এফ ওয়ার্ড চ বর্গীও

(১৮+)
রেস্টুরেন্টে যারা খেতে আসে, তারা নানান কথাই বলে কিন্তু একটা শব্দ বারবার রিপিট করে। সেটা এফ ওয়ার্ড; F*ck। কখনো এই শব্দের সাথে ing লাগায়। আমি নতুন দেশ থেকে এসেছি, ইংরেজি জ্ঞান শূন্য বললেই চলে। ইয়েস নো ভেরি গুড পর্যন্ত আমার দৌড় এর বেশি কিছু হলে বুঝতে পারিনা।

দেশ থেকে আসার সময় ইংরেজি টু বাংলা একটা ডিকশনারি নিয়ে এসেছিলাম, প্রয়োজনে কাজে লাগবে ভেবে। কিন্তু ব্রিটিশদের ইংরেজির মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারি না। এরা যেন পরিষ্কার কোন শব্দ উচ্চারণ করে না, চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে। ডিকশনারি কোন কাজে লাগে না। কিন্তু F*ck শব্দ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। ডিকশনারি উল্টিয়ে এই শব্দের অর্থ খুঁজতে থাকি কিন্তু খুঁজে পাই না। তখন google জমানো ছিল না, চাইলেই দুনিয়ার যাবতীয় জ্ঞান হাতের মুঠোয় চলে আসতো না।

রেস্টুরেন্টের খরিদ্দারদের মধ্যে এই শব্দ এত জনপ্রিয় কেন ভাবতে থাকি। প্রতিটি বাক্যে বারবার ঘুরেফিরে এই শব্দই কেন আসে ভাবতে ভাবতেও আমার বুঝে আসে না।

আমার সাথে কাজ করেন আমার চাচা এবং চাচার বয়সি আরেকজন। একবার ভাবি তাদের কাছ থেকে অর্থ জেনে নেই, কিন্তু কোথায় যেন দ্বিধা কাজ করে। সিক্সথ সেন্স বলতে কিছু যে আছে এটা হচ্ছে সেই প্রমাণ। যদি তাদেরকে এই শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করতাম তারা যেমন বিব্রত, লজ্জিত হতেন আমিও লজ্জায় মুখ তুলতে পারতাম না।

রেস্টুরেন্টের কিচেনে আমার বয়সী আরো দুজন কাজ করত। তাদের সাথে কিছু পরিমাণ বন্ধুত্ব হয়ে যায়, একদিন দ্বিধা ঝেড়ে তাদের কাছে এই শব্দের অর্থ জানতে চাই। আমার প্রশ্ন শুনে তারা হাসতে হাসতে শেষ কিন্তু উত্তর দিতে রাজি হয় না।

কিচেনে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক কাজ করতেন তার বয়স সত্তরের উপরে সবাই থাকে দাদু বলে ডাকে। ভদ্রলোক প্রায় পঞ্চাশের অধিক কাল ধরে ব্রিটেনে থাকেন, তার স্ত্রী পুত্র কন্যা সবাই সাদা চামড়ার। আমার বন্ধুরা বলল দাদুকে জিজ্ঞেস করতে।

দাদুও বন্ধু ভাবাপণ্য; সবার সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করেন। গুরুগম্ভীর নন বেশ হাসিখুশি ধরনের মানুষ। তাছাড়া তিনি প্রায় ব্রিটিশ, অর্থাৎ জন্ম বাংলাদেশে হলেও তাঁর বেড়ে উঠা এবং কর্ম সবকিছু ব্রিটেনে। তিনি যেভাবে ইংরেজি বলেন অনেক ইংলিশও সেভাবে বলতে পারে না। যদিও আমাদের সাথে আলাপে তার ইংরেজি দক্ষতার তেমন আভাস পাওয়া যায় না, আমাদের সাথে বাংলায় কথা বলেন।

মুরব্বি হলেও তিনি হাফ ইংরেজ, তাঁর সাথে হাসিঠাট্টার সম্পর্ক আছে; তাই ভাবলাম তাকে জিজ্ঞেস করে অর্থ জেনে নেওয়া যাক। একদিন দুপুরে কিচেনে চা খাচ্ছি দাদু কি একটা কাজে ব্যস্ত, বললাম ‘দাদু F*ck অর্থ কী’? দাদু যেন ভালো করে শুনতে পায় নি আমার দিকে চেয়ে বলল ‘কিসের অর্থ’! আমি বললাম ‘F*ck দাদু’ আমাদের কাস্টমাররা প্রায় এই শব্দ ব্যবহার করে, কিন্তু আমি এর অর্থ জানিনা’।

– দাদু আমাকে বলল তোমার তো বিয়ের বয়স হয়নি; বাজারে গেছ কোনদিন?
– যাব না কেন অনেকবার গেছি, যখনই চাল, ডাল, তেল নুনের প্রয়োজন পড়েছে, খরিদ করে এনেছি।
– আরে চাল ডালের বাজার না, মেয়েদের বাজার।
– মেয়েদের বাজার মানে?
– মেয়েদের বাজার চেন না, পতিতালয়ের নাম শুনোনি
– নাম শুনেছি, যাওয়া হয়নি কোনদিন।
– ওখানে পুরুষ কিসের জন্য যায়?

আমার বয়স সতেরো, সহপাঠিনীদের দিকেই ভাল করে তাকানো হয়নি, আর পতিতালয়ে যাওয়া! আমি কিচ্ছু বলছি না দেখে, দাদু আমাকে F*ck শব্দের চ-বর্গীয় অর্থ বলে দিল।

আমার যে সংস্কার তাতে উত্তর জেনে আমি আশ্চর্য হলাম। আমি যে দেশ থেকে এসেছি সেই দেশের সমাজে এই শব্দ উচ্চারণ করলে আপনি পতিত হতে বাধ্য, সমাজচ্যুত হতে বাধ্য। কিন্তু ব্রিটেনের নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই অহরহ এই শব্দ উচ্চারণ করে।

আমি দেখেছি স্যুট টাই পরিহিত ভদ্র জন যাকে আমরা বাবু কিংবা সাহেব হিসাবে অভিহিত করতে পারি বন্ধুদের সাথে আলাপে ক্রমাগত এই শব্দ ব্যবহার করে যাচ্ছে। আমি দেখেছি হিপ্পি তরুণ যার নাকে কানে ঠোঁটে অসংখ্য ছিদ্র সেও বান্ধবীর সাথে কথোপকথনে বারবার এই শব্দ উচ্চারণ করছে। আমি দেখেছি পরিবার নিয়ে খেতে এসেছে, সাথে ছোট ছোট বাচ্চা আছে কিন্তু স্ত্রীর সাথে কথা বলছে আর এই শব্দ উচ্চারণ করছে বাচ্চারাও শুনছে কিন্তু তারা নির্বিকার, যেন এটা একটা স্বাভাবিক উচ্চারণ যেন এই শব্দে দোষের কিছু নেই।

এই শব্দের অর্থ না জানলে হয়তো ভালো হতো, কারণ অর্থ জানার পর থেকে যেই আমার সামনে এই শব্দ উচ্চারণ করতো তার দিকে ঘৃণার চোখে তাকাতাম, কোন কোন সময় করুণার চোখে। এদের আমার খুব নিম্নস্তরের মানুষ মনে হত।

বলাবাহুল্য সময়ের সাথে সাথে আমিও এই শব্দে অভ্যস্ত হয়ে যাই অর্থাৎ প্রথম প্রথম এই শব্দ শুনে যেভাবে আশ্চর্য হতাম; যেভাবে নাক কুঁচকে আসতো এখন আর সেরকম প্রতিক্রিয়া হয় না। ব্রিটেনের সমাজে এই শব্দ খুবই সহজলভ্য…

জীবন মানুষকে প্রতিনিয়ত F*ck করছে, জীবনের অবিচারের প্রতিবাদে মানুষ মুখে শুধু উচ্চারণ করছে F*CK, এতে দোষের কিছু নেই…

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এফ ওয়ার্ড চ বর্গীও, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৩-০১-২০২৩ | ১০:০৭ |

    জীবনের গল্প। অণুগল্প … https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...