বহুব্রীহি নাটকে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন ‘ভালোবাসা হচ্ছে শরমের ব্যাপার’! আমার কাছে ব্যাপারটা শরম ছাপিয়ে আরো জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।
আমাদের পাড়ায় ভাড়াটিয়া হিসেবে আকমল হুজুর এসেছেন। অভিভাবকেরা ঠিক করেছেন তাঁর কাছে আমরা আরবি পড়ব। পাড়ার নাবালক শিশু কিশোর নিয়মিত পড়তে শুরু করলাম। হুজুর তার বৈঠকখানায় আমাদের পড়ান। আমি যেখানে বসি তার উল্টা দিকে হুজুরের শোবার ঘর। হুজুর দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসেন। আরবি খুব আদবের সাথে পড়তে হয়। ভুল পাঠে কঠিন গুনাহ। প্রতিদিন মনোযোগের সাথেই পড়ি ভুল যাতে না হতে পারে। কিন্তু শয়তান তার ওয়াসওয়াসা নিয়ে সর্বত্র হাজির থাকে। কুরআনের মাহফিলও বাদ পড়ে না।
একদিন গভীর মনোযোগে তালিম নিচ্ছি হঠাৎ কিভাবে যেন শয়তানের ধোকায় হুজুরের শোবার ঘরে চোখ চলে গেল। দরজায় এক কিশোরীর মুখ দেখে চমকে উঠলাম। শ্যামলা রঙ; চোখ দুটো যেন চকিত হরিণী। আরবি গেল গোল্লায় । হরিণ চোখ হৃদয় তোলপাড় করে দিল। বয়স সবেমাত্র টিন-এজ এ পৌঁছাচ্ছে। এই বয়স যে ভীষণ খতরনাক হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। সেদিন পড়া হল না; হুজুরের শোবার ঘরে কিশোরীর মুখ দর্শন হলো।
পরের দিন আমার নির্ধারিত জায়গায় অন্যজনকে বসা দেখলাম, হুজুর তখনো এসে পৌঁছাননি। তাকে জায়গা থেকে উঠে অন্য কোথাও বসতে বললাম সে রাজি না। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়েও যখন রাজি করানো যাচ্ছে না তখন ঝগড়া বাধার উপক্রম। জায়গা নিয়ে হুজুরের সামনে ঝগড়া করা যাবে না বিধায় তাকে ঘুষ অফার করা হলো। টিফিনের জন্য বরাদ্দ টাকা আগামী একমাস তাকে দিয়ে দিব এই শর্তে সে স্থান ছাড়তে রাজি হল।
যে গভীর মনোযোগ নিয়ে তালিম শুরু করেছিলাম সে মনোযোগ আর রক্ষা করা গেল না। কারণ মন এবং চোখ বারবার শোবার ঘরের দরজায় উঁকি মারে। কয়েকবার সেই কিশোরীর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। অপর তরফেও যে আগ্রহ আছে বেশ বুঝতে পারলাম। হুজুর আমার অমনোযোগিতা লক্ষ্য করলেন। আরবি পাঠে মন না দিয়ে তার শোবার ঘরের দরজায় বার বার তাকাচ্ছি বুঝতে পারলেন।
কিশোরীটি হয়তো হুজুরের মেয়ে। হুজুরের মেয়ে হলেও তাকে পর্দা করতে দেখা গেল না। হয়তো ঘরে পর্দা করার নিয়ম নেই। আমি পর্দা বেপর্দা নিয়ে ভাবিত হলাম না। চোখাচোখির পরে কিভাবে এগোনো চিন্তা করতে লাগলাম।
পরের দিন আরবি পড়তে গিয়ে পুরোপুরি দমে গেলাম। বৈঠকখানা এবং শোবার ঘরের দরজায় নতুন পর্দা লাগানো হয়েছে। বুঝা গেল আমার আর কিশোরীর মাঝে কিছু একটা হচ্ছে বুঝতে পেরে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা। এত সাবধানতার পরেও চোখ পর্দা মানল না। আমি পর্দায় চোখ রাখি আর পর্দা সরিয়ে কিশোরী।
চোখাচোখির দ্বিতীয় পর্বে চিঠি চালাচালি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম। আর জানা গেল কিশোরী আসলে হুজুরের তৃতীয় তরফ। হুজুরনীর সাথে ভালবাসাবাসির শাস্তি হিসেবে বড় ভাই আমাকে একশবার কান ধরে উঠবস করালেন।
আমার কাছে ভালবাসা মানে কান ধরে একশবার উঠবস করা…
loading...
loading...
আমার কাছে ভালবাসা মানে কান ধরে একশবার উঠবস করা…
loading...