“আজ বন্ধু দিবস। এখন পর্যন্ত এক জন বন্ধুকেও শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি। কারণ আজ কাজে চলে এসেছি সকাল ৯টায়।
ওয়ালমার্টে কাজের ফ্লোরে থাকলে ফোন ব্যবহার করার নিয়ম নেই। প্রায় কেউই এই নিয়ম মানে না, কিন্তু আমি নিয়ম মানি। আমি আইনকানুন মেনে চলা সভ্য নাগরিক। ওয়ালমার্টের আইন মেনে চলি তাই এখন পর্যন্ত ফেসবুকে ঢুকতে পারিনি, কাউকে হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে উইশও করতে পারিনি। আমি ওয়ালমার্টের ইলেকট্রনিক ডিপার্টমেন্টেই বেশী সময় থাকি, মানে থাকতে হয়। কারণ ফোন, ফটোল্যাব, ইলেকট্রনিকস, ফেব্রিকস, টয়স ডিপার্টমেন্টগুলো গায়ে গায়ে লাগানো এবং সকল কাজের কাজী আমি।
ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্টে ডিসপ্লে আইলের ওয়ালে বিশাল সাইজের অনেকগুলো টিভি চালু থাকে। টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের প্রমোশনাল প্রোগ্রাম দেখায়। তার মধ্যে ট্র্যাভেল চ্যানেল অন্যতম। যখন ট্র্যাভেল চ্যানেল দেখায়, আমি কর্ম জগত ভুলে হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকি। পৃথিবীর কতো সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখায়, আমি দু’চোখ ভরে দেখি। যখন যে জায়গা দেখায়, কল্পনায় নিজেকে সেখানেই আবিষ্কার করি।
সেখানে আমি একা নই, পাশে থাকে ‘সে’। ‘সে’-কে পাশে নিয়ে মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করি পৃথিবীর সৌন্দর্য্য। ‘সে’ আমার নাম জানে, আমি ‘সে’-র নাম জানি না। সে দেখতে কেমন তাও জানি না। শুধু জানি, নির্জন নিরালায় যখন নিজেকে খুঁজে পাই, ঠিক তখন ‘সে’ এসে চুপটি করে আমার বাম পাশে বসে।
‘সে’-র সাথে আমার মনের খুব মিল। দুটিতে পাশাপাশি বসে পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ স্পর্শ অনুভব করি, প্রকৃতির সরবতার সাথে তাল মিলিয়ে আমি গুন গুন করি! যদিও আমি ‘সে’-কে দেখতে পাই না, তবে অনুভব করি ‘সে’ তন্ময় হয়ে আমার গান শোনে। আজও আমি আর ‘সে’ নৌকায় বসে ভেনিসের রূপ দেখছিলাম আর গুন গুন করছিলাম ” দূরে কোথায় দূরে দূরে, আমার মন যে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে”
হঠাৎ এক ক্যাঁচ ক্যাঁচ কণ্ঠে ‘এক্সকিউজ মি, আই নিড হেল্প’ শুনে সম্বিত ফিরে পাই!
তখনই আমার বাম পাশ থেকে ‘সে’ হারিয়ে যায়,
আমি ভেনিস থেকে সরাসরি ফিরে আসি কর্মজগতে।
এই কর্মজগত এখন আর ভালো লাগে না। এখানে শান্তিতে আমি আর ‘সে’ দুই দন্ড সময় কাটাতে পারি না! কতোবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চাকরিটা আজই ছেড়ে দেবো, মুক্ত বিহঙ্গের জীবন বেছে নেবো।
৩৫ বছরের বিবাহিত জীবনে ১৮ বছরের কর্মজীবন, বাকী ১৭ বছর স্বামী কন্যা আত্মীয় পরিজন নিয়ে কেটেছে। কোনো জীবনই খারাপ কাটেনি। চাকরি ছাড়া জীবনে পরিবারের সকলেই ছিলো আমার কাছাকাছি, শুধু ‘সে’ ছিলো না। ‘সে’ ভীড় পছন্দ করে না, কারণ ভীড়ের মাঝে সে আমার কাছে আসতে পারে না, ভীড় থেকে আমাকে আলাদা করতে পারে না। আমি নিজেও পরিবারের মাঝে থাকলে নিজেকে খুঁজি না, অথবা নিজেকে খুঁজে দেখার কথা মনেই পড়ে না! নিজেকে খুঁজলেই তাকে কাছে পেতাম। আসলে আমিও ভীড়ের মাঝে নিজেকে আলাদা করতে পারি না!
শুধু ‘সে’-র কথা ভেবে ভেবে চাকরিটা আর ছাড়া হয় না! অথচ চাকরিটা ছেড়ে দিলেই আবার পরিবারের মাঝে ফিরে আসবো, কাস্টমারের ক্যাঁচোর ম্যাচোরের মাঝে থাকতে হবে না। তবে চাকরি ছেড়ে দিলেই ‘সে’ কে হারিয়ে ফেলবো!
বুঝতে পারি না, আমি কাকে পাশে চাই!
কর্মব্যস্ত আত্মীয় পরিজন নাকি ওয়ালমার্টে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার অলস সময়ে টুপ করে হাজির হওয়া ‘সে’-কে!
শুভ বন্ধু দিবস ‘সে’! তুমি যতক্ষণ আমাকে খুঁজে নিবে, ততক্ষণ আমি তোমার থাকবো।
আজ তোমায় পাঠালাম জুঁই ফুলের সৌরভ। ”
‘ওয়ালমার্ট সুপারসেন্টার’ স্ক্রিপ্ট থেকে।
loading...
loading...
যাপিত জীবনের স্মৃতিকথন আপনার হাতে অসাধারণ হয়ে উঠে আসে।
loading...