বিভাগের আর্কাইভঃ বিবিধ

ব্যর্থতা, জীবন এবং অন্যান্য!

FB_IMG_1687356295959

জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দেবার মত মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা যখন নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের ভেতরে অবিশ্বাসের সুতো জাল বুনতে শুরু করে করে তখন এমন একজন মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা হতে পারেন আপনজন কেউ কিংবা অপরিচিত কেউও। বয়ঃসন্ধিকাল পার করে যৌবনে পদার্পণ করার সময়টা বড্ড খারাপ। ক্রমশঃ জীবনের সমস্যাগুলো ঘনীভূত হতে শুরু করে কিন্তু তখন আর বাবা-মাকে সেগুলো বলা যায় না।

সে সময়টাতে যখন আর কারো সাথে শেয়ার করবার মত উপায় থাকে না কিংবা শেয়ার করবার মত মানুষ পাওয়া যায় না তখনই মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে আত্মহননের পথ বেছে নেবার চিন্তা। যান্ত্রিকতা মানুষকে সামাজিকভাবে কাছে আনার চেষ্টা করলেও মানুষকে সেভাবে আপন করে তুলতে শেখাতে পারেনি।বিশ্বাস করতে শেখায়নি। অবিশ্বাসের জালে আবদ্ধ করে রেখেছে সবকিছু। এসময়ে এসে কারো মনের দুঃখ কিন্তু মনের আক্ষেপ শোনার মত মানুষ খুঁজে পাবার চেয়ে ডুমুরের ফুল খুঁজে বের করাটা বোধ হয় সহজ!

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দেবার প্রবণতা মানুষের নতুন কিছু নয়। খেই হারিয়ে ফেলা জীবনটাকে আবার নতুন করে তুলে ধরতে দরকার হয় তেমনই কিছু মানুষের। কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের দরকার হয়। নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা যোগাতে এমন কিছু মানুষের একটু কথা শোনা কিংবা তাকে কিছুটা সময় দেওয়াটাই অনেকটাই যথেষ্ট। প্রতিবার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে কিংবা এডমিশন টেস্টের পর এভাবে নতুন করে চেষ্টার সাহস দেওয়া মানুষের অভাবে অনেক জীবন বিপথে চলে যায় কিংবা আত্মহননের পথেও এগিয়ে যায়।

সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়েই জীবন। সাফল্যের সময় পাশে থাকার চাইতে ব্যর্থতার সময় পাশে থাকাটা প্রেরণা যোগায় নতুন সফলতার পথে হাঁটতে! ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার নয়, একটু পাশে দাঁড়ান মানুষটার। হাজার রাত জাগার রাতের চেষ্টার পরেও যখন মানুষটা ব্যর্থ,তখন তার কষ্টটা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগাবার মতো মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ক্ষত সারিয়ে তোলার মানুষটার এ সমাজে বড্ড অভাব!

খেলার আগেই বিজয়ী যারা!

3144

ফুটবল কিংবা ক্রিকেট- বিশ্বকাপ আসলেই উন্মুখ হয়ে থাকে খেলাপ্রেমীরা। তবে খেলার চেয়েও বেশি কৌতূহলী- কোন দল জিতবে বিশ্বকাপ? এ নিয়ে খেলা শুরুর কিংবা দিনক্ষণ ধার্যের অনেক আগ থেকেই চলে জল্পনা-কল্পনা, তর্ক-বিতর্ক।

ভালো লাগা বা ভালোবাসার জায়গা থেকে অনেকেই তার পছন্দের দল বিশ্বকাপ জিতবে বলে একটা মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে। হোক সে দল নতুন কিংবা পুরাতন। মত প্রতিষ্ঠা করলেই কি দল জিতবে? নিশ্চয়ই না! প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দলের সক্ষমতা, খেলোয়াড়দের মাঠের শক্তি জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জয়ের দৃঢ় বিশ্বাস বুকে মাঠে নামে দলগুলো। নিজেদের সবটুকু দিয়েই ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলে কেউ শেষ অবধি টিকতে পারে নচেৎ/ লজ্জার হার মেনে বিদায় নিতে হয় আসর থেকে। তবে আত্মবিশ্বাসই শেষ কথা নয়, মাঠের পারফর্মের মাধ্যমে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়। তবে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও টুর্নামেন্টে পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি বিশ্বকাপে ‘ওভার কনফিডেন্সিয়াল’ একটি দলকে লজ্জাজনক হার নিয়ে আসর ছাড়তে দেখা গেছে। বছর কয়েক আগেও এমনভাবে হারতে হয়েছিল আরেকটি দলকে। তবে প্রত্যাশা ছিল অনেকটাই বেশি, সাথে দলের শক্তিমজ্জাও ছিল বেশ পোক্ত; এসব কিছু হিসাব কষে অনেকেই জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছে। কিন্তু শেষ অবধি সেই ভবিষ্যদ্বাণী মুখ থুবড়ে পড়েছে।

প্রযুক্তি আর বিশ্বায়নের যুগে কি কেউ গণকের কথায় পাত্তা দেয় কেউ? দেয়, ‘ওভার কনফিডেন্সিয়াল’ যারা! বিধায় মাঠে নামার আগেই ‘এবার আমরাই জয়ী হবো’ বলে (আমানতউল্লাহর মতো) মতবাদ প্রচার করে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দলগুলো তাদের কাছে নেহায়েত হেলার পাত্র।

―পরমতসহিষ্ণুতা মানবচরিত্রের একটি প্রশংসনীয় গুণ।

ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ

639581

ঈমান ভঙ্গের কারণ
ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আর ঈমান নষ্ট হওয়া মানেই ঈমান ভঙ্গ হওয়া। আজ আমরা কী কী কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রাককথাঃ
ঈমান ভঙ্গের কারণ জানতে হলে আগে পরিপূর্ণ ঈমান” কী সেটা জানত হবে। আর পরিপূর্ণ ঈমান কী জানার আগে “ইসলাম”কী সেটা জানা উচিত।

ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ (আমল) করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

সুতরাং ঈমানের অর্থ হলো আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্ সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস। এই বিশ্বাস মূলত তিন ভাবে তথা বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত ভাবে ভঙ্গ হয়ে থাকে। এখন আমরা পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে প্রধানত কী কী কারণে ঈমান ভঙ্গ তথা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় তা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

১) শির্ক করাঃ

আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করার কারণে যেকোনো ঈমানদার তার ঈমান হারিয়ে ফেলে। শির্ক অর্থ হলো আল্লাহ্‌র সাথে অন্যান্য ইলাহ বা উপাস্য সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সমকক্ষ অন্য কাউকে মনে করা স্বীকার করা বা কাজে প্রমাণিত করা।

বিভিন্নভাবে শির্ক হয়ে থাকে।

ক) ইবাদতের শির্কঃ

আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ মনে করে তার ইবাদত করা হচ্ছে ইবাদতের শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র জন্য যেমন সিজদা, সিয়াম, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হয়। ঠিক তেমনি অন্য কোনো উপাস্যকে যেমনঃ দেবদেবী, আল্লাহ্‌র কোনো বান্দার (পীরের) জন্য বা অন্য কারো (অলি, আউলিয়ার) উদ্দেশ্যে একইভাবে ভাবে জীবিত বা কবরের ব্যক্তির জন্য সিজদা, সিয়াম, মান্নত, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হচ্ছে সুস্পষ্ট শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
” আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ” (বানী ইসরাঈল ৩৯)।

অন্য আয়াতে রাসুল সাঃকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেন,

“(হে নবী!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন ” (শু‘আরা ২১৩)।

আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ সরাসরি তাঁর রাসুলকেও নির্দেশ দিয়েছেন শরিক না করার জন্য। অথচ সকল নবী রাসুলগন হচ্ছেন নিষ্পাপ।

আল্লাহ্ এটা এইজন্যই বললেন যাতে মানুষ শির্কের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অথচ অনেকে শির্কের সম্পর্কে না জানার কারণে বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের দরবারে গিয়ে সিজদা, মান্নত, তাওয়াফ, কুরবানি ইত্যাদি করছে। যদিও এইসব ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

খ) আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌র গুণাবলীতে অন্য কাউকে গুণান্বিত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র যা করার ক্ষমতা আছে তা তাঁর অন্য কোনো বান্দা বা অন্য কেউ করতে পারে এমন বিশ্বাস রাখা হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা হচ্ছে কাউকে জীবন দেওয়া, নেওয়া, সুখ দুঃখ , সন্তান, বিপদে উদ্ধার ইত্যাদি। এখন কেউ যদি আল্লাহর কোনো বান্দার বা অন্য কারো এমন ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তাহলে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“(হে নবী!) বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা ভাল ও মন্দের মালিকও নয়” (রা‘দ ১৬)

“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।” [ আশ শূরা ৪২:৪৯, ৫০ ]

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা (দুঃখ কষ্ট) দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোন কল্যাণ (সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য) দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা আনআম ৬:১৭)

উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সবকিছুর উপরই আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই একক এবং একমাত্র ক্ষমতাবান। তিনিই মানুষকে দুঃখ, দূর্দশা, সুখ, শান্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রদান করেন।

তিনি তাঁর ক্ষমতা কাউকে প্রদান করেননি যে অন্য কেউ তা দিতে পারবেন যেমন আল্লাহ্ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সুতরাং কোনো বান্দা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নিকট আল্লাহর ক্ষমতাসীন কিছু চাইলে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

গ) আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌ মানুষ সৃষ্টির সাথে তাদের জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন বিধিবিধানও তৈরি করে দিয়েছেন। ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে বিধান বা সংবিধান দিয়ে মুসলমানগণ তাদের সকল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করবে।

এখন যদি কেউ আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নতুন কোনো দুনিয়াবী বিধান (বাধ্যতামূলক না হলে আপোষে) মেনে নেয় বা প্রতিষ্ঠা করে বা করার জন্য সাহায্য করে তাহলে তা হবে আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার (আল্লাহর) সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র (আল্লাহর) তার”( সূরা আরাফ ৫৪”)।
অন্য আয়াতে বলেন,

“আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই”। (সূরা নাম আনাম ৫৭)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এহ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, সবকিছুর মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্। এবং তাঁর সৃষ্টির উপর তাঁর বিধিবিধানেরই ক্ষমতা চলবে। দুনিয়ার কারো কোনো বিধান বা সংবিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। যদি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করে তবে তা হবে শির্ক।

২) কারো মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়াঃ

আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দেন যে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর বান্দাদের শোনেন এবং দেখেন। তাঁর বান্দাদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সাড়া দেন। তারপরও কেউ যদি আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে বা বিপদে উদ্ধার হতে আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাধ্যম ধরে বা উছিলা মনে করে, তবে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর” (মায়েদাহ ২৩)।

” বলুন, (হে নবী!) আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে ” (যুমার ৩৮)।

অর্থাৎ যারা ঈমানদার তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে। যারা সরাসরি আল্লাহ্কে ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কাছে মাধ্যম বানাবে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।”(সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” (সূরা যুমার : ৩)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, যারা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার জন্য অন্য কাউকে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগাবে বা প্রয়োজন মনে করবে। তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে শির্ক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী হিসাবে কাউকে মাধ্যম মানবেন তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

অর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত পীর অলি আউলিয়া ইত্যাদির দরবারে গিয়ে তাদের নাম করে সিজদা মান্নাত কুরবানি করা হচ্ছে শির্ক। যা ঈমানদারের ঈমান নষ্ট করে শির্কে লিপ্ত করে।

৩) মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করাঃ

কেউ যদি স্বীকৃত মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের খারাপ মনে না করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)।

“নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের(ইহুদী, খ্রিস্টানদের) মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি” (বায়্যিনাহ ৬)।

অতএব আল্লাহর ঘোষণা চূড়ান্ত যে, ইহুদী, নাসারা, মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে) তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদের ব্যাপারে কখনোই কাফির নয় (তারাও আল্লাহর বান্দা তারাও ভালো কাজে নাজাত পাবে) এমন সন্দেহ করা যাবে না। কেউ এমন করলে তার ঈমান থাকবে না।

৪) ইসলামের বিধানকে অচল মনে করাঃ

আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে প্রাগৈতিহাসিক পুরোনো অচল ইত্যাদি মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের দেওয়া বিধিবিধান না মেনে অন্য কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান সংবিধান মেনে চলা এবং ঐটাকেই যথার্থ মনে করা।

সোজা কথায় বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামী শাসনতন্ত্রের প‌রিবর্তে মানব সৃষ্ট গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলা হচ্ছে ঈমান বিধ্বংসী কাজ। যারা আপোষে কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইসলামী বিধি বিধান মানবে না এবং দুনিয়াবী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠা করবে এবং মানবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে ” (আহযাব ৩৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ (ইসলাম) প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের (রাসুলের সুন্নাহর) বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান”। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৫)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু মানে, ভালো লাগে বা মানানোর জন্য অন্যকে উৎসাহিত বা চাপ দেয়, তাহলে তার ঈমান বাতিল হয়ে যাবে। যেমন বর্তমান যুগের গনতন্ত্রের রাজনীতি। যেখানে প্রতিনিয়ত ইসলামী আইন বাতিল করে ইসলাম বিরোধী আইন হচ্ছে।

৫) ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করলেঃ

যদি কোনো ঈমানদার ইসলামের কোনো একটি বিধান অপছন্দ করলে সাথে সাথে তার ঈমান চলে যাবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ ই ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করতে পারবে না।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [ আল বাকারা ২ :৮]

“আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৮-৯)।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, ঈমান এনে বা না এনে আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয়ে ঈমানদার হয়ে আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কারো পর্দার বিধান ভালো লাগে না যদিও সে পর্দা করে। অথবা কারো জিহাদের কথা ভালো লাগে না অথবা পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতিও ভালো লাগে না। যদি কারো বিশ্বাস এমন হয় তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

৬) দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করাঃ

কোনো ঈমানদার ইসলামকে নিয়ে বা ইসলামের কোনো বিধি বিধান কাজ আমল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?”[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৫]

“তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৬ ]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিলেন যে, আল্লাহ্, আল্লাহর রাসুল ও তাঁর আয়াত নিয়ে কেউ যদি খেল, তামাশা, বিদ্রুপ, মজা ইত্যাদি করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে। যেমনঃ অনেকে দাড়ি রাখা, টাকনুর উপর প্যান্ট পড়া, বিভিন্ন বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। যা কখনোই উচিত।

আল্লাহ্ আরো বলেন,
“সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি” (ইউনুস ১১)।

তারা আল্লাহ্ না চাইলে কখনোই হিদায়াত পাবে না। দুষ্টুমিতেই জীবন পার হবে। সুতরাং তাদের সাথে চলাফেরা যোগাযোগ রাখা যাবে না। এব্যাপারে আল্লাহ্ক বলেন,

“আর (আল্লাহ্) কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।

তাদের বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবেনা। তাদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আল্লাহ্ বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)।

সুতরাং দ্বীন নিয়ে যারাই হাসি ঠাট্টা করবে তাদের থেকে তৎক্ষণাৎ দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে। কেননা দ্বীন নিয়ে তামাশাকারীরা হচ্ছে মুনাফিক। আর মুনাফিকদের জায়গা হচ্ছে জাহান্নামে।

৭) জাদু টোনা বা কুফরী কালাম করাঃ

আল্লাহর উপর বিশ্বাসের পরিবর্তে কেউ যদি জাদু টোনা বা শয়তানী কুফরি কাজের মাধ্যমে কিছু পেতে চায় বা কারো ক্ষতি করতে চায় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ঈামান খারিজের কাজ। কুফরি কাজের দ্বারা যত ভালো কাজই হোক না কেন। ইসলামে সকল প্রকার জাদু টোনা করা হারাম।

আল্লাহ্ সূরা বাকারার ১০২ নংং আয়াাতে বলেন,

“আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত।”

অতএব যারাই এইসব করে তাদের আর ঈমানের অস্তিত্ব থাকেনা। আজ উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষই কুফরি কালামে লিপ্ত।

৮) ইসলামের বিপক্ষে কাফিরদের সাহায্য করাঃ

কোনো ঈামানের দাবিদার যদি ইসলামের বিপক্ষে কাফির মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ সূরা আত তাওবাহ্ ২৩ নং আয়াতে বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। ”

অন্য আয়াতে বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না ” (মায়েদাহ ৫১)।

অতএব কখনোই বিধর্মীদের আন্তরিকভাবে বন্ধু করা যাবে না যতটুকু দুনিয়ায় প্রয়োজন। সেইসাথে যারা ইসলামের বিপক্ষে বা কোনো মুসলিমের বিপক্ষে বিধর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

৯) কাউকে দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে করাঃ

কেউ যদি রাসুলুল্লাহ সাঃএর আনীত শরীয়তের বিধি বিধান মানার চাইতে অন্য কোনো পীর বুজুর্গের দেওয়া (শরীয়ত বহির্ভূত) কাজ করে বা করাকে জায়েজ মনে করে তাহ‌লে তাঁর ঈমান থাকবে না। কেননা শরীয়তের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। ইসলামে যা কিছু চলবে সবই রাসুলুল্লাহর নির্দেশ এবং সম্মতিতে।

এখন কেউ যদি পীর অলি আউলিয়াকে শরীয়তের উৎস ধরে (স্বপ্নের বার্তা, কাশফ) সেইমতো বিভিন্ন বিধি বিধান চালু এবং পালন করে তাহ‌লে তার ঈমান থাকবে না। কেননা ইসলামে একমাত্র অনুসরণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ।

আল্লাহ্ বলেন,

“(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।” (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ আরো বলেন,

“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের(শরীয়ত বহির্ভূত কারোর) অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”। ( আল আরাফ : ৩)

অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে একমাত্র রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। রাসুলের প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা যাবে না।

১০) শরীয়তের বিধিবিধানে কম বেশী বা নতুনত্ব সৃষ্টি করাঃ

কেউ যদি মনে করে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুল কতৃক আনীত ইসলামের বিধানে নতুন করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করলে ভালো হবে। অথবা কেউ যদি রাসুলুল্লাহর দেওয়া শরীয়তের নির্ধারিত বিধি বিধানে (ঈমান, আকিদা, আমলে) কম বেশী বা নতুনত্ব ( বিদআত) সৃষ্টি করে বা জায়েজ মনে করে এবং সেইমতো আমলেও করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

নতুনত্ব আনা বা বাদ দেওয়ার মধ্যে তারা রাসুলুল্লাহ রিসালাতকে অস্বীকার করে। এর দ্বারা আল্লাহ্ যে তাঁর রাসুল সাঃ দ্বারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেটা মিথ্যা হয়ে যাওয়া। অথচ আল্লাহ্ বলেন,

‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান’ (নিসা ১১৫)।

এটা দ্বারা সুস্পষ্ট যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণে দ্বীন ইসলামে জীবনযাপন করতে হবে।

কেননা আল্লাহ্ বলেন,

” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদা ৫ : ৩)।

১১) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশঃ

কেউ যদি আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে তাদেরও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। (আলে ইমরান ৮৫)।

অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোনো ধর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। সুতরাং ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কেউ পালন করলে তাকে অবশ্যই জাহান্নামের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

১২) দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াঃ

কেউ যদি দ্বীন ইসলামের বিধি বিধান বা আমল সমূহকে বোঝা মনে করে তা থেকে বিরত থাকে তাহলে তার ঈমান থাকবে না।

আল্লাহ্ বলেন,

“আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।।[ আস সেজদাহ্‌ :২২ ]

অর্থাৎ যেসব ঈমাদারদের আল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ঈমান এবং আমল করতে বলা হয় তখন তাদের দ্বীনের হুকুম আহকামকে বোঝা মনে করে। তখন তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবং আমল থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। এইসব ব্যক্তিদের ঈমান আর অবশিষ্ট থাকে না।

আল্লাহ্ আরো বলেন,

“আমার স্মরণ (ঈমান, আমল, জিকির ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ (কষ্টে পতিত) হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব’ (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)।

অতএব দ্বীন ইসলাম থেকে আল্লাহ্ থেকে কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার ঈমান বিনষ্ট হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী আক্বীদাহ ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়, তবে সে ঈমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড) ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

অটিজমঃ বিকশিত হোক সব প্রতিভা

16489

অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত মানসিক ও শারিরীক একটি রোগ। যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্থ করে। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। ২০২২ সালের অটিজম দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি। অর্থাৎ অটিস্টিক ব্যক্তিদের জন্য আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেন তারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজের আর দশজনের মতো তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে অসচেতন। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী।

অটিজম সমস্যা কীঃ
অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সম্পর্কিত একটি রোগ। যে রোগে আক্রান্ত হলে একটি শিশু তার সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। তার চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বা ইশারা ইংগিতের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারে না। মোটকথা যে সমস্যা একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অপূর্ণ করে তাকে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলে। যদিও অটিজমকে অনেকে মানসিক রোগ মনে করে কিন্তু এটা মানসিক রোগ নয়।

কী কারণে অটিজম হতে পারেঃ
অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণকে দায়ী করা যায় না। তবে গর্ভাবস্থার কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন, মায়ের ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমনঃ মাম্পস, রুবেলা, মিসেলস ইত্যাদি হওয়া।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের সাথে পরিবারের সম্পর্কের ঘাটতি থাকা, দুশ্চিন্তা করা, বিষণ্ণতায় থাকা, মৃগীরোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া, হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদিকেও অটিজমের কারণ হিসাবে দেখা হয়।

অটিজমের লক্ষণ সমূহঃ
খুব ছোট থেকেই অটিজমের লক্ষণ গুলো শিশুদের মধ্যে প্রকাশ পায়। বিশেষকরে শিশু তার এক বছর বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বা বোল উচ্চারণ করতে না পারা। দেড় বছরের মধ্যে একটি শব্দও বলতে না পারা। দুই বছরের মধ্যে দুই বা তিন শব্দের অর্থবোধক বাক্য না বলা। কিংবা কিছু শেখার পর আবার ভুলে যাওয়া। কিংবা বাচ্চা যদি তার পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা ইংগিত করতে না পারা। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারা ইত্যাদি হচ্ছে অটিজমের খুবই প্রাথমিক কিছু লক্ষণ।

উপরোক্ত প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর পাশাপাশি যদি দেখা যায় আসলেই শিশুর ভাষা শিখতে সমস্যা হচ্ছে, বা একেবারেই মা–মা, বা–বা, চা–চা, ইত্যাদি এই জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে না। সেইসাথে কারো চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছে না। বা নাম ধরে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না। কিংবা সমবয়সী কারো সাথে মিশতে পারছে না বা মিশতে চাইছে না। কেউ আদর করতে চাইলে তা নিতে না পারা। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া। অন্যের শোনা কথা বারবার বলা। বা যেকোনো বিষয়ে একই আচরণ বার বার করা হচ্ছে অটিজমের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এইসব লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে শিশুকে অতিদ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

পারিবারিক ভূমিকাঃ
অটিজম আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তির সুস্থতার জন্য পরিবার ও সমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পরিবারের অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথে পরিবারকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। এই রোগ থেকে একমাত্র বাবা-মাই তার সন্তানকে যতটুকু সম্ভব সুস্থ করতে পারে। তাই বাবা-মাকে অটিজমের উপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিতে হবে যাতে শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

একইসাথে স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে যাবতীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে করে শিশুটি সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতি শেখার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষকরে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশুকে সবার সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দিতে হবে।

এছাড়াও যে কাজ গুলো শিশু করতে আগ্রহী এবং যা সে ভালো করে করতে পারে, তাকে সেই কাজ বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। বিশেষ করে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদির প্রতি তার আকর্ষণ বাড়াতে হবে। সেইসাথে শুরু থেকেই শিশুকে মূলধারার স্কুলে পাঠাতে হবে। যাতে সে নিজেকে সকলের সাথে মিশতে উপযোগী করতে পারে। একইভা‌বে স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং থেরাপিস্ট সকলকে একযোগে চিকিৎসার জন্য কাজ করতে হবে।

সামাজিক ভূমিকাঃ
পরিবারের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্মকাণ্ড তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে সামাজিক লাঞ্চনা এবং অবহেলার কারণে পরিবার থেকেই অটিস্টিকদের সবার থেকে আড়াল রাখে। যা শিশুদের সুস্থ হওয়ার অন্তরায়। তাই আড়াল না করে সামাজিকভাবে এই রোগীদের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা দেওয়া উচিত। যাতে তারা সামাজিকভাবে সকলের সাথে মেলামেশার সুযোগ পায়।

সেইসাথে তাদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা, হেয় প্রতিপন্ন বা অবাঞ্ছিত করা কখনোই উচিত নয়। সামাজিকভাবে তাদের অযোগ্যতাকে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়। বরং তাদের নূন্যতম কাজেরও প্রসংশা এবং বাহবা দিতে হবে। যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে তাদের গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। এতে করে তারাও সমাজের একটি অংশ হয়ে উঠতে পারবে। আর এভাবেই সকলের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পেলে একটি অটিস্টিক শিশু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

রাষ্ট্রীয় ভূমিকাঃ
অটিস্টিক শিশুদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো জনগণের মধ্যে অটিজম নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ অটিজম সম্পর্কে ধারণা পায়। সাধারণ মানুষেরা যখন অটিজম সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন তারা রোগের শুরুতেই শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারবে।

সচেতনতার পাশাপাশি অটিজমের চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। একইসাথে প্রতিটি হাসপাতালে অটিজম কর্ণার তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। ডাক্তারি চিকিৎসার চাইতে প্রশিক্ষণই এই রোগের মূল চিকিৎসা, তাই প্রতিটি শহরে অটিস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

যদিও ইতিমধ্যে সরকারি পর্যায়ে অটিজম নিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ যেমনঃ সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে মিরপুরে চালু হয়েছে ‘অটিজম রিসোর্স সেন্টার’৷ সেই সাথে যারা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, অটিস্টিক শিশুদের অবস্থা পরিমাপ সহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন’৷ এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালে রয়েছে ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ ইত্যাদি।

বিকশিত হোক সব প্রতিভাঃ
২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি।” অর্থাৎ অটিস্টিকদের জন্য এমন পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের দেওয়া উচিত, যাতে তারাও তাদের সুপ্ত প্রতিভা গুলো জনসমক্ষে নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। আর এভাবেই অটিজম আক্রান্তরা যাতে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনে ফিরে এসে কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারবে। অটিস্টিকরা সমাজ এবং পরিবারের বোঝা নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেলে একজন অটিস্টিকও হয়ে উঠতে পারে সমাজ এবং দেশের সম্পদ। অটিস্টিকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভার উন্নতি করে চাইলে কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করতে পারে।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তাদের নিষ্প্রভ প্রতিভাকে বিকশিত করে সুস্থ সবল মানুষে রূপান্তরিত করাই হচ্ছে এই বছরের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আর এভাবেই একজন অটিস্টিক যদি তার প্রতিভা বিকশিত করে সমাজের মূল ধারার সাথে মিশে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে সেটাই হচ্ছে বড় পাওয়া। সেই সাথে সকলের সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ধীরে ধীরে অটিস্টিকরা সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারলে, তা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য হবে বড় পাওয়া

তাই আমাদের উচিত অটিস্টিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যদিও এই কাজে প্রচুর বাঁধা এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এক সময় না এক সময় অবশ্যই সফলতা আসবে। সকলের সহযোগিতা আছে বলেই এখন অটিস্টিকরা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। যদি এই সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অটিস্টিকরাই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

অটিজম কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের একক সমস্যা নয়। অটিজম একটি জাতীয় সমস্যা। তাই এই সম্পর্কে সর্বস্তরের সচেতনতা খুবই জরুরী। সেই সাথে অনেক ক্ষেত্রে অনেক শিশু অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ নিয়ে জন্ম নিলেও সময়ের সাথে সাথে তা দূর হয়ে যায়। তাই কোন শিশু স্বভাবগতভাবে একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী ও জেদী প্রকৃতির হয়ে থাকলে তাকে অটিস্টিক মনে করা উচিত হবেনা। তাই প্রতিটি শিশুর প্রতি পরিপূর্ণ যত্নবান হওয়া উচিত। যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শিশুর মধ্যে প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৮ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

ঈমান কী?

1646757

“ঈমান” কী? এটা জানতে হলে আগে “ইসলাম” কী জানতে হবে। ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

ঈমানের ব্যাখ্যাঃ
ঈমান একটি গাছের তিনটি অংশের মতো অর্থাৎ শেখড়, মূল বৃক্ষ আর অসংখ্য শাখাপ্রশখা, ফুল-ফলে ইত্যাদিতে বিভক্ত। ঈমানের একটি অংশ হলো অন্তরের বিশ্বাস মাটির নীচে মূলের মতো। যা কেউ দেখে না। দ্বিতীয় অংশ মুখের স্বীকৃতি মূল কান্ডের মতো যা বাইরে থেকে দেখা যায়। তৃতীয় অংশ হলো আমল যা গাছের শাখাপ্রশখা মতো। যা দেখে গাছকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখায়।

কিছু কিছু বিশ্বাসের সমষ্টিকে ঈমান ধরা হয়। যেমন আল্লাহ্, মালাইকা বা ফিরিশতা, নবী রাসুল, সমস্ত আসমানী কিতাব, তকদীর, এবং মৃত্যুর পর উত্থান ও কিয়ামত ইত্যাদির সামগ্রিক বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান। একমাত্র আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা, তাঁর বিভিন্ন কাজে লিপ্ত মালাইকাদের বিশ্বাস, আল্লাহ্ এই পর্যন্ত যত কিতাব পাঠিয়েছেন তাতে বিশ্বাস, এইপর্যন্ত যত নবী রাসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন তাদের প্রতি বিশ্বাস, তকদীর তথা ভাগ্যে বিশ্বাস, মৃত্যুর পর উত্থান এবং কিয়ামতের হিসাব নিকাশের বিশ্বাসের সাথে মুখের স্বীকৃতি দেওয়াই হলো ঈমান।

ঈমানের মূলে কালেমাঃ
ঈমানের মূল ভিত্তি হলো কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” যে এই কালেমা পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং আমল করে তবেই তার ঈমান পূর্ণ হবে। সুতরাং ঈমান হলো বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানের আমল। কালেমাতে আল্লাহকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হলো আল্লাহর জাত, সিফাত এবং ইবাদতে কারো অংশীদার গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে কোনো কিছুতেই শরীক করা যাবে না। এটাই হচ্ছে মূল ঈমান। যা আমরা অনেকেই জানি বা বুঝি না। শুধু মুখে ও অন্তরে স্বীকার করে সালাত সিয়াম হজ্জ্ব যাকাত পালন করলেই ঈমানদার নয়।

বরং আল্লাহকে এবং তাঁর বিধানকে এমনভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ তাঁর মতো নয়। অর্থাৎ তিনি যা পারেন তা কেউ পারেন না। এবং তাঁর বিধান ছাড়া আর কোনো বিধানে মাথা নত করা নয়। তিনি যা প্রাপ্য (ইবাদত) তা আর কেউ পেতে পারে না। এটাই হচ্ছে ঈমানের মূল বিষয়।

সুতরাং ঈমান হচ্ছে অবিচল বিশ্বাসের নাম। ওহীর মাধ্যমে জানা সকল সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। যেকোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে মেনে নেওয়া। সত্যের সাক্ষ্যদান এবং আরকানে ইসলাম পালন। নিজেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে সমর্পণ করে শরিয়ত ও উসওয়ায়ে হাসানাকে গ্রহণ করা। ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি আস্থা, ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, পরিপূর্ণ তাওহীদ এবং শিরক বর্জিত বিশ্বাস করাই ঈমান। ঈমান শুধু গ্রহণ নয়, বর্জনও বটে। সত্যকে গ্রহণকরা আর বাতিলকে বর্জন করা। বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা অস্বীকারের চেয়েও কুফরকে ঘৃণা এবং এর পরিনামকে ভয় করা ইত্যাদি।

ঈমানের ফল হচ্ছে আমলঃ
যারা কালেমা পড়ে নিজেদের ঈমানদার ঘোষণা দিবে। তাদের ঈমান পরিলক্ষিত হবে আমলের মাধ্যমে। গাছ যেমন শাখাপ্রশাখা পত্রপল্লব ছাড়া শুধু মূল এবং কান্ড দ্বারা পরিপূর্ণ হয় না। ঠিক তেমনি আমল ছাড়া মুখে স্বীকৃতি এবং অন্তরে বিশ্বাস দিয়ে ঈমানদার দাবি করা যায় না।

কারণ যারা মুনাফিক তাদের আমল নেই। তারা বাহিরে দেখায় আল্লাহকে স্বীকার করে কিন্তু সেই বিধান অনুযায়ী চলে না বা আমল করে না। অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহকে স্বীকার করে। সালাত আদায় করতে হবে তাও জানে। কিন্তু কখনো সালাত আদায় করে না । তাহলে তারা কীভাবে ঈমানদার থাকলো? সুতরাং তারা কখনোই পরিপূর্ণ ঈমানদার নয়। প্রকৃত ঈমানদার হলো তারাই যারা আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মানে বিশ্বাস করে এবং আমল করে।

ঈমানের স্বাদঃ
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- (ক) যার নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ) অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে। (খ) যে ব্যক্তি কোনো বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে। (গ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে কুফরি হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্ বুখারী: ২০, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)

সুতরাং তারাই ঈমানের স্বাদ পাবে যারা সত্যিকারে আল্লাহ্ এবং রাসুলের (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত বিধানের উপর পরিপূর্ণ অবিচল থাকতে পারবে মৃত্যু পর্যন্ত। সুতরাং মুখে বা অন্তরের স্বীকৃতি দিয়ে ঈমানদার হওয়া যাবে না। যে পর্যন্ত না সেই ঈমানকে আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করা না হবে।

ঈমান বাড়ে কমেঃ
আল্লাহ বলেন,
“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় (আল্লাহর) কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। “[ সুরা আনফাল ৮:২]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্‌র কিতাব ঈমানদারদের সামনে পড়া হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। যখন কেউ ঈমান আমল ইহকাল পরকালের কথা শোনে তখন তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রশান্তি এবং ভয় এসে আমলের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আবার যখন দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তখন সেই ইচ্ছায় ভাটা পরে যায়। সুতরাং মানবিক কারণেই মানুষের মধ্যে ঈমানের এই হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।

ঈমান কীভাবে কমেঃ
বিভিন্ন কারণে মানুষের ঈমান কমে যায় বা যেতে পারে। যেমনঃ

১) আল্লাহর গুণাবলী নিয়ে চিন্তা চেতনা গবেষণা ইত্যাদি না করা। আমরা প্রতিনিয়ত শত হাজার পাপ করছি। এই পাপের কারণে তিনি আমাদের পাকড়াও না করে ছেড়ে দিচ্ছেন। এই যে ছেড়ে দিচ্ছেন বলে আমাদের একটি ধারণা হয়ে গেছে যে, আল্লাহ্ বোধহয় মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন না। মনে হয় তাঁর সেই ক্ষমতা নেই (নাউযুবিল্লাহ)। এই ধরনের উদাসীনতা, তাঁর ক্ষমতার প্রতি চিন্তাহীনতা ইত্যাদি আমাদের ঈমান কমিয়ে দেয়।

২) আল্লাহর বিধান নিয়ে গবেষণা না করার কারণেও ঈমান কমে যায়। আমাদের কী কী পাপের জন্য কী কী শাস্তি হতে পারে। আল্লাহ আমাদের জন্য কী কী বিধান দিয়েছেন। কী কী বিধান মেনে চলা উচিত, কী কী অবাধ্যতার কারণে দুনিয়া আখিরাতে কী কী শাস্তি হতে পারে ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা না করার কারণেও আমাদের ঈমান কমে যায়।

৩) অতিমাত্রায় পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া ঈমান কমে যাওয়ার লক্ষণ। জেনে না জেনে আল্লাহর বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে যে পাপ গুলো আমরা করি, সেইসব পাপের কারণেও আমাদের ঈমান কমে যাচ্ছে। এই ঈমান কমে যাওয়ার ফল হচ্ছে আমাদের আমলের কমতি। আর আমল ছাড়া ঈমান কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যে আল্লাহকে মানি এবং ভয় করি তার প্রমাণ হচ্ছে তাঁর বিধি -বিধান মেনে চলে তাঁর ভালোবাসার জন্য আশা করা।

ঈমান বৃদ্ধির উপায়ঃ
পবিত্র কুরআনের আলোকে আমরা জানি যে, ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি হয়। সুতরাং ঈমান বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় উপকরণ রয়েছে। যেমনঃ

১) আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে গবেষণা করা। আমরা যদি সত্যিকারে বুঝতে পারি আল্লাহ্ কত অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন। তাহলে অবশ্যই আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ্‌র বিভিন্ন গুণ ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করলে আমাদের বিশ্বাস মজবুত হবে এবং ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

২) আল্লাহর নিদর্শন দেখে গবেষণা করে ঈমান বৃদ্ধি করা। আমরা যদি আল্লাহর বিবি বিধান, আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা বা চিন্তা-ভাবনা করি তাহলেও আমাদের ঈমান বাড়বে। এইসব গবেষণা করলে আল্লাহকে আরও জানতে তথা ইসলামকে জানতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সেই আগ্রহ আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৩) সৎ আমল করা। আল্লাহকে ভয় এবং সন্তুষ্টি লাভের আশায় বেশী বেশী নেক আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যার ভিতরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎ আমল বা ভালো কাজ করার প্রবণতা থাকবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমান অন্যদের চেয়ে বেশী হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা গেলো যে, ঈমান কখনোই শুধুমাত্র স্বীকৃতির বিষয় নয়। যদি স্বীকৃতির বিষয় হতো তাহলে সকল নামধারী মুসলিম এবং মুনাফিকরাও ঈমাদার বলে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ বলেন –

“নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না।” [ সুরা নিসা ৪:১৪৫ ]

অর্থাৎ শুধু মুখে ঈমান আনলেই মুমিন হওয়া যাবে না। যতক্ষণ না তা কাজে কর্মে পরিলক্ষিত না হবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরক ও করে। ” (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১০৬)

অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস রেখে তাঁর সাথে শিরক করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে স্বীকার করে আবার শিরকও করে তাহলে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বলেন,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। “(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)

অতএব আমাদের কালেমার প্রকৃত অর্থ এবং ব্যাখ্যা (তাওহীদ, শিরক, বিদআত ইত্যাদি) জেনে পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং সেই অনুযায়ী আমল করেই ঈমানদার হওয়া লাগবে।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৩ মে, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

পাঠ প্রতিক্রিয়ায় পাঠক থাক ক্রিয়াহীন

আজকাল নিজেকে মাঝে মাঝে সপ্তাহখানিক এর জন্য ছুটি দিয়ে ফেলি। ভালো লাগে দূরে থাকতে। শব্দনীড় ব্লগের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত এবং বিরাজমান সকল গুণী শব্দ স্রষ্টাদের শব্দ পাঠক হিসেবে ইতিমধ্যেই আমি বেশ সুনাম কুড়িয়ে ফেলেছি। ভালোই লাগে। একটি ব্লগ অথবা একটি পোস্ট; পোস্ট দাতা নেই; কখনও কখনও উঁকিঝুকি মারছেন এখান ওখান থেকে …. ভিন্নজন না বুঝলেও বোঝার বিশেষ ক্ষমতা নামক তৃতীয় অক্ষি নিয়ে ঝিম মেরে থাকা ব্যক্তিটি মুরুব্বী। মানে আমি মুরুব্বী।

আদিনমান এই ব্লগ সেই ব্লগ। মানে বলতে এটা কিন্তু ধরে নেবেন না যে ভিন্ন কোন ব্লগ; বলতে চাইছি শব্দনীড় ব্লগেরই বিভিন্ন ব্লগে চোখ বুলিয়ে বেশ কেটে যেতো আমার কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম সময়। ঘুমেও আমি যেন জেগে থাকি। রাত-বিরাতের অনুচর হানা দিলেও টের পাই কে এলো আর কে গেলো। কে লিখা নিয়ে এলো আর কে বাহারি বিজ্ঞাপনের ডালি নিয়ে এলো। ডালি এনে ফেললেও এটা সেটা ঘাঁটাঘাঁটি করাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কি করা। আমি যে পাঠক। ক্রিয়া থাকা চাই।

দূর্বার গতিতে চলতে থাকে ব্লগ পড়া। সতর্ক থাকি কোন অক্ষর যেন চোখ ফাঁকি না দেয়। দেবে বা দিতে পারে এটা আপন জেনেই চোখকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলি গুণীদের শব্দ দর্পণে। ধন্যবাদ শুভেচ্ছা অভিনন্দন নিয়মিত আছি লিখে যান পড়বো নানা ধরনের আপোষ কামী মন্তব্য। লিখক যখন কিছু লিখেন নিজের সাথে কম্প্রোমাইজ করলেও পাঠক কিন্তু ঠিক ঠিকই বুঝে ফেলেন লিখক তাঁর দায়ভার কোথায় অন্তত সামান্য মনযোগে নিজেকে সরিয়েছেন। পাঠক পাঠকই। পাঠের সঙ্গেই যার সহবাস।

মিনমিন থেকে এবার খানিকটা সোচ্চার হই। আমার এই পোস্ট যারা করুণাভরা দৃষ্টিতে পড়ছেন তাদের কেউ কি বলবেন … যাদের ব্লগ নিয়মিতভাবে শব্দনীড় এ প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁরা কয়টি স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ব্লগে নিজের উপস্থিতি জিইয়ে রেখেছেন !! শব্দনীড়ে আপনার পাঠক এসে আপনার ব্লগে কথা বলে চলে গেলেও আপনাকে পায় না, ঠিক এমনি করে কি স্বতন্ত্র সেই ব্লগের পাঠকরাও কি আপনাকে এখানকার মতো করে মিস করে !! সত্য পাঠক নিশ্চয়ই মিস করবেন। নইলে পাঠক কিসের !!

একটি পোস্টের সাথে লিখকের তাৎক্ষণিক সম্পৃক্ততা থাকলে লিখক নিশ্চয়ই অন্যের পোস্টে যাবেন। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন। আমন্ত্রণ জানাবেন। করবেন মূল্যায়ণ। তবেই না আসবে ব্লগ লিখার সুপ্ত প্রাপ্তির প্রাথমিক অর্জন। অর্জন আজকাল আমাদের তেমন করে সিরিয়াস করে তোলে না। শব্দনীড় এর আহবান আমার কাছেও আজকাল দুর্বোধ্য বা নিছক মনে হয়, যখন ব্যানারে স্পষ্ট করে লিখে রাখে ‘সহ-ব্লগারের লিখায় আপনার মন্তব্য দিন। মন্তব্য এবং প্রতি-মন্তব্যে ব্লগিং হোক আনন্দের।’

আনন্দ দূরে থাক। আমারও এখন ইচ্ছে করে মহান সব শব্দ স্রষ্টাদের মতো করে চুপচাপ থাকতে। নিজেকে নিয়ে তাঁরা লিখুন। তাঁদের লিখায় শব্দনীড় পাতা অলঙ্কৃত থাক। লগিন বা অতিথি হয়ে বসে থাকুন। যখন ইচ্ছে তখন আসুন। নিজের পোস্ট প্রকাশ করে নিজের মতো করে থাকুন। কারু সাথে কারু সম্পর্কের বালাই না থাক। আমি পাঠক আপনার পোস্টে যাব কি যাবো না তা আমার ‘পরেই থাক। শূন্য থেকে একটি মন্তব্য নিয়ে স্রষ্টা যদি সুখি হোন পাঠকের কী আসে যায়। পাঠক থাক ক্রিয়াহীন।

একটা পোষ্ট = একটা দায়িত্ব … আপনার আমার সকলের

index

আমরা যারা নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত লিখি
প্রবীণ হই কিংবা আধা প্রবীণ হই –
আমরা আমাদের নিয়ে থাকি সর্বদা ব্যস্ত।
নবীন ব্লগারদের লিখা চোখে পরলেও সযত্নে এড়িয়ে যাই।
আমরা কি ঠিক কাজটি করছি?

আমরা অবশ্যই যেমন সুস্থ্য আলোচনা চাইবো বা আশা করবো, তেমনি ভুল বা দৃষ্টি নিন্দিত হলেও তা প্রকাশ করবো। এবং সেটাই উচিত করণীয়।
নইলে লেখক তাঁর লিখার মানের অবস্থান নিয়ে শঙ্কায় থাকতে বাধ্য।

মন্তব্য।
লিখক মাত্রই সেটার আশা কিংবা অপেক্ষা করেন।
www

ইদানীং ব্লগে নাম মাত্র কয়েকজন ছাড়া অনেকেই আমরা ঝাড়া গদ বাঁধা ছোট্ট স্তুতি মন্তব্য সাজিয়ে হারাই। যেন নিরবে সরব উপস্থিতি জানিয়ে যাই, আমার একটা লিখা আছে – দয়া করে পড়বেন। বিকিকিনির ঘরে ক্রেতাকে জানাই নিমন্ত্রণ। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আমার মতের সাথে অন্যের দ্বিমত থাকলে থাকতেও পারে। ফিরেও আমরা আর সেই ফেলে আসা ব্লগটিতে খুব কম জনেই ফিরি। নতুন ব্লগার বন্ধুদের ঘরে ঢুকতেও আমাদের দ্বিধা কাজ করে প্রচুর। অথচ আমাদের অন্তঃপ্রাণ চেষ্টাই বলুন আর উত্তরসুরীই বলুন তারা এই নতুন প্রজন্ম।

ব্লগের অধিকাংশ লেখক এখনো নতুন। ব্লগিং ব্যাপারটির সঙ্গে তারা সবে পরিচিত হতে শুরু করেছেন। নানা কারিগরী দিকগুলো আয়ত্তে না আনার অলসতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবু নিজেকে জানান দেয়ার এবং নিজের লেখা প্রকাশ করার দিকে তাঁদের একটা ঝোঁক থাকবে এটা স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই তাঁরা অন্যদের লেখার দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। অন্যদের লেখা পড়ে সে বিষয়ে তাঁদের অভিমত জানাবেন। সেজন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

shutterst কমিউনিটি ব্লগিংয়ে সামাজিকতা যোগাযোগ ব্যবস্থা জানা-বোঝার ব্যাপারগুলো আয়ত্তে আসতে কিছু সময় লাগবে। পারস্পারিক কথোপকথনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর ও অর্থপূর্ণ আলোচনা গড়ে উঠবে। সকলের এ আকাঙ্খা যুক্তিসঙ্গত। ব্লগিং-প্লাটফর্ম হিসেবে ব্লগ একটি অবাধ আলোচনার ক্ষেত্র হয়ে উঠুক এটি আমরা চাই। কিন্তু রাতারাতি তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পারস্পারিক বোঝা পড়া, চেনাজানার মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে সেটি গড়ে উঠবে।

আমরা চাই একটি সুন্দর এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্লগিং প্লাটফর্ম। নিজের প্রিয় লিখাটি শব্দনীড় এ দিন। সহ-ব্লগারদের লেখা পড়ুন। কিছু বলার থাকলে মন্তব্য করুন। আপনার মন্তব্য তাঁকেও হয়তো টেনে আনবে আপনার ব্লগে। তিনি আপনার লেখা পড়বেন এবং হয়তো মূল্যবান একটি মন্তব্যও করবেন। পরস্পরকে চিনুন। সমমনাদের খুঁজে বের করুন। সবার অংশগ্রহণে ব্লগ হোক মুখরিত।

Slide1-1
যে কোন লিখা ছাপার অক্ষরে এলে- লিখকেরও একটা দায় বর্তে যায়,
“জবাব দিন” শব্দটার কাছে।
লিখককে তড়িৎ না হলেও ভেবে সুস্থির হয়ে একটা উত্তর সাজাতে হয়।
হোক তা সৌজন্য কিংবা ব্যাখ্যা।
আমি মনে করি ‘একটা পোষ্ট = একটা দায়িত্ব’।

can
আমরা যেন অন্যকে ফাঁকি দিয়ে
আগামীতে নিজের বা নিজেদের শূন্যের মধ্যে ফেলে না দিই –
শ্রদ্ধা দিয়ে সবাইকে উৎসাহ দেয়ার নামই হলো শুভ ব্লগিং।

লাইক আনলাইক এবং রেটিং চর্চা অব্যহত রাখুন। ধন্যবাদ।
storyenda

গরু(র গোশত) কেনার সহজ উপায়

6c8ec6e24

আমি যখন এফ রহমান হলে থাকতাম রাতের বেলা পালে পালে মহিষ নীলক্ষেত দিয়ে যেতে দেখতাম। একপাল মহিষের সাথে দু একটা গরুও থাকত। রাতের বেলা পালে পালে মহিষ দেখলেও সকাল বেলা সারা ঢাকা শহরের কোথাও মহিষের মাংস বিক্রি হয় শোনা যেত না। সব জায়গায় গরুর গোশ্ত বিক্রি হয়। এই মহিষগুলোর জন্য আমার দুঃখও হত। বেচারারা নিজ পরিচয়ে মরতেও পারে না। আজীবন মহিষ থেকে মরার পরে হয়ে যাচ্ছে গরু। বেওয়ারিশ লাশের মত অবস্থা। হবে না কেন? স্বাদের বিচারে গরুর গোশতের উপর কোন গোস্ত নাই। বিক্রেতারা মহিষের গোস্তকে গরুর গোস্ত বলে চালিয়ে দেয়। এছাড়াও আরো নানা ধরনের ঠকবাজী তারা করে। সেইসব ঠগবাজী থেকে বাঁচার জন্য ইন্টারনেট ঘেঁটে-টেঁটে আপনাদের জন্য নানা টিপস হাজির করলাম। আমার ধারনা এই টিপস গুলো মেনে চললে মাংস কেনার পর বাসায় এসে ঝাড়ি খাওয়া থেকে বাঁচবেন।

– গোশত কসাইকে দিয়ে টুকরো করাবেন না। আস্ত টুকরা কিনবেন এবং বাসায় এসে নিজেরাই টুকরো করে নেবেন। কারন গোশত বিক্রির মূল ঘোটঝালাইটা হয় টুকরো করার সময়ই। উল্লেখ্য যে, গরুর গোশত টুকরো করা তেমন জটিল কিছু নয়। কোরবানীর ঈদের সময় আমরা অনেকেই তা করে থাকি। আস্ত গোশত কিনে ঘরে ফেরার পর যদি মা কিংবা বৌ আপনাকেই কোপাতে চায় তবে দেরী না করে ইয়া আলী বলে নিজেই বটি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারেন – অবশ্যই গরুর গোশের উপর।

– যে স্থানের গোশত পছন্দ বলবেন সে স্থানের এক তাল গোশত কেটে দিতে। পরে বাসায় এনে নিজে টুকরো করবেন। (শুধুমাত্র হাড় আলাদা করে কুপিয়ে দিতে বলবেন)

– হাড় কুপিয়ে দিলে তারপর বলবেন ওজন করতে, তার আগে নয়। ভুলেও আগে বলবেন না যে গোশ বাসায় টুকরো করবেন। তাহলে তারা ঘটনা বুঝে ফেলে অন্য পন্থায় দুই নম্বরী শুরু করবে।

– যদি আপনার দরকার হয় ৫ কেজি, আপনি বলবেন ৩ কেজি। বেশী বিক্রি করার জন্য তারা ইচ্ছে করে বেশী করে কাটে। ৩ কেজি কাটতে বললে তারা ঠিক ৫ কেজিই কাটবে – যা আপনার প্রকৃত প্রয়োজন।

– গরুর গোশত বলে মহিষের গোশত দেয়া কসাইদের জন্মগত অভ্যাস। মনে রাখবেন, গরুর গোশের রোয়াগুলো চিকন হয় আর মহিষের গোশের রোয়া হয় মোটা মোটা।

– গরুর গোশত একটু লালচে ধরণের আর মহিষের গোশত কালচে।

– গরু আর মহিষের গোশত চেনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো চর্বি। গরুর চর্বির রং হয় ঘোলাটে হলুদ আর মহিষের চর্বির রং হয় সাদা।
– নিয়মিত নির্দিষ্ট কসাইয়ের কাছ থেকে গোশত নিলে বাধা কাষ্টমার হারাবার ভয়ে তারা পারোতপক্ষে ঠকবাজী করার চেষ্টা কম করে।

– ভালভাবে চিনে কিনতে পারলে সুপার সপে বিক্রি হওয়া গোশতের চেয়ে কশাইয়ের গোশত অপেক্ষাকৃত ফ্রেশ ও ভাল মানের হয় (ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা)

– সকাল ৭-৮ টার মধ্যে গোশত কেনাটাই সবচেয়ে ভাল। তাতে গোশত ফ্রেশ থাকে আর ভাল অংশগুলোও সহজপ্রাপ্য হয়।

সবচেয়ে বড় টিপস হলো – নিজের সবোর্চ্চ বুদ্ধি খাটিয়ে ও পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে যে কোন শপিং করলে তার মান অবশ্যই উন্নততর হবে।

[অ.ট. প্রিয় ব্লগার, এবারে বইমেলা উপলক্ষ্যে আসছে আমার গল্পগ্রন্থ ‘প্রত্যুষের আলো’। প্রকাশ করছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স। উল্লেখ্য, এবারে বইমেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ থেকে। শরীরের প্রোটিনের জন্য যেমন দরকার মাংস, তেমনি মন ও মগজে বাড়ার জন্য দরকার বই। সবার জন্য শুভকামনা।]

KB-01- 00 - Copy

কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক

আমাদের অনেকেই কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া ফুল দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন –
যে কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং লাল সেটির নাম কৃষ্ণচূড়া“, আর
যে কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং হলুদ সেটির নাম রাধাচূড়া“।
আবার অনেকে কনকচূড়াকে মনে করেন রাধাচূড়া
যদিও কনকচূড়া দেখতে রাধাচূড়া বা কৃষ্ণচূড়া কোনটার মতই নয়। আসলে তিনটি ফুলই আলাদা আলাদা ফুল।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নামDelonix regia
রাধাচূড়ার বৈজ্ঞানিক নামCaesalpinia pulcherrima
কনকচূড়ার বৈজ্ঞানিক নামPeltophorum pterocarpum
কৃষ্ণচূড়া চেনার উপায় :

কৃষ্ণচূড়া গাছ সবাই চেনে, নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। শুধু যেখানে ভুল হয় সেটা হচ্ছে ফুলের রং দেখে তাকে কৃষ্ণচূড়া থেকে রাধাচূড়ায় ঠেলে দিয়ে। এখানে মনে রাখতে হবে ফুলের রং লাল, কমলা, হলুদ যাই হোকনা কেন সেটি কৃষ্ণচূড়াই এবং কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় বড় উদ্ভিদ। কৃষ্ণচূড়ার ফুলের মঞ্জুরি অনেকটা থোকার মত হয় এবং ফুলের আকার বেশ বড়।

রাধাচূড়া চেনার উপায় :

রাধাচূড়াকে ছোট কৃষ্ণচূড়াও বলা হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের ছোট সংস্করণ বলা চলে রাধাচূড়া গাছকে। কৃষ্ণচূড়ার মতো রাধাচূড়ার ফুলের রং লাল, কমলা, হলুদ হয়, তবে রাধাচূড়া একটি ছোট উদ্ভিদ। ঢাকার সড়ক ডিভাইডারে একে প্রচুর দেখা যায়। রাধাচূড়ার ফুলের মঞ্জুরি অনেকটা পেগোডার মত উপরের দিকে উঠে যায়। ফুলের আকার কৃষ্ণচূড়ার চেয়ে ছোট।

কনকচূড়া চেনার উপায় :

কনকচূড়ার গাছ কৃষ্ণচূড়ার মতোই একটি বৃক্ষ জাতীয় বড় উদ্ভিদ। কনকচূড়া ফুলের রং হলুদ। ডালের আগায় কয়েকটি আলাদা আলাদা ফুলের মঞ্জুরি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বের হয়। ফুলের কলি গুলি থাকে গোলগোল। মঞ্জুরি নিচ থেকে ফুলফোটা শুরু হয়। এই ফুল দেখতে কৃষ্ণচূড়া বা রাধাচূড়ার মতো হয় না।

এক সাথে ৩টি ফুলেরই ছবি দেয়া হল। চেনার জন্য।

উপরের দুটি ছবি কৃষ্ণচূড়ার, মাঝে দুটি ছবি রাধাচূড়ার। নিচের দুটি ছবি কনকচূড়ার। প্রতিটি ফুলের ছবি আমার নিজের তোলা।

কালী কালী মহাকালী…… কালরাত্রি দেবী চণ্ডিকা দেবী মহাকালী আগমনী স্তুতি (দ্বিতীয় পর্ব )

কালী কালী মহাকালী…… কালরাত্রি দেবী চণ্ডিকা
দেবী মহাকালী আগমনী স্তুতি (দ্বিতীয় পর্ব )

স্তুতিপাঠ ও কলমে লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

images

(শংখধ্বনি ও ঢাকের বাদ্য সহ কাঁসর-ঘন্টাধ্বনি)

(গীত)

ঔঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।
ঔঁ কালী কালী মহা কালী কালিকে পাপনাশিনী
সুধা তমক্ষরে দেবী কালিকায়ৈ নমোহস্তুতে।

স্তুতিপাঠ

দেবী আসছেন! বেজে ওঠে মহাশঙ্খ।
ঢাকের শব্দে, কাঁসরের ঝংকারে
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়।
চতুর্ভূজা মা কালী দেবীচণ্ডিকার আবির্ভাবে
তাঁর আগমনী বন্দনা গীতিতে
বিশ্ববাসীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়।

“কোথা তুমি শঙ্খ চক্র খড়্গ মহাস্ত্রধারিণী
কালী কপালিনী মা ছিন্নমস্তা!
তুমি ওঠো তুমি জাগো।
তুমি নেমে এসো ধরার বুকে পুনর্বার।
বাজাও তোমার প্রণববিষাণ মহাহুঙ্কারে,
মিলে যাক, মিশে যাক!
অধর্মের আছে যত ব্যভিচার।
সৃষ্টি হোক নতুন এক ধর্ম, নতুন এক যুগ।
জাগো জাগো মা!
তুমি না জাগলে সন্তানকূল ঘুমিয়ে পড়বে।
সন্তানকে অভয় দাও মা আদ্যাশক্তি মহামায়া”।

তুমি শক্তি, তুমি ভক্তি!
তুমি কলাকাষ্ঠা, কালরূপে অবস্থিতা,
তোমার পূণ্য স্তবগাথায় দিকে দিকে
ধ্বনিত হোক মঙ্গলশঙ্খ, জ্বলে উঠুক
মঙ্গল দীপ, প্রজ্বলিত হুতাশনের
দেদীপ্যমান কিরণে ধরণীর কোণে কোণে
ঘনঘোর তমসা বিদুরিত হোক।
ধরণী হোক প্রাণময়ী। হে মা কল্যাণময়ী!
তোমার আগমনে সারা বিশ্বচরাচরে
বিশ্ববাসীর স্বীয় কল্যাণে বিশ্ববাসী
গেয়ে উঠুক–

তারা তুমি, তুমি মা কালী,
তুমি দুর্গা মহামায়া।
তুমি শক্তি, তুমি মা ভক্তি
তুমি কালরূপী ছায়া।

প্রণাম মন্ত্র:
কালী কালী মহাকালী কালিকে কালরাত্রিকে।
ধর্ম কাম প্রদে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।।

তোমায় নিয়েই গল্প হোক…

এক লাইনের কি কবিতা হয়? জানিনা। হলে এগুলোকে কবিতা ভাবতে পারেন। নাহলে সহজ সরল ভাষায় বলবো, মহাশয় তার প্রিয়তমাকে ভেবে কিছুর মনের ভাব, আবেগ, প্রেম উজার করেছে। আশাকরি ভালো লাগবে আপনাদের। পড়তে পড়তে নিজের প্রিয়তমাকে মনে করলে আরো ভালো লাগতে পারে !

❖ যখন তোমাকে দেখি তখন পলক ফেলাকেও সময় নষ্ট মনে হয় !
❖ তোমার প্রত্যেকটা অঙ্গের উপর আলাদা আলাদাভাবে প্রেমে পড়তে চাই।
❖ আমি তোমাকে ঠিক তেমনই ভালোবাসি যেমন ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত অপরাধী তার জীবনকে ভালোবাসে !
❖ যখন তোমাকে দেখি তখন মনে হয় – তুমি আমার চোখের, মনের, শরীরের, আত্মার ”শুকুন”।
❖ তোমার দেখা পাওয়াকে… সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়।
❖ কোন এক বৃষ্টির দিনে, রাস্তার কোন ফাঁকা চায়ের দোকানে… তোমার সাথে আটকে পড়তে চাই।
❖ লাল গোলাপ হোক বা পূর্ণিমার চাঁদ… তোমার হাসির থেকে সুন্দর এই পৃথিবীতে কিছুই নাই।
❖ তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার হার্টবিট গুনতে চাই।
❖ তোমার আইসক্রিমের চামচ হলেও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম।
❖ একদিন পাখী হয়ে তোমার ছাদে বসতে চাই। স্নানের পর তোমার চুল শুকানো আর ধোয়া কাপড় মেলে দেওয়া দেখতে চাই।
❖ আমার অবহেলাগুলো তোমার ভালোবাসার সামনে নতজানু হয়ে পরাজয় স্বীকার করেছে।
❖ আমি ব্যস্ত হলেও… আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরায় শিরায় শুধুই তুমি বয়ে চলেছ।
❖ আমি কল্পনায় তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম। তুমিও কল্পনায় অনুভব করে নাও।
❖ পৃথিবীর সব কষ্ট, চিন্তা, চাপ ভুলে যাওয়ার জন্য তোমাকে একবার দেখায় যথেষ্ট।
❖ তোমার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমি ১০০ বছর কাটিয়ে দিতে পারি। সেটা কি তুমি জানো…
❖ একদিন তোমার সাথে হাঁটবো। তোমার হাত ধরে হাঁটবো। এমন এক পথে যার কোন গন্তব্য নেই।
❖ কেউ বিনা মেকআপেও এতো সুন্দর লাগতে পারে… তোমাকে ভালোবেসে জানলাম।

ছবিঃ তৌসিফ হকের আকা।

লেখা চুরি এবং আজকের পত্রিকার একটা খবর

ফেইসবুকের কল্যাণে লেখা চুরি বা নকলবাজির ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কেউ হুবহু নকল করে, কেউ বিদঘুটে কিছু শব্দ যোগ করে মূল লেখায় একটু পরিবর্তন এনে অন্যের লেখাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। কেউ আবার থিমটা চুরি করে। এসব প্রতিদিনই দেখছি। এদের আবার গ্রুপ আছে; ভক্তগ্রুপ। কিছু বলতে যাবেন তো ভক্তকুল নাকানি চুবানি খাওয়ায়ে ছাড়বে; নানান রকমের যুক্তি দিয়ে চুরির সংজ্ঞা বদলে দেবে।

বহু পুরানো একটা গল্প; যারা স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়েছেন তারা সবাই হয়ত সেটা জানেন। গল্পটার সারাংশ মোটামুটি এমনঃ প্যারেন্টের ট্রাঙ্কের ভিতর মূল্যবান কিছু আছে এই লোভে সন্তানেরা ফন্দি আঁটে এবং শেষে ওতে আত্মার সম্পদ ছাড়া বৈষয়িক কিছুই খুঁজে পায়না। এমন অতি পরিচিত একটা গল্পকেও অল্প বদলে নিজের করে ফেলেছে এমন একটা “চুরি-মাল” ফেবুতে জাস্ট দেখে এসেই এই কথাগুলি লিখছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঐ চুরি-মালের ভূয়সী প্রশংসা করে এখন অবধি হৃৎপিণ্ড চাপড়াচ্ছে! কী লজ্জার!

এই লজ্জাজনক চুরির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এদের ভক্তের অভাব নেই। কেউ না জেনে এদের ভক্ত হয়; কেউ জেনে। দ্বিতীয় জনেরা এই চোরদের মতই পাপী।

ওপরে যা বললাম তা আসলে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা মাত্র। মূল বিষয় হল, কালের কন্ঠ পত্রিকায় আজ প্রকাশিত একটা খবর। “একজনের লেখা চুরি করে আরেকজন প্রকাশ করলেন আস্ত বই”। পত্রিকার এই সংবাদ এবং ফেবুতে একটু আগে দেখা চুরির মালটার কারণে আমার পুরানো প্রশ্নের একটা আপাতঃ জবাব পেয়েছি, “ফেবুতে চোর-চোট্টার সংখ্যা নেহায়েত কম না।“ এদের কেউ আবার ভক্তদের কাছে “জিনিয়াস” হিসেবে স্বীকৃত। ফেবুতে এখন যাকে দেখে এলাম এবং পত্রিকায় যার কথা উল্লেখ আছে তারা দুজনই দেখলাম তাদের নিজ নিজ ভক্তদের কাছে খুব সমাদৃত।

কোন সন্দেহ নেই, লেখা চুরির দায়ভার মূলত চোরের। কিন্তু পুরোটাই কী? যারা জেনে শুনে এইসব চোরকে সাধু সাধু বলছে তারা কী এই দায় এড়াতে পারবে?

সাহিত্যে মৌলিকত্ব // রুকশানা হক

সাহিত্যে মৌলিকত্ব বিষয়টি সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের মান বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য সাধনা করতে হয় গবেষণাধর্মী মন নিয়ে। সেখানে একজন বড় লেখকের লেখাকে অনুকরণ নয় বরং তার বাইরে এসে আত্মপ্রকাশ করতে হয়, সাহিত্যে নতুনত্ব আনতে হয়। আর নতুন ধারা উদ্ভাবন একজন সাহিত্যিকের মৌলিকত্ব নিশ্চিত করে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথাকথিত কিছু সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। এখানে এর চর্চা হয়ে থাকে নির্ভয়ে। কারণ এ মাধ্যমে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই সাহিত্যবিমুখ বলে বড় লেখকদের লেখা সম্বন্ধে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তাই অনুকরণকারীকে সৎ পরামর্শ দেবার লোকের বড় অভাব। কেউ যদিও বা বুঝতে পারে সেও চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। এটা আমাদের চরম দীনতা।

সাহিত্য, সংস্কৃতির মৌলিকত্ব হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ঐ সাহিত্য কতটুকু নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। সব দেশের সাহিত‌্যিক তাই তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তথ্য প্রবাহের অবাধ প্রেক্ষাপটে অনুকরণপ্রিয়তার কারণে এই স্বকীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কবি সাহিত‌্যিকদের লেখায় নতুনত্ব, অভিনবত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব রকম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সত্য। তাই বলে আরেকজনের লেখাকে দু’চার শব্দ পাল্টে দিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া? এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে? যার লেখার ক্ষমতা রয়েছে তাকে কেনো এমন দীনতা পেয়ে বসে আমার বোধগম্য হয়না।

অনেকেই বলে থাকেন এডগার এ্যালেন পোর “টু হেলেনের” কথা, যে কবিতা জীবনানন্দকে “বনলতা সেন” লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখানে জীবনানন্দ স্বকীয়তা বিসর্জন দেননি। তিনি ভারতীয় নারী চরিত্রের সকল আয়োজন ঘটিয়েছিলেন তাঁর বনলতায়। অতএব কবির কাছে টু হেলেন ছিল প্রেরণা, অনুকরণ নয়।

বাংলাদেশের বড় লেখকদের কিছু বিখ্যাত কবিতা ও গল্প রয়েছে যেগুলি তাঁদের যত্নে গড়া এক একটি মহীরুহের মতো। এসব কবিতাকে যখন সাহিত্যিক (?) নামধারীগণ শব্দ রদবদল করে কবিতা বা গল্পের আকার দিয়ে ফেলেন তখন করুণা করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। কবি সাহিত্যিকের তো আপন মনের কিছু ভাবনা থাকেই, তাকে কেনো অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় আমার বোধে আসেনা।

আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

অগোছালো শোক

সেদিন সকালটা বেশ আলসে ছিলো। দেরী করে উঠে বাসি মুখেই ব্লগে আসি, কমেন্টের রিপ্লাইগুলো দেই। মোবাইলটা রাতে কোথায় ফেলে ঘুমিয়েছি মনে নেই। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে এলোমেলো আরকি। বাথরুম চাপলে মোবাইল খুজতে গিয়ে দেখি অনেক গুলো ম্যাসেজ, কল। ফ্রেশ হয়েই জানতে পারলাম বাংলাদেশ সময় দুপুর দুটোয় মা মারা গেছেন। কিছুক্ষন স্তব্ধ, নিথর হয়ে বসেছিলাম। দিনটা স্পস্ট মনে আছে, জুলাইয়ের ২৬ তারিখ; তাপমাত্রা ২৮ হলেও উত্তর পুর্ব দিকে মৃদুমন্দ হাওয়ায় পরক্ষনেই শরীর জুড়িয়ে যায়, আকাশটা ছিলো নীল ক্যানভাস। জানালা বেয়ে হুড়মুড় করে বাতাস ঢুকে উড়িয়ে নেবার তোড়জোড়।

ডায়ালাইসিস নেবার পর মাসল ক্রাম্প সহ নানা রকম যন্ত্রনায় মা কাতরাতেন। একবার এমন হলো তার প্রেসার নেমে গেলো ৪০/৮০ যেখানে একজন মানুষের স্বাভাবিক প্রেসার থাকে ৮০/১২০। সবাই ভেবেছিলো বাঁচবে না। সেবার ঠিকই উতরে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেদিন ব্যাথা উঠতেই বাবাকে বলে নিজেই নীচে নামলেন, গাড়ীতে উঠলেন। হাসপাতালে গিয়ে যন্ত্রনা নিয়েই নার্সকে সব বললেন। নার্স ব্যাথানাশক ওষুধ সহ স্যালাইন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। কে জানতো এটাই তার শেষ ঘুম! শেষ ডায়ালাইসিস করাবার আগের দিন ঘন্টাখানেক কথা বললাম। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, হাসিনা-খালেদা নিয়ে তর্ক, আমার বিয়ের জন্য কেমন পাত্রী হওয়া উচিত এসব নিয়েই চললো কিছুক্ষন। আব্বার দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করলাম। বাবা পাশে বসে শুনছিলেন।

বোনের জামাই তার মৃত্যুসংবাদ ম্যাসেজ করেছিলাম। বাবা বোন কারো সাথেই ফোনে কথা হলো না, কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। লিসবনে ফোন দিয়ে টিকেটের খোঁজ নিয়ে জানলাম ১ সপ্তাহের মধ্যে ইকোনমি ক্লাসে কোনো টিকেট নেই, সব বিজনেস ক্লাস খালি। চাইলে যেতে পারি। স্টকহোমে ফোন দিতেই টিকেট পেয়ে গেলাম, বেশ সস্তাতেই। শর্ত একটা পরের দিন দুপুরের ফ্লাইট ধরতে হলে রাতেই স্টকহোমে যেতে হবে, এবং সেটা করতে হলে আমাকে সন্ধ্যার আগে লিসবন এয়ারপোর্টে পৌছাতে হবে। তাও অনেক ঝামেলা, ট্রানজিট হবে দুটো জায়গায়: জার্মানী ও তুর্কি।৩০ ঘন্টার জার্নি।

অনেক শখ ছিলো দেশে গিয়ে মা কে নিয়ে ভারত ঘুরে আসবো। সেভাবেই সব প্লান ছিলো। মা এর অপারেশনটা হলে রামপাল, রূপপুর গিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে আসবো। তার সাথে দিনাজপুরের যে অববাহিকায় ইউরোনিয়াম পাওয়া গিয়েছিলো, খনিজ মন্ত্রনালয়ের অফিসেও একটু ঘুরে আসবো ডিটেইল কিছু তথ্যের জন্য। কিন্তু এভাবে যে যেতে হবে বুঝতে পারিনি। যখন বাসায় পৌছালাম তখন ফরিদপুর, মুন্সিগন্জ, রংপুর, নারায়ন গন্জ থেকে আগত আত্মীয় স্বজন ফিরে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে আরেকবার কান্নাকাটির রোল শুরু হলো। তখন ছিলো আছরের সময়। কাকা বললেন ইমামতি করতে। ইসলামী তরিকা অনুযায়ী আমার ফরজ গোসল দরকার, নতুবা অজু হবে না। ফরজ গোসলও যে শেষ কবে করেছি খেয়াল নেই। মন থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে অনেক আগেই কিন্তূ এই পরিস্থিতিতে বিনা অজুতেই ইমামতি করতে হলো। মা এর কবর জিয়ারত বেশ সহী ভাবেই করলাম। কাকা ভেবেছিলেন আমি সব ভুলে গেছি হয়তো। কিন্তু আমার তেলাওয়াত শুনে বেশ অবাক হলেন। বললেন তার ছেলে হাফেজী পাশ করেছে কিছুদিন আগে। মৌলানাতে ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষা সামনে বলে ফরিদপুর চলে গেছে। যাবার আগে মা এর জন্য কোরান খতম দিয়েছে। তার হাতে গড়া মাদ্রাসাটা ঘুরে দেখার আমন্ত্রন জানালো। যদিও তাকে বলেছিলাম দেশে আসলে একটা কম্পিউটার ল্যাব দেবো ওদের, কিন্তু সেটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না।

আম্মা মারা যাবার আগে কিছু কাজ দিয়ে গেছেন। প্রতি সন্ধ্যায় “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বি ই্যানি ছগীরা” পড়তে হবে। বিয়ে করতে হবে, পছন্দ হোক বা না হোক, সংসারী এ বেলায় হতেই হবে।আমাকে দেশে ফিরতে বারন করেছেন আর আমি যেনো কোনো অপরাধবোধে না ভুগি।

ইসলাম নিয়ে লেখালেখির কারনে বাসায় নানা রকম লোকজন আসতো, বাইরে ভীড় করতো। তিনি অসুস্থ থাকা সত্বেও জঙ্গিদের নির্যাতন বেশ চরমেই ছিলো ধরা যায়। একবার বাসায় এক মহিলা এসে মাকে সরাসরি বলেন আমি যেনো লেখালেখি বন্ধ করি নতুবা তিনি পুলিশ কেস করবেন। তার পরের দিন ডায়ালাইসিস করাবার ডেট ছিলো। স্বভাবতই সেদিনটা ছিলো কস্টের। আম্মা তাকে সরাসরি বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আব্বাকে থানায় পাঠান। আব্বা থানায় গিয়ে ঐ মহিলার ব্যাপারে জিডি করতে চাইলে দারুস সালাম থানার ওসি তাকে শান্ত করেন। বললেন নেক্সট টাইম এমন করলে শুধু ফোন করলেই চলবে। সাধারন ডায়েরী করে চলে আসেন।

আব্বা যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, বুকের ভেতর বড্ড শূন্যতা কাজ করছিলো। আম্মাকে বাড়ীর কাছেই কবর দেয়া হয়েছে। আব্বা আর এখান থেকে যাবেন না। বোনকে বললাম বোঝাতে, সে শুনলো না।

মামা তাবলীগ করেন প্রায় ১ যুগ ধরে। তিনি বললেন,”তুমি কি সত্যি তার জন্য মন থেকে দোয়া করবা না? তার আত্মা শান্তি পেতো।”

তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলাম। তার সাথে আমি অনেক কিছুই শেয়ার করি,”মামা, আমাদের আত্মার মধ্যে কি এমন গুন আছে যে মৃত্যুর পর তারা এমন উড়ে উড়ে বেড়াবে? আমাকে একটা কারন বলেন!”

সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি বলতে থাকলাম,”পর্তুগীজ দার্শনিক ইউরি ডি কস্তা ক্যাথলিক পরিবারে জন্মালেও দর্শনের সংস্পর্শে এসে তিনিও এমন প্রশ্ন করলেন। আত্মা এমন কি জিনিস, যেটা আমাদের মৃত্যু হলে দেহ ছেড়ে উড়ে যাবে। সে একসময় রাব্বিনিক ইহুদী মতাদর্শে বিশ্বাস করা শুরু করেন যারা মনে করতেন মানুষের আত্মা বলে কিছু নেই। মানুষ মরে গেলে তার সত্বারও মৃত্যু হয় এবং সে তখন বেচে থাকে তার কর্মে, গুনে, মানুষের স্মৃতিতে। যদিও পরে তিনি সেই ইহুদী ধর্মও ত্যাগ করেন দর্শনের খাতিরে।”

মামা মাথার টুপি খুলে হাত বুলালেন,”কিন্তু এত দিনের বিশ্বাস, এক দুইজনের কথায় তো ভুল হতে পারে না।” আমি হাসলাম,”জরূরী নয় যে সবাই এক পথে চললে আপনাকেও সে পথে চলতে হবে। মা মারা গেছেন, সত্যি বলতে সে হারিয়ে গেছে। তার কাছে অনেক কিছু বলার ছিলো, সে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলেন। সেগুলো আর বলা হবে না, শোনা হবে না। যেটা শিক্ষা হলো, যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমার কর্তব্যটুকু পরিপূর্নভাবে পালন করা, তাদের সেবা করা। ভালোবাসা মন থেকে। আমার শরীরটা মায়েরই দেহের একটা অংশ। ৯ মাস তার দেহের একটা অংশ ছিলাম, তারপর পৃথিবীর আলো দেখেছি, এত বড় হয়েছি। মা এর একটা অংশ আমার মধ্যেই এখনো বেঁচে আছে। যদি কোনো অনৈতিক বা অযৌক্তিক কাজ করি, তাহলে মাকেই অসম্মান করা হবে। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, সবাইকেই অপমান করা হবে।”

মামা আর কিছু বললেন না। আমি বাসা থেকে বের হলাম। তিলোত্তমা ঢাকা শহর কিভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেটা অনুধাবন করার চেস্টা করলাম। অট্টালিকার অরন্যে আমরা নিজেদেরকে শেকল বন্দী করে মৃত্যুকেই ডেকে আনছি এটা সবাই জানে, বুঝে, তবুও মানুষ সে কাজগুলো করেই চলেছে। দেশের মানুষ এমন গোয়াড় রকমের আত্মঘাতী কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।

অদ্ভুত দমবন্ধ পরিবেশ অস হ্য লাগতে শুরু করলো। মোবাইলটা বের করে নেক্সট ফ্লাইট ঘাটতে লাগলাম….।