পর্ব – ৯
রাতে সত্যানন্দ নিজের পড়ার টেবিলে লেখালেখি করছেন। অশোক ঘুমোচ্ছে। পরিবারের সকলের রাতের খাওয়া হয়ে গেলেও মায়ের রান্নাঘরের কাজ শেষ হয়নি।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিলু গতরাতে মায়ের বলা বেহুলার গল্পটার কথা মনে করছে। চাঁদসওদাগরের মধুকর কালীদহে ডুবে যাওয়ার কথা – বেহুলার মৃত স্বামিকে নিয়ে কলার ভেলার করে ভেসে যাওয়া সেই গাঙ্গুর নদীর কথা – গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে স্বর্গে পৌঁছে দেবসভায় বেহুলার নৃত্যগীতের কথা – মনে করছে আর রোমাঞ্চিত হচ্ছে। কল্পনার চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছে চলমান চিত্রের মত সেই সব কাহিনী। দুই তীরের শস্যক্ষেত, সবুজ বনানী যেন সকরুণ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে উথাল পাথাল ঢেউকে উপেক্ষা করে স্বর্গের খোঁজে ভেসে যাচ্ছে বেহুলার ভেলা।
বেহুলার সাথে সাথে মিলুও যেন কলার ভেলায় ভেসে চলেছে গাঙ্গুরের জলে…
– মিলু, ঘুমিয়েছ ?
মায়ের কন্ঠস্বরে সম্বিত ফিরে পায় মিলু।
বলে – না। তুমি এলে ঘুমোব।
-তোমার ছেলেরা তোমাকে ছাড়া কিছু করতে পারে? হেসে বলেন সত্যানন্দ।
কুসুমকুমারীও হাসেন।
-সে তুমি একদম ঠিক বলেছো। কী আর করা যাবে বলো ?
বলে বিছানায় উঠতে যাচ্ছিলেন কুসুমকুমারী।
কুসুম! – সত্যানন্দ ডাকেন।
– বল। কুসুমকুমারী স্বামির কাছে এগিয়ে যান।
– বলছি, তোমার গল্পটা মনমোহনের খুব পছন্দ হয়েছে। এরকম পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে আরো কিছু গল্প লেখার কথাও বলেছে। পরে তোমার সেইসব গল্প নিয়ে একটা বই করবে নাকি ভাবছে।
– বাহবা। ঠাকুরজামাই দেখছি আমাকে নিয়েই পড়ে আছেন।
হাসেন কুসুমকুমারী।
– আমিও একটা প্রবন্ধ লিখলাম আগামি সংখ্যার ব্রহ্মবাদীর জন্য। তুমি একবার দেখে দিলেই ফ্রেস করে প্রেসে পাঠাব।
-তা আমাকে আবার দেখতে হবে কেন ?
-তুমি একবার না দেখে দিলে নিশ্চিন্ত হতে পারি নে।
মৃদু হেসে কুসুমকুমারী বলেন- আচ্ছা দেব।
মিলু খুব মন দিয়ে শুনছিল মা বাবার কথা। বাবা এত বিদ্বান হয়েও মায়ের প্রতি তার এই আস্থা দেখে অবাক হয়। সাথে সাথে গর্ববোধও হয় মায়ের জন্য।
– আর বলছি স্কুলে কাল থেকে নতুন ছাত্র ভর্তি শুরু হবে। আমি হেডস্যার জগদীশবাবুকে বলে রেখেছি। তুমি তোমার সময়মত ছেলেকে ভর্তি করে দিয়ে এসো।
– আমার আবার যেতে হবে কেন ? স্কুলে যাবার সময় তুমি নিয়ে গেলেই তো হয়।
– সে হয়। কিন্তু তোমার ছেলে কি মা ছাড়া যেতে চাইবে?
মজার ছলে হাসলেন সত্যানন্দ।
– আচ্ছা কালই তাহলে তোমার সাথে যাব।
কালই স্কুলে ভর্তি হবে – ভেবে মিলুর মনে যেন একটা ভিন্নতরো আনন্দ আর উত্তেজনা শিহরণ খেলে গেল।
কুসুমকুমারী বিছানায় গেলে মিলু বলে – মা, তাহলে তো কাল সকাল সকালই উঠতে হবে। তাই না?
– সে তুমি তো প্রতিদিনই সকাল সকাল ওঠো। ওরকম সময় উঠলেই হবে। অনেক রাত হল। এখন ঘুমোও।
ছেলের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মা বললেন।
মিলু আর কোনো কথা বলল না।
loading...
loading...
ধারাবাহিকটির প্রচ্ছদ দিনদিন অনেক সুন্দর হচ্ছে।
এই পর্বটিও পড়লাম। বেশ। 
loading...
ধন্যবাদ দাদা পাশে থাকার জন্য
loading...
অসাধারণ রচনাশৈলী ও চমৎকার।
loading...
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই
loading...