো তাদের বিক্রি করা নিষিদ্ধ ছিলো। তিনি এসব দাসী তার শ্বশুড়, চাচাতোভাই ওরফে নিজের মেয়ের জামাই সহ আত্মীয়, অনুসারীদের গিফট করতেন

        ২) ধর্ম বিক্রি। নিজেরে ইসলামের শিক্ষক হিসেবে সে ধর্ম ছড়িয়ে দেবার বিনিময়ে সদকা বা গিফট গ্রহন করতেন। ইসলামে গিফট ফিরিয়ে দেয়া হারাম

         

        ৩) লুট তরাজ ডাকাতী। সুরা বাকারা ২৮৪ নম্বর আয়াতের ক্বাথীরের তাফসীর অনুযায়ী ঘাতাফানে নিজের তৈরী কৃত মদিনা সনদের চুক্তি নিজে ভঙ্গ করে নাখলায় আক্রমন করে হত্যা এবং তা থেকে প্রাপ্ত লুটকৃত মাল গ্রহন এবং উচ্চমূল্যের বিনিময়ে নিরস্ত্র বনিকদের কোরাইশদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া তার প্রমান। এছাড়া খাদাকের উদ্যান যেটা কিনা নিজের নামে রেখেছিলাম এবং তা থেকে নিজের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেন সেটাও ছিলো লুটকৃত জায়গা। তিনি জীবনে প্রায় ৪১টার মতো লুটতরাজ ঝগড়া এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হন যার মাত্র চারটিতে তার ওপর আক্রমন করা হয়েছিলো। নব্যুয়ত পাবার পর থেকে মৃত্যু অর্থাৎ ২৩ বছর বয়সে এতগুলো লুট তরাজ এবং ৫ ভাগের ১ ভাগ আল্লাহর নামে নিজের কাছে রেখে দেয়া গনিমতের মাল এবং তা থেকে জীবিকা নির্বাহ এটাই প্রমান করে। রেফারেন্স লাগলে জানান

        GD Star Rating
        loading...
    • মুরুব্বী : ২৬-০৭-২০১৯ | ১৯:৫৭ |

      সম্ভব হলে মন্তব্যকারীর মন্তব্যের উত্তর দিতে পারেন মি. উদাসী স্বপ্ন। Smile
      আপনার পোস্টে আমি কি মন্তব্য দেবো সেটাই তো বারবার ভুলে যাচ্ছি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cry.gif

      GD Star Rating
      loading...
      • উদাসী স্বপ্ন : ২৬-০৭-২০১৯ | ১৯:৫৯ |

        কেন যে এভাবে কমেন্ট করে আমাকে লজ্জিত করেন! একে তো কাল কাকের মতো চেহারা, তার ওপর লজ্জায় লাল হলে পুরো আফ্রিকান মনে হবে। এমনেই স্থানীয়রা বারবার জিজ্ঞেস করে আমি এংগোলা থেকে আগত কিনা…..

        GD Star Rating
        loading...
    • মুরুব্বী : ২৬-০৭-২০১৯ | ২০:০৫ |

      হাহাহাহ। এগিয়ে চলুন স্যার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_PC Hack.gif.gif

      কারু মন্তব্যে যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে সেটা নিবৃত করাই ভালো। সেই ই সেরা যিনি তীর্যক মন্তব্যে তার না জানা প্রশ্নটি রাখেন। জবাবদিহিতা থাকা ভালো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

      GD Star Rating
      loading...
      • উদাসী স্বপ্ন : ৩১-০৭-২০১৯ | ৬:৪৮ |

        উত্তর দিয়ে দিলাম রেফারেন্স যদিও সব দেইনি। আপনি ভরসা দিয়েছেন তাই উত্তরটা দিলাম।

        GD Star Rating
        loading...
    • মাহমুদুর রহমান : ২৬-০৭-২০১৯ | ২১:৫১ |

      @শাহাদাত সাহেব 

       

      উনি এসকল লিখা টাকার জোরে কিংবা গায়ের জোরে লিখেন।এসকল অর্থহীন লেখার মাধ্যমে আনন্দ পান।এটা মোটেও শুভ লক্ষন না। 

      GD Star Rating
      loading...
    • মুরুব্বী : ২৬-০৭-২০১৯ | ২২:১০ |

      মি. মাহমুদুর রহমান। উদাসী স্বপ্ন এর পোস্টে আগে পরে করা আপনার মন্তব্য শব্দনীড় লক্ষ্য করেছে। অনুগ্রহ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকে কথা বলুন।

      কারু পোস্ট ভালো না লাগলে মন্তব্য থেকে বিরতও থাকুন। শব্দনীড় ব্লগ পরিচ্ছন্ন থাকতে চায়। ঐতিহ্য অনুযায়ী কোন প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য শব্দনীড় অনুমোদন দেয় না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অন্য কোন ব্লগের অভিজ্ঞতা এখানে শেয়ার করার প্রয়োজন নাই। আপনাকে ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
      • মাহমুদুর রহমান : ২৬-০৭-২০১৯ | ২৩:০০ |

        মুরুব্বী সাহেব আপনার একটি কথা আমার কাছে দুমোখোনীতির মতো লেগেছে।   সেটা হলো আপনি বলেছেন , 

        ঐতিহ্য অনুযায়ী কোন প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য শব্দনীড় অনুমোদন দেয় না। 

         

        উদাসী সাহেব " আইসো গাঁজা টানি"শিরোনামে একটি পোষ্টে জনাব শাহাদাত হোসাইনের মন্তব্যের প্রতিউত্তরে লিখেছেনঃ 

        আপনার তো ডাকাতের লেখা বই অনুসারে কিছু আয়াত পাঠ বা সুন্নতী উস্টমুত্র বা কালিজিরা বা খেজুর পান করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় তাই না?? 

         

        আমি জানিনা জনাব মুরুব্বী সাহেব আপনি কোন ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ নিরপেক্ষ নাকি পক্ষপাতিত্বের তবে এই মন্তব্যের আপনার কোন ব্যবস্থা নিতে দেখিনি অথবা শব্দনীড় লক্ষ্য করেনি।এটা খুবই দুঃখজনক।ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া তবে কি শব্দনীড় সমর্থন করে? 

        GD Star Rating
        loading...
    • মুরুব্বী : ২৬-০৭-২০১৯ | ২৩:২৭ |

      সরাসরি কথা বলার জন্য ধন্যবাদ মি. মাহমুদুর রহমান।

      প্রয়োজনে একটি প্লাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী নীতি থাকতে পারে। প্রয়োগ হচ্ছে বাস্তবতা। ব্লগ পরিচালক হিসেবে কিভাবে প্রয়োগ হবে তা দেখার জন্য কারু স্বাক্ষ্য নেবার প্রয়োজন আমার নেই। আপনারা সবাই শব্দনীড়ের সম্মানিত ব্লগার। শব্দনীড় দেখে পোস্ট কন্টেন্ট। মন্তব্যে আপনাদের ত্রি-মুখী কথোপকথন শব্দনীড় লক্ষ্য করেছে। সুখি হবার মতো নয়।

      আমি কোন ধর্মের অন্ধ অনুসারী নই। পক্ষপাতিত্ব থাকলে ঐ মন্তব্য থাকতো না। আপনার বা তাঁর পক্ষ নিলে নিরপেক্ষতা হারাতো। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হলে ধর্ম অনুসারীরা যুক্তি খণ্ডন করবেন নাকি তিরস্কার করবেন সেটা স্ব স্ব ধর্মের অনুসারী ভালো বলতে পারবেন। তবে আপনাদের রিআ্যাক্ট শব্দনীড় পছন্দ করেনি। সরি। বিষয়টি এখানে সমাপ্ত করুন।

      GD Star Rating
      loading...
  2. সুমন আহমেদ : ২৬-০৭-২০১৯ | ২০:০১ |

    আলোচনাটা পড়লাম। অতোশত জানি না তবে আপনার রেফারেন্সকৃত তথ্যের সত্যতা রয়েছে মনে করি ভাই। মন্তব্য আর প্রতি-মন্তব্য চলতে পারে ভার্তৃত্ববোধ বজায় রেখে। 

    GD Star Rating
    loading...
  3. সাজিয়া আফরিন : ২৬-০৭-২০১৯ | ২০:৩১ |

    সত্য ইতিহাস কখনও চাপা থাকেনা। ইতিহাসের দলিল অম্লানই থেকে যাবে।

    GD Star Rating
    loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৬-০৭-২০১৯ | ২০:৩৮ |

    যুক্তি বা বিযুক্তি না থাকলে অতি-যুক্তিতে জীবন বড় পানসে মনে হয়। পারস্পরিক দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু আন্তরিকতা হারাতে পারে না। এরই নাম হোক ব্লগিং। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    আপনার বক্তব্য আমাদের ইতিহাস এবং বাস্তবতাকে রিপ্রেজেন্ট করে। কালের খেয়া যুগে যুগে ইতিহাস তৈরী হয়। লেখা ইতিহাসে আসতে পারে খণ্ড নিজস্বতা অথবা মনগড়া।  

    GD Star Rating
    loading...
    • উদাসী স্বপ্ন : ২৮-০৭-২০১৯ | ২২:৫৪ |

      এখানে অতিযুক্তি কোথায় দেখিয়ে দিলে কৃতার্থ হবো। আমি শুধু ইতিহাস এবং সর্বজনস্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আপনার বক্তব্যের সাথে মেলাবার চেস্টা করেছি।

       

      দ্বিমত থাকতেই পারে। আমি আলোচনা করতে পছন্দ করি। আপনার যদি কোনো দ্বিমত থাকে তথ্যের ভিত্তিতে তুলে ধরুন। জ্ঞান লাভে উপকৃত হবো বৈকি

       

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ 

      GD Star Rating
      loading...
  5. রিয়া রিয়া : ২৬-০৭-২০১৯ | ২২:১৫ |

    আমার মতো গৃহিনী ঘরানার মানুষের জন্য আপনার টপিকস একটি কঠিন হয়ে যায় দাদা। তারপরও আপনার এবং আপনার বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানাই। ভালো থাকুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • উদাসী স্বপ্ন : ২৮-০৭-২০১৯ | ২৩:০২ |

      স্বাভাবিক লেখা লিখবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি ইদানীং 

       

      ধনযবাদ মন্তব্যের জন্য

      GD Star Rating
      loading...
  6. আবু সাঈদ আহমেদ : ২৬-০৭-২০১৯ | ২২:৫৫ |

    এই ইতিহাস এভাবেই জানা ছিলো। যেমনটা আপনি বলেছেন বস্। গো এহেইড। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • উদাসী স্বপ্ন : ২৮-০৭-২০১৯ | ২৩:০৪ |

      ইতিহাস পাল্টানোর নির্লজ্জ কসরত প্রিয়া সাহার ঘটনার সময় দেখলাম। শিক্ষিত মানুষ এত সুন্দর গায়ের জোরে মিথ্যা বলে এবং ইতিহাস বিকৃত করে দেখে শুধু অবাক হয়েছি

      GD Star Rating
      loading...
  7. শাকিলা তুবা : ২৭-০৭-২০১৯ | ০:০৩ |

    নপুংশক জাতীর অহংকার বলতে কিছুই থাকা উচিত না। Frown

    GD Star Rating
    loading...
  8. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ২:০২ |

    ব্যস্ততার কারণে নেটে আসতে পারছিনা, সময় নেই তারপরেও জবাবের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্যই ব্লগে আসা। ধন্যবাদ ব্লগার উদাসী, আপনার জন্য আরো কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারলাম, কিছু বিষয়ে জানতে পারলাম। আপনার জবাবের পাল্টা জবাব ও আপনার কথাকে প্রতিটি লাইনে লাইনে খণ্ডন করে বিশ্লেষণ করার ইচ্ছা রেখেই লিখছি। আলোচনা দীর্ঘ হবে, ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো উদাসী ব্লগার। আপনার প্রথম বিশ্লেষণ উটের মূত্র পান প্রসঙ্গে, 

    হাদিস থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা হল, কিছু লোক আসলো পরে ইসলাম গ্রহন করলো এবং মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকূলে না হওয়াতে তাদের সুস্থতার জন্য উটের দুধ ও পেশাব পান করতে বলা হয়। পরে তারা সেটা খেয়ে (ঔষধ হিসেবে) ভাল হয়ে যায় অর্থাৎ ‘সুস্থ হয়ে যায়’।

    যাই হোক উটের দুধ নিয়ে নাস্তিকদের খাউজানি নাই। চুলকানি হল উটের পেশাব নিয়ে কারণ উটের পেশাব নোংরা জিনিস। তো রাসুল (সা) কেন এটি খেতে বললেন ?

    ইসলামী আইনশাস্ত্র অনুযায়ী মানে হানাফি ও শাফেয়ী ফিকহ অনুযায়ী উটের পেশাব অপবিত্র এবং হারাম। এটা শুধুমাত্র ঐ সময়ের হালাল হবে যখন এটি কোন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে এবং যখন সেই রোগের অন্য কোন হালাল ঔষধ থাকবে না। (২)

    বিখ্যাত হানাফি ফকিহ আল্লামা বাদরুদ্দিন আল আইনি (রহ) তাঁর বিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারী গ্রন্থে ঐ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা তখনই হালাল হবে যখন তার মধ্যে আরোগ্য আছে। এটা জানা যাবে এবং অন্য ঔষধ থাকবে না। এটি সেই অবস্থার মত, যখন খাবারের এবং পানির অভাবে মৃত্যু সময় যথাক্রমে হারাম মাংস হালাল এবং মদ পান করা হালাল হয়ে যায়। (৩)

    হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) তাঁর বিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারি গ্রন্থে ঐ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এরকম ঔষধের ব্যাবহার শুধুমাত্র তখনই হালাল হবে যখন অন্য কোন চিকিৎসা থাকবে না । (৪)

    উপরোক্ত বিখ্যাত হাদিস ব্যাখ্যাকারদের থেকে জানতে পারলাম। উটের পেশাব হারাম তবে শুধুমাত্র তখনই হালাল হবে যখন ব্যাক্তির রোগের জন্য অন্য কোন ঔষধ পাওয়া যাবে না। ঐ হাদিসেই কিন্তু আছে যে উটের দুধ ও পেশাব পান করে তারা সুস্থ হয়েছিল। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় উটের পেশাব ছিল ঔষধ স্বরূপ। এ ছাড়া রাসুল (সা) জীবনেও কখনোই কাউকে উটের পেশাব খেতে বলেননি।

    বর্তমানে অনেক পশুর পেশাব হতে ঔষধ তৈরি করা হয়। গর্ববতী ঘোটকীর পেশাব থেকে ইষ্টোজেন আলাদা করা হয় এবং সেটা ক্যান্সার সব বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়। সেটা ট্যাবলেট হিসেবে আমরা মুখে দিয়েই কিন্তু খাই বাজারে যেটা প্রিমারিন নামে পাওয়া যায়। উটের দুধ ও মূত্র দিয়েও ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে। (৫)

    এখন প্রশ্ন আসে কেন রাসুল (সা) রাখালকে হত্যা করার জন্য এত কঠিন শাস্তি দিয়েছিল ?

    উরাইনা, উকল গোত্রের দুটি অপরাধ ছিল

    * দায়িত্বে থাকা রাখালকে হত্যা করা।
    * উট চুরি করে পালিয়ে যাওয়া।

    তারা বাহ্যিকভাবে ইমান আনলেও তারা ছিল মুনাফিক আর যেহেতু রাসুল (সা) রাষ্ট্রনেতা ছিলেন তাই অবশ্যই বিচার কাজে শাস্তি প্রধান করা তাঁর অধিকার আর রাসুল (সা) যদি তাদের শাস্তি না দিতেন তবে মুনাফিকরা কাফেররা এত বড় অপরাধ করার পরেও মুক্তি পেয়েছে সুতরাং আর বেশি অপরাধ প্রবণ হয়ে যেত আর মজার কথা হল এরকম অপরাধ এরাই প্রথম করেছিল তাই এ বড় অপরাধকে কঠোর শাস্তির দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে। তা না হলে মদিনায় মুসলিমদের পুনর্বাসন অসম্ভব হয়ে পড়ত। কাফের মুনাফিকরা আরও সুযোগ পেয়ে যেত অপরাধ করার। এ জন্যই শাস্তি দেয়া হয়েছে।

    উরাইনা, উকল গোত্রের লোকেরা উটের দায়িত্বে থাকা রাখালকে খুব নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ইবনে জারুদ (রহ) তাঁর লিখত আল মুনতাকা গ্রন্থে, তাদের চোখে গরম লোহা ঢুকিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে আনাস (রা) হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসে বলা হয়েছে যে, ঐ গোত্রের লোকগুলা উটের দায়িত্বে থাকা রাখালের চোখেও কাটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল। (৬)

    এ ছাড়াও "জুরকানি" নামক গ্রন্থে আছে, উরাইনা, উকল গোত্রের লোকজন উটের দায়িত্বে থাকা রাখালের চোখে জিহ্বায় কাটা ঢুকিয়ে দেয়। তার হাত পা কেটে দেয় তারপর তাদের জবাই করে। (৭)

    এজন্যই কোরানে বর্ণিত হদ এবং কিসাসের মূলনীতি অনুযায়ী তাদের চোখেও গরম লোহা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের হাত পা কেটে দেয়া হয় এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। (৮)

    আর এই ঘটনার পরে আর কখনো এভাবে কাউকে হত্যার আদেশ রাসুল (সা) দেননি বরং এভাবে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। (৯)

    সুতরাং তাদের নিজস্ব কর্মের কারণেই তাদের উপর এরকম কঠোর শাস্তি আরোপ করা হয়েছিল। আর এখন আর এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক আমিন।

    রেফারেন্সঃ
    ১/ সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৫০১, ihadis.com
    ২/ কিতাব আল-মাবসুত, (ইমাম আবু বকর আল-সারাখশি রহ)। খণ্ড – ১, পৃষ্ঠা ৬০-৬১, অধ্যায়ঃ ওজু এবং গোসল।
    ৩/ উমদাতুল কারী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ৬৪৯।
    ৪/ ফাতহুল বারি। খণ্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ৪৪১।
    ৫/ http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/22922085
    https://io9.gizmodo.com/5776886/camel-urineand-its-use-in-medicine.
    ৬/ আল মুনতাকা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৬, হাদিসঃ ৮৪৭।
    ৭/ সহিহ বুখারি। (বাংলা অর্থ এবং ব্যাখ্যাঃ মাওঃ শামসুল হক ফরিদপুরি (রহ), ১৩ম সংস্করণ, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, খণ্ড=৩, পৃষ্ঠাঃ ২২৩।
    ৮/ কিসাসের আয়াত সমূহঃ সুরা মায়িদা আয়াত ৪৫, সুরা বাকারা ১৭৮

    বিষয়টি নিয়ে আরেকটু আলোচনা করবো।

    মুহাম্মদ (সাঃ) যাদেরকে উটের দুধ ও মূত্র (শুধু মূত্র নয়) পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে মুসলিম ভানকারী মুনাফেক ছিল, যা পরে প্রমাণ হয়েছে।

    – উটের দুধ ও মূত্র পান করার পর তারা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর তারা রাখাল বালককে নির্মমভাবে হত্যা করে উট নিয়ে পালিয়ে যায়।

    – একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লোককে (যারা আসলে মুনাফেক ছিল) মুহাম্মদ (সাঃ) উটের দুধ ও মূত্র পান করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) কোথাও বলেননি যে মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পান করতে হবে। এরকম কোনো কথা হাদিসে লিখা থাকলে কিছু মুসলিম অন্তত লোক লজ্জার তোয়াক্কা না করে উটের মূত্র পান করতই। কিন্তু মুসলিমরা কোথাও উটের মূত্র পান করে না। এই সাধারণ বোধটুকুও উটকো নাস্তিক ও গোমূত্র পানকারীদের নেই!

    উপসংহার: হাদিস অনুযায়ী আসলে ভণ্ড-মুনাফেকদের উচিত উটের মূত্র পান করা! কেননা মুহাম্মদ (সাঃ) যাদেরকে উটের মূত্র পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে ভণ্ড বা মুনাফেক ছিল।

     প্রফেট মুহাম্মদ তো মুসলিমদেরকে ঔষধ হিসেবে উটের মূত্র পান করতে বলেননি! এমনকি যেভাবে বলা হয়, মুসলিমরা উটের মূত্রকে পবিত্র কিছু হিসেবেও বিশ্বাস করে না। বরঞ্চ মুসলিমদের কাছে মল-মূত্র হচ্ছে অপবিত্র জিনিস।

     

    দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে পাশাপাশি দুটি হাদিস আছে যার মধ্যে প্রথম হাদিসকে এড়িয়ে গিয়ে বারবার দ্বিতীয় হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হয় (এখানে শুধু প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত করা হচ্ছে):

    Volume 7, Book 71, Number 589 (Narrated Anas): Some people were sick and they said, & ldquo; O Allah & rsquo;s Apostle! Give us shelter and food. So when they became healthy they said, “The weather of Medina is not suitable for us.” So he sent them to Al-Harra with some she-camels of his and said, “Drink of their milk.” But when they became healthy.

     

    Volume 7, Book 71, Number 590 (Narrated Anas): The climate of Medina did not suit some people, so the Prophet ordered them to follow his shepherd, i.e. his camels, and drink their milk and urine (as a medicine). So they followed the shepherd that is the camels and drank their milk and urine till their bodies became healthy.

     

    লক্ষণীয় যে দুটি হাদিসের বর্ণনাকারী একই ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও প্রথম হাদিসে শুধু উটের দুধের কথা লিখা আছে, অথচ ঠিক তার পরের হাদিসেই আবার উটের দুধের সাথে মূত্র যোগ করা হয়েছে। আরো লক্ষণীয় যে দ্বিতীয় হাদিসের ব্র্যাকেটে অনুবাদের সময় “as a medicine” যোগ করা হয়েছে।

     

    তৃতীয়ত, দুটি হাদিস অনুযায়ীই তারা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ফলে এই হাদিসের প্রথম অংশে বিশ্বাস করলে দ্বিতীয় অংশেও বিশ্বাস করতে হবে। উটের দুধ ও মূত্র পান করে কেউ যদি সুস্থ হয় তাহলে এটি নিয়ে হাসি-তামাসা করাটাই তো বোকামী! চতুর্থত, হাদিস দুটিতে বিশেষ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেটি সেই ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটি সার্বজনীন কোন উপদেশ বাণী নয়। কোরআনে যেমন মধুর ব্যাপারে সার্বজনীন একটি বাণী আছে, “In honey there is a healing,” হাদিসে “In camel’s urine there is a healing” বলে কোন বাণী নেই বা মুসলিমদেরকে উটের মূত্র পান করার জন্য উপদেশও দেয়া হয়নি। অতএব যারা উটের মূত্র পান করে মাতাল হয়ে উপহাস-বিদ্রুপ করছে তারা নিজেদেরকেই বোকা বানিয়েছে! হেঃহেঃ!

     

    সর্বোপরি, উটের মূত্র সহ আরো যে সকল বিষয় নিয়ে হাসতে হাসতে লজ্জায় দু’পায়ের চিপায় মাথা লুকানো হয় সেগুলোর সবই এসেছে হাদিস বা অন্যান্য উৎস থেকে, কোরআন থেকে নয়। অ্যান্টি-ইসলামিক গোঁড়া মৌলবাদীরা মনে হয় একই সাথে গাছেরও খাইতে চায় আবার তলারও কুড়াইতে চায়- কিন্তু তা তো সম্ভব নয় মিয়া ভাই! হাদিস গ্রন্থগুলো হচ্ছে জীবন্ত সাক্ষী, যাহা প্রমাণ করে যে কোরআন কোন মানুষের বাণী নয়।

    ২/ আপনার বলা দাস দাসী বিজনেজ সম্পর্কে আলোচনা করছি, প্রথমত এই দাস দাসী প্রথা বা নবীজির জীবিকা নিয়ে আপনার ধারণা অনেক নিচে, আপনি পুরো বিষয়টি না জেনেই এখানে অনেক কথা লিখেছেন, আগে জানুন তারপর লিখুন, আপনার জানার জন্য লিখলাম। যে দেখেনি বুঝবে না সে এমন কেয়ামত ছিল,

    কেয়ামতেই জাতির স্বাধীনতার নেয়ামত ছিল।

    কেমন হত যদি তখনকার আটকে পড়া পাকিস্তানিদেরকে বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দাস হিসেবে বিতরণ করত, মুক্তিযোদ্ধারা পুরুষদেরকে বিক্রি করে দিত আর নারীদেরকে যৌনদাসী হিসেবে রেখে দিত, বলত – ‘আল্লাহ বলেছেন?’  কি হয় যদি কোনো দেশে বিজয়ী সরকার পরাজিত দেশের নারী পুরুষকে দাস-দাসী বানিয়ে বিজয়ী সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ করে?  তারা দাসীদেরকে ইচ্ছেমতো বিছানায় নিয়ে যায়, বাজারে বিক্রি করে বা বন্ধুদেরকে ‘উপহার’ দেয়?

     

    চিরকাল ইসলাম বিদ্বেষীরা (যাদের চোখে ইসলাম মুসলিমের সব কিছুই খারাপ) ও ইসলামের সমালোচনাকারীরা (যারা অনেক পড়াশোনা করে দলিলের ভিত্তিতে ভদ্রভাবে ইসলাম-মুসলিমের সমালোচনা করেন) অভিযোগ করে এসেছে, ইসলাম যদি শান্তির ধর্মই হয় তবে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করল না কেন।  অভিযোগটা যৌক্তিক।

     

    বলাই বাহুল্য মাত্র দু’আড়াইশ বছর আগেও পশ্চিমা অনেক দেশ আইন করে এটা বন্ধ করার আগে এ বর্বর প্রথা চালু ছিল, এমনকি গির্জাগুলো পর্যন্ত দাস-ব্যবসা করত। অথচ কোরান সেই ১৪০০ বছর আগেই দাসপ্রথা শেকড় থেকে উচ্ছেদ করেছিল।   পরে মুসলিম রাজারা ইসলামের নামেই নানারকম শরিয়া আইন ও হাদিস বানিয়ে ধূর্তভাবে দাসপ্রথাকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই দুটো পদ্ধতিই দেখব আমরা এখন।

     

    নবীজীর (স) পর বহু শতাব্দী ধরে বহু দেশ বিজয়ের ফলে মুসলমানরা অসংখ্য দাস-দাসীর মালিক হয়েছিল। মাত্র সাতজন সাহাবী মুক্ত  করেছিলেন ৩৯,২৫৯ জন দাস-দাসীকে (সূত্র ৪)।  হাকিম বিন হাজাম একাই মুক্ত করেছিলেন ২০০ জনকে (সূত্র ৫)।  কিন্তু এই শতাব্দী-প্রাচীন কুপ্রথাকে কোরান হঠাৎ একদিন বিপ্লব করে উচ্ছেদ করলে ভেঙে পড়ত ফ্রি-শ্রম ভিত্তিক অর্থনীতি, জনগণ হয়ে পড়ত বিভ্রান্ত আর অসংখ্য দাস-দাসী হয়ে পড়ত নিরাশ্রয় অন্নহীন।  কারণ জনগণ যদি মনের দিক থেকে তৈরি না হয় তবে যে কোনো ভাল জিনিসও জোর করে চাপিয়ে দিলে ফল খারাপ হতে বাধ্য।  সে-জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিপ্লবের চেয়ে বিবর্তনই ভাল,  অতীত-বর্তমানে এর বহু উদাহরণ আছে।

     

    দাসদের ওপরে অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার হত ইসলাম আসার আগে।  যেহেতু যুদ্ধবন্দিনীরা ছিল দাসী, তাই এদের সাথে শোয়া বিজয়ী মুসলিম-সৈন্যদের জন্য প্রথম দিকে জায়েজ ছিল (সূত্র ২২, ২৬, ২৯)।   (ড: আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, আমীর আলি, হারুন ইয়াহিয়া, ড: এডিপ ইউকসেল প্রমুখ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য দাবি করেন, দাসীর সাথে শোয়ার ব্যাপারটা বুঝবার ও অনুবাদের গোলমাল, কোরান কখনো একে অনুমতি দেয়নি। কিন্তু উনারা মেইনস্ট্রিম নন)।

     

    যাই হোক, যুদ্ধবন্দিনীদের দূর দেশে পাঠিয়ে দাসের হাটে বিক্রিও করা হত (সূত্র ২৩)।   কোরান (ক) প্রথমে দাসদের সাথে দুর্ব্যবহার করা বন্ধ করেছে। তারপরে (খ) কিছু অধিকার দিয়ে জনগণের মন-মানসে দাসদের ‘মানুষ’ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে, তারপরে (গ) তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছে এবং সবশেষে (ঘ) দাসপ্রথার শেকড় কেটে দিয়ে পুরো উচ্ছেদের বিধান দিয়েছে।

     

    কোরান যদি দাসপ্রথার পক্ষে থাকত তবে দাসের ওপর শতাব্দী প্রাচীন অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকত।কিন্তু আমরা দাসপ্রথার বিরুদ্ধে এক উদ্বিগ্ন কোরানকে দেখতে পাই যে কিনা কারণে হোক অকারণে হোক, যুক্তিতে হোক বাহানায় হোক, যেসব ব্যাপারের সাথে দাসপ্রথার কোনোই সম্পর্ক নেই সেগুলোকেও প্রয়োগ করেছে দাসমুক্তির জন্য। যেমন:

    ১। সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হলে দাস-দাসীদের মুক্তি দাও (সূত্র ১১)।
    ২। রমজানে রোজা না রাখলে বা রোজা রাখার প্রতিজ্ঞা ভাঙলে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাস-দাসীদের মুক্তি দাও (সূত্র ২)।
    ৩। রোজা অবস্থায় হঠাৎ আল্লা-রসুলের প্রতি খারাপ কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলে দাস-দাসী মুক্তি দাও (সূত্র ২৫)।
    ৪। জাকাতের পয়সা দিয়ে দাস-দাসী কিনে তাদের মুক্তি দিতে পারো (সূত্র ২৭)।
    ৫। কোনও গর্ভবতীকে আঘাত করে কেউ গর্ভপাত ঘটালে দাস-দাসী মুক্তি দিয়ে ক্ষতিপূরণের রায় দিতে পারে আদালত (সূত্র ৩)।
    ৬। ক্রীতদাসদের বলা হয়েছে ‘ভাই’, অর্থাৎ দাসীরা বোন। একই খাবার-পোশাক দিতে বলেছেন নবীজী (স), সাধ্যাতীত কাজ দিতে নিষেধ করেছেন, আরো অনেক ভালো কথা আছে (সূত্র ১৫)।

    ৭। দাসীদের মুক্ত করে বিয়ে করার চাপও দিয়েছে ইসলাম, একেবারে দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলে উদ্বুদ্ধ করেছে (সূত্র ১৪, ১৮, ১৯)।

    ৮। মৃত্যুশয্যায় সাহাবীদের প্রতি দাসদের জন্য নবীজীর (স.) উৎকণ্ঠিত নির্দেশ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী।

    যদিও একটি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মুসলিম দাসদেরই মুক্ত করার কথা বলেছে কোরান (সূত্র ৬), তবু সব মিলিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়  ১৪০০ বছর আগে এ এক অসাধারণ বিপ্লব। এতসব পদক্ষেপ নেবার পর গণমানসে যখন দাসদের ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে ‘হুকুম পালনকারী পশু’ থেকে ‘হুকুম পালনকারী মানুষ’- এ উন্নীত হল তখন এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দাসপ্রথার একেবারে শেকড়ে মরণাঘাত হানল কোরান।

    কি সেই মরণাঘাত ? কোন সূরা, কোন আয়াত ? ইসলামের প্রথমদিকে মক্কার, না শেষের দিকে মদিনার আয়াত সেটা ?

    এবারে আবেগবর্জিত হয়ে অংক করা যাক। ১৪০০ বছর আগের আরবভূমি চারদিকে শুধু ‘গোত্র আর গোত্র’ পরস্পরের সাথে লড়াই ঝগড়া লেগেই আছে। কেউ স্বগোত্রের কাউকে হারাতে চায় না কারণ সদস্য সংখ্যাই গোত্রের শক্তি, তাই সাধারণভাবে স্বগোত্রের কাউকে দাস বানাবার সামাজিক সংস্কৃতিও নেই। দাসের একমাত্র উৎস যুদ্ধবন্দীরা। যুদ্ধবন্দী যদি না থাকে তাহলে দাসও থাকবে না। কোরান আঘাতটা হেনেছে সেখানেই – সূরা মুহম্মদ আয়াত ৪।  সংশ্লিষ্ট অংশ:-

    “…যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও…।”

    পরিষ্কার হুকুম, যুদ্ধ বন্দীদেরকে মুক্তি দিতে হবে মুক্তিপণ নিয়ে বা না নিয়ে। ব্যাস, চ্যাপ্টার ক্লোজড। আয়াতটা মদীনায় অবতীর্ণ।

     

    কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরে ইসলামের এই মানবাধিকারকে সম্পূর্ণ উল্টে দেয়া হল।  দাস-দাসীর ওপরে এমন অনেক হাদিস আছে যেগুলো ওপরে দেখানো মানবিক সুত্রগুলোর বিরোধী, স্বভাবতই সেগুলো স্বার্থের জন্য বানানো।

     

    শরিয়া আইন বানানো হয়েছে – “যুদ্ধবন্দিনী হওয়া মাত্র নারীদের পূর্বের বিবাহ বাতিল হইবে” (সূত্র ঝ)।  ওরা ওদের ধর্মমতে বিয়ে করেছে, তুমি তাদের বিয়ে বাতিল করার কে?   মতলবটা পরিষ্কার, বন্দীনি ধর্ষণ।  বিজয়ী সৈন্যেরা বলছে–“আমরা যুদ্ধের গণিমত হিসেবে প্রাপ্ত রমণীদের সাথে আজল (নারী-দেহের বাইরে বীর্যপাত) করিতাম (সূত্র ৭)।  এমন হাদিসও আছে-কিছু সৈন্য বন্দিনীদের স্বামীদের সামনেই তাদের ধর্ষণ করত, কিছু সৈন্য “তাহা পছন্দ করিত না” ( সূত্র ৩২)। কিন্তু এ হাদিসটা ঠিক নয়, এর উল্টো হাদিস আছে সহি মুসলিমে।

    অনুবাদ বিশেষে হাদিস নম্বরগুলোর কিছু ব্যত্যয় ঘটে।  আমরা খেয়াল করিনা, শরীয়া আইন বানানো হয়েছে হাদিস সংকলনের আগে, সেজন্যই আমরা অন্যায় আইনগুলোর সমর্থনে ‘জাল হাদিস’ দেখতে পাই। যে হতভাগী দাসীগুলোর  একই সাথে দুই, তিন, বা দশ-বারো জন মনিব ছিল, কিভাবে কাটত তাদের দিন-রাত ?

    দু’একটা নয়, ছয় ছয়টা হাদিস এবং হানাফি আইন বলছে দাসীদের একসাথে কয়েকজন মনিবের প্রথা ছিল এবং মনিবদের অধিকার ছিল তাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ঐ দাসীদের সাথে শোয়ার (সূত্র ৯)।   নবীজীর চোখের সামনে এ অনাচার হয়েছে তা আমরা বিশ্বাস করি না, এ-সব হাদিস পুরুষতন্ত্রের স্বার্থে পরে বানানো হয়েছে।  কে জানে কত লক্ষ লক্ষ হতভাগিনীর জীবন শুধু এর-ওর-তার বিছানায় কেটেছে।  একটা সূত্র দিচ্ছি, সহি বুখারী ভল্যুম ৩ হাদিস ৬৯৮, এটা আছে হাদিস ৬৯৭, ৬৯৯, ৭০১ ও ৭০২-তেও :-“আল্লাহ’র নবী (দঃ) বলিয়াছেন যদি কেউ কোন এজমালি (যার অনেক মালিক আছে) দাস-দাসীকে নিজ অংশ থেকে মুক্ত করে এবং তাহার কাছে পুরো মুক্তি দেবার মত যথেষ্ট অর্থ থাকে তাহলে তাহার উচিত কোন ন্যায়পরায়ন লোক দ্বারা সেই দাস-দাসীর উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা, এবং তাহার অংশীদারদের তাদের অংশের মূল্য দিয়া সেই দাস-দাসীকে মুক্ত করিয়া দেয়া।  তাহা না হইলে সে শুধু সেই দাস-দাসীকে আংশিক মুক্ত করিল।” এর সাথে হানাফি আইনটা মিলিয়ে নিলে পরিষ্কার হবে :- “অংশীদার (মালিকগণ) পরস্পরের সম্মতিক্রমে ক্রীতদাসীকে দৈহিকভাবে উপভোগ করিতে পারিবে” (সূত্র ১)।

     

    আশ্চর্য নয়, মুসলমানদের অমঙ্গল এসেছে তাদেরই আচরণ থেকেই (সূত্র ২৮)।   এবারে আমরা দেখব সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৪ লঙ্ঘন করে কি নির্মম নৃশংস পদ্ধতিতে দাসপ্রথাকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে:-

    ১. “দাসী (স্ত্রীর) গর্ভ থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে মালিকের গোলাম হয়” (সূত্র ১০)।  বিয়ে করা দাসীর বাচ্চা-ই যদি গোলাম হয় তবে বিয়ে না-করা দাসীর বাচ্চারা তো গোলাম হবেই।  এতে দাসপ্রথা কখনোই বন্ধ হবে না।

    ২. ট্যাক্স দেয়া বড্ড কষ্ট, চিরকাল মানুষ এটা ফাঁকি দিতে চেয়েছে। আর ফাঁকির পদ্ধতিটা “হালাল” হলে তো কথাই নেই।  দেখুন শরিয়া আইন :

    “অন্যান্য সম্পত্তির ওপরে জাকাত থাকলেও ক্রীতদাস-সম্পত্তির ওপরে জাকাত নেই” (সূত্র ১২)।  অর্থাৎ দাস-ব্যবসায়ে টাকা খাটানোকে উৎসাহিত করে দাসপ্রথাকে শক্তিশালী করা হলো।

    ৩. ক্রীতদাস যদি মালিক ও আল্লাহকে ঠিকমত মেনে চলে তাহলে তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে (সূত্র ১৩ ও ১৪)।   অর্থাৎ মালিককে একেবারে

    আকাশে তুলে দাসের মনে আরও একটা শেকল পরানো হল, মালিক অত্যাচারী হলেও সে বিদ্রোহের কথা চিন্তাও করবেনা।

    ৪.  এটা একটা মারাত্মক কথা। এবং মর্মান্তিক। যদি কোন দাস বা দাসী তার মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যায় তবে ফিরে না আসা পর্যন্ত

     

    তার কোন ইবাদত কবুল হবে না (সূত্র ২১)।  এই নিয়মে দাসপ্রথাকে একেবারে চরম শক্তিশালী করে তোলা হল।

     

    ৫. এমনকি মুক্ত করে দেবার পরও দাস-দাসীরা প্রাক্তন মালিকের কাছে অদৃশ্য মালিকানায় বাঁধা থাকত, অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।   করলে হুমকি ছিল তাদের কোনো ইবাদত কবুল হবে না – সূত্র ২০।

     

    ৬. মালিকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তা অবৈধ, সেটা ব্যভিচার হবে (সূত্র ৩৫)।

    ৭. যদিও দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলে দাসীদের মুক্ত করে বিয়ে করায় উদ্বুদ্ধ করেছে ইসলাম (সূত্র ১৪, ১৮, ১৯) কিন্তু পরে দেখা গেল, কারো কাছে স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার পয়সা থাকলে দাসীকে বিয়ে করাকে (হানাফী মতে) মাকরূহ ও (শাফি’ মতে) হারাম করা হয়েছে (সূত্র ৮)।

    “যেমনভাবে দাস-দাসীদের মার, তেমনভাবে স্ত্রীদের মারবে না।   তারপর (অর্থাৎ স্ত্রীদের মারার পর) রাতে তাদের সাথে শোবে”(সূত্র ২৪)  এবং পরকীয়া ছাড়া স্ত্রী-প্রহারকে নবীজী (স) কখনো বৈধতা দেননি (সূত্র ৩৩ ও ৩৪), এসব হাদিস আমরা বিশ্বাস করি না।   আমরা বিশ্বাস করি যা তিনি স্ত্রীর ব্যাপারে সুস্পষ্ট বলেছেন, হুবহু উদ্ধৃতি:- “DO NOT BEAT THEM, AND DO NOT REVILE THEM”  অর্থাৎ “তাহাদিগকে প্রহার করিবে না, এবং তাহাদিগকে অপমান-নিগ্রহ করিবে না” – সহি আবু দাউদ হাদিস ২১৩৯।  হ্যাঁ, এই হলেন শান্তির দূত, হিংস্রতা মারপিটের তথাকথিত “নবী” নন।  বৌ পিটিয়ে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে?  তাও অনেক সময় বাচ্চাদের সামনে?  লজ্জার কথা !

     

    দাসীদের বিয়ে করাকে প্রথমে উৎসাহিত করা হলেও নবীজীর (স) পরে আইন হয়েছে:- “হজরত ইমাম শাফেয়ী ও  অন্যান্য ইমামের মতে ইহুদী বা খ্রিস্টান দাসী বিয়ে করা সর্বাবস্থায় অবৈধ” (সূত্র ১৭)।  (ইমামেরা লিখেছিলেন অল্প, তাঁদের পরে তাঁদের ছাত্রেরা ও ছাত্রদের ছাত্ররা ইমামদের নামে নিজেদের বহু আইন ঢুকিয়ে দিয়েছে – বিস্তারিত শরিয়া কি বলে, আমরা কি করি”-তে)।

     

    মওলানা মওদুদি বলেছেন:- “ইসলামি আইন অনুসারে যুদ্ধবন্দির নিজের দেশ যদি মুক্তিপণ দেয় তবে বন্দিরা মুক্ত হইবে। বন্দি-বিনিময়ও চলিবে। এই দুই উপায় না থাকিলে যুদ্ধবন্দিরা দাস-এ পরিণত হইবে” (সূত্র ৩০)।   তাঁর তাফহীমুল কুরআন বইতে সূরা নিসা আয়াত ২৪-এর ব্যাখ্যাতেও তিনি এসব বলেছেন, ওটাও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।

     

    ড: জাকির নায়েকও কম যান না – ইসলামে দাসপ্রথা এবং বন্দিনী ধর্ষণের সমর্থনে তাঁর সবচেয়ে বড় যুক্তি হল ওই প্রথা আমেরিকার গুয়ান্তানামো বে’ কারাগার থেকে অনেক ভালো।  আপনারাই বলুন, এ কোনো যুক্তি হল? বক্তৃতাটা ইউটিউবে পাওয়া যায়।   কিন্তু তিনি অন্তত: একটা দরকারী কথা বলেছেন যা মওদুদী বা ডঃ ফওজান বলেন নি; তা হল – ওসব অতীতের ব্যাপার, এখন আর ওগুলো প্রয়োগ করা যায় না।  আসলে নবীজীর (স) পরে মুসলিম ক্ষমতাশালীদের কোরান-বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ আছে মওদুদী- ইমাম গাজ্জালী সহ অনেক দলিলে – এবং সাহাবীর এই কথায়:- “হে ভাতিজা ! তুমি তো অবগত নও রসুলুল্লাহ (দঃ)-এর ইহকাল ত্যাগের পর আমরা কি কি বিপরীত কাকার্য করিয়াছি”- সূত্র ৩১? (বইটা হারিয়ে গেছে, কেউ পৃষ্ঠাটা স্ক্যান পাঠালে ভাল হয়)।

    মর্মবাণী : কোরানের কিছু হুকুম শুধু মুসলিমের জন্য, কিছু সারা  মানবজাতির জন্য, কিছু পুরুষের ও কিছু নারীর জন্য, কিছু সেই সমাজের জন্য ও কিছু চিরকালের।  পরিস্থিতির পরিবর্তন হবার ফলে কিছু হুকুম নবীজীর (স) জীবদ্দশাতেই পরিবর্তন করা হয়েছে – প্রিন্সিপল্স্ অব ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স − ডঃ হাশিম কামালী পৃঃ ৩২৫ ইত্যাদি।  সামাজিক-পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি কোরানে যথেষ্ঠই আছে, সমস্যা হয় যখন আমরা কোরানের হুকুমগুলোর গতিময়তা উপেক্ষা করে সেই সমাজের তাৎক্ষণিক হুকুমকে শ্বাশ্বত মনে করে বর্তমানে প্রয়োগ করি।

    নিবন্ধ সূত্র:-

    ১। চ-এর পৃষ্ঠা ২৩১।
    ২। খ-এর আইন নং ১৬৬৯, ১৬৭৪, ১৬৮১, ইত্যাদি।
    ৩। গ-এর হাদিস নং ২৬৩০ এবং ২৬৩১।
    ৪। ক-এর পৃষ্ঠা ১২৫৭।
    ৫। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৭১৫।
    ৬। সুরা নিসা, ৯২।
    ৭। গ-এর হাদিস নং ২৪৩৪ ও ২৪৩৫ ; ঘ-এর ৩য় খণ্ড, হাদিস ৭১৮ ও অন্যান্য।
    ৮। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
    ৯। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭০১, ৭০২, ৭০৩ ও ৭০৪।
    ১০। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
    ১১। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৬৯৫ ও ৬৯৬।
    ১২। ঘ-এর ভল্যুম ২, হাদিস নং ৫৪২ ও ৫৪৩ এবং গ-এর হাদিস নং ১১০৮।
    ১৩। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৮।
    ১৪। ঘ-এর ভল্যুম ৪, হাদিস নং ২৫৫।
    ১৫। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৯ থেকে ২৩৯১-এর অংশ ও ২৬১৭।
    ১৬। সৌদি ইনফরমেশন এজেন্সি, ইণ্ডিপেণ্ডেণ্ট সৌদি নিউজ
    ১৭। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
    ১৮। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৭২০, ভল্যুম ৭, হাদিস নং ২০।
    ১৯। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৬।
    ২০। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৯৪ ও ভল্যুম ৪, হাদিস নং ৪০৪।
    ২১। ছ-এর পৃষ্ঠা ৩৭৭।
    ২২। সুরা আল মুমিনুন, আয়াত ৫, ৬, ৭।
    ২৩। জ-এর ভল্যুম ৩, পৃষ্ঠা ১১২।
    ২৪। গ-এর হাদিস নং ২৪৬৮।
    ২৫। খ-এর আইন নং ১৬৭৫।
    ২৬। সুরা আল্-আহযাব, আয়াত ৫২।
    ২৭। খ-এর আইন নং ১৯৩৩ (৫)।
    ২৮। ক-এর পৃষ্ঠা ২৬৭।
    ২৯। সুরা আল্ মা’আরিজ, আয়াত ২৯, ৩০, ৩১।
    ৩০। মুনির কমিশনের সামনে মওদুদির বক্তব্য, পৃষ্ঠা ২২৫, রিপোর্টটা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
    ৩১। ঞ-এর পৃষ্ঠা ২৯৭, হাদিস নং ১৫০৫।
    ৩২। ট-এর হাদিস নং ১১-এর ২১৫০।
    ৩৩। ঠ-এর পৃষ্ঠা ৮৫২, ধারা ১৩২২ – বিশ্লেষণ।
    ৩৪। ড-এর পৃষ্ঠা ১৭১।
    ৩৫। সহি আবু দাউদ, হাদিস ২০৭৩।

    (ক) বাংলায় কোরাণ শরীফের অনুবাদ – মওলানা মুহিউদ্দীন খান।
    (খ) ইসলামী আইন –  আয়াতুল্লাহ আল্ উজামা সৈয়দ আলী আল্ হুসায়নী আল্ সীস্তানী।
    (গ) বাংলায় সহি বোখারীর সঙ্কলন – মুহম্মদ আবদুল করিম খান।
    (ঘ) সহি বোখারীর ইংরেজী অনুবাদ  – ডঃ মুহম্মদ মহসীন খান, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়।
    (ঙ) হাদিস সঙ্কলনের ইতিহাস –  মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম।
    (চ) হানাফি আইন হেদায়া  – ইংল্যাণ্ডের ব্যারিস্টারী স্কুলে পড়ানো হয়।
    (ছ) রুহুল কোরাণ  –  মওলানা আবদুদ দাইয়ান।
    (জ) ক্যাসাসুল আম্বিয়া”র অনুবাদ  – মওলানা বশিরুদ্দীন ও মওলানা বদিউল আলম।
    (ঝ) ঊমদাত আল্ সালিক  – ইমাম শাফি’র আইন নং o.৯.১৩, পৃঃ ৬০৪।
    (ঞ) সহি বোখারীর বাংলা অনুবাদ – মওলানা আজিজুল হক (বইটা আপাতত: কাছে নেই)।

    (ট) সহি সুনান আবু দাউদ  –  ইণ্টারনেট সংস্করণ।
    (ঠ) বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ৩য় খণ্ড।
    (ড) রিয়াদুস্ সালেহীন  – আল্লামা ইমাম নববী।

    আশা রাখছি আপনি এ বিষয়টাও বুঝে উঠেছেন। সুতরাং পূরিপূর্ন না পড়ে না ভেবে আংশিক কিছু কথা ব্লগে লিখে   বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।    আপনি আরো  জানবেন,

    দাসপ্রথা উচ্ছেদ

    সমাজে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.) তৎকালীন সমাজে প্রচলিত দাসপ্রথা উচ্ছেদে সাহসী ভূমিকা রাখেন। বিশ্ব ইতিহাসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-ই প্রথম যিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তখনকার যুগে গোটা গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্য দাসপ্রথার ওপর গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টজগত ও আরব সমাজেও ছিল দাসপ্রথার অবাধ প্রচলন,[৩] প্রভুগণ নিজেদেরকে মালিক-মনিব মনে করে দাসদের শ্রমকে শোষণ করতেন, তাদের দ্বারা অমানুষিক পরিশ্রম করাতেন। পণ্যদ্রব্যের মত হাটবাজারে তাদের বিক্রি করা হত। মানুষ হিসেবে তাদের কোন অধিকার ছিল না। শতাব্দী প্রাচীন দাস প্রথার অবসান কল্পে মহানবী (সা.) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দাস মুক্তিকে সওয়াবের উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গৃহীত পদক্ষেপ দাসদেরকে মানুষের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন, কারো করতলগত হওয়াটা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। দাস মুক্তিতে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে মহানবী (সা.) ঘোষণা দেন:

    «أَرِقَّاءَكُمْ أَرِقَّاءَكُمْ، أَطْعِمُوْهُمْ مِمَّا تَأْكُلُوْنَ، وَاكْسُوْهُمْ مِمَّا تَلْبَسُوْنَ، وَإِنْ جَاءُوْا بِذَنْبٍ لَّا تُرِيْدُوْنَ أَنْ تَغْفِرُوْهُ فَبِيْعُوْا عِبَادَ اللهِ وَلَا تُعَذِّبُوْهُمْ».

    ‘ক্রীতদাসগণ তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা যা আহার করবে তাদেরকে তাই আহার করতে দেবে এবং তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও সেরূপ পরিধান করাবে। তারা যদি ক্ষমার অযোগ্য কোন অপরাধ করে থাকে, তা হলে তাদের মুক্ত করে দাও; তাদের শাস্তি দিও না।’[৪]

    «مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُّسْلِمَةً، أَعْتَقَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِّنْهُ عُضْوًا مِّنَ النَّارِ، حَتَّىٰ فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ».

    ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমান দাসকে দাসত্ব হতে মুক্ত করবে, (আযাদকৃত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার (মুক্তি দানকারীর) প্রত্যেক অঙ্গকে দোযখের আগুন হতে মুক্তি দান করবেন।’[৫]

    রাসূলুল্লাহ (সা.) কেবল ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, নিজে দাস মুক্ত করে বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.)ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে দাস মুক্তিতে অংশ গ্রহণ করেন। এভাবে দাসগণ মানবাধিকার ফিরে পেয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন।

    GD Star Rating
    loading...
  9. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ৯:০১ |

     আমার আলোচনা বাকী রয়েছে,আমি আরো বলবো সময় করে।

    GD Star Rating
    loading...
  10. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ১৯:২৯ |

    আপনার লুটতরাজ ও ডাকাতি করা জবাবের পাল্টা জবাব উদাসী স্বপ্ন,লুটতারাজ ও ডাকাতি কাকে বলে আপনি জানেন কি?? লুটতরাজ বা ডাকাতী এর সংঙ্গাই আপনি জানেন না। যুদ্ধে জয়ী হবার ময়দানে পরাজিত সৈন্যদের ফেলে আসা তলোয়ার,ঘোড়া, উট ইত্যাদি বস্তকে গনীমতের মাল বলে,আর আর লুটতরাজ বা ডাকাতি হলো জোরপূর্বক কোন কিছু ছিনিয়ে বা অত্যাচার করে নিয়ে আসাকে ডাকাতি বা লুটতরাজ বলে,সুতরাং যুদ্ধে জয়ী হবার পর যে সমস্ত বস্তু ফেলে আসে পরাজিত দল,তাহাকে লুটতরাজ বা ডাকাতি বলেনা। সুতরাং এর সঠিক ব্যাখা সম্পর্কে জানুন,তারপর বলুন।

    সুরা আন্‌ফালের প্রথম আয়াতে এসেছে:

     

    'হে রাসূল! তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, আন্‌ফাল বা গনিমত (তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ ছাড়া অন্য যে কোনো সম্পদ) সম্পর্কে। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহ এবং রসূলের জন্য নির্দিষ্ট। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।'

     

    এ আয়াত বদর যুদ্ধে নাজিল হয়েছিল। এ যুদ্ধে পরাজয়ের মুখে কাফিররা পালিয়ে গেলে তাদের বহু জিনিসপত্র গনিমত হিসেবে মুসলমানদের হস্তগত হয় এবং বন্দী হয় অনেক কাফির। সাহাবিরা সে সময় তিন ধরনের দায়িত্ব পালন করছিলেন: সাহাবি সাদ বিন মায়াজসহ কেউ কেউ মহানবী (সা.)'র তাঁবুর চারদিকে পাহারায় ছিলেন। হযরত আলী (আ.)সহ কেউ কেউ কাফির নিধনে মশগুল ছিলেন। আর কেউ কেউ গনিমতের মাল জমা করতে ব্যস্ত ছিলেন। একদল মুজাহিদের মনে করে যে তারা যুদ্ধ করাতেই জয় এসেছে বলে গনিমতের পুরো মাল তাদেরই প্রাপ্য। আবার যারা গনিমত সংগ্রহ করছিলেন তারাও একই ধারণা করছিলেন। তখন এ আয়াত নাজিল হয়। এতে বলা হয়েছে যে, এইসব মাল বা গনিমত কেবলই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের। তাই তাঁরা যাকে যতটা যোগ্য মনে করেন তাকে ঠিক ততটাই গনিমতের অংশ দেবেন।

     

    সুরা আনফালের প্রথম আয়াতটিকে গনিমতের মাল সংক্রান্ত বিশেষ বিধান বলে মনে হলেও আসলে এটি একটি সামগ্রিক হুকুম বা বিধান যা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ ছাড়া সব ধরনের সম্পদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী এইসব সম্পদ মহান আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং রাসুলের স্থলাভিষিক্তের জন্য তথা অন্য কথায় ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য নির্দিষ্ট যাতে এইসব সম্পদকে মুসলিম জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়। তাই আনফাল হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালের অন্যতম প্রধান উৎস।

     

    আর যুদ্ধে অর্জিত গনিমতের ৫ ভাগের চার ভাগ মুজাহিদদের প্রাপ্য এবং এটা তাদের কষ্ট ও পরিশ্রমের আংশিক প্রতিদান। বাকি এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে খোমস যার ব্যবহারের খাতগুলো এই সুরার ৪১ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। (আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনিমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার ওপর নাজিল করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল।) খেয়াল করুন,এখানে সুন্দর করে বলা হয়েছে গনীমতের ৫ ভাগের একভাগ যা আল্লাহর নামে নবীর নামে রেখে দেওয়া হয়েছিলো,সেই ভাগ থেকেও আবার বন্টন করা হয়েছে। নবীজি নিজের জন্য কিছুই রাখেননি,নবীজি যদি অর্থের প্রতি লোভ রাখতো তাহলে চাইলেই তিনি সাহাবিদের সম্পদ থেকে চাঁদা দাবি করে আয়েশি জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সীমাহীন অভাব-অনটন সহ্য করেছেন। 

    GD Star Rating
    loading...
  11. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ২০:০৮ |

    আপনার বলা বাক্য ডাকাতের বই সম্পর্কে জবাবের পাল্টা জবাব। 

    আধুনিক বিজ্ঞানই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ কোরআনই হলো সেই মোজেজা। এ কালের বিজ্ঞানীরা রায় দিয়েছেন, কোরআন মানুষের লেখা গ্রন্থ হতে পারে না। কারণ, তা আধুনিক বিজ্ঞানকে দেড় হাজার বছর পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিজ্ঞানের পেছনে কোরআন নয়, কোরআনের পেছনেই দৌঁড়াচ্ছে বিজ্ঞান। কোরআনে আছে Big Bang Theory (সুরা আম্বিয়া ৩০), যা ১৯২৭ সালে বেলজিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী G. Lemaitre আবিস্কার করেন, সেখানে আছে Theory of Expanding Universe (সুরা যারিয়াত, ৪৭), যা এডুইন হাবল ১৯২৯ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Law of Gravitation and Centrifugal Force (সুরা লোকমান, ১০ ও সুরা ফাতির, ৪১), যা কোরআন নাযিল হওয়ার ১২০০ বছর পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে  Theory of Solar Apex (সুরা ইয়াসিন ৩৮), যা জ্যোতির্বিজ্ঞানী Shapley ১৯২৭ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Modern Human Embryology (সুরা হুজুরাত ১৩, সুরা নাহল ৪, সুরা মুমিনুন ১৩, সুরা দাহর ২ এবং সুরা তারিক ৫-৭), যা ইতালীয় জীববিজ্ঞানী Lazzaro Spallanzani (১৭২৯-১৭৯৯) অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Law of Gravity (সুরা মুরসালাত, ২৫-২৬), যা বিজ্ঞানী নিউটন ১৬৮৭ সালে আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে Water-cycle বা ‘পানিচক্র` (সুরা আরাফ ৫৭, সুরা রুম ৪৮, সুরা হিজর ২২, সুরা নূর ৪৩, সুরা নাবা ১৪-১৬ ও সুরা মুমিনুন ১৮), যা ১৫৮০ সালে বার্নার্ড প্যালিসি প্রথম আবিষ্কার করেন। সেখানে আছে, সৌরজগতের মোট গ্রহের সংখ্যা এগার (সুরা ইউসুফ ৪)। সম্প্রতি আরও দুটো গ্রহ (Vulcan ও Planet-x) আবিস্কার হয়ে আমাদের সৌরজগতের মোট গ্রহের সংখ্যা হয়েছে এগার। সেখানে আছে মহাবিশ্ব ও পৃথিবী দুইটি পর্ব (Phase) ও ৪টি অধিযুগে (Era) সৃষ্টি হয়েছে (সুরা হা-মীম আস-সাজদা, ৯-১০), আধুনিক বিজ্ঞানও তাই বলছে। সেখানে আছে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ভুল অনুপাতে (সুরা আনআম, ৭৩), আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে, ‘বৃহৎ বিস্ফোরণের এক সেকেণ্ড পর যদি সম্প্রসারণের হার এক লক্ষ মিলিয়ন মিলিয়ন (১০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) ভাগও কম হতো, তাহলে মহাবিশ্ব বর্তমান আয়তনে পৌঁছানোর আগেই চুপসে যেত।` (সূত্রঃ Stephen W. Hawking, A Brief History of Time, Chapter-VIII: The Origin and Fate of the Universe, http://www.fisica.net/relatividade/stephen_hawking_a_brief_history_of_time.pdf)।  সেখানে আছে, প্রত্যেক বস্তুর বিপরীত বা যুগল সৃষ্টি করা হয়েছে, তা মাটি থেকে হোক, মানুষ থেকে হোক কিংবা সেইসব থেকে যা তারা অবগত নয় (সুরা ইয়াসীন, ৩৬), ১৯৩২ সালে C D Anderson কর্তৃক সর্বপ্রথম মহাবিশ্বে প্রতিবস্তুর (Antiparticles) উপস্থিতি প্রমাণিত হয় (সূত্রঃ The New Kexton Encyclopedia, Vol. 1)। এরই ধারাবাহিকতায় আবিস্কৃত হয় ইলেকট্রনের প্রতিকণা পজিট্রন। আরও আবিস্কৃত হয় নিইট্রিনো, মেসন ইত্যাদি। পরবর্তীতে আইনস্টাইনের Theory of Relativity ও অন্যান্য আবিস্কারের ফলে আধুনিক বিজ্ঞান এখন নিঃসন্দেহ যে প্রতিটি বস্তুরই প্রতিবস্তু (Anti-matter) বা জোড়া রয়েছে। এরকম আধুনিক রসায়নবিদ্যা, Agronomy, আবহাওয়াবিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক-ভূ-বিজ্ঞান সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার সমর্থন করছে। পবিত্র কোরআনে এরকম এক হাজারেরও অধিক আয়াত রয়েছে। এ সকল কারণে এ কালের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কোরআন মানুষের বাণী হতে পারে না, এটা Divine Revealation। কোন কোন বিজ্ঞানী আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে সপ্তম শতাব্দীর কোরআনের আলোকে তাঁর একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের নতুন সংস্করণ বের করেছেন!! যেমন, কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির Human Embryology বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কিথ এল. মুর (Keith L. Moore)। তিনি যখন দেখলেন যে, মাতৃগর্ভে ভ্রুণের ক্রমবিকাশের পর্যায়গুলি আধুনিক বিজ্ঞানের তুলনায় পবিত্র কোরআনে আরও যথাযথভাবে বর্ণিত আছে এবং সেখানে আরও কিছু অতিরিক্ত তথ্য আছে, যা তিনিও আগে জানতেন না, তখন তিনি তাঁর ‘The Developing Human` গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণে কোরআনের সেই বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করে নেন (সূত্রঃ Keith L. Moore, The Developing Human, Clinically Oriented Embryology, With Islamic Additions, 3rd edition)। ড. কিথ এল. মুর (Keith L. Moore) অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ‘ভ্রুণবিদ্যার ইতিহাস অনুযায়ী মানব ভ্রুণের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তনের স্তর সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত এত অল্প জ্ঞান ছিল যে, সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কোরআনে এ ধরনের তথ্য পেশ করা সম্ভব ছিল না। এর একমাত্র যৌক্তিক উপসংহার হতে পারেঃ এই বর্ণনা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে মুহাম্মদের উপর প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।` তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো, ‘ তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো, ‘এতে কি বোঝা যায়, আপনি বিশ্বাস করেন যে, কুরআন আল্লাহ্‌র বাণী?` তিনি উত্তরে বললেন, ‘I find no difficulty in accepting this.` থাইল্যাণ্ডের চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রধান Professor Tejatat Tejasen সুরা নিসা ৫৬ নং আয়াত পড়ে প্রাণীদেহের ত্বকে (চর্ম) ব্যথা অনুভবকারী স্তর (Receptor) সম্পর্কে জানতে পারেন, যা অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তিনি নিশ্চিত হন যে, সপ্তম শতাব্দীতে এটা কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। ফলে তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ১৯৮৩ সনে অনুষ্ঠিত অষ্টম মেডিক্যাল সম্মেলনে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন। Professor দুর্গা রাও হলেন Marine Geology-এর একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি সৌদি আরবের যিদ্দায় কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। তিনি জানতেন যে, তিনটি প্রতিবন্ধকতার  কারণে সমুদ্রের গভীরে আলো পৌঁছতে পারে না। এগুলো হলোঃ মেঘমালা, সাগরের অগভীর ঢেউ (Surface wave) এবং সাগরের অন্তঃস্থ ঢেউ (Internal wave)। ডুবোজাহাজ ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে এগুলো সম্প্রতি জানা গেছে। ২০০ মিটার নিচে কোন আলো থাকে না। ১০০০ মিটার নিচে ঘোর অন্ধকার। সেখানে নিজের হাতও দেখা যায় না (সূত্রঃ Oceans, Elder and Pernetta, p. 27)। দুর্গা রাও যখন জানতে পারলেন যে, এ কথাগুলো হুবহু সুরা নূর ৪০ আয়াতে আছে, তখন তিনি বলেন যে, ‘এ আশ্চর্যজনক বিষয় সেই যুগে বর্ণনা করা কোন মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। নিশ্চয়ই কোরআন আল্লাহ্‌র বাণী।`

    GD Star Rating
    loading...
  12. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ২০:১৩ |

    উপরের বক্তব্যর তথ্য ও প্রমাণ তথ্যসূত্রঃ

    http://www.islamic-awareness.org/Quran/Science/scientists.html

    youtube.com/watch?v=FUUPYs0gElU)

    GD Star Rating
    loading...
  13. শাহাদাত হোসাইন : ০১-০৮-২০১৯ | ২১:০৭ |

    সূরা বাকারার ২৮৪ নং আয়াত ও তার বাংলা অর্থ জানেন কি?? না জেনে এভাবে মিথ্যা প্রচার না করলেই পারতেন আপনি,সূরা বাকারার ২৮৪ নং আয়াতের সাথে নাখলা যুদ্ধের ঘটনার সম্পর্ক কি??? আর মদিনা সনদ কে আগে ভঙ্গ করেছে?  আপনি না জেনেই ভুলবাল বা মিথ্যা প্রচার করেছেন সর্বত্র জায়গায়। সূরা বাকারা ২৮৪ নং আয়াত,মদীনা সনদ চুক্তি ভঙ্গ কে করেছে প্রথম?  দলিল বা প্রমাণ দিন।  আপনার বলার পরয়ি আমি বলবো। 

    সূরা বাকারার ২৮৪ নং আয়াতের বাংলা অর্থ। 

     

    (284)

     

    لِّلَّهِ ما فِي السَّمَاواتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِن تُبْدُواْ مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللّهُ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاء وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاء وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

    যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।

    To Allah belongeth all that is in the heavens and on earth. Whether ye show what is in your minds or conceal it, Allah Calleth you to account for it. He forgiveth whom He pleaseth, and punisheth whom He pleaseth, for Allah hath power over all things.

     

    GD Star Rating
    loading...