জেরুজালেম হয়ে রামাল্লা... ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ৮

27364a তেল আভিভ বেন গুরিয়ন এয়ারপোর্ট। হিব্রু এক্রোনেম ন্যাটবাগ। পৃথিবীর আর দশটা উন্নত দেশের মত গুছালো ও পরিচ্ছন্ন একটা এয়ারপোর্ট। প্রথমে দেখায় ভাল না লেগে উপায় নেই। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টের মত ব্যস্ত না হলেও সামগ্রিক ব্যস্ততা চোখে পরার মত। পৃথিবীর সব প্রান্ত হতে বিমান নামছে। দলবেঁধে টুরিস্টরা আসছে। ধার্মিকদের সংখ্যাও কম না। গায়ের পোশাক দিয়ে অনেককে আলাদা করা যাচ্ছে।

অজানা আশংকাটা আবারও ফিরে এলো। আদৌ কি ঢুকতে পারবো দেশটায়! ধর্মীয় সমস্যায় জর্জরিত একটা দেশে ধর্মীয় পরিচয় অন্য যে কোন পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। কাগজে কলমে আমি একজন মুসলমান। এবং ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলে একজন সন্দেহজনক ব্যক্তি। অবশ্য সন্দেহ করার মত তেমন কিছু ছিলনা আমার চেহারা সুরতে অথবা সাথে আনা তল্পিতল্পায়।

আমি একজন পরিব্রাজক। পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই, বন্দরে বন্দরে নোঙ্গর ফেলি। এ পর্যন্ত বৈধ ভিসা থাকাবস্থায় কোন দেশ আমাকে তার সীমান্ত হতে ফিরিয়ে দেয়নি। বরং একজন সুস্থ স্বাভাবিক পরিব্রাজক হিসাবে স্বাগত জানিয়েছে। বিনিময়ে আমিও এমন কোন কাজ করিনি যা আমার পরিচয়ে কালিমা আটতে পারে।

ফ্লাইট হতে বেরিয়ে লাগেজ কারুসেলে যাওয়ার পথেই সিদ্ধান্তটা নিলাম, ঢুকতে না দিলে পাশের দেশ মিশরে চলে যাব। ওখানেও অনেক কিছু দেখার আছে। হয়ত নষ্ট হবে পকেটের কিছু পয়সা। তা নিয়ে ভাবতে চাইলাম না।

273630b

একজন মার্কিন নাগরিককে ইসরায়েল তার সীমান্ত হতে বিনা-কারণে ফিরিয়ে দেবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। ইসরায়েল নামের দেশটার অস্তিত্বের প্রতি অঙ্গে মিশে আছে আমার মত মার্কিনিদের ট্যাক্সের পয়সা। এ নিয়ে টালবাহানা করার কোন অধিকার নেই ইসরায়েলিদের। ধারণাটা মগজে স্থায়ী করার চেষ্টা করলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে নিজকে এখন হতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ভাবার চেষ্টা করবো। কোথাও কেউ সমস্যা তৈরির চেষ্টা করলে সরাসরি যোগাযোগ করবো জেরুজালেমের মার্কিন দূতাবাসে।

ট্রলিতে সুটকেস, হাতব্যাগ আর ল্যাপটপ উঠিয়ে রওয়ানা দিলাম ইমিগ্রেশনের দিকে। পাশের সীটের যাত্রী সারাহ এসে ইসরাইল’এ সাদর অভ্যর্থনা জানালো। কোন ধরণের সাহায্যের প্রয়োজন হলে জানাতে অনুরোধ করল। আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তর দিলাম অজানা অচেনা দেশের ভাল-মন্দ আমি নিজের মত করে উপভোগ করতে চাই। দুজন দুদিকের লাইনে দাঁড়িয়ে ইতি টানলাম পরিচয় পর্ব। মেয়েটা ইসরায়েলি নাগরিক, তাদের জন্যে আলাদা লাইন।

সিরিয়াল আসতে ছোট একটা বুথে বসা ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে ইশারা দিল। হাতে পাসপোর্ট নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম। বিনয়ের সাথে কুশল বিনিময় করার চেষ্টা করলাম। কাজ হলোনা। ইমিগ্রেশন অফিসারদের জাতটাই এরকম। ওরা সহজে স্বাভাবিক হয়না। যখন তখন হাসেনা। কিছুক্ষণ ঠায় হয়ে তাকিয়ে থাকে চেহারার দিকে। যা বুঝার তা বুঝে পেলে খটাস করে একটা সীল মারে।

– তুমি কি কোন গ্রুপের সাথে ট্রাভেল করছ?
– না, আমি কোন গ্রুপের সাথে নেই। একা এসেছি
– এর আগে কোনদিন এসেছ ইসরায়েলে?
– না, এই প্রথম
– কতদিনের জন্যে এসেছ?
– বেশি হলে দুই সপ্তাহ

পাঁচ মিনিটের বেশী স্থায়ী হলোনা আমাদের কথাবার্তা। হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে স্মরণ করিয়ে দিল কাগজটা যেন না হারাই। কারণ ওটাই দেশটায় ঢুকার ভিসা। যে হোটেলে থাকতে চাচ্ছি ওরাও দেখতে চাইবে কাগজটা। ফেরার পথে ইমিগ্রেশনও দেখতে চাইবে ইস্যু করা ভিসা।

ইসরায়েল ঘুরে দেখার তিন মাসের ভিসা আমার হাতে। প্লান বলতে যা ছিল তা বাস্তবায়নের কোন অসুবিধা রইলো না।

কাস্টমসের গ্রিন চ্যানেল ধরে বেরিয়ে গেলাম কোন প্রশ্ন ছাড়াই। কেউ ফিরেও তাকালও না আমার দিকে। ভিতরে জমে থাকা সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিমিষে উবে গেল।

টার্মিনাল গেটের সামনে এসে আবারও দেখা পেলাম সারার। সেও বুঝে নিয়েছে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। ফোনটা তার হাতে ধরিয়ে দু’একটা ছবি তুলে দেয়ার অনুরোধ করলাম। সমস্ত মুখ বিস্মৃত করে একটা হাসি দিল। ইসরায়েল নামের দেশটায় তোলা প্রথম ছবি সারার হাত ধরেই জন্ম নিলো।

এয়ারপোর্টের ভেতরের আলোর সাথে বাইরের আলোর কনট্রাস্টটা ছিল চোখে পরার মত। খুবই অল্প ও অনুজ্জ্বল। দেখতে অনেকটা ৭১সালে দেখা দাদাবাড়ি যাওয়ার মদনগঞ্জ লাইনে মোল্লারচর ষ্টেশনটার কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে বাস্তবে এতটা বিবর্ণ ছিলনা। ভেতরের আলোর ঝলকানিতে চোখ ঝলসে যায়, বাইরে এলে তা নিঝুম কোন দ্বীপের মত দেখায়।

2735631c
– চলবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
জেরুজালেম হয়ে রামাল্লা... ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ৮, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. নিতাই বাবু : ০৮-০৪-২০২২ | ১১:৪৮ |

    যতই পড়ছি, ততই ভালো লাগছে!  চলুক লেখা, সাথে আছি দাদা।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০৮-০৪-২০২২ | ১১:৫৬ |

    বরাবরের মতো মুগ্ধ হলাম স্যার। চলুক … https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...