সারাজীবন ধরে দেখলাম
অদ্ভুত কিছু প্রজাপতি
খেয়ে যায় প্রেমের লার্ভা
সবুজ ধানের পাকা ছোঁয়া
তালশাঁস নরম হৃদয় আমার
সারাজীবন প্রেমিকদের দেখলাম
ধূর্ত শেয়াল অথচ
প্রজাপতিগুলোর সামনে
শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ যেন
এতই চতুর, এতই বোকা
সারাজীবন ধরে দেখলাম
অদ্ভুত কিছু প্রজাপতি
খেয়ে যায় প্রেমের লার্ভা
সবুজ ধানের পাকা ছোঁয়া
তালশাঁস নরম হৃদয় আমার
সারাজীবন প্রেমিকদের দেখলাম
ধূর্ত শেয়াল অথচ
প্রজাপতিগুলোর সামনে
শালপাতায় পবিত্র প্রসাদ যেন
এতই চতুর, এতই বোকা
১
জোছনা চুরির গল্প অনেক শুনেছি
পলিগামী পুরুষের রসায়ন
ভাবতে ভাবতে
নিঃশ্ছিদ্র মশারীর আকার-প্রকার
নির্ধারন করে ফেলি
চাঁদও কি জোছনাভূক প্রানী নাকি
চাঁদেও ফোটে নানাবিধ ফুল!
আমাদের এখানে বৃষ্টি হত
মনে রাখবার মত রাত্রিও নামত
ঋতুবতী গুহানারী একবার চাঁদে ফেলে
এসেছিল লাল রঙটার অর্থ
অন্ধকার আর নীরবতা
যোগ হয়েছিল আলোর সমগোত্রে
যার কারনে গল্পগুলো খরস্রোতা হয়ে গিয়েছিল।
সেই থেকে ওরা গল্প করত সারারাত
যদিও নারীটি বাঁধা থাকত লালঝুঁটি
মোরগের কাহিনীতে যেখানে একটি মেয়ে
জুতার ফিতায় নানারঙ যোগ করে
খলখল হেসে উঠত
পুরুষটা আবার হাসি-কান্না সব থেকেই
আমিষ খুঁটে খেতে শিখেছিল প্রবল।
আদি থেকে এভাবেই চুরি হয়ে যাচ্ছিল
সমস্ত কুলীন নিঃশ্বাস
যা আটকে থাকে প্রতিটি জোছনার রঙে;
রঙভ্রান্তির বিকারে।
২
তুরাগের জলে ডুবন্ত এক মানুষ দেখেছিলাম
যে বাঁচতে চায়নি মোটেও
তার উর্ধ্বমুখি হাত ছিল না সাধারন
অথচ আমরা তাকে বাঁচিয়েছিলাম আর সে
ক্ষেপে উঠেছিল লজ্জাহীনের মত।
তাকে বাঁচাবার লজ্জায় আমাদের ঘুম নষ্ট হয়
এখনো, আমরা প্রতি রাতে পালা করে
লোকটাকে পাহারা দেই
এরপরে শিলা, এরপরে লিনা
এরপরে একসময় হয়তো আমরা কেউ থাকব না।
লোকটা তখন অনায়াসে ডুবে যেতে পারবে
তখন তার কান্না শুনবে তুরাগ, শুধুই এক নদ।
৩
বিড়ালকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার মুকুটে
কি লাগানো আছে মেয়ে?
বিড়াল তার থাবা মেলে ধরে বলল, মুকুট নেই
শুধু নখে মেখে রেখেছি কাঁটা-কাঁটির সোহাগ!
যাকে হারিয়েছো ভেবে এত কান্না
তুমি তো জানোনা তারও মনে
ঢুকে বসে আছে কিছু গভীর অন্ধকার
তুমি দুই হাতে সরাচ্ছো শুকনো পাতা
অরন্যের বুক থেকে চাইছো বইয়ে দিতে ঝর্ণা
অন্যদিকে সেও করছে পরিখা খনন
বন্দুকের গুলিগুলো পুরনো হয়ে আসে তারও
অথচ তোমার কথা ভাবলেই বৃষ্টি মনে আসে
মনে উঠে আসে ছবি ছেলেবেলার স্বপ্নগুলোর
যার সমাপন মিশে যেত আজানের সুরে
তুমি ছুটে যাচ্ছো কান্নার নগরীর দিকে
অদ্ভুত কত ছায়া ঘিরে থাকে বড়আপুর সন্তুর
তার সাথে তোমার আর দেখা হয়না
রাঁধুনি খালা বলেছিল, নদীতে নদীতে দেখা হয়
তবু বোনে বোনে দেখা হয়না
তুমি কি এখন বোন হয়ে গেছো তবে?
উজিরপূত্র, নাজিরপূত্রের সাথে যুদ্ধ শেষে
যেমন নামে বেহেশতি নীরবতা
তোমার প্রেমও ক্রমশঃ বোন হয়ে যায়
চুমুগুলো মেঘ সেজে বৃষ্টি নামায় চোখে।
দূরে এঁকেবেঁকে তখন মিলিত হতে থাকে দীর্ঘশ্বাসেরা।
আমাকে কখন চিনতে হচ্ছিল
এতসব লতা-পাতা, সাপ-বিচ্ছু, বিষ বিবিধ?
আমি তো ‘এক্সিট পয়েন্ট’ চিনতে চাইছিলাম
ফুস মন্তরে উবে যেতে চেয়েছিলাম পৃথিবীর দিকে।
কোলাহলের ভেতর খুঁজেছিলাম প্রাণ
চোখ বন্ধ সুফীজমের শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে,
নেশা ধরা প্রেয়সীর চোখে শেষকৃত্য দেখব আশায়
নেমে গিয়েছিলাম আগুনের ঠোঁট কাটা হাসির গুল্মে।
চারপাশে দেখা মানবিকতা চুর্নির গোলকধাঁধায়,
শেষতক পৃথিবীটা ঈশ্বরের চূড়ান্ত বিজয় মেনে
এজিদের পরাজিত বুকে ঠাঁই নেবার পর
‘নো এক্সিট’ ঠোকর খাচ্ছে মগজের সোনালী লাভায়।
“সেদিন অনেক রাত অব্দি বাঁশী বেজেছিল নবীনা’দিদের পুকুরঘাটে। আমি তো নির্বাক শ্রোতা বা দর্শক। ঝুমুরের চোখ দু’টো করমচার মতো লাল দেখেছি, বুঝেছি অনেক কিছুই। বলতে কি পেরেছি কিছু?”- বলতে বলতে বড়’মা কাঁদছিলেন। বড়মা’র ছোট ফুফু ছিলেন এই ঝুমুর, সমবয়সী। অমন রূপবতী মেয়ে বুঝি আর হয় না, বড়’মার ভাষ্য। একানব্বুই বছর বয়েসী অশীতিপর এই বৃদ্ধা আমার মায়ের নানু, আমার বড়’মা। তিনি বলছিলেন আর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম সবকিছুই, দেখছিলাম বড়’মার চোখ দিয়ে—চলে যাচ্ছিলাম অনেক, অনেক যুগ আগে।
লাল ঢাকাই শাড়ী পরনে এগারো বছরের কিশোরী ছুটে যাচ্ছে কলাই ক্ষেতের ভেতর দিয়ে আমি দেখতে পাচ্ছি- কিশোরীর গলায় হাঁসুলী, পায়ে রূপার খাড়ু আর কোমর ছাড়ানো ঢেউ খেলানো চুল। ফর্সা, ঝকঝকে গায়ের রঙ। মেয়েটি দৌঁড়াচ্ছে আর কেউ পিছু ডাকছে, ওরে ঝুমুর, ঝুমুরি রে—দাঁড়া-
আমি সব দেখতে পাচ্ছি—-
মাত্র দু’দিন আগে ঝুমুরের বিয়ে হয়েছে। যদিও মেয়ে শ্বশুরবাড়ী যাবে আরো দু’বছর পর তবু এখনো বাড়িতে বিয়েবাড়ীর আমেজ। আর এই মেয়ে ছুটছে সইয়ের বাড়ী। সাথে আমার বড়’মা আলতা, ঝুমুরের সমবয়েসী ভাইঝি।
—-শোন আলতা আমি শ্বশুরবাড়ী গেলেও ফিরে আসবো, আর যাব না—বলছে ঝুমুর
—ধ্যাৎ তাই কি হয়? দেখো না ঝর্ণা খালা কত্তো কাঁদলো বিয়ের সময়। আর এখন বলে যাই রে, বাপের বাড়ীতে বেশীদিন থাকলেই আমার ছেলের শরীর খারাপ করে। তুমিও অমনই করবে—আলতাও হেসে উত্তর দেয়।
—বলেছে তোকে!
—বলেনি আবার? বলেই খুব হাসছে আলতা
—দেখবো তুই কি করিস?
—এমা আমি তো বিয়েই করবো না, বাবাকে বলেছি—আর বাবাও বলেছে সে-ই ভাল করিস না বিয়ে।
দূরে উড়ে যাওয়া বকের সারি দেখে দু’জনেই থমকে দাঁড়ায়। এমন অসময়ে বকগুলো ওড়ার কারন হঠাৎ বেজে ওঠা বাঁশীর সুর। দু’জনে কি এক টানে পায়ে পায়ে ঝোঁপটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দেবদূতের মতো দেখতে, একমাথা ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে যে ছেলেটি বসে বসে বাঁশী বাজাচ্ছে ওরা দু’জনেই চেনে তাকে। শ্যামল দাদা, নাবীনাদি’র ছোট ভাই।
—কি রে ঝুমরি তোর নাকি সেদিন বিয়ে হয়ে গেল? এখন তবে কেন এত বন বাদাড় ঘুরে মরছিস। যা, যা ঘরে যা—বললো শ্যামল দা।
—বিয়ে হলেই কি! ও কি এখনই চলে যাচ্ছে না-কি শ্বশুরঘরে?
—এখন যাবে না? বাহ ভালই—
শ্যামলের ঠোঁটের কোনে এক টুকরো বাঁকা হাসি আর ঝুমুরের চোখ ছলছল। সে কেবল পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে মাটি খুঁড়ছে। ভঙ্গিটা কেমন অপরাধীর। একটা নিঃশ্বাস ফেলে শ্যামল’দা আবার বাঁশী বাজাতে লাগলো। পাশেই ঝালিঙ্গী নদীর শীর্ণ এক ধারা কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে। নদীর জলে তীরবর্তী কোন গাছের ছোট ছোট হলদে ফুল ঢেউয়ের তালে দুলতে দুলতে কোত্থেকে যে কোথায় চলে যাচ্ছে। আলতা কেবল দূরের সরিষা ক্ষেতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসা পড়ন্ত বিকেলের দিকে চেয়ে থাকে। হঠাৎ লক্ষ্য করে ঝুমুর যেন কেমন মগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে শ্যামলদা’র দিকে। বাতাসে শীতের গন্ধ।
তারপরের ঘটনা সুখের না মর্মান্তিক কে জানে! যে আলতা দর্পিত ভঙ্গিতে বলেছিল, “এমা আমি তো বিয়েই করবো না, বাবাকে বলেছি আর বাবাও বলেছে সে-ই ভাল করিস না বিয়ে।“ সে-ই আলতারও বিয়ে হয়ে গেল হুট করেই। আর বাইরে যেতে পারে না আলতা বা ঝুমুর কেউই। তবু কোন কোন উদাস দুপুরে মা-খালারা ঘুমে থাকতে দুই জনে চষে আসে মাঠ-ঘাট। নবীনা’দিদের বাড়ী। শ্যামলদাদার বাঁশী এখনো তেমনি বাজে করুণ থেকে করুণ সুরে। মাঝে মাঝে কেবল ওরা চুপি চুপি পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় শ্যামলদা’র সামনে। কি যে হয়েছে ঝুমরিটার ওকে দেখলেই কাঁদে। চোখের জলে ভেসে যায় ওর নাক চোখ মুখ। শ্যামলদা’র চোখটাও কি একটু ভেজে? কি জানি, এ হয়তো আলতার চোখের ভুল!
কথা ছিল দুই ফুফু ভাইঝি শ্বশুর ঘরে যাবে দুই বছর পর যখন ওরা তেরোয় পড়বে। সে-ই দিনও ঘনিয়ে এসেছে। সামনের অঘ্রানের দুই তারিখেই দুই সই পাড়ি জমাবে ভিন গাঁয়ে। বাড়ীতে হাসি-আনন্দ। মা চিড়ে কোটে, দাদী বানায় নাড়ু, শিকায় উঠছে ভাঁড়ের পর ভাঁড় দই। অন্য ফুফুরাও নাইয়র এসেছে। কলকাতা থেকে মেয়েদের জন্যে এসেছে শাড়ী, চুড়ি, ছেলেদের জন্যে জরিপাড়ের লুঙ্গি, কুর্তা। বাড়ীর পরিবেশ জমজমাট। কাজের লোকজনের হাঁক ডাকে বাসায় তিষ্ঠানো দায়। বড় বড় রুই,পাঙ্গাস কুটছে পাড়ার বৌ-ঝি’রা উঠানে বসে। ধামা ভর্তি খই, মুড়কি নিমেষে শেষ হচ্ছে। আর পানের বরজ তো খালি হবার যোগাড়। এমন এক উৎসবমুখর দিনে আলতা আর ঝুমুর কোন ফাঁকে বেরিয়ে পড়েছে কে জানে! আজ কার্তিকের শেষ দিন।
নদীর ঘাটে যে জংলা মাচাং সেও ছাড়িয়ে দু’জনে চলে গেছে নীরব থেকে নির্জনে। অবেলার কুয়াশায় ঢেকে আছে জায়গাটা। কেমন নিঃস্তব্ধ, শুনশান চারিদিক। পাখিদের ঘরে ফেরার কিচিরমিচির শুধু। এরই মধ্যে গলাগলি করে দু’জনের সে কি কান্না। কে শুনবে তাদের এই হাহাকার? কে আসবে মোছাতে চোখের জল? ঘোচাতে বিচ্ছেদ জ্বালা? আলতা বলছে,
—মনে থাকবে ঝুমরি, আমরা কিন্তু ও বাড়ী থেকে ফেরত এসেই বিষ খাব।
—কোত্থেকে যোগাড় হবে রে বিষ?
—সে আমি যোগাড় করে আনব, ভাবিস না।
ঝোঁপের ভেতর থেকে মচমচ আওয়াজে ওরা উঠে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে দেখছে এই বিজন বনে আবার কে এলো! বাঘ নয়তো! মা বলেছে আলতাকে, ‘দেখিস যেন ওদিকে কক্ষনো যাবি না। ওখানে বাঘ বেরোয়।‘ তা ওরা তো এখানে আসছে সেই ছেলেবেলা থেকেই। বাঘ কেন বেড়ালও দেখেনি কখনো। তবে ওদের দেশে বাঘের উপদ্রব অনেক। এই তো সেদিনও বাপ-মা মরা এতিম ছেলে শহীদুল্লাহ কে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল বাঘে। ওর বড়ভাই আসাদুল্লাহ পাশেই মাঠের ঘাস কেটে আঁটি বাঁধছিল। কি সাহস ছেলেটার! এক্কেবারে ঘাসকাটার কাঁচি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঘের উপর। আসাদুল্লাহ’র চীৎকার, চেঁচামেচিতে লোক জড়ো হয়েছিল বিস্তর। কিনতু ঐ একলা ছেলেই ভাইকে উদ্ধার করেছিল আর কেঁদে কেঁদে বলেছিল, ‘খোদা হামার মা-বাপ কাইড়্যে নিয়েছ তবু হাউস যায় না, ভাই টাকও নিবার চাও। তুমি এংকা ক্যা খোদা? গরীব দুঃকীর দুক্ক বোঝোনা!’ এসব অবিশ্যি আলতা শুনেছে বাড়ীর ঝি রাসুর মায়ের কাছে। তবে এখন এই সাঁঝলাগা বিকেলে ওর শরীরটাও বাঘের ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। ভয়ে ভয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে।
যাহ বাঘ কোথায়! কোত্থেকে শ্যামল দাদা এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে।
ওরা কিছু বুঝে উঠবার আগেই হঠাৎ করে সে ঝুমুরের ডান হাতটা চেপে ধরে আকুল হয়ে বললো, —শ্বশুরঘরে যাসনা ঝুমুর। প্রথমে দু’জনেই হতচকিত হয়ে মৃদু একটা চীৎকার করে উঠেছিল, শ্যামল’দাকে দেখে আলতার যেন বুকে পানি ফিরে এল। তবে সামলে উঠেই সেও অবাক হয়ে দেখে শ্যামলদা’র হাতের মুঠোয় ঝুমুরের হাত। এতক্ষনে সম্বিৎ ফেরে ঝুমুরের। হালকা ভাবে হাতটা ছাড়িয়ে নিল আর ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথায় ঘোমটাটা আরেকটু টেনে নামিয়ে নিয়ে দৃঢ় অথচ অস্ফুট স্বরে কেবল বললো—ছিঃ
তারপরে দু’জনেই ছুট। দু’জনেরই বুক ঢিবঢিব। পেছনে পড়ে গেল কলাই ক্ষেত, সর্ষে ক্ষেত আর শ্যামল দাদা।
ঘরে ফিরেই ঝুমুর বললো,—আলতা ও কথা যেন কাউকে বলিসনা ভাই।
—যাহ ও কি বলবার কথা! হ্যাঁ রে তুই ও কি ওকে—?
— না না কি যে বলিস!
—তা’ও ঠিক। আর ওরা হলো গিয়ে হিন্দু। এ কি সম্ভব?
এবার ঝুমুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ম্লানকণ্ঠে কেমন আনমনে বলে, সে-ই তো।
এই রাত্তিরটাই শেষ। কালই আলতা চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধা জেলা শহরে আর ঝুমুর পলাশবাড়ীর বাঁশকাটায়। জানীপুর গ্রামের দু’টি মেয়ে কি নিমেষে পর হয়ে যাবে স্বজনদের জন্যে! আর ওরা হাসি তামশায় মেতে উঠবে না। ভাইয়ের কাছে পাখি ধরে দিতে বায়না করবে না। মেয়ে দু’টো এটা মানতেই পারছে না। অথচ দেখো ভাই আর মায়েদের খুশীর অন্ত নেই। যেন ওদের জন্মের পর থেকেই চলছিল ওদেরকে পর করে দেবার এই দূরাভিসন্ধি। সত্যি কি নিষ্ঠুর এই জগত! কেমন করে একটা মেয়ের শেকড় উপড়ে টেনে নিয়ে ফেলে অন্য ঘরে! কেউ এতটুকু উহ করে না, কেউ দেয় না বাঁধা। আলতার বুকে অভিমানের বিশাল পাহাড়। সে ভাবে, আর কক্ষনো ফিরবে না এই বাড়ী, এই নিষ্ঠুর লোকগুলোর মাঝে। ওরা তো কেউ ওকে ভালই বাসে না। থেকে থেকেই ওদের বুক ফেটে একটা করে দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ভেসে ভেসে উড়ে যায়। কেউ তা শোনে না। শুধু বাতাস হয়ে রয় সাক্ষী।
আজ সারাদিন ধরে দুই শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এসেছে গরুগাড়ী বোঝাই করে। এখন অনেক রাত। তা’সত্ত্বেও বাসন কোসনের ঝনঝন আর খাওয়া দাওয়ার হুল্লোড় লেগেই আছে। শুধু কোনার এক ঘরে কাঠের মতো শুয়ে আছে আলতা আর ঝুমুর। এত হৈ চৈ ওদের কানে যাচ্ছে না। বাইরে করুণ সুরে বাজছে বাঁশী। থেকে থেকেই ফুঁপিয়ে উঠছে ঝুমুর। ঝুমুরের চোখ করমচার মতো লাল। আলতার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার কষ্টের চেয়েও অন্য এক বেদনায়।
সেই অন্ধকার থাকতেই বাড়ীর মেয়েরা টেনে তুলেছে ঝুমুর আর আলতাকে। আজ দু’জনে যাবে দুই পথে। এ নিয়ে অবশ্য আপত্তি তুলেছিল মুরুব্বিরা। একই দিনে বাড়ীর দুই মেয়ে তা’ও আবার ফুফু ভাইঝি’র একত্রিত বিদায়! এ তো শুভ লক্ষণ নয়। আলতার দাদাজান মানে ঝুমুরের বাপজান এসব মানেন না বলে সব আপত্তি উড়ে গেছে আগেই। ওই অন্ধকারেই দু’জন কে গোসল করানো হলো সন্দা-মেথি আর হলুদ বাটা মেখে। সে কি শীত! কাঁপছে দু’জন ঠকঠক করে। বেলা উঠবার আগেই সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে বিদায় দিতে হবে। নইলে দূর পথে ওদের ফিরতে সমস্যা হবে। বেলা বেলা বৌ নিয়ে ঘরে না ফিরতে পারলে শ্বশুরবাড়ীর ওরাই বা নিজেদের লোকজনকে কি করে দেখাবে কেমন বৌ এনেছে! তাই এত দ্রুত সব আয়োজন, তাড়াতাড়ি যাত্রার তোড়জোর। ভেজা চুলেই তেল দিয়ে টেনে বাঁধা হয়েছে বিড়া খোঁপা। এমন শক্ত করে বাঁধা যে দু’জনের কপালের পাশের শিরায় চিনচিন করছে ব্যাথা। অবিশ্যি এ বোধটাও এখন ওদের কাছে নস্যি। কখন মা, দাদী, খালা, ফুফুদের সাথে কান্নার পাট চুকিয়ে ওরা গরুর গাড়িতে গিয়ে বসেছে ওদেরই মনে নেই। দু’জনেই ছইয়ের ভেতর থেকে যতটুকু দেখা যায় দেখলো, দুই গাড়ী চলে যাচ্ছে উঁচু নীচু রাস্তা ভেঙ্গে দুই দিকে।
দশদিন পরেই অঘ্রানের তের তারিখে আবার একই জায়গায় পরপর এসে দাঁড়ালো দু’জনের গরুর গাড়ী। সেদিন গিয়েছিল ছইয়ের ভেতর একা বসে। আজ দু’জনেই ফিরেছে পাশে বর নিয়ে। আজ বাড়ীতে আনন্দের ঢেউ তেমনি, সেদিন যেমন ছিল। তবে আজ কিনতু ঝুমুর বা আলতা কাঁদছে না। দু’জনের চোখে-মুখেই চাপা খুশী, লাজুক মুখে ঘুরছে। বারেবারে চাপা হাসিতে মুখ চেপে দেখছে দু’জন দু’জনকে। শুধু মন খুলে কথা বলতে পারছে না নানা আনুষ্ঠানিকতার ব্যাস্ততায়। তা হোক সকাল তো পরেই আছে। কত্তো গল্প জমে আছে দু’জনার অন্তরে!
সকালে কুয়োতলায় দাঁড়িয়ে ঝুমুর। মুখোমুখি আলতা—
—কি রে এনেছিস বিষ?
—কোত্থেকে আনব?
—ও মা তুইই না বলেছিলি যোগাড় করবি!
—না রে এখন আর পারবো না। মানুষটা খুব ভাল।
—কোন মানুষ ভাল রে?
—যাহ জানিনা
হিহিহি করে হেসে ওঠে ঝুমুর। বলে
—আমারটাও জানিস। আমি বাবা এই জীবনে আর মরতে চাই না।
—আমিও
—দ্যাখ আলতা এই শাড়িটা সে আমায় দিয়েছে লুকিয়ে
—বাপরে! এরই মধ্যে ঘুষ দেয়াও সারা? আর কি কি দিয়েছে শুনি?
—সর পাজী কোথাকার!
এবার আলতাও হেসে উঠলো খুব জোরে। কোথায় যেন বাঁশী বেজে উঠলো, কি করুণ সেই সুর! সকালের কাঁচাসোনা রোদ ধুয়ে দিচ্ছে ওদের শরীর। তবু বাঁশীর সুর শুনে দু’জনেই একটু কেঁপে উঠলো যেন।
হঠাৎ একটা হলদে ঝিলিক। রোদের এত তেজ? এমন ঝিলিক? মূহুর্তের জন্যে আলতা টের পায় শরীরে একটা লোমশ ছোঁয়া, গরম। ওরই ভারে আলতা পা ভেঙ্গে পড়ে গেল মাটিতে। কুয়োর পাড়ে ধুপধাপ ক’য়েকটা শব্দ। এত দ্রুত, এত দ্রুত যে আলতা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি একবার শুধু চোখ বড় বড় করে দেখলো ওর সামনে ঝুমুর নেই। আর ওর বাসার মানুষজনসহ গ্রামের অনেক লোকের হৈ চৈ চীৎকার—
—বাঘ, বাঘ, ওরে ঝুমুরোক বাঘে নিয়া গেল—ওরেএএএ—–কেটা কুন্ঠে আছ, আউগাও বাহে—বাহে—-
ঝুমুরের আধখাওয়া শরীরটা পাওয়া গিয়েছিল সেই জংলা মাচার পাশের ঐ জঙ্গলে। শ্যামল’দাদাই দেখেছিল প্রথম।
অনেক আগেই গল্প শেষ, শুয়ে পড়েছি আমরা। আমি আর বড়’মা। বড়’মা পাশ ফিরে শুয়ে কাঁদছেন। ফুলে উঠছে শরীর। টের পাই সবই। কিছুই বলি না, কাঁদুক। সারা জীবন যে দুঃখ তিনি বুকে বয়ে বেড়িয়েছেন এটুকু শোক তো এই বৃদ্ধা কেঁদে ঝরাতেই পারেন। আচ্ছা শোক কি কাঁদলে ঝরে যায়? নাকি আটকে থাকে বুকে? খুব ভাবছি, শোক আসলে কি? শোক কি এমনই? একহাজার বছর পরেও একই জায়গায় দাঁড়িয়েই থাকে!
(একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)
পৃথিবীর শেষ মানুষটা যেদিন বলেছিল
নিশিই সব অন্ধকার শুষে
আস্ত একটা দিন পায়ের কাছে রেখে যায়
সেদিন অবিশ্বাস জেগেছিল
পরে ভেবে দেখেছি কথাগুলো মিথ্যে নয়
এরপরে কত রাত গড়িয়ে গেছে ঊষার দিকে
সেই মানুষকে আর খুঁজে দেখিনি
একটা মানুষ, আস্ত মানুষ
ছায়া হতে হতে
গলে যেতে যেতে
রয়ে গেছে মূর্তি হয়ে
যে মূর্তি প্রতি রাতেই জমা পড়ে রাজকোষে
সকালে আবার চুরিও হয়
আবারো রাত্রি ভালবেসে
তাকেই চুমু খাই পরম মমতায়
সেই মানুষটা এখন কেবলই দিবানিশি কাব্য।
১
বসে আছি বারান্দায়, একা।
এ এমন শহর
আকাশ দেখা যায়না
অথচ খসে পরা তারার
পোড়াগন্ধ টের পাই হৃদয়ে
আমি আরো একা হয়ে যাই।
২
কারা যেন কোন পাহাড়ে থাকে
অবিন্যস্ত কথাবার্তা আর
কমিউনিকেশনের নতুন ভাষায়
তারা যেন মিথ্যাকে সত্যিতে সাজায়।
কায়দা করে চলো পাথর হই
মানুষ জীবন আর ভালো লাগছে না।
বশীকরন মন্ত্র শিখেছিলে
সমর্পন জানোনি
অধঃপাতে যেতে যেতে
নিজেকে নিয়ে গেছো শেষপ্রান্তে
ভয়াবহ দাবদাহে পুড়ে গিয়ে দেখি
তুমি ক্ষমার অযোগ্য।
আজ কোন অনুতাপ নেই
নেই আক্ষেপ আর
হে পুরুষ, বহুবার মৃত্যু নেব
তবু তোমাকে নেবনা।
আজ তোমাকে সাগর দেখাতে নিয়ে যাব
বাড়ীর পাশে যেমন দেখছ তেমন নয় মোটেও
সিগারেটে আচমকা হাত লেগে যাওয়া অনুভুতির মত
তোমার চোখেও ভয় জাগবে
এ জন্যেই গুরুজনেরা বলেন, সাগর দেখে খুশি হবার কিছু নেই
ও তো এক লহমায় উড়িয়ে নেবেই সব
কেবল ডুববে তুমি—
না হয় চলো তোমাকে পাখির পালকে লুকানো পোকা দেখাই
একটু একটু করে কেমন কেটে দেয় শক্ত মায়া
তুমি যেমনটা ভাবো, এ কিন্তু তেমন নয় মোটেও
যে কোন পোকাতেই রেশম হয় না
রঙের ঝিলিক দেখতে চাইলে কূল ছাপানো বন্যা দেখাই ভাল
কীটের যোগ্য শাস্তি কীটকুলেই আছে
তুমি পাখির পালকে লেপ্টে থেকে দুঃখ ভুলে যাও।
চাইলে তোমাকে দেখাতে পারি আকাশের শূন্যতা
রঙধনুর বিবর্ন আলো আর বুনো মহিষের মাতাল দৌরাত্ম্য
কিছুই দেখানো হয় না—সব ভুলে তুমি যাও সাগরের দিকে
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি লোনা ফেনায় গলে যাওয়া ঐ শূন্য অবয়ব।
প্রবাহিনী
দুঃখ বুঝিনা যা জমাট।
রাত্রিকোলে শিখণ্ডি নাচ প্রথম পেখম মেলে
মেঘলা দিনের রোদ-আঁচলে
তুমিই প্রথম নারী
অথবা হাজার জনের ভেতর একলা ছবি।
নদীও এমন আছে গভীরতা জানা যায়নি
যে নারী বয়ে যায় আমি তার সর্বশেষ প্রেমিক।
_____________________________
অসুখ
আমি মৌয়ালি- আমি চাক ভাংবো,
তোমার ভূগোল থেকে পৌঁছে যাব আমি,
পৌঁছে যাব অন্য কোথাও
জেগে ওঠো প্রেম
আসো গন্ধম বৃক্ষের নিচে সংসার পাতি।
এই দেহ ভর্তি অশ্রুপাত
ভীষন ভীমের তান্ডব, প্রচন্ড অত্যাচার।
অন্ধকার তুমি চোখ খুবলে খাও
পরিনত মানুষের মত খামচে ধরো জিহবা
লালন করি তবু পানিপথের যুদ্ধ,
হেরে যাব জেনেও জেগে উঠবার বাসনা।
বিপুল পিপাসা তবু জমাই এখানে
অন্ধ চোখের জল গলে নেমে যায়
নিষিদ্ধ বিষাদ আর গীতিকবিতার হলদে জামা।
জোৎস্না নিতে জানেনা কোনো ব্যথা
অদ্ভুত এক আলোমায়া তবু
বিছিয়ে রাখা জাল তার
চাপ চাপ অন্ধকারে
জমায় রহস্যকথা ঘণ
এইখানে আকাশের নীচে
মাটির উপরে
ক্ষমতাহীন মানুষ এক
চাঁদের আলোয় আর নিজের ছায়ায়
কি যেন এক আকুলতায়
খুঁজে ফেরে কিছু
চন্দ্রমা আলো ছেড়ে আরো
আরো দূর অন্ধকারে…..
মা-কে নিয়ে অত বাহুল্য নেই আমার
মা তো মা-ই
সাদা শাড়ী আর অল্প ঘোমটা টানা
সাদা সাদা হাতে হলুদের দাগ
শরীরটা মসলাগন্ধ
সদ্য জন্মানো মেয়ের গায়ে মায়ের বাস
মা আর এমন কি?
মা তো মা-ই।
মা-কে মনে পড়ে
মা’কে ভীষন মনে পড়ে যায়
বাজার থেকে খোলসে মাছ এলে
কিংবা ঈদের সকালে
লাজুক হাসিতে নতুন কাপড়ে
আটপৌরে মা কেমন একদিনের রানী!
অথচ প্রতিদিনের মা
ঘরোয়া মা—সাধারণ, অতি সাধারণ
অনাড়ম্বর মা, প্রয়োজনের সিকি আধুলি
মা তো মা-ই।
মা-কে মনে পড়ে, আবার পড়েও না
নিজের প্রয়োজন ছাড়া খুব তো চিনিনি তাকে
সার্টিফিকেট পরীক্ষার রাতগুলোতে
জেগে থাকা মা
এখনো কেন তেমনি জেগে থাকে?
বোঝে না কেন কতটা অচেনা সে?
না খেয়ে খাবার এগিয়ে দেয়া মা
নিজের অস্তিত্ব বিলীন করা মা
গোপনে নিজের মনকে লুকিয়ে রাখা মা
মা তো মা-ই।
মা-টা বোকা ভারী
প্রতিদান না পেয়েও ভালবাসে
অকারন শংকায় কাঁদে, আমি হাসলে হাসে
তবু আজ মা’কে দেখিনা
শুধু আকাশ বাতাস ঘিরে থাকে যে মুখ
যার নিঃশ্বাসে মিশে আছি
অতি সাধারন কেউ
সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে করে বসবাস
আলাদা করে ভাববার নেই প্রয়োজন
মা তো আসলে মা-ই
এর কমও নয়, বেশীও না
মা মা-ই।
সবিনয় নিবেদন
একা করে দাও,
আমাকে ভাববার সময় দিও না
সুযোগ পেলে আমি কামড় দেব
আমি কাঁধে চেপে বসব
তুমি নিজেকে বাঁচাও
আমাকে একা করে দিয়ে যাও।
পায়ের নীচে দ্যাখো কত্তো পাথর
আমার টালমাটাল, দিশেহারা অবস্থান
তুমি সুখি হও দেখে,
সুখি হও ভেবে যে আমি ভাল নেই
আমাকে দয়া করো না
ছুঁড়ে ফেলে দাও দূরে।
তোমায় কষ্ট দিয়েছিলাম
তুমি ছিঁড়ে গিয়েছিলে কাগজ হয়ে
আবার জোড়া দিতে গিয়ে
বুঝেছিলাম, কষ্ট কত কষ্টের
সাহসী হয়ে একা করে দিলে
তবে আর ফিরে তাকিয়ো না।
আমাকে আবার একা করে দাও
এতটাই একা—
যেন তোমায় আরো বেশি করে ভাবি,
আরো ভালবাসি
আমায় দয়া ক’রো না
শুধু একা করে দাও, একা।
________________________
আখ্যান
মধুর সে ভ্রমণকালে তুমি কোথায় ছিলে?
এ তবে অন্তর্গত সেই ভাষা
কিছু তথ্য, কিছু অনৈতিক আদান-প্রদান।
মঞ্জুর করো প্রেম….
শালীন যত ভঙ্গী কামনায় পাল্টে দেয়া যায়
ইজি গোয়িং বলে চীৎকার না হয় করলে
বদলানো যাবে না নেশার কোকেন।
মঞ্জুর করো বাসনা….
তোমার চোখ থেকে লাফিয়ে নামা
হলদে বাঘের শীৎকারে
লোভের কথাই লেখা হয়ে গেল মনে
না-মঞ্জুর করে দিলাম নিজের তৃপ্তি।
কি যেন ছিল কথা
কি যেন আছিল ব্যথা
কতিপয় রোদ্দুর, কতিপয় মেঘ
মেলে দিলে চিরল পাতার চুল
বেণি যায় খুলে তিনভাগে
কি যেন তাকে হয়নি বলা।
ভরা মরশুমে,
যৌবনবতী শরীরের পাশে—ও নদী,
এক চিলতে রেখো গো পথ
সেই প্রিয়জন সাঁতার জানেনা
কতবার আকণ্ঠ ডুবেছে
নিমজ্জিত শ্যাওলা তুলে তুলে ক্লান্ত।
প্রাণে যত ছিল কথা
বলে যেতে পারতো সে’ও
কষ্টের দিবানিশি হয়েছে মহাকাব্য
ঢেউ-চূর্ণী’র জোরালো পাকে শুধুই হাবুডুবু
কি যেন বলতে পারতো, কি যেন রইল অজানা
ব্যাথার ক্ষণে অভিমানি যেন তাই পাশে থাকলো না।