“মানুষের পশু বৃত্তিকে ধ্বংস করে নান্দনিক সৌকর্যকে ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই। সংস্কৃতি সংস্কারের বাহন, সংস্কৃতি হলো আদর্শ জাতি গঠনে অপরিহার্য উপাদান”
সংগৃহীত।
আধুনিক তুরস্কের জনক, তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক পাশা’র রাজনৈতিক দর্শনকে আমরা ধর্তব্যে নিতে পারি। কামাল পাশা তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে কাজে লাগাতে গিয়ে শক্ত হাতে মৌলবাদকে দমন করে তুরস্ককে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজ আধুনিক তুরস্ককে সকলে চেনে সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসেবে।
আমাদের উচিত সংস্কৃতিগত পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া। অন্যথায় জাতিগত বিভাজন, ধর্মীয় উগ্রতা থেকে মুক্তি অসম্ভব। কেননা একমাত্র সুশিক্ষা এবং সংস্কৃতিগত শিক্ষায় প্রকৃত শিক্ষা। এই যে আমরা বারবার সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান দেখছি, এই সমস্যার একমাত্র পথ্য বা ঔষধ হলো প্রত্যেক ইউনিয়ন, উপজেলায় একটি করে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার গড়ে তোলা। এবং অনান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহকে পেট্রোনাইজ করে একটি সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ সমাজ তথা সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়া।
ছায়ানট, উদীচী, খেলাঘর বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অপরাপর সংগঠনগুলোকে কাজ করার যৌথ পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। এবং যতোটুকু সম্ভব ধর্মীয় প্রভাব বলয় থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা। বর্তমান আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপক যারা তাদের এই বিষয়ে এখনই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে এর ফল আমরা অতীতে যেমন ভোগ করেছি, এখনো করছি, হয়তো অদূর ভবিষ্যতেও বড় ধরণের মাশুল দিতে হবে। যেকোনো ধর্মীয়
মৌলবাদ একটি জাতির সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথ চলার অন্তরায়।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হাঙ্গামা গুলো মূলত অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও আলস্য পূর্ণ এবং রাষ্ট্রীয় বাঁধাহীন, অবাধ নিয়ম নীতিহীন ব্যবস্থার কারণে সংগঠিত হয়। রাষ্ট্র একক কোনো ধর্মকে উৎসাহ বা প্রমোট করবে না। যদিও করে তাহলে সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা, তবে আমার মতে কোনো ধর্মকেই রাষ্ট্র কোনো প্রভাব বিস্তার করতে দিবে না। এই প্রসঙ্গে বলা যায়,
“ধর্ম থাকুক অন্তরে মুসলমান নামাজ পড়ুক,
হিন্দু যাক মন্দিরে”
কেননা বাংলাদেশ একটি ধর্মণিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র। এই দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে অসংখ্য,অগণিত প্রাণ। তাঁরা কোনো ধর্ম পরিচয়কে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান, আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতপাত ভুলে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে সর্বস্তরের আপামর জনগণ এই দেশমাতৃকার টানে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। অতএব এই দেশ সবার। এই দেশ কোন মুসলিম বা হিন্দুর দেশ নয়। এই দেশ কোন ধনিক শ্রেনীর রাজা-বাদশার নয়। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক।
এ ছাড়াও আরেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। প্রত্যেক স্কুলে বাধ্যতামূলক নৈতিক শিক্ষা ও প্রগতিশীলতার চর্চা করানো। বড় বড় মনীষী যেমন প্লেটো, রুশো, সক্রেটিস, লালন সাঁই,রাধারমণ, হাছন রাজা, গৌতম বুদ্ধ,রাজা রামমোহন রায়, বেগম রোকেয়া, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, কামাল আতাতুর্ক বা কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিত্বের জীবনী সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া। মহান মানুষের বাণী সম্বলিত বুকলেট তৈরি করে ক্লাস ওয়ান থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা। বা এই মনীষীদের জীবনী পড়ানো যেতে পারে।
আর এসএসসি /এইচএসসি শেষে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে সেনাবাহিনীর অধীনে নিয়ে ৩ মাসের কমান্ডো ট্রেনিং করানো। এতে একদিকে যেমন সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ এবং মানসিকভাবে দায়িত্ববোধ আপনি থেকে জেগে উঠবে। অন্যদিকে ভূমিকম্প,জলোচ্ছ্বাসসহ রাষ্ট্রের যেকোনো দূর্যোগ বা দুর্বিপাকে ও জরুরী প্রয়োজনে যেন তারা দেশ,সমাজ তথা আর্ত মানবতার কাজে আসে সেভাবে তৈরী করা। না হলে ধীরে ধীরে আমরা এই বনসাই মৌলবাদীদের মতো অজস্র অন্ধকারের জীব পাবো।যারা সমাজে উগ্রতাকে উস্কে দেয়, অন্ধত্ব কে আঁকড়ে ধরে, গোঁড়ামিকে শ্রেয় মনে করে আমাদেরকে নিয়ে যাবে সেই আরব্য অন্ধকার যুগের আইয়েমে জাহিলিয়াত যুগের সন্নিকটে।
তাই সংস্কৃতির উন্নয়নের বিকল্প নেই। সমাজবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স ওয়েবার বলেছিল
“মানুষ যা তাই তার সংস্কৃতি”
আমরা এমন মানুষ দেখতে চাই,এমন সমাজ চাই যারা সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ছড়াবে না, নিজেরা হিংস্র হয়ে নিজেদের জ্ঞাতি ভাইদের উপর হামলে পড়বে না। জ্ঞান,মেধা ও মননে হবে মনুষ্যত্বের প্রতীক।গৌরব থাকলেও অহংবোধে ভুগবে না জৌলুস থাকলেও প্রচার করবে না।
পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মানুষ কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে উক্ত লেখাটির সমাপ্তি আনতে চাই।
“মূর্খরা সব শোনো, মানুষ এনেছে ধর্ম,
ধর্ম আনেনি মানুষ কোনো ”
এইচ আই হামজা
সাংগঠনিক সম্পাদক
কলাবাগান থানা ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।
loading...
loading...
অত্র আলোচনাটি যথার্থ এবং দিক্ নির্দেশনা সহ পরামর্শ গুলোন নিশ্চিত পালনের দাবী রাখতে পারে বলে মনে করি।
শুভেচ্ছা সহ ধন্যবাদ জানবেন।
loading...
ভাল থাকুন প্রিয় দাদা ভাই আমার। আপনার অনুপ্রেরনামুলক মন্তব্য আমাকে প্রাণিত করে।
loading...
loading...