ফুলকপি (বড়দের গল্প) /পর্ব-২

প্রায় তিন যুগ আগের কথা, “নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা/নতুন করে আজ শপথ নিলাম” গান আর “আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে” শ্লোগানে ক্ষমতাসীন এরশাদ ও তার অনুসারীরা দশদিক মুখরিত করে রেখেছে। এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এশীয় কবিতা উৎসব আয়োজিত হচ্ছে। একদল শক্তিমান কবি এরশাদকে ঘিরে রয়েছে। এরশাদও কবি, পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় তার কবিতা ছাপা হয়। আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তৃতীয় জাতীয় সংসদের আয়ু অকালে ফুরিয়ে এসেছে। তবে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রধান হিসেবে এরশাদ বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় রয়েছে। তার পকেটে ঢুকে পড়া জাসদ (সিরাজ), ফ্রিডম পার্টি আর গুরুত্বহীন বামপন্থীদলসহ কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের জোট সম্মিলিত বিরোধীদলকে সাথে নিয়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। যদিও সবাই জানে ভোট হোক বা না হোক ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টিই জিতবে।

অপরদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েও এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার স্মৃতি টাটকা থাকায় শেখ হাসিনা কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছেন। বিধবা গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়া জাতীয় নেত্রী হয়ে উঠেছেন। দুই নেত্রীর নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলন চলছে। যে সব্যসাচী লেখক এরশাদকে পল্লীবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, তিনিও পক্ষ বদল করেছেন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আর একুশে বইমেলার স্টল থেকে ভেসে আসে আলী যাকেরের উদাত্ত আবৃত্তি “জাগো বাহে, কোনঠে সবাই।” এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের কিছুই কৃষি কামলা বজলুকে স্পর্শ করে নাই। কার্তিকের মঙ্গায় একটানা সাত দিন কলাগাছের কান্ড সেদ্ধ খেয়ে আর সহ্য করতে পারে নাই। এক মুঠো ভাতের আশায় রংপুরের এক গ্রাম থেকে বজলু রাজধানীর পথে পা বাড়িয়েছিল। সাথে ছিলো বউ আর ওবায়দুলসহ চার সন্তান।

চিরদিনের জন্য গ্রাম ছাড়তে বজলুর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় নাই। পিছুটানের মায়া তাড়া করে নাই। তার কোনো কৃষি জমি ছিল না। নিজ হাতে বানানো একচালা খড়ের ঘরে বউ আর চার সন্তান নিয়ে থাকতো। ওই জমিও নিজের নয়। নিজের বলতে ছিল সীমাহীন অভাব, তীব্র ক্ষুধা আর একপাল গরীব আত্মীয় ও স্বজন। এসবের প্রতি কে’ই বা পিছুটান অনুভব করে! তীব্র ক্ষুধা আর যাত্রাপথে রংপুর শহরে লাগানো সোডিয়াম বাতির অদ্ভূত আলো দেখার বিস্ময় নিয়ে পরিবারসহ আরও অনেকের সাথে বজলুরা ঢাকা শহরে এসেছিল। শহরের রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছিল। সবচে বিস্মিত হয়েছিল তেল ছাড়া বাত্তি জ্বলা এই শহরে সারাদেশ থেকেই বহু গরীব এসেছে এবং আসছে দেখে।

রাজধানী ঢাকার চরিত্রে একটা নির্লিপ্ত আভিজাত্য বা অহঙ্কার রয়েছে। এ শহর গরীবদের সাড়ম্বরে স্বাগত জানায় না। দূর দূর করে তাড়িয়েও দেয় না। অনারোগ্য অসুখের মত মেনে নেয়। তিলে তিলে বুঝিয়ে দেয় তাদের দায়িত্ব শহরের করুণা ও দয়ায় নির্ভর করে বাঁচার চেষ্টা করা। চতুর্থ শ্রেণির নাগরিক হিসেবে সন্তুষ্ট থাকা। স্বাধীন রাষ্ট্রে সম্পদের সুষম বন্টনের দাবী তোলা নয়। কাজের খোঁজে চার পাঁচ দিন এলোমেলো ঘুরার সময়ে বজলু নিজের মত করে বিষয়টা বুঝে নিয়েছিল।

স্ব-পরিবার নিয়ে দশ/বারো দিন কমলাপুর রেলস্টেশনের মালগাড়ির প্ল্যাটফর্মে কাটানোর পর এক দেশী ভায়ের হাত ধরে বজলু পরিবারসহ কাওরান বাজার রেল বস্তিতে আশ্রয় পায়। পাঁচ হাত বাই ছয় হাত সাইজের একটামাত্র ঝুপড়ি ঘরে ছয়জন মানুষের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হয়। আরেক ভায়ের কল্যাণে বজলু একটা মজবুত বড় টুকরি কিনে কাওরান বাজারে কুলির দলে নাম লেখায়।

বড় ছেলে হাফিজুলের বয়স পনেরো বছর। মেজো ছেলে মফিজুল এক বছরের ছোট। তাদের ভাগ্য ভাল। কাওরান বাজারের এক হোটেলে চাকরী জুটিয়ে নিতে পারে। দায়িত্ব অতি সহজ – সারাদিন কল থেকে পানি টানা। প্লেট, বাটি, জগ ও হাড়িপাতিল ধোয়া। টেবিল পরিস্কার করা। হোটেল ঝাড়ু দেওয়া। সামান্য ভুলে মালিক, ম্যানেজার বা কাস্টমারের হাতে চড়-থাপ্পড় খাওয়া এবং বিনা প্রতিবাদে হজম করা। কার্লমার্ক্স পড়া নাই বলে ‘পেটে ভাতে’ বেতনপ্রথাও তাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। একটানা ষোল সতেরো ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে তারা দৈনিক দুই বেলা ভাত খেতে পাবে। কখনো লবণ, পেঁয়াজ আর ডাল দিয়ে ডলে খাবে। কখনো তরকারির ঝোলের সাথে এক আধ টুকরা আলু আর ভেঙে যাওয়া মাছের কাঁটা। কোনো কোনো দিন মিলে যাবে অমৃতের মত কাস্টমারের এঁটো ভাত। পরিমাণে বেশী হলে বাসায়ও নিয়ে যেতে পারবে। ভাতের জন্য যারা রাজধানীতে আসে, রাজধানী তাদের বিমুখ করে না।

ভোরের আলো ফোটার আগে বজলু ও দুই ছেলে কাজে চলে যায়। ময়মুনা আর ওবায়দুল ঘুমায়। বজলুর বউ সবিরা বসে থাকে। অস্ফুট স্বরে বিলাপ করে কাঁদে। তার মোটা ঠোঁট আর ভাঙা গ্রীবা তিরতির করে কাঁপে। বোঁচা নাকের পাটি ফুলে উঠে। সবিরার একটা মাত্র শাড়ি। আমপাতা রঙ জমিনে খয়েরি পাড়। টেনেটুনে আট হাত হবে। রং জ্বলে তার ত্বকের মত খসখসে কালচে হয়ে গেছে। সে ছেড়া আঁচলে চোখ মুছে, নাক মুছে। সবিরা নতুন শাড়ির জন্য কাঁদে না। আধা উদোম অবস্থায় শরীরের শাড়ি শরীরে শুকানোর দুর্ভাগ্যের প্রতি অভিসম্পাত করেও অশ্রু বিসর্জন করে না। তাকে কাঁদায় ছেড়ে আসা মহিষমুড়ি গ্রাম- নিজের গ্রামে ফেরার আকুতি এবং ‘আর কোনোদিনও ফেরা হবে না’র মত নির্মম সত্য মিলেমিশে তাকে কাঁদায়। কান্নার বেগ থিতিয়ে এলে প্রত্যেকদিন ঝুপড়ি ঘর কাঁপিয়ে হুইসেল দিতে দিতে একটা যাত্রীবোঝাই ট্রেন খুব ধীর গতিতে কমলাপুর স্টেশনের দিকে যায়।

বেলা বাড়ে। রোদ উঠে। সবিরা পানি আনতে যায়। বস্তির কলপাড়ায় ঝগড়া করে পানির অধিকার আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠে নাই। প্রতিদিন কেউ না কেউ দয়া করে কলসিতে পানি ভড়ার জন্য তাকে কল ছেড়ে দেয়। সে পানি নিয়ে ঘরে ফিরে। ফিরার পথে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে না। মহিষমুড়ি নয়, দীর্ঘশ্বাসের কারণ আসন্ন বাস্তবতা। অভাবী সংসারে ভাঙনের শুরুটা এত মোলায়েমভাবে হয় যে সবার পক্ষে আঁচ করা সম্ভব হয় না। তবে মেয়েরা বুঝতে পারে। সংসারে ভাঙনের বীজ বুনা হয়ে গেছে। বুঝতে পারলেও দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া সবিরার করার কিছু নাই। সে দীর্ঘশ্বাসই ফেলে যায়। সে বুঝতে পারছে সংসারের সবাই একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। একই শহরে থাকলেও তারা পরস্পরের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। কে কোথায় থাকবে কে জানে! ফিরে ঘরে ময়মুনা আর ওবায়দুলকে দেখতে পায় না। খুঁজেও না। স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে। সে বাজার নিয়ে ফিরলে পেটের আগুন নিভাতে চুলার আগুন জ্বালাবে।

বজলুর একমাত্র মেয়ে ময়মুনার বয়স বারো হলেও অপুষ্টির কারণে তাকে দশ বছর বয়সী ওবায়দুলের থেকেও ছোট মনে হয়। ময়মুনাও সম্ভবত ওবায়দুলের ছোট হয়েই থাকতে চায়। ওবায়দুলের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়ায় যেনো ওবায়দুল ওর মুরুব্বী। বস্তির অন্য কিশোর-কিশোরীদের মত তাদের জীবনেও সকালের নাস্তা নামক কোনো বস্তুর উপস্থিতি নাই। মা পানি আনতে গেলে ভাইবোন মিলে বেরিয়ে পড়ে। নাস্তার আবশ্যিকতা তাদের আটকে রাখতে পারে না। পেট ভরা ক্ষুধা এবং মন ভরা আনন্দ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। খুব বেশী দূরে তারা যায় না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে তারা রেলবস্তি হতে সামান্য দূরের অদ্ভুত জগত দেখে। তারা ওই জগত দেখে হাসে। ওই জগতের মানুষের মুখের ভাষা শুনে হাসে। তাদের কাজ কারবার দেখে হাসে। পোশাক দেখে হাসে। স্কুলে যাওয়া হাফপ্যান্ট আর স্কার্ট পড়া সমবয়সী শিশুদের দেখে বিস্মিত হয় এবং হাসে। ক্ষুধার জ্বালায় যে তারা ত্যাক্ত হয় না এমন নয়। ত্যাক্ত হলেও খাওয়া মিলবে না এই চরম সত্য জেনে যাওয়ায় ত্যাক্ত হয়েও হাসে।

কিছুদিন পর বস্তিতে নির্বাচনের ক্যাম্প বসে। ক্যাম্পে সারাদিন গান বাজে “নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা/নতুন করে আজ শপথ নিলাম।” গানের অর্থ না বুঝলেও বস্তিবাসীর এই গান মুখস্থ হয়ে যায়। এই গানের প্রতি বজলু বিশেষ ধরণের মায়া অনুভব করে। সে শুনেছে এই গানটা প্রেসিডেন্ট এরশাদ লিখেছে। প্রেসিডেন্ট মানে দেশের রাজা। বজলু গুনগুনিয়ে গানটা গায়, বেশ গর্বের সাথে বলে, “আজা হামার অমপুরের ছাওয়াল, বাহে। আজায় গান ন্যাকছে..।” তার এই গর্ব অন্যরা উপভোগ করলেও নিজের ঘরে বলে শান্তি পায় না। সবিরা মুখ ঝামটা দিয়ে গজগজ করে, “হাগার থাকি ঢ্যাড়ঢ্যাড়ি বেশী। পাচাত নাই ত্যানা, ভাসুরে বাজায়ই ব্যানা। পুঁটকিত নাই চাম, আদা কৃষ্ণ নাম।”

নির্বাচনী ক্যাম্পের আশপাশে ওবায়দুল আর মায়মুনা ঘুরঘুর করে। রোজ মিছিল হয়। মিছিলের সাথে গেলে ওবায়দুল এক টাকা পায়। মায়মুনা কোনো টাকা পায় না। উপার্জিত টাকায় কখনো মোয়া কখনো আচার কিনে সমান ভাগ করে খায়। এক একদিন মায়ের জন্যও নিয়ে যায়। নির্বাচন শেষ হয়ে যায়। আবার সব আগের মত। পাঁচ মাস পরে শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা। বন্যার প্রথম দিকে কাওরান বাজারের রেল বস্তিতে পানি না উঠলেও বজলুর পরিবারে শোক নেমে আসে। ডায়রিয়া আক্রান্ত ময়মুনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় সকাল থেকে পড়েছিল। নিস্তেজ হতে হতে সন্ধ্যায় মারা যায়। ময়মুনা সারাদিনে কোনো চিকিৎসা না পেলেও তড়িত গতিতে ডেথ সার্টিফিকেট পেয়েছিল। মায়মুনা কখনো ওবায়দুলের থেকে বড় হতে চায়নি, এখন সে সকল চাওয়া ও না চাওয়ার বৃত্তের বাইরে চলে গেছে।

ময়মুনার মৃত্যু ওবায়দুলকে একা করে দেয়। বাবা আর বড় দুই ভাই প্রতিদিন আগের মত কাজে চলে যায়। ফার্মগেটের দুই মেসে মা রান্নার কাজ করে। পরিবারে একমাত্র বেকার ওবায়দুল। মন চাইলে ঘরে শুয়ে থাকে। মন চাইলে এলোমেলো ঘুরে বেড়ায়। তাকে কেউ কাজের কথা বলে না। শহরে মিছিল হয়। মাঝে মাঝে হরতাল হয়। হরতালের দিন ওবায়দুল হাঁটতে হাঁটতে কাওরান বাজার বা তেজগাঁও মোড়ে যায়। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে ভালো লাগে। আরও পরে, নব্বই সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে দু’বার ককটেল ফুটিয়েছিল। নেতা নগদ দশ টাকা করে মজুরী দিয়েছিল। বয়স কম বলেই হয় তো দশ টাকা উপার্জনের আনন্দ ওবায়দুলের কাছে বোন হারানোর শোক ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠে নাই। দু’টা পাঁচ টাকার নোট মুঠোয় পুড়ে ময়মুনার অভাব বোধ করছিল। খুব কান্না পাচ্ছিলো, বুক চুরমার করা অবর্ননীয় কষ্টের কান্না।

ফার্মগেটের মেসে মা’র বেশী দিন কাজ করা হয় নাই। একদিন কাজ থেকে ফিরে খুব গোমড়া হয়ে রইলেন। তিন চারবার গোছল করলেন। পরদিন ভোর হবার আগে বাবা আর বড় দুই ভাই কাজে চলে গেলে ওবায়দুলকে ধরে অনেকক্ষণ শুয়ে রইলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওবায়দুলের ঘুম গাঢ় হয়ে এলো। প্রতিদিনের মত পানি আনতে গেলেন। কিন্তু ফিরলেন না। তুমুল চেঁচামেচিতে ওবায়দুলের ঘুম ভাঙলো। জেগে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। একজন তাকে জোড় করে টানতে টানতে এনে ঠেলে রেল লাইন ঘিরে থাকা জটলার ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো। সে দেখলো ট্রেনের চাকায় পিষ্ট একটা নারী শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। কেউ তাকে বলে নাই, তবু সে বুঝতে পারলো এটা মায়ের শরীর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্ত, মাংস, চর্বি, হাড় আর ঘিলু দেখে মায়ের জন্য কান্নার পরিবর্তে তার বমি পেলো। মায়ের আত্মহত্যার পর কিছু ঘটনা খুব দ্রুত ঘটলো – বাবা আবার বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেল। দুই ভাই কাওরান বাজারের রেল বস্তির ঘর ছেড়ে আগাওগাঁও বিএনপি বস্তিতে চলে গেল। বিশাল এই দুনিয়ায় ওবায়দুলের আর কেউ রইলো না, সে একা হয়ে গেলো।

কাওরান বাজারে ওবায়দুল বহুবার ঢুকেছে। বারো বছর বয়সে প্রথমবারের মত ঢুকলো কাজের সন্ধানে। মুরগি পট্টির গন্ধ সহ্য করতে না পারলেও কিছু দিন মুরগি জবাই ও নাড়িভুড়ি পরিস্কারের কাজ করলো। এরপর সবজীর ব্যবসা বেছে নিলো। পোকায় ধরা ও পঁচা সবজি টুকিয়ে ও কিনে , পঁচা অংশ কেটে বাদ দিয়ে ভালো অংশটা ছালায় সাজিয়ে বিক্রি করতো। তিন দশক পরে এসে একই বাজারে তার দুইটা পাইকারী আলু বিক্রির দোকান। মাঝে কেটে গেছে প্রায় বত্রিশ বছর।

তিন দশকে ওবায়দুল নিজেকে, নিজের পরিবার আর ঢাকা শহরকে বদলে যেতে দেখেছে। কাওরান বাজরও পরিবর্তনের বাইরে থাকে নাই। নাম বদলে হয়েছে কারওয়ান বাজার। ওবায়দুলের চোখে এই পয়ত্রিশ বছরে কারওয়ান বাজারে জিনিসপত্রের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সাংবাদিকের সংখ্যা। এদের অনেকে এক কেজি আলু বা এক’শ গ্রাম কাঁচামরিচও পাইকারি দরে কিনার জন্য তোলপাড় করে। ফকিরাপুল হতে প্রকাশিত আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার সবুজ ভাই এমনই এক সাংবাদিক এবং ওবায়দুল তার কাছে হাতে-নাতে ধরা খেয়েছে। ঘটনার নায়ক বা খলনায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যান্টিনের ম্যানেজার জাফর নিরাপদে থাকলেও ওবায়দুলের দুঃসহ সময় কাটছে।

(চলবে)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ফুলকপি (বড়দের গল্প) /পর্ব-২, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৩-০১-২০২৩ | ১৭:১৭ |

    যাপিত জীবনের খুবই চেনা এই সমাজের একটি অনন্য অণুগল্পের চিত্রায়ণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...