হঠাৎ সন্ধ্যা (১ম পর্ব)

selec

প্রচন্ড শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। উঠে দেখি বাবা মাকে মারছেন। মেঝেতে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরা পড়ে আছে। মায়ের পা থেকে রক্ত ঝরচ্ছে, মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদচ্ছে। আমি দৌড়ে বড় চাচাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম এমন সময় বাবা চেঁচিয়ে বললেন- কই যাস?
-বড় চাচার কাছে !
-এই ভরদুপুরে তাকে ডাকার দরকার কি? চিলেকোঠা থেকে মোতালেব সাহেবকে ডেকে নিয়ে আয়। সে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।
আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠছি আর সূরা একলাস পড়ছি, এ বছর আমি যখন ক্লাস ফাইভে উঠলাম বড় চাচা আমাকে এই সূরা শিখিয়েছেন, বলেছেন- যদি কোন বিপদে আসে এই সূরাটা যেন পড়ি। আমার সামনে এখন মহাবিপদ! মোতালেব আংকেলকে ডাকতে হবে। তিনি কেমন যেন! ডাকতে গেলেই কাছে টেনে নিয়ে কোলে বসায়, আমার বুকে হাত দেয়, চুলের বেণী খুলে দেয়। একদিন সন্ধ্যায় মা বলল- খুকি যাতো মোতালেব সাহেবকে বেগুণী ভাজা গুলো দিয়ে আয়। গিয়ে দেখি মোতালেব আংকেল নগ্ন হয়ে কি যেন করছে! আমাকে দেখে সরল ভঙ্গিতে বলল- ইরা, টেবিলের উপর থেকে তেলের বোতলটা নিয়ে কাছে আয়তো, আমার এখানে একটু মালিশ করে দে। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম- মা এখনই যেতে বলেছে আমার হোমওয়ার্ক করা হয়নি। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন- যা ভাগ, বদ মেয়ে কোথাকার! আমি কোনোমতে দৌড়ে পালালাম।

৬০ বছর বয়সী মোতালেব আংকেল বড় চাচার বন্ধু। চাচী মারা যাবার কিছুদিন পর বড় চাচা বাবাকে বললেন- মোতালেবের কেউ নেই রে…বেচারার না হল ঘর, না হল সংসার। চিলেকোঠার ঘরটা পরিষ্কার করে দে, মোতালেব এসে আমাদের সাথেই থাকুক। বিকেলে আমি, বাবা, মীরা আপা লেগে গেলাম ঘর পরিষ্কার করতে। পরদিন পুরনো একটি টাঙ্ক হাতে মোতালেব আংকেল হাজির হলেন। কালো, বেটে, টাকলা এই মানুষটি দেখে মীরা আপা চুপিচুপি আমাকে বলল- ইরা লোকটির চোখ দেখ! একটি চোখ কেমন সাদা! মনে হয় নষ্ট। আমি লোকটি চোখের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলাম! মনে হল চোখটি এখনি খোসে পরবে।

বড় চাচার গোলাপ গাছে দুটি কলি এসেছে। আমি প্রতিদিন সকালে ছাদে যাই গাছগুলো দেখতে। মীরা আপা আমাকে বলেছে কাল একটি গোলাপ চুরি করবে, তার প্রিয় একজন মানুষকে দিবে। তবে এ কথা কাউকে বলা যাবে না। এক বোনের গোপন কথা অন্য বোন কাউকে বলে দিলে তখন তারা আর বোন থাকে না। একথা মীরা আপা বলেছে। মীরা আপা এত সুন্দর করে কথা বলে! কথা বলার সময় চোখ ঘুড়িয়ে হাত নাড়িয়ে কথা বলে। কিন্তু মাঝে মাঝে কি যে হয়? সারাদিন দরজা বন্ধ করে থাকে।
প্রতি শুক্রবারে আমি আর মীরা আপা শাড়ি পড়ি, চোখে কাজল দেই, পায়ে আলতা লাগাই, মোড়ের বাচ্চুর দোকান থেকে আচার কিনে আনি। ছাদে দাঁড়িয়ে আচার খেতে খেতে মীরা আপা গুন গুন করে উঠে। তার মিষ্টি কণ্ঠে সুবাস ছড়ায়। তখন আমার কি যে ভাল লাগে মনে হয় আপাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকি।

রাশেদ ভাই আমার বড় খালার ছেলে। খালা মারা যাবার পর খালুর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে রাশেদ ভাই ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে থাকেন। প্রতিদিন বিকেলে আমাকে পড়াতে আসেন। মীরা আপা কেন জানি রাশেদ ভাইকে খুবই অপছন্দ করেন। তিনি রাশেদ ভাইয়ের নাম রেখেছ “অক্টোপাস” রাশেদ ভাইয়ের চুলগুলো নাকি অক্টোপাসের মত।
সেদিনকার কথা, রাশেদ ভাই আমাকে পড়াচ্ছিলেন কোথা থেকে মীরা আপা কাঁচি হাতে এসে বললেন- অক্টোপাস ভাইয়া এখন আমি আপনার চুল কেটে দিব! আপনার কি কোন সমস্যা আছে?
রাশেদ ভাই বোকার মত বলল- না কোন সমস্যা নেই। তবে এর জন্য তোমাকে কোন টাকা দিতে পারব না। আমার কাছে কোন টাকা নেই।
মীরা আপা রেগে গিয়ে বললেন-আপনি জানেন এই চুলের জন্য আপনাকে পাগলের মত দেখায়? আপনি এখনই আমার সামনে থেকে যান সেলুন থেকে চুল কাটিয়ে আসুন।
-বললাম তো আমার কাছে টাকা নেই। তাছাড়া ওর সামনে পরীক্ষা। আমি এখন যেতে পারবো না।
-রাশেদ ভাই আপনি যদি এখনই চুল কেটে না আসেন তাহলে আপনার খবর আছে! বলেই আপা কেঁদে ফেললেন।
রাশেদ ভাই মন খারাপ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি আপার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
আপা চোখ মুছে আমাকে বললেন-ইরা, সিঙ্গারা খাবি?
-আপা তুমি কাঁদলে কেন?
-কই? কখন?
-আমি দেখলাম একটু আগে!
-জানিস না আমি অভিনয় শিখছি! কয়দিন পর আমার বিয়ে হবে সবাইকে কেঁদে দেখাতে হবে না?
-আপা আমি তোমাকে বুঝি না ! তুমি রাশেদ ভাইয়ের সাথে কেন এমন করো?
-তোকে বুঝতে হবে না। তুই মন দিয়ে পড়। বাবা সিঙ্গারা এনেছে আমি বড় চাচাকে দিয়ে আসি।

চিলেকোঠার দরজার সামনে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি। কড়া নাড়তেই মোতালেব আংকেল বেরিয়ে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন -কি হয়েছে রে? যৌবনের আগুনে পানি ঢালতে হবে নাকি? ভেতরে আয় আমি তোকে একটি জিনিস দেখাই।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, মায়ের পা কেটে গেছে, বাবা আপনাকে ডাকছে!
একথা শুনে তিনি অনেক মজা পেলেন হাসতে হাসতে বললেন-শুনলাম তোর বোনকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? কার সাথে পালিয়েছে? তোর বোন নাকি বেশ্যা পাড়ায় নাম লিখিয়েছে। ঠিক হয়েছে, মাগীর খুব দেমাগ ছিল। আমাকে বলে কানা বুড়া!
হঠাৎ এ কথায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমার তো মনেই ছিল না গতকাল কলেজে যাবার পর থেকে মীরা আপা এখন অবধি বাসায় ফেরেনি!

(চলবে)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
হঠাৎ সন্ধ্যা (১ম পর্ব), 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০১-১০-২০২২ | ১৬:০০ |

    লিখাটি পড়ে মনে হচ্ছে বড় কোন গল্প বা উপন্যাসের অংশ বিশেষ পড়লাম। নিয়মিত হলে ভালো লাগবে। আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করবো ভালো ছিলেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • পবিত্র হোসাইন : ০১-১০-২০২২ | ১৯:৩১ |

      সত্যি স্যার নিয়মিত হতে চাই কিন্তু জীবন যুদ্ধে পারিনা। এবার অনুপুস্থিতির খাতা থেকে নাম মুছে দিতে চাই।

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ০১-১০-২০২২ | ২১:৪৩ |

        ভেরি গুড। ওয়েলকাম মি. পবিত্র হোসাইন। Smile

        GD Star Rating
        loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৬-১০-২০২২ | ১২:২৭ |

    শুভ কামনা———-

    GD Star Rating
    loading...