শ্মশান বন্ধু কোকার গল্প

IMG_20250605_231606_(480_x_500_pixel)ভোর তখন সবে ফুটছে। শীতের পাতলা কুয়াশা তখনও নারায়ণগঞ্জ শ্মশানের পরিবেশকে এক বিষণ্ণ চাদরে ঢেকে রেখেছে। চিতার কাঠগুলো তখনও জলে ভিজে, ছাইয়ের স্তূপ থেকে হালকা ধোঁয়া উঠছে। শ্মশানের কোণায় বসে ছিলেন শ্মশান বন্ধু কোকা, বছর ষাট ছুঁই ছুঁই। তাঁর চুল-দাড়ি সবই শ্মশানের ছাইয়ের মতোই ধূসর, আর তাঁর চোখ দু’টোতে যেন গত কয়েক দশকের সব শোকের প্রতিচ্ছবি। শ্মশান বন্ধু কোকা এই শ্মশানে তাঁরাই এলাকার প্রায় সব মরদেহ নিয়ে আসেন প্রায় পঁচিশ বছর ধরে। এজন্যই তাঁর নাম হয়েছে, নন্দ গোপাল (কোকা) থেকে শ্মশান বন্ধু কোকা। তাঁর কাছে শ্মশান শুধু মৃতদেহ পোড়ানোর জায়গা নয়, এ যেন জীবনের এক বিরাট পাঠশালা।

আজ সকালেই শ্মশান বন্ধু কোকা নিজ হাতে করেছে  এলাকায় থাকা এক অসহায় বৃদ্ধার সৎকার শেষ করেন। মরদেহ (শবদেহ) শ্মশান বন্ধু কোকা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে শ্মশানে এসেছিল রাতেই, কিন্তু শ্মশানের আনুষ্ঠানিকতার খরচাদি মেটানোর জন্যই শবদেহ সৎকার শেষ হতে সকাল হয়েছে। অসহায় বৃদ্ধার দুই মেয়ে তখনও শ্মশানের ভেতরেই নির্বাক বসে, তাদের চোখে জল নেই, যেন সব অশ্রু শুকিয়ে গেছে। শ্মশান বন্ধু কোকা তাদের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি জানেন, এই নীরবতা শোকের গভীরতম রূপ। প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের এই নীরব শোকের সাক্ষী শ্মশান বন্ধু কোকা।

তাঁর মনে পড়ে গেল অনেক বছর আগের কথা। যখন তিনি প্রথম এলাকার পরিচিত একজনের মরদেহ শ্মশানে এনে সৎকার শুরু করেন, তখন তাঁর মন সবসময়ই ভারাক্রান্ত থাকতো। প্রতিটি চিতায় যেন নিজেরই কোনো আত্মীয়কে তিনি দেখতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি শিখতে শুরু করেন জীবনের এই অলঙ্ঘনীয় সত্যকে মেনে নিতে। তিনি বুঝতে পারেন, শ্মশান শুধু শেষ যাত্রার স্থান নয়, এটি জীবনের এক নতুন শুরুরও প্রতীক। এখানকার ধোঁয়া কেবল ভস্মীভূত জীবনের স্মারক নয়, তা যেন শোককে উড়িয়ে নিয়ে এক নতুন পথের সূচনা করে।

কিছুক্ষণ পরই শ্মশান থেকে বের হয়ে যাবার পালা। শ্মশান বন্ধু কোকা শ্মশান থেকে বের হবার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে বৃদ্ধার দুইকে কাছে ডাকেন। দুই মেয়ে-সহ মৃত বৃদ্ধার নাতি-নাতনীরা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে সামনে এলেন। তাদের মুখপানে চেয়ে শ্মশান বন্ধু কোকা খেয়াল করলেন, বৃদ্ধ মাকে হারিয়ে তারা যেন পাথর হয়ে গেছে। তারা এমনভাবে ভেঙে পড়েছিলেন যে শ্মশান বন্ধু কোকা দেখে স্থির থাকতে পারেননি। তিনি নিজের হাতে তাদের জন্য জল এনে দেন, পাশে বসে সান্ত্বনা দেন। শ্মশান থেকে বের হবার কিছু নিয়মকানুন শিখিয়ে দিয়ে শ্মশান বন্ধু কোকা তাদের বলেছিলেন, “মৃতদেহ শুধু পঞ্চভূতে বিলীন হয়। কিন্তু ভালোবাসা আর স্মৃতি অমর হয়ে থাকে। সে আপনার মায়ের  মতোই আপনাদের সঙ্গেই থাকবে”।

তারপর শ্মশান বন্ধু কোকা আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন, গেটে লেখা আছে – “জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, সব বিধাতার ইচ্ছা”। তিনি আরও বলেন, “এই শ্মশান যেন এক বিশাল শিক্ষালয়, যেখানে প্রতিটি মানুষ আসে এক অনিবার্য সত্যকে উপলব্ধি করতে। এখানে ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই আসে একই পরিণতি বরণ করতে, একইভাবে ছাই হয়ে মিশে যেতে”।

তাদের শান্তনা দিয়ে শ্মশান বন্ধু কোকা অনুভব করেন, প্রতিটি চিতার আগুন এক একটি জীবনের গল্প বলে যায়। কখনো সে গল্প অকালমৃত্যুর বেদনা, কখনো দীর্ঘ জীবনের পরিসমাপ্তি, আবার কখনোবা হঠাৎ করে আসা বিদায়ের শোক। কিন্তু সব গল্পের শেষে একটাই বার্তা – জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু ভালোবাসার রেশ চিরন্তন।

সূর্য তখন শ্মশানের আকাশে উঁকি দিয়েছে। কুয়াশা কেটে এক নতুন দিনের আলো শ্মশানের পরিবেশকে এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা দিচ্ছে। শ্মশান বন্ধু কোকা-সহ শ্মশানের যারা এসেছিল, সবাই “হরি হরি বলা, বল হরি” ধ্বণিতে শ্মশানের গেইটের দিকে এগুতে থাকেন। শ্মশান প্রহরী ডোম সম্প্রদায়ের দুইজন শ্মশানের গেইটে এসে কিছু মন্ত্র পাঠ করে তাদের প্রাপ্য দক্ষিণা বুঝে নিয়ে শ্মশান গেইট পাড় করে দিলেন। শ্মশান বন্ধু কোকা সাথে আসা সবাইকে নিয়ে নিজ এলাকার গন্তব্যে পৌঁছাতে দুটো ছোট বাহনে চেপে বসলেন। একসময় নিজেদের গন্তব্যে এসে পৌঁছালেন।

তাঁর কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, “আমি যতদিন এই ধরণীর বুকে বেঁচে থাকি, ততদিন এই এলাকার যেকেউ মৃত্যুবরণ করলে আমি নিঃস্বার্থে সৎকার করে শ্মশানে ছুটে যাবো তাদের প্রিয়জনের শেষ যাত্রায় অংশ নিতে। প্রতিটি শোকের নীরব সাক্ষী হতে নিজেকে নিয়জিত রাখার চেষ্টা করবো। এটাই আমার জীবনের প্রতিজ্ঞা”। শ্মশান বন্ধু কোকা—

কানার হাটে আলো বিক্রি

গোধূলি

কানার হাটে আমি আলো বিক্রি করি।
আলো—যা তারা দেখতে পায় না, বুঝতেও চায় না।
তবু আমি দাঁড়িয়ে থাকি। প্রতিদিন। প্রতিক্ষণ।
হাতের ঝোলায় কিছু সূর্যরশ্মি, পকেটে মুঠো মুঠো ভোরের আলো,
আর চোখে এক বিন্দু নির্ভার দৃঢ়তা।

এই হাটের মানুষ অন্ধ। শুধু চোখে নয়—
চিন্তায়, চেতনায়, অনুভবে অন্ধ।
তাদের জন্য আলো মানে বৈদ্যুতিক বাল্ব,
আর আমার আলো মানে—
ভেতরের জানালা খুলে দেয় যে আলো,
যা দেখে মানুষ তার নিজের ছায়াকেও ভালোবাসতে শেখে।

তারা বলে, “আলো? আমাদের লাগে না!
আমরা তো দিব্যি বেঁচে আছি এই অন্ধকারেই।
এখানে প্রশ্ন নেই, ব্যথা নেই, দায় নেই—
তোমার আলো এনে এসব জাগিয়ে দেবে কেন?”

আমি শুনি। শুনে থাকি।
কারণ জানি—
আলো কখনো জোর করে ঢুকে না কারো চোখে,
সে অপেক্ষা করে।
যেন কোনো প্রাচীন প্রেমিক—
যার হাতে গোলাপ নেই, তবু হৃদয়ে এক অমল চৈত্র।

কখনো কখনো,
এই হাটের এক কোণে বসে থাকা ছোট্ট ছেলেটি আসে—
সে দেখে না, তবু হাত বাড়ায়।
আমি তার হাতে রাখি এক টুকরো ভোর।
সে হাসে। আর সেই হাসির আলোর ছায়ায়
পড়ে যায় একটা চুপচাপ কান্নার রেখা।

তখন মনে হয়,
এই বিক্রির পণ্য বুঝি বিকোবে না কখনোই—
কারণ আলো কিনতে হলে দেখতে হয় নিজের অন্ধকার।
তবু আমি বিক্রি করি।
দিনশেষে হয়তো বিক্রি হয় না একটিও আলো,
তবু সন্ধ্যার আগে আগে
আমি আমার নিজের চোখে কিছু নতুন রোদ খুঁজে পাই।

এই হাটে আসা মানুষগুলো নিজেরাই জানে না,
তারা কী বিক্রি করে, কী খোঁজে—
আমি শুধু জানি, আলো বিক্রি করি মানেই আলো ছড়াই।
কারণ আমারও একদিন কেউ
কানার হাটে এসে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল এক বিন্দু দীপ্তি,
যা দিয়ে আমি আজো হেঁটে চলি।

তাই প্রতিদিন, প্রতিরাত,
আমি কানার হাটে আলো বিক্রি করি—
ভাঙা মণির মতো কিছু আলো,
যা হয়তো তারা আজ নেবে না,
কিন্তু একদিন,
যখন অন্ধকারও ক্লান্ত হয়ে যাবে,
তারা ঠিক খুঁজে নেবে সেই আলো,
যা আমি ফেলে রেখে গিয়েছিলাম
তাদের অদেখা চোখের ঠিক পেছনে।

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে কিছু খসড়া আলাপ

29.12.24-7বিএনপিই এখন সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর জন্য নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাদের ক্ষমতা দরকার। রাজনৈতিক দল ক্ষমতা চাইবে এটা তারা চাইতে পারে কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময় এই আলটিমেটাম যদিও ইউনুস স্যারের ডিসেম্বর থেকে জুন থিউরির বাইরে নয়, তবু আটনেটাম না দিয়ে সময়ের প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারত।

বিএনপির এই চাওয়া, এটা সবায় চায়। কিন্তু ইউনুস স্যার কোন জবাবদিহিতা দিতে প্রস্তুত নয় বলে মনে হইতাছে। এটা তার ভাবমূর্তি অনেক খারাপ করবে। তার ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে যা করতে হবে বলে অনেকে মনে করছেন-

* জুলাই হত্যার বিচারের কাজ কতদিনে দৃশ্যমান হবে তার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।
* সংস্কারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এখনই দিতে হবে।
* নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

ছাত্র জনতার দলকে রাজনৈতিক ভাবে জাতির কাছে হেয় করেছে এই সরকার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এই সরকার নিজের উপর তার দায়িত্ব নিয়েছে। ভেবেছে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতে আসবে এই ঘোষণা। সকলকে একমত করা এইদেশে অসম্ভব, ইউনুস স্যারের তেমন নেতৃত্বগুন নেই যাতে করে সকলকে একত্রিত করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করবে। এটা আলাদা গুন যা এই সরকারের নাই। তবু তারা এই দায়িত্ব নিজেরা নিয়েছে।

সরকার দিতে পারবে না। এনসিপিসহ সমমনা দলগুলো একত্রিত হয়ে এই ঘোষণা দিতে হবে এবং বলতে হবে এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করাই তাদের রাজনীতি। এই সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা সরকার। আর যাই হোক জুলাই ঘোষণা ঐক্যমতের ভিত্তিতে হওয়ার সম্ভাবনা কম, একেবারেই সম্ভাবনা নেই বলতে হবে। এটা এই সিদ্ধান্তহীনতা ভোগা সরকারের কাছে সময় ক্ষেপন করার কোন প্রয়োজন নেই বলে কেউ কেউ মত দেন।

পড়তে থাকুন জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে কিছু খসড়া আলাপ

আমাকে বাচ্চা বলবেন না আংকেল

FB_IMG_1748020841411ইশরাক কেন মেয়র হিসাবে শপথ নিতে হবে? তিনিতো বিএনপির লোক, বিএনপির ব্যাপক সমর্থন আছে দেশব্যাপী। পাড়া মহল্লা থেকে কোর্ট পর্যন্ত তাদের বিশাল প্রভাব এখন।

আলোচিত এই মামলায় কি বিচারককে সরাসরি হুমকি দেয়া হয় নাই? এই কারণে আইনজীবী ফোরামের প্রভাবশালী নেতা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রর্থনা করেন নাই?

এটাতো প্রকাশ্য বিষয়। অন্তরালে কি ঘটে তার কিছু অনুমান করা যায়, প্রকাশ্য ঘটনা বিশ্লেষণ করলে।

কেন জনাব ইশরাককে মেয়াদ উত্তির্ন মেয়রের পদ দখল করতে হবে? বিএনপি কেন এখানে নির্বাচন চায় না? কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের ইলেকশন হোক, এটা সাধারণত বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিএনপি এটা চায় না। তারা এমন নির্বাচন নির্বাচন উচ্চারণ করছে যার প্রতিধ্বনি হয়ে আমাদের কানে আসছে, যেখানে ক্ষমতা নিশ্চিত সেখানে নির্বাচন দাও।
ক্ষমতায় এলে সব স্থানীয় প্রসাশনের নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের আওতায়। বাস, সেই পুরাতন চিত্র।

এনসিপি দলটাতো দলই হয়ে উঠতে পারল না। চারদিকে এত মুত আর থুতুর বন্যা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য এতটা ব্যাপক যে, ওরা কথা বললেই বেয়াদব মনে হয়। তারপর আছে দুর্নীতিপ্রবন জনগোষ্ঠী যারা নানা ধরণের প্রস্তাব নিয়ে আসে এইসব কাচা বয়সের ছেলেদের কাছে, হয়ত বড় ধরনের ভুলই তারা করেছে। তাই  এখন পস্তাতে হচ্ছে কিন্তু ওদের বাচ্চা বলবেন না।  তারা কার্টুন চরিত্র শিবা’র মত বলে উঠবে – আমাকে বাচ্চা বলবেন না আংকেল। এনসিপি, এনসিপি আমার নাম, আমি আপনার সব অন্যায়ের পথকে ভেঙে দিতে এসেছি। ভালো হয়ে যান না, না হয় পস্তাতে হবে!!!!

পড়তে থাকুন আমাকে বাচ্চা বলবেন না আংকেল

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি কিছু প্রস্তাবনা

FB_IMG_1743394380296

 

আমাদের প্রফেসর ইউনুসকে প্রয়োজন, যেন তিনি আগামি নির্বাচন পর্যন্ত দেশের পথনির্দেশক হিসেবে থাকেন, তিনি জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের ঐক্যের প্রতীক –

#এখন পর্যন্ত যে সংস্কার পরিকল্পনা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে আগামি সরকারের হাতে ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করে যেতে পারেন ।

#যদি সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারগুলো অর্জিত না হয়, তবে একটা গন অভ্যুথানে ২০০০ মানুষের আত্মত্যাগের ন্যূনতম ফলও আসবে না এবং দেশ স্থিতিশীল হবে না। দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, বেকার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

**বিএনপি ছাড়া সংস্কারে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে।

** সংস্কার কমিশন যা যা প্রস্তাব করেছিল তা পুস্তক আকারে প্রকাশ করতে হবে যাতে করে কোন রাজনৈতিক দল তাদের মুল এজেন্ডা হিসাবে ঘোষণা করতে পারে।

** বিএনপি সহ যে সকল বিষয় একমত হয়েছে তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

** কেউ চাক বা না চাক অবশ্যই রাজনৈতিক খুন, গুম, প্রকাশ্যে হত্যাসহ, বিশেষে করে এবং চিহ্নিত করে জুলাই বিপ্লবের সময়কার হত্যা, হত্যাচেষ্টা, হুকুমদাতা ইত্যাদির বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি হতে হবে।

** সংস্কার ও বিচারের নামে কোন কালক্ষেপন করা যাবে না।

** তারপর নির্বাচন। তবে যেহেতু বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে একটা আলটিমেটাম দিয়ে দিয়েছে তাই ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট টার্গেটেড সময় ঘোষণা করতে হবে।

** কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমানিত হওয়ার পর স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭১ এর গণহত্যা ও জামায়াতে ইসলামী

আজ অনেক দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই পোস্ট দিলাম। জানি আমি কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। আমার মত একজন সাধারণ আম জনতার মতামতের কোন মূল্য নেই। তবু মত প্রকাশের এই সুবর্ণের দিনে নিজের মতামত দিলাম।

জামাতের বর্তমান আমীর ডা. শফীকুর রহমানের বক্তব্যে একথা স্পষ্ট যে, ৭১ তার দলের কেউ কোন অপরাধ করে থাকলে তাদের বিচার করা হোক। তিনি মনে করেন জামাতের যেসব নেতাদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তা ‘বিচারক গণহত্যা ‘। এবং তিনি বলেন ৭১ এ জামাতে ইসলামি পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছে কারণ তারা মনে করেছে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তান ভেঙে দেওয়ায় ষড়যন্ত্র। তারা পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে এই স্ট্যান্ড নিয়েছিল। এবং এটা তারা করেছেন ইসলামের নামে।

স্বীকার করতে দ্বিধা কোথায় যে, আমরা অনেকেই ইসলামকে নিজেদের আদর্শ হিসাবে জানি এবং পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আজ একথা বলতে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হইতাছে যে, অখণ্ড পাকিস্তানের জন্য ইসলামের নামে যে কয়টি রাজনৈতিক দলই পাকিস্তান আর্মিকে সমর্থন, সহযোগিতা করেছে তারা অনৈসলামিক কাজ করছিল।

পাকিস্তান আর্মি গণহত্যা চালাইতেছিল, এ দেশের নারীদের উপর যৌননিপীড়ন চালাইতেছিল। আর ইসলামের নামে তাদেরকে সহযোগিতা করছিল অনেকগুলো ইসলামি দলের সাথে জামাতে ইসলামি।

ইসলামের কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বৈধ!!! পাকিস্তান আর্মি ইসলাম প্রচারের যুদ্ধে লিপ্ত ছিল না। তারা জাতীয়তাবাদী চেতনায় নিজ দেশে অখণ্ডতা বজায় রাখতে দেশের এক অংশে (পুর্ব পাকিস্তান) ব্যাপক জুলুম হত্যা যৌন নির্যাতনের করছিল। পাকিস্তানিরা কোন অবস্থায়ই ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে নাই আর এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা কোন অবস্থায় ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় নাই। মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল। এদেশ থেকে ইসলামকে মুছে দিতে হবে এই লক্ষ্যে কেউ যুদ্ধ করেনি কিম্বা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় নি। শুধু জামাতসহ কিছু রাজনৈতিক দল ইসলামের নামে পাকিস্তান আর্মিকে সমর্থন ও প্রকাশ্য সহযোগিতা করেছিল।

জাতীয়তাবাদী চেডনায় সংঘটিত যুদ্ধে জুলুম-নির্যাতন-হত্যা-যৌন নিপীড়নকে সমর্থন ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করতে ইসলামের নাম ব্যবহার করে শুধু বাংলাদেশি জাতীয় চেতনায় নয় ইসলামের নামেও কলঙ্ক লেপে দিয়েছে।

যৌবনের শুরুতে শিবিরের ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পরতে যাওয়া অবস্থায় যে কারণে শিবিরে আর কন্টিনিউ করিনি, সেই একই কারণে আজ শেষ বয়সে এসে মুক্ত পরিবেশেও জামাতকে সমর্থন করতে পারছি না।

যদি এব্যাপারে তারা সুস্পষ্ট ভাবে ভুল স্বীকার না করে, জাতির কাছে ক্ষমা না চায় তবে আমি মনে করি তারা যতই ইসলামের জন্য কাজ করে কিম্বা দেশের জন্য কাজ করে তারা সমর্থনযোগ্য নয়।

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

ক্রিক নদীIMG-20250509-WA0034

 

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাইভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতার ইতিহাস দীর্ঘ, যার সূচনা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মধ্য দিয়ে। যদিও এই বিভাজন ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছিল, তবু পরবর্তী সময়ে যেসব যুদ্ধ, সংঘর্ষ বা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তার মূল কারণ ছিল ভূখণ্ডগত বিরোধ, কাশ্মীর সমস্যা, পানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, সীমান্ত লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই। ধর্ম এখানে একটি আবরণ মাত্র, মূল চালিকাশক্তি নয়।

এই যুদ্ধকে কেউ কেউ ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটি বাস্তবতার অতিসরলীকরণ ছাড়া কিছুই নয়। যুদ্ধ কখনোই শুধুমাত্র ধর্ম বা আবেগ দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায় না। রাষ্ট্রীয় কূটনীতি, প্রতিরক্ষা কৌশল, আঞ্চলিক স্বার্থ এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন—এসবই যুদ্ধ ও শান্তির পিছনে থাকা প্রধান প্রভাবক।

ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে প্রায় ৪০ কোটি মুসলমান সহ হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ নানা ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, আর বাংলাদেশেও রয়েছে বিপুল মুসলমান জনগোষ্ঠী। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মিলিত মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৩৯ কোটি, যা ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রায় সমান। এই পরিসংখ্যান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—যদি দ্বন্দ্ব কেবল ধর্মীয় হতো, তাহলে ভারতের এই বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা ভিন্ন হতো।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলিম, শিখ, হিন্দু, খ্রিস্টান—সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। কর্নেল সুফিয়া কোরেশীর মতো একজন মুসলিম নারী যখন যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, অথবা একজন শিখ নারী যখন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে ধর্ম নয়, দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠাই আসল শক্তি। সেনাবাহিনী কখনো ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয় না, তারা রাষ্ট্রের জন্য একসঙ্গে লড়ে।

তবে দুঃখজনকভাবে, যুদ্ধ বা উত্তেজনার সময় সমাজে কিছু গোষ্ঠী ঘৃণা ছড়িয়ে রাজনৈতিক বা আদর্শিক সুবিধা আদায় করতে চায়। তারা যুদ্ধকে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে মানুষের মধ্যে বিভাজন ও সন্দেহের দেয়াল গড়ে তোলে। এরা ভুলে যায়, প্রকৃত ইতিহাস বলে, যুদ্ধ যতই ভয়াবহ হোক, তা পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ দ্বারা; ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা ধর্ম সেখানে গৌণ।

আজকের বিশ্বে আমরা চাই না আরেকটি রক্তাক্ত অধ্যায়। আমরা চাই না এক দেশের সাধারণ মানুষের উপর আরেক দেশের ঘৃণার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হোক। একজন মুসলিম যখন ভারতের জন্য প্রাণ দেয়, বা একজন হিন্দু যখন পাকিস্তানে নির্যাতনের শিকার হন, তখন আমাদের বোঝা উচিত—যুদ্ধ ধর্ম দেখে আঘাত করে না। শান্তিও ধর্ম দেখে আসে না। শান্তি আসে ন্যায়ের ভিত্তিতে, সহানুভূতির মাধ্যমে এবং একে অপরের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার মধ্য দিয়ে।

ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হোক শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে। যুদ্ধ নয়—মানবতা, সৌহার্দ্য, ও সহাবস্থানই হোক আমাদের একমাত্র পথ।

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌনতাঃ একটা সাধারণ মতামত

জামাতের আমীর শফিকুর রহমানের একটা বক্তব্য কোট করছি।

ফুল কোটটা হচ্ছে, ” প্রস্তাবনায় ম্যারিটাল রেইপের কথা এসেছে। রেপ তো দুইটা অসৎ পুরুষ আর নারী যখন একত্রিত হয় বিবাহবহির্ভুত পন্থায়, সেটার নাম রেপ হবে। বিবাহিত জীবনে রেপে প্রশ্ন আসলো কেন?””

FB_IMG_1746081174238

তিনি অসৎ মানুষ পুরুষ ও নারী বিবাহবহির্ভূত পন্থায় সেক্স করলে তাকে রেপ বলেছেন।

উনার বক্তব্য হচ্ছে, সৎ বা অসৎ নারী পুরুষ বিবাহিত হলে সেক্সকে রেপ বলা যাবে না।

আবার দুইটা সৎ নারী পুরুষ যখন একত্রিত হয়ে বিবাহবহির্ভূত সেক্সকে রেপ বলা যাবে কিনা এব্যাপারে তার বক্তব্য নাই।

উনি ইসলামের দৃষ্টিতে কথা বলেছেন। বিবাহবহির্ভূত যে কোন সেক্স ইসলামে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেটা ইচ্ছাকৃত বা জোর করে হোক।

আর বিবাহিত সেক্সকে ইসলামের দৃষ্টিতে প্রসংসিত কাজ বলা হয়েছে। একে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যখন খুশি সামর্থ্য অনুযায়ী সেক্স করতে উৎসাহিত করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ বা নারীর শরীরের হরমোন জনিত যে সেক্সের চাহিদা হয় তা বিবাহিত উপায়ে মিটিয়ে ফেলতে হবে। একবার বোতল খালি হয়ে গেলে অন্যকে বিবাহবহির্ভূত সেক্সে বাধ্য করা (রেপ) করা বা অন্যকে রাজি করানোর শারীরিক চাহিদা মিটে যায়। বিজ্ঞান কি বলে এটা বিষয় নয়, এটা ইসলাম বলে বেশি বেশি বিবাহিত যৌনসঙ্গম কর, সমাজ থেকে রেপ বা সম্মতিতে যৌন অত্যাচার দূর হয়ে যাবে।

মেয়েরা রেপ করতে পারে না। রেপের পুরো ব্যাপারটাই পুরুষের দ্বারা ঘটিত অপরাধ। এই অপরাধ হয় যখন শরীরের হরমোনগুলি নিঃশেষ না হয়ে জমে উঠে। ইসলাম নারীকে বলেছে তারা যে সমাজের বা রাস্ট্রের ভিতরে যৌন অপরাধ সংগঠিত হবার সুযোগ না দেয়। রেপ যেহেতু পুরুষ কর্তৃক সংগঠিত একটা শারীরিক অপরাধ তাই পুরুষের বৈধ সেক্সে কোন বাধা হয় এমন সকল পদক্ষেপ বাদ দিয়ে যতদ্রুত তার যৌন চাহিদাকে বৈধ পথে, নিয়ন্ত্রতিত পথে মিটিয়ে ফেলাতে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।

ইসলাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং কার্যকরী নির্দেশনা দিয়েছে। আর নারীবাদীরা পুরুষকে অপরাধী করে তুলছে।

এখানে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, বিবাহিত লোকও রেপ করে, বাচ্চাদেরকে রেপ করা হয়। এটা অসৎ পুরুষের স্বভাব।

না, ইসলামের প্রতিটি ব্যাপার খেয়াল করতে হবে-
১. মেয়েরা যৌন অঙ্গ প্রদর্শন করবে না। ইসলাম মনে করে এতে পুরুষ রেপ করার মত অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।
২. ইসলাম বলে মেয়ে ছেলে সকলেই প্রাপ্ত বয়সের শুরুতেই বিয়ে করে নেক। যাতে করে ইচ্ছেমত সেক্স করে শরীরের সকল সেক্স হরমোন খালি করে দিতে পারে। এতে পুরুষের রেপ প্রবনতা কমে যাবে।
৩. এমন কি পিতা মাতার সাথেও পুর্ন যৌবন প্রাপ্ত ছেলে মেয়েদের একান্তে অবস্থান করতে নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ করেছে ভাই বোনের একসাথে একান্তে একসাথে অবস্থান। দাদা নাতনীকে এরূপ অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে।
৪. প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা বা মেয়েদেরকেও একত্রে একান্তে অবস্থান করতে নিষিদ্ধ করেছে। যাতে করে সমকামিতা না হতে পারে।
৫. এমনকি পশুকাম ইত্যাদি বিষয়গুলোও ইসলামে অলোচিত হয়েছে।

ইসলাম কেবল বিবাহিত সেক্সকে অবাধ করেছে, কোন ধরনের বাধা এতে তৈরী হয় এমন সব নিষিদ্ধ করেছে। এবং বিবাহিত সেক্সকে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সওয়াবের কাজ বলে উৎসাহিত করা হয়েছে।

যে যা বলুক ইসলাম তার বিধান স্পষ্ট করেছে।
আমি মনে করি, ইসলাম অনুশীলন করলে সমাজের প্রভুত কল্যান হবে এবং ইসলাম নারী বা পুরুষ কারোর উপর কোন অন্যায় নীতি চালিয়ে দেয়নি। যে সমাজ ইসলামকে পুরোপুরি নিবে সেখানে অনেক অপরাধ প্রবনতা কমে যাব, কমে যেতে বাধ্য।

আনন্দ খেলাঘর

ঘুরে ফিরে বারে বারে হয় কত কারুকাজ
শুক্লপক্ষের জ্যোছনায় ভেসে যায় আকাশ!
হালকা ধাচের সাদা মেঘ অরূপ মায়ার সাজে
খানিক আধারে চুমু দিয়ে ছুটে চলে যায় লাজে!
চারদিকে দিগন্তজোড়া দালানের উঁচু নিচু ছাদ।
পাতাভরা গাছের মাথায় উঁকি দিয়ে চাঁদ-
যাচ্ছে লুকোচুরি খেলে
সুন্দর আজ প্রাঙ্গনে হেসেছে অবগুণ্ঠন মেলে।

এই যে আকাশ ভরা তারা
সংখ্যাতে হতে হয় দিশেহারা
বৈচিত্র্যময় গ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা, ধুমকেতু
নীহারিক, গ্যালাক্সি ঘূর্ণন হেতু
কোথা থেকে কোথা চলছে ছুটে
আমিও তাদের অংশ হয়ে থাকি চিত্রপটে।

এই যে জলবাহী পবনের উড়ন্ত স্রোতধারা
আছড়ে পড়ে মিটায় জমিনের খড়া
গাছ গাছালি মাটি ফুড়ে এসে
কেঁপে কেঁপে উঠে প্রাণের উল্লাসে।
আগে শুন্য, অজানা রইল পর
শুধু এইখানে আজ বুঝি এই আনন্দ খেলাঘর!
আমার হৃদয়ের অপার্থিব স্পন্দিত ফল্গুধারা
সাগর- ঊর্মি, হরিত- প্রান্তর, প্লাবিত বসুন্ধরা
আমারে ডুবায়ে নিয়ে যায়, ভাসায়ে নিয়ে যায়,
আমারে না জানি কোথায় হারাইয়া লইয়া যায়!

ভেবে দেখেছো কিঃ ১

সবসময় ক্ষমতার সাথে থাকা, ক্ষমতাবানদের সাথে থাকা- মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মানুষ সবসময় তাকে নিরাপদে রাখতে চায়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে জীবনের মুল লক্ষ্য মনে করে। নীতি নৈতিকতা বাহুল্য মনে হয়। এজন্য ক্ষমতাবানদের মধ্যে দুর্নীতিবাজদের দলটা ভারী। সৎ মানুষের সংখ্যা কম।

কঠোর আইন দন্তবিহীন হলেও, প্রকৃতির আইন কিন্তু দন্তবিহীন না। প্রকৃতির প্রতিশোধ ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ। এই প্রতিশোধ দুর্নীতি না থামাতে পারলেও, দুর্নীতিবাজদের ঠিকই থামিয়ে দিবে।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন এবং সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন, ‘আমিই বাদশাহ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়?

অতপর সমস্ত জমিনগুলোকে ভাঁজ করবেন। অতপর সেগুলোকে বাম হাতে নিয়ে বলবেন, আমিই মহারাজ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? (মুসলিম)

সুতরাং সামান্য মশা ও পিপড়ার কামড় সহ্য করার ক্ষমতা যাদের নেই। তাদের অহংকার করা মানায় না, ক্ষমতার দাপট দেখানো মানায় না।

করোনাকালীন সময়ে সামান্য এক ভাইরাসের দাপটে ঠাণ্ডাজ্বরে যারা অস্থির হয়ে ওঠে, সেই মানুষ অন্যায়ভাবে অর্থ সম্পদ উপার্জন করার পূর্বে, অন্যের উপর জুলুম করার পূর্বে একবার ভেবে নেয়া উচিত এই অর্থ আর ক্ষমতা সত্যিকারের প্রয়োজনে একেবারে মূল্যহীন।

ভেবে দেখেছো কি, কতটা নশ্বর এই উপার্জিত সম্পদ, কতটা অসহায় ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হওয়া মানুষগুলি।

নারীর শ্রেষ্ঠত্ব

অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!

পৃথিবীর সব দেশেই অপরাধীদের মধ্যে পরিসংখ্যানে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। চুরি ডাকাতি খুনের মতো যাবতীয় সাধারণ অপরাধের খতিয়ান দেখলে পুরুষ অপরাধীদের তুলনায় নারী অপরাধীর সংখ্যা নগণ্য। চুরি, জালিয়াতি করলেও নারী ডাকাত দল তেমন শোনা যায় না। ব্যতিক্রমী কিছু দস্যুরানী পুরুষ ডাকাত দলে পুরুষদের খুন ধর্ষণের ঢালাও অনুমতি দেওয়ার বিনিময়েই ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। অবশ্য ড্রাগ পাচার ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মেয়েরা হামেশাই ব্যবহৃত হয় যা মুলত পুরুষরাই নিয়ন্ত্রণ করে।

অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!

আমাদের দেশে থানায় ডায়রি থেকে মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের চিত্র থাকলেও পুরুষের তুলনায় নারী অপরাধীর অনুপাতের কোনও রেকর্ড নেই। যা আছে তা হল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মহিলার কীর্তিকলাপের বর্ণনা ও তাদের নিয়ে কাহিনী। অন্যদিকে আমেরিকান ও ইওরোপীয় দেশগুলোতে অপরাধের লিঙ্গ ভিত্তিক পরিসংখ্যান যথেষ্ট বিশদে রাখা হয়। যার থেকে অপরাধ জগতে নারীর ভূমিকা কতটা তার একটা ছবি পাওয়া যায়। যেমন ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারে নিক্ষিপ্ত আসামীর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা (৫,০৩৭,০০০) মহিলাদের (৫৮১,০০০) তুলনায় ৯ গুণেরও বেশি ছিল।

২০১৪ সালে অসামাজিক কাজের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া মানুষের ৭৩% ছিল পুরুষ। এর মধ্যে হিংসাত্মক অপরাধের জন্য ধরা পড়া পুরুষের সংখ্যা ৮০.৪% এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ৬২.৯%। United States Department of Justice ১৯৮০ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে খুনের একটা পরিসংখ্যান একত্রিত করে দেখা যায় – মোট অপরাধের ৯০.৫% করেছে পুরুষ বা ছেলেরা। অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!
…….

২০০২ সালে কানাডায় বার্ষিক মোট অপরাধী চিহ্নিত মানুষের মধ্যে পরিণত পুরুষ ৩,২৬,৫৩৬ জন, পরিণত মহিলা ৭১,০৫৮ জন, অপরিণত ছেলে ৭৪,৫১৩ জন এবং অপরিণত মেয়ের সংখ্যা ২৪,৪৮৭ জন। দেখা যাচ্ছে ছেলেরা অপরিণত বয়সেও মেয়েদের তুলনায় এমনকি পরিণত নারীর তুলনাতেও অপরাধে চাম্পিয়ান।
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!

পুরুষালি হিংস্রতার পেছনে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের (testosterone) ভূমিকা সংক্রান্ত প্রথম তত্ত্ব Challenge hypothesis অনুযায়ী- বয়ঃসন্ধিক্ষণে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলেই জননক্ষমতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভাব বেড়ে যায় যা আগ্রাসী আচরণের অন্যতম কারণ। বাস্তবে জেলে হিংস্র অপরাধীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে রক্তে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা ও হিংস্রতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণ হয়েছে।

Merton’s theory of anomie অনুযায়ী নারীদের অপরাধ প্রবণতার পেছনে অনেক সময় তার মধ্যে পুরুষালি ভাবকে দায়ী মনে করা হয়। যেসব মেয়েরা সমাজ নির্ধারিত মেয়েলি ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে ‘টম বয়’ গোছের হয় তাদের মধ্যে অন্যান্য সাধারণ মেয়েদের তুলনায় অপরাধ প্রবণতা বেশি। একটু ডানপিটে ও স্বাধীনচেতা মেয়ে হলেই সে নিষ্ঠুর ও অপরাধী মনোবৃত্তির হবে এমন নয়। কিন্তু আগ্রাসী মনোভাব, অপরাধ ও হিংসার সাথে কোনওভাবে বিজ্ঞানীরা পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের বিশেষত পুরুষ হরমোনের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। যেমন টেস্টোস্টেরন এই পুরুষ হরমোনটি নারী দেহেও কাম ও অন্যান্য উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।

অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!৷
………

পৃথিবীর সকল নারীকেই প্রাকৃতিক একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের মা-খালারাও উঠতি বয়সে মাসিক বা ঋতুচক্রের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। একজন নারীকে ভবিষ্যতে সন্তানসম্ভবা হতে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে এই মাসিক প্রক্রিয়া। বাড়ন্ত কিশোরীর শরীরে মা হবার প্রক্রিয়া একেবারে প্রকৃতিভাবে যুক্ত করে দিয়েছে।

একজন কিশোরীর জন্য এটি প্রথম সংকেত যা বলে দেয় যে সে তার বাড়ন্ত কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় একটি ডিম্বাণু উৎপাদন করে। সবচেয়ে পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণুটি ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে চলে যায়। জরায়ু হচ্ছে দেহের এমন একটি অংশ যেখানে শিশু সুরক্ষিত থাকে ও প্রতিনিয়ত পুষ্টি পায়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় তখন শরীর জরায়ুতে রাসায়নিক সংকেত পাঠায়। ফলে জরায়ুর ভিতরের অংশ পুরু হয়ে ওঠে। ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ক ডিম্বাণু বেরিয়ে এসে ডিম্বনালীতে অবস্থান নেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলে হয় ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া।

ডিম্বানুটি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভসঞ্চার হয়। গর্ভবতী অবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ডিম্বনালীর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে আসে। ৬ দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে সৃষ্ট নরম, পুরু আবরণের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আর যদি গর্ভবতী না হয়, তাহলে অনিষিক্ত ডিম্বাণুটি নষ্ট হয়ে যায়। জরায়ুর ভেতরে কোন শিশু জন্ম না নেওয়ায় নরম ও পুরু আবরণটিও ভেঙে যায়; শরীর থেকে রক্তের আকারে বের হয়ে আসে। এভাবেই মাসিকের শুরু হয়। প্রকৃতি একজন নারীকে মাসের সাত দিন (কম বেশি হতে পারে) অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ সময় জননী হওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখে। যেখানে পুরুষ প্রকৃতিগতভাবে বেশি অপরাধ প্রবণতায় যুক্ত।

অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!৷

এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।

প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। (মুসলিম)৷

অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!!

তিন শূন্যের পৃথিবী

তিন শূন্যের পৃথিবী
সাইদুর রহমান.

সবুজ শ্যামল সোনার বাংলার
এত উর্বর মাটি,
গরিব কৃষান ভাবে দেশটি
যেন শস্যের ঘাঁটি।।

তবুও হায় রে দারিদ্রতা
ছাড়ে না তার পিছু,
কখনো হায় উপোষ কাটায়
জুটে নাকো কিছু।

মোদের সকল ছেলে মেয়ে
শিক্ষা নিয়ে শেষে,
কাজের খোঁজে সকল দ্বারে
ঘুরে চাতক বেশে।

বাবা মায়ের বুকের স্বপ্ন
ভেঙে হয় গো চুরমার,
বেকারত্বের সে কি জ্বালা
কে শুনে সে চিৎকার ?

আজ কী শুধু শব্দ দূষণ
খাদ্যে ভেজাল চারপাশ,
হেথা হোথা কার্বন দূষণ
বিষে ভরে নিঃশ্বাস।

ছড়ায় ক্যানসার আয়ু কমে
প্রাণ স্পন্দন যায় থেমে
পাই পরম সুখ কার্বন দৃষণ
শূন্যে যেই যায় নেমে।

দেশে বেকার আর দারিদ্র
যদি আর না থাকে,
এই পৃথিবীর সবাই ভাববে
তখন স্বর্গ তাকে।

মূলঃ নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ ইউনূস
ছন্দ মাত্রা স্বরবৃত্তঃ ৪+৪/৪+২

সিনায় সিনায় জিকির উঠে নির্বাচন নির্বাচন

Civil_Rights_March_on_Washington,_D.C._(Leaders_of_the_march_posing_in_front_of_the_statue_of_Abraham_Lincoln..._-_NARA_-_542063_(cropped)

১.
এমনভাবে বলা হয়ে থাকে যেন নির্বাচন ব্যবস্থা সাম্যবাদী। ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান চোখে দেখে। চরিত্রের বিবেচনায় তাই নির্বাচনকে সমাজতান্ত্রিক বলেও চিহ্নিত করা যায় বৈকি! একথা সত্যি বটে নির্বাচন সকলের জন্য, তাত্ত্বিকভাবে ধনী গরীব আলাদা করে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকে শ্রেণি নিরপেক্ষ বলা যেতেই পারে। কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়।

২.
রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণাগুলো আমরা সবাই দেখছি। একটা বিশেষ দল রাজনৈতিক ক্ষমতায় এলেই সব সমস্যার সমাধান। সব জায়গাই বলেছে, নির্বাচনে থাকুন। বেশি বেশি করে স্মরন করে দিতাছে আপনারা এখন যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা সব অনির্বাচিত। বলে দিয়েছেন নেতা প্রতিদিনই স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। জনগনকে বলছে, নির্বাচন নির্বাচন করুন। যাদের শুনার ক্ষমতা আছে তারা শুনতে পারছে- জনগণের এক অংশ তাদের বলছে প্রোটিন-জাতীয় খাবার আর ফল-মূল ও শাক-সবজি খান। মানে এগুলো খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। শরীরের প্রতিরোধের কাছে ধরাশায়ী হবে রোগশোক। তবে কি তারা অসুস্থ! তবে কি তারা করোনায় আক্রান্ত! জনগণের এই অংশ কি নির্বাচন আকাঙ্খা কারীদের ঘরে অবস্থান করতে আহ্বান করছে!

কিন্তু প্রোটিনের উৎস মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-বাদাম। দামী খাবার। উচ্চবিত্তের খাবার। ধরে নিচ্ছি, নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও মোটামুটি প্রোটিনের ব্যবস্থা করতে পারলো। কিন্তু গরীবের উপায় কী? গরীবদের শুধু ডাল। ডালে প্রোটিন আছে। তা বটে! মোটা চালের ভাত আর ডাল। ডালই শেষ আশ্রয়।

গরীবের টাকা নেই। সিস্টেম মতো সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষা নেই; ভালো চাকরী নেই; বড় চাকরী নেই, বড় বেতন নেই। ভালো বাসস্থান নেই এবং ডাল ছাড়া পুষ্টিকর খাবার নেই; রোগ-বালাইয়ের শেষ নেই; বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাতো যাবেই। তাইতো?

গরীব নির্বাচন খাবে! গরীবের দরিদ্রতা নিরসনে নির্বাচনের আর ক্ষমতাই কতটা?
গরীব ধরাশায়ী।

৩.
রাষ্ট্রের বড় মাথা। বড় ভাবনা। নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্টযন্ত্র দখল করে নিবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সংসদের ভিতর কতজন বণিক শ্রেণীর জানা আছে তো? তাই বড় মাথায় বড় বড় বণিকের কথা থাকে। তাদের জন্য প্রণোদনা আসে। ডুবে যাওয়া লঞ্চকে টেনে তুলতে যায় উদ্ধারকারী জাহাজ। আর শিল্পপতিদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ।

এসব প্রণোদনার অর্থ আসে কোত্থেকে? বাণিজ্যের পেছনে ঢেলে দেয়া হয় রাষ্ট্রের কোষাগারে থাকা কৃষক-কামার-কুমার-তাঁতি-জেলের অর্থ, বিদেশের মাটিতে কামলা খাটা গণমানুষের পাঠানো রেমিট্যান্স অপমান আর ঘাম থেকে। নির্বাচিত সাংসদরা আর বণিকেরা লাভ গুলো গচ্ছিত রাখে নিজেদের একাউন্টে। আর লোকসানের ভারটুকু চাপিয়ে দেয় জনতার কাঁধে।

এভাবে চক্করে পরে গরীব হয় প্রতারিত। নির্বাচন নির্বাচন মহামারির এই দিনে মুক্তিকামী গরীব শ্রেণী নাভিশ্বাস উঠে মরছে। কিন্তু রাষ্ট্রের মগজে নির্বাচন ব্যবসায়ীদের দখলে। তারা লুটপাটে মেতে উঠেছে!

৪.
এই দুর্দিনে কীভাবে চলে কৃষক-শ্রমিক-কুলি-মজুর-তাঁতি-জেলে-কুমার-দেহপসারিনী-গৃহপরিচারিকাদের সংসার? উবার-পাঠাও চালিয়ে, টিউশনি করে, কাপড় আয়রন করার দোকান দিয়ে, পার্ট-টাইম সেলসম্যান এর কাজ করে যারা চলতো, কী করে চলছে তাদের?

বহু মধ্যবিত্তের জীবনও প্রকাশ করতে না পাড়ার বোবা কান্নায় নীরব হাহাকার। একেবারে গরীবের তো মাথা ঢাকলে পা উদাম। কাজ নেই। আয়-রোজগার নেই। সঞ্চয়ও কারো শেষ, কারো বা তলানিতে। প্রায় ছয় কোটি মানুষ দিনে ১০০ টাকা আয়ে চলে! এরা কি সত্যি চলে?

The Prime Minister, Shri Narendra Modi meeting the Prime Minister of Bangladesh, Ms. Sheikh Hasina, on the sidelines of the 4th BIMSTEC Summit, in Kathmandu, Nepal on August 30, 2018.
The Prime Minister, Shri Narendra Modi meeting the Prime Minister of Bangladesh, Ms. Sheikh Hasina, on the sidelines of the 4th BIMSTEC Summit, in Kathmandu, Nepal on August 30, 2018.

৫.
প্রতিদিন একজনকে দেখতাম উন্নয়নের নানা তথ্য নিয়ে আসতো। মিডিয়াগুলো উন্নয়ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত নারী-পুরুষের অনুপাত জানিয়ে দেয় কি? মিডিয়া বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানও রসিয়ে রসিয়ে বলেন যেন কত সুখকর কাহিনী বলে যাচ্ছেন। আমার তো মাঝে মাঝে এক বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রীর মতো বলতে ইচ্ছা করতো-রাবিশ। আপনারা কি ভাবেন? যা খুশি ভাবুন। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন ভাইরাসে আক্রান্তদের শ্রেণি-পরিচয় জানতে পান কি?

আমরা খবর পাই উন্নয়ন মন্ত্রের দখল নিতে নির্বাচন নির্বাচন জপ করা অধিকাংশই অভিজাত শ্রেণির বাসিন্দা। শুনতে পেয়েছিলাম, তখন বেদনাক্রান্ত হয়ে শুনতে পাই পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকে থেকে এয়ার এম্বুলেন্সে ডজন খানিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনেও বাঁচানোই যায়নি না রাজনৈতিক অভিজাতদের।

ব্যাস হয়ে গেল! কথা কি এখানে শেষ?

ধনী অভিজাতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সামর্থ্য বেশি। তারা বিদেশে চলে যায় চিকিৎসা করাতে। কিন্তু গরীবের মধ্যেও যারা একেবারে গরীব, অজপাড়াগাঁ, দুর্গম চর বা হাওরাঞ্চলে যারা থাকে অথবা মফস্বলে ও উপজেলা অঞ্চলে যে গরীব জনগোষ্ঠী আছে, চিকিৎসার সামান্যতম সুযোগ না থাকায় তারা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাই করাতে পারছে না, বেহুদা মরে যাচ্ছে বেখবরে তার তদন্ত বা পরিসংখ্যান হাসিমুখে বর্ণনা করে কি কোন অভিজাত নির্বাচন প্রত্যাশী জনতার কন্ঠস্বরের দাবীদারেরা?
করে না। তারা জনগনের মাঝেও এটা ছড়িয়ে দিতে পারছে নির্বাচনই সমাধান।

৬.
রাজনীতির কর্ণধার আর সরকারি কর্তাদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা এসেছে। এইতো মাত্র একটি নির্বাচন। দামী প্রাণ ওদের। সরকারতো ওদেরই, লাগে টাকা দেবে করদাতাগণ।
হায়! বেসরকারি প্রাণ। আহা! আধমরা হয়ে কেবল বেঁচে থাকা। মুড়ি -মুড়কির চেয়েও সস্তা। উন্নয়ন উন্নয়ন, ধনতন্ত্রের উৎসবের অকাতরে বলি হয় এইসব প্রাণ।

দেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে রূপান্তরের রূপকথার গল্প চলছে হরদম।
FB_IMG_1743206802817

৭.
উন্নয়ন বহু যুগ উপর থেকে নিচে চুঁইয়েছে, এবার নিচ থেকে উপরে যাবার বন্দোবস্ত করে দেখুন। লুটপাটের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিকে নিয়ে আসি নিয়ন্ত্রণে। জবাবদিহিতা করি নিশ্চিত আর ক্ষমতা পারিবারিক বলয়ে আটকে না রেখে উন্মুক্ত করে দেই গণতান্ত্রিক ধারায়। যার যোগ্যতা আছে দেশকে কিছু দেবার, তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসি। গাছের শেকড় থেকে যেভাবে কাণ্ড ও পাতায় যায় প্রাণ রস, সেইভাবে উন্নয়নকেও চালনা করুন। এই আহ্বান জানিয়ে লেখাটি শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানি এভাবে হয় না কিছুই। অধিকার কেউকে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়।

কোথায় সেই প্রচেষ্টা?

কষ্ট

নিয়ে কষ্ট ঝোলা, ডাকে ফেরিয়লা-পুব রাস্তা ধারে
বসে বসে ভাবি, আছে অভাবী আজব এ সংসারে
কষ্ট কিনতে চায়! চুপি চুপি সুধায়- “এসো ভাই
ফুরিয়ে গেছে সব কষ্টের কলোরব কষ্ট নাই?”
ছেলে মেয়েরা, গুটিয়ে বই পড়া বারবার চায়
তাদের কষ্ট চাই, উপায় নাই- কষ্টরা কোথায়!
এসব হবে নাকি? গিয়ে দেখি কষ্টের ফেরিয়লা
এনেছে এমন এতো আয়োজন ডাকে মনভোলা!

নানান কষ্ট লাল নীল নষ্ট দেখতে পেয়ে ভাবি
চাপা ঘাসে সাদা আনে একগাদা- আসল এ সবি?
ফেরিয়লার ঝোলা হলে খোলা কপাল পুড়া গন্ধ
একেবারে আসল, নয় কিছু ছল- কাটলো দ্বন্ধ
কে দেবে পুষ্ট তার মত কষ্ট বলছে বারবার
হৃষ্টপুষ্টগুলি রেখেছে ঝুলি বাহারি কারবার!
আমায় দেখে হেসে, বলে অবশেষে – “শব্দ কান্ডরী
নাও কিনে কিছু ছুটিয়া পিছু কেন করছ দেরি।”

“শব্দ এমন হৃদয়ে হরদম তোলে তোলপাড়
প্রকাশের যাতনা অগ্রন্থিত কামনা হাহাকার
আনন্দ উচ্ছ্বাস অযত্ন পরিহাস উঠবে ভাসি
আকারে সরব করবে কলোরব ফুটাবে হাসি
কবুতরের ডাক,কালো কাক, লাল রক্তকরবী
শিশির পতন, বাতাস, বন চিত্রিত হয় সবি
কষ্ট হতে, নাও ভরে দুহাতে-ওরে চিত্র দিশারী
চিত্ররূপ হবে যে অপরূপ তবু করছ দেরি?”

“যা স্মরণীয়, বহু বরণীয় বোধগুলো দুঃখের”
ফেরিয়লা আমায় বলে যায়-“বেলা হয়েছে ঢের
অলংকারে মুগ্ধতা চারিধারে যদি ছড়াতে চাও
কাছে এসে স্তব্ধতা ভালোবেসে কষ্ট কিনে নাও।”
শুধাই বারবার থাক সংসার সব নিব কিনে
মাল গাড়িতে নিব দুহাতে ফিরব না দুঃখহীনে
কান্ড একি! ঝোলাতে নাই বাকি, এখন কি যে করি!
কখন চুপিসারে সব কষ্ট নিয়ে চলে গেছে সুন্দরী!

তিন শূন্য সমীপে

Tin_Shunner_Prithibi-Dr_Muhammad_Yunus-0254a-454383

তিন শূন্য সমীপে…
ফকির আবদুল মালেক

আকাশে উড়বে টাকা
সিঙ্গাপুর সিটি! ঢাকা-
কবি তুমি লিখ কবি’তা
রঙীন কল্পনা বাহ্বা!

তোমার মানুষ ভুখা
দিনে খাবার হয়না
শব্দের উপর শব্দ
কবি তুমি নিস্তব্ধ!

ওই শুনি মুক্ত ক্ষুধা
বেকার মুক্তির ধাঁধা
কার কাছে তুমি চাও
ঢাকা সিউল বানাও!

পৃত্থি নিয়া উনি আছে
বক্তৃতা দিতাছে মিছে
নিজ দেশের মানুষ
ভুখা আছে নেই হুশ!

কবি ধনী বাসনা ছাড়
যারা আছে নিচে, ধর-
খাই যদি এক মুঠো
খাব একসাথে , ওঠ।

image-52538-1738221104