হঠাৎ সন্ধ্যা (৩য় পর্ব)

selected

সেদিন হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে বসলো। আকাশ কালো করে মেঘেরা ঝুম ঝুমিয়ে গাইতে লাগলো। আচমকা বিদ্যুৎ ঝলকানি মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। মনে হয় কেউ জগৎকে আলোকিত করার বৃথা চেষ্টা করছে। এই আলো নিভুর খেলায় মীরা আপাকে খুব মনে পড়ছে। বৃষ্টির দিনে আমি আর আপা বাড়ীর পেছনে আমড়া গাছ তলায় চলে যেতাম। আঁচল ভরে আমড়া কুঁড়িয়ে আনতাম। আপার হাতে জাদু ছিল। আপা বেশী করে কাঁচা মরিচ দিয়ে আমড়া মাখাতো। আপার ঝাল ঝাল আমড়া মাখা অমৃত মনে হতো। সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। কিন্তু আজ আপা নেই, গাছটিও নেই। গাছও হয়তো মানুষের ভালবাসা বুঝে। তাই আপার মত সেও অভিমান করে চলে গেছে। যে চলে যায় সে কখনো ফেরে না। আপাও চলে গিয়েছে তার রাজকুমারের হাত ধরে হয়তো সেও ফিরবে না।

মনের শত শত কল্পনা ভেঙ্গে গেল সদর দরজার শব্দের আঘাতে। এই বৃষ্টি সন্ধ্যাবেলায় কে এলো? বাবাতো এতো আগে বাড়ী ফেরেন না। অনেক রাতে যখন মায়ের কান্নার শব্দ শোনা যায় তখন বুঝি বাবা এসেছে। আজকাল বাবা খুব রাতে বাড়ী ফেরেন। পৈতৃক ব্যবসাটা ধংস করে মদ খাওয়টা ভালই শিখেছেন। আসলে বাবা যে হোমিওপ্যাথিক বিদ্যা শিখছেন এটা তার ফলাফল। মোতালেব আংকেল যে হোমিওপ্যাথিক বিদ্যার নামে বাবাকে মদের নেশায় ডুবিয়েছেন সেটা আর কেউ না জানলেও আমি জানি। আজকাল বাবার মাতলামি সবাইকে আরোও অতিষ্ট করে তুলেছে। জানিনা মা কিভাবে সহ্য করে। তবে এজন্য আমি মাকে দোষ দেই তার অতিরিক্ত পতিভক্তি বাবাকে আরো হিংস্র করে তুলেছে। সেদিনকার ঘটনা- বাবা মদ খেয়ে অনেক রাতে বাড়ী ফিরছেন। রাস্তার কুকুরটা বাবাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে হইচই করতে লাগলেন। বলতে লাগলেন-হারামজাদা আমার বড়ো মেয়েকে খেয়েছিস এখন আমাকে খাবি? আমি তোকে গুলি করে মারবো। এ বলেই বাবা গালি দিতে দিতে বাড়ীতে ঢুকলেন। হিংস্র হয়ে আলমারী থেকে বন্দুক বের করে আবার রাস্তায় নেমে পড়লেন। কুকুরটিকে গুলি করে মারলেন। তারপর শান্ত হয়ে হয়ে ঘরে ফিরে মাকে বললেন- মাগী একটি ছেলে জন্মাতে পারিস নাই। তোর মেয়েকে নিয়ে রাশেদ পালায়। শালাকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে এলাম। ফের যদি তোর মেয়েকে রাশেদের সাথে দেখি ওই শালীকেও গুলি করে মারবো। বাবা এতেই চুপ রইলেন না। কথায় কথায় বন্দুক বের করতেন বলে পরের দিন আবারো বন্দুক নিয়ে হট্টগোল শুরু করলেন। বড় চাচার সামনে বন্দুক রেখে বললেন- তিনি এই পুরনো বাড়ীতে আর থাকতে চান না। বাড়ীটা বিক্রি করে একটি নতুন বাড়ী কিনতে চান। মোতালেব আংকেলের এক পরিচিত লোক বাড়ীটা কিনতে আগ্রহী সে মোটা টাকা দিতে চাচ্ছে তার কাছে বাড়ীটা বিক্রি করে নতুন বাড়ী কিনবেন। বড় চাচা তার এমন পাগলামি দেখে কিছু বললেন না। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলেন। বাবা তখন কিছুটা হতাশ হলেও পরে লোক ডেকে বাড়ী মাপতে লাগলেন।

আমাদের বাড়ীটা অনেক পুরোনো। উঠান পেরিয়ে সদর দরজায় যেতে হয়। এই বৃষ্টি সন্ধ্যায় একা একা সদর দরজা খোলার সাহস হয় না কিন্তু আমাকে যেতে হবে। আজ দু-দিন হলো মা জ্বরে কাবু। জানি বড় চাচাকে ডাকলেও কাজ হবে না। তিনি সারাদিন নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখেন। ডাকলেও সাড়া দেন না। তাকে ডাকার বৃথা চেষ্টা না করে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সকল ভয় ভেঙ্গে দরজা খুলতেই আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। আমার সামনে জাকির মাস্তান দাঁড়িয়ে আছে।

(চলবে)

হঠাৎ সন্ধ্যা ১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

হঠাৎ সন্ধ্যা ২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
হঠাৎ সন্ধ্যা (৩য় পর্ব ), 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৬-১০-২০২২ | ১৪:১৭ |

    বাবা'র মনোভাব বুঝতেই হঠাৎ করে ৩য় পর্বটি শেষ হয়ে গেলো। পরিসর আরো একটু বাড়ানো গেলে মন্দ হতো। Smile ধন্যবাদ মি. পবিত্র হোসাইন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • পবিত্র হোসাইন : ১৬-১০-২০২২ | ১৮:১০ |

      জ্বি স্যার। 
      পরের পর্বে একটু বেশি লিখবো।  বরাবরের মতো আপনার মন্তব্য অনুপ্রেরণার সহায়ক 

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ১৬-১০-২০২২ | ২২:০৪ |

        ধন্যবাদ। Smile

        GD Star Rating
        loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৬-১০-২০২২ | ১২:৪২ |

    ভাল লাগছে–

    GD Star Rating
    loading...