গ্রীষ্মের প্রাণ জুড়োনো বিকেল কিংবা রোদমাখা দুপুরেও যদি থাকে ঝিরিঝিরি হাওয়া, হাতে চায়ের কাপ, ম্যাগাজিন—শখের বারান্দায় রাখা আরামকেদারায় পিঠ এলিয়ে তা উপভোগ করার যে মজা, তা বাড়ির আর অন্য কোনও অংশে নেই। শহুরে জীবনের কারাগারে এ যেন একটুখানি খোলা আকাশ। তাই তো মনের মতো বাড়ি খুঁজতে গিয়ে সকলেই অন্যতম প্রাধান্য দেন বাড়ির এই অংশটির প্রতি। আর কিছু থাকুক না থাকুক, বাড়ির যে কোনও কোণে এক চিলতে বারান্দা থাকা চাই-ই চাই।
বাড়ির এই অংশের প্রতি আমাদের ভাল লাগাও চিরকালীন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারান্দার কাঠামো এবং চেহারায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। পুরনো দিনের দালান বাড়ির সেই কাঠের নকশা করা রেলিংয়ে ঘেরা লম্বা, টানা পরিসর আজকাল আর নেই। তখন তো জায়গার কোনও টানাপোড়েন ছিল না, ফলে মনের মতো আয়তনে বারান্দা তৈরি করার স্বাধীনতাটুকু পাওয়া যেত। বলাই বাহুল্য, আজকাল আর সেই সুযোগ নেই। বাড়ির আয়তনের সঙ্গেই আজকাল ছোট হয়ে এসেছে বারান্দার পরিসরও।
আধুনিক ‘ফ্ল্যাট’ কালচারে বারান্দার জায়গা নিয়েছে ‘ব্যালকনি’। সে তাকে যে নামেই ডাকুন না কেন, বারান্দার প্রতি সেই ভালবাসা, টান কিন্তু আজও অমলিন। তবে সাজসজ্জার নিরিখে কিন্তু বাড়ির অন্যান্য অংশের তুলনায় বারান্দা যারপরনাই অবহেলিত। সাধারণত বারান্দা বা ব্যালকনি বাড়ির সামনের দিকেই থাকে। সুতরাং বাইরে থেকে দেখতে গেলে কিন্তু বারান্দার দিকেই সবার আগে নজর যাওয়া স্বাভাবিক। অথচ বাড়ির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটির সাজসজ্জার দিকে আমরা কেউই বিশেষ নজর দিই না। ড্রয়িং, ডাইনিং, বেডরুম ইত্যাদির প্রতি যে যত্ন নিই, বারান্দার ভাগ্যে তার একরত্তিও জোটে না। এ কিন্তু ভারী অন্যায়!
বারান্দায় ছোট ছোট টবে রঙিন ফুল বা সাধারণ প্ল্যান্ট রাখতে পারেন। পাতাবাহার, মানিপ্ল্যান্ট, ফরচুন ট্রি, বনসাই ইত্যাদি বারান্দায় দেখতে বেশ ভাল লাগে। হ্যাঙ্গিং পটও বারান্দার সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করবে। আজকাল তো বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর টব পাওয়া যায়। চিরাচরিত টবের পরিবর্তে সিরামিক, তামা, পিতল বা ক্লে-র তৈরি টব রাখতে পারেন।
কিংবা বারান্দার গ্রিল বা পিলার বরাবর কোনও লতানো গাছ দিয়ে সাজাতে পারেন। বিভিন্ন ওয়াল হ্যাঙ্গিং বা উইন্ড চাইমসও রাখতে পারেন। কাগজ বা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যেস থাকলে এক কোণে ছোট কাপবোর্ড রাখতে পারেন, বারান্দা অনেক পরিপাটি থাকবে। কাপ বোর্ডের উপরে ছোট তামা বা পিতলের ক্যান্ডেল বোল রাখতে পারেন। ভিতরে রঙিন নুড়ি পাথর, ফুল আর জল রাখুন। মোমবাতি না রাখলেও দেখতে ভাল লাগবে। গ্রীষ্মের দিনগুলোয় সন্ধেবেলা তাতে মোম জ্বালাতে পারেন। বারান্দাময় একটা উষ্ণ আবহ বজায় থাকবে। কাপ বোর্ডের উপর ছোট মূর্তি বা ফোটো ফ্রেমও রাখতে পারেন।
বারান্দায় বসার ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক। ছোট বারান্দার ক্ষেত্রে কয়েকটা বেতের মোড়া বা কাঠের টুল রাখলেই যথেষ্ট। জায়গায় কুলোলে একটা ছোট সেন্টার টেবলও রাখতে পারেন। বড় ব্যালকনির ক্ষেত্রে প্রপার সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট রাখুন। বেতের সোফা বারান্দার ইমেজের সঙ্গে বেশ ভাল মানায়। অবশ্য রট আয়রন বা কাঠ পছন্দ হলে, তাও রাখতেই পারেন। সঙ্গে রাখুন মাঝারি আকারের একটা সেন্টার টেবল। আসবাব বদল সম্ভব না হলে, বারান্দার চেয়ারে কয়েকটা কুশন কিনে রাখতে পারেন। একটু উজ্জ্বল বা আধুনিক কুশন কভার বাছলেই দেখবেন, ব্যালকনির আমেজে বেশ বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। বড় ব্যালকনি হলে কোণজুড়ে রাখতে পারেন দোলনাও। আরামকেদারা বা সুইং চেয়ার রাখলে বিশেষ জায়গারও প্রয়োজন নেই। তাই ছোট বারান্দার ক্ষেত্রে এগুলো বাছতে পারেন।
loading...
loading...
আপনি ঠিকই বলেছেন। আজকাল আর সেই সুযোগ নেই। বাড়ির আয়তনের সঙ্গেই আজকাল ছোট হয়ে এসেছে বারান্দার পরিসরও। এমনকি আমাদের মনেরও।
loading...
সুন্দর শিরোনামে চমৎকার লেখা
loading...
বড় সাধ জাগে…..
loading...