”চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারী.ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি।
জবে গেলে প্রায় মালা নামের নেপালি মেয়েটার সাথে দেখা হয়। মালা এখানে ক্লিনিং এর কাজ করে। আমাজনে প্রচুর নেপালি মানুষজন কাজ করে। ক্লিনিং থেকে শুরু করে আইটি তে সব জায়গায় ওরা আছে। আমার কাজে যেতে হলে ব্যাংকসটাউন স্টেশন থেকে লিভারপুল স্টেশন এরপর ৯০২ নং বাসে করে মুরব্যাংকে নেমে ৪ মিনিট হাঁটার রাস্তা। উইকেন্ড গুলাতে ট্রেন চালু থাকলেও বাস চালু থাকে না। তাই ট্রেন থেকে নেমে উবারে করে যাই।
এক রোববারে ট্রেন থেকে নেমে উবার কল করে উবারের অপেক্ষায় আছি। পাশে মালা এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো তুমি কি উবার কল করছ ?
আমি ওকে বললাম কল করেছি। তুমি চাইলেও যেতে পারো আমার সাথে।
ও জিজ্ঞেস করলো কতো দিতে হবে উবারকে ?
আমি বললাম যাই দিতে হয় তুমি টেনশন করো না।
কিন্তু মালা অস্থির হয়ে গেলো।
আমার কাছে কয়েন আছে, ক্যাশ আছে – আমি দিচ্ছি।
আমি ওকে থামালাম।
লিসেন – আজ আমি দেই – অন্য সময় তুমি দিও।
সে এরপর থামলো।
এরপর দেখা হলেই সে অস্থির হয়ে যায়। শুনো আমার কাছে ক্যাশ আছে – আমি তোমাকে দিয়ে দেই সেদিনের টাকাটা। আমি যতই বুঝিয়ে বলি আরে আমি তো একাই যেতাম – তুমি যাওয়াতে এক্সট্রা বিল পে করতে হয় নি। অবশেষে একদিন যখন সুযোগ পেলো আমাকে তার সাথে নিয়ে যাবার -এরপর শান্তি হলো তার। বোধকরি অস্বস্তিও দূর হলো। মালা এরপর আমার খুব বন্ধু হয়ে গেলো। মালাসহ এরকম আরো অনেক নেপালী ছেলেমেয়ে স্টুডেন্ট হিসেবে আসে কিন্তু ওরা সাবকন্ট্রাকটারের অধীনে কাজ করে। স্টুডেন্ট বলে ট্যাক্সে ২০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারে না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ওরা ক্যাশে কাজ করে।
জিজ্ঞেস করলাম – অস্ট্রেলিয়া কেমন লাগে ?
ও বললো অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো দেশ, সুন্দর দেশ কিন্তু আমি নেপালে গেলে আর আসবো না। আমার দেশেই ভালো লাগে।
—————–
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে –
এখন অস্ট্রেলিয়ার সিজন হেমন্ত। এতো সুন্দর ওয়েদার। মাঝে মাঝে সকাল থেকে দুপুর তিনটা বা চারটা পর্যন্ত একটু গরম লাগে এরপর ঝিরঝির বাতাসে গা জুড়ায়। অন্যরকম ভালো লাগায় মন শরীরে একধরনের শান্তি আসে।
ছোটকালে আমার সেজখালার বাড়িতে যেতাম। সেজখালার স্বামী মারা গেছেন খালার বিয়ের বছর চারেক পরেই। কিন্তু খুব সুন্দর একটা ঘর করে গেছিলেন উনি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অপজিটে ওনাদের বাড়িটা। ঘরটার শেষের দিকের রূমটা একটু নির্জন। ছায়া সুনিবিড় অনেকটা। সকাল বিকেল দুপুর শীত গ্রীষ্ম সবসময়ই কেমন শান্ত ভাব। ঘরটার সামনে পেছনে সবুজ গাছ আর ঝির ঝির বাতাসে মন আপনাতেই শান্ত হতো। অস্ট্রেলিয়ার এই শান্ত ওয়েদার, গাছের ডালের পাতাদের দুলুনি মন পেছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সেজখালার বাড়ির সেই কোনার রূমটার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় –
জীবন পুরোটাই ভ্রমন –
কখনো শান্ত কখনো অশান্ত সমুদ্রের মতন –
তবু এই জীবনকেই ভালোবাসা –
——————–
শনিবারে সিডনী ট্রেনের সাথে কাজ করলাম। যদিও এগুলা আমার ফিক্সড কাজ না অনেকটা অনুরোধে করা। জায়গাটার নাম ওবার্ণ। ওবার্ণ ইয়ার্ডে গিয়েই মন ভালো হয়ে গেলো। এতো সবুজ চারপাশে ! আমার সহকর্মী একজন বললেন দেখো এখানে স্নেক ডিটেক্টর আছে। এখানে গরম আসলেই সাপ বের হয়। তাই পুরো ইয়ার্ডেই জায়গায় জায়গায় স্নেক ডিটেক্টর দেয়া আছে। আমাকে স্নেক ডিটেক্টর দেখিয়ে বললেন বলোতো কি এগুলা ?
আমার মনে হয়েছিলো পানির পাইপের মতো – ছোট একটু পাইপ মাটির সাথে এটাচ করে দেয়া উপরে সবুজ কর্কের মতো –
আমি পানির পাইপ বললে সে বললো – এগুলাই স্নেক ডিটেক্টর।
এক জায়গায় সাপের খোলস পড়ে থাকতে দেখলাম।
বুঝলাম যা বলছে কথার কথা না। আসলেই এখানে সাপ আছে।
যে ভদ্রলোক সব দেখাচ্ছিলেন উনি সুপারভাইজার। ইন্ডিয়ান।
জিজ্ঞেস করলাম – ক্যাজুয়েল নাকি পারমানেন্ট করো ?
উনি বললেন ক্যাজুয়েল করি। কারণ ক্যাজুয়েলে টাকা বেশী। পারমানেন্ট হলে আওয়ারলি ২৮ আর পারমানেন্ট হলে ৩৩ করে। এতে ইনকাম ভালো হয়। বললাম তাহলে ছুটি বা এসবে ক্যাজুয়েল জবে একটু প্রবলেম হয়।
ভদ্রলোক বললেন – আই ম্যানেজ ইট।
————–
আজ ছিলো আমার ডে অফ – কি করলাম সারাদিন !!
ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে এগারটা বাজে –
একটু খেয়ে দেয়ে সিনেমা দেখলাম ,ঘর ক্লিন করলাম। এরপর গেলাম ব্যাংকস্টাউন সেন্ট্রালে – শপিং এ। এটা সেটা কেনাকাটা করলাম। ট্রলিটা টানতে টানতে দেশের রিকসার সুবিধার কথা ভাবলাম। আহারে একটুও হাঁটতে হতো না – এই কষ্টে কিছুক্ষন মনোকষ্টে থাকলাম এরপর ড্রাইভিং না শেখার দুঃখে ড্রাইভিং শেখার পণ করলাম। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিক্রমা। প্রথমে লার্নার টেস্ট দাও – এরপর সেটা পাস করার পরে ড্রাইভং শেখার পরে ড্রাইভিং টেস্ট দাও। সেই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করার পরেই ড্রাইভিং করা যাবে।
কিছুদিন আগে লার্নিং টেস্ট দিলাম। ৪৫ টা প্রশ্ন। ৪৫ টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে নইলে ফেল। যাক এক চান্সে পাশ করে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করলাম দেখে সেখানের মেয়েটা বললো -তুমি কি ফেল করেছ ?
আমি বললাম – পাশ করেছি –
এখন সময় দিতে হবে ড্রাইভিং শেখায় –
দেখা যাক কতটুকু পারি –
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সুচাগ্র মেদিনী –
loading...
loading...
অনবদ্য উপলব্ধির প্রকাশ করলেন
loading...
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন
loading...
ভাগ হয়ে যাপিত জীবনের টুকরো টুকরো কথামালা।
আপনার জন্য
loading...
ভালো লেগেছে যাপিত….
loading...
ধন্যবাদ দিলখুশ মিয়া৷ ভালো থাকবেন।
loading...
পড়ে খুব হিংসে হলো। দারুন বর্ননা করেছেন।
ধন্যবাদ আপু।
স্নেক ডিটেক্টর কি কিনতে পাওয়া যায়?
loading...
না। স্নেক ডিটেক্টর কিনতে পাওয়া যায় না।
হিংসে হলে চলে আসেন কবি অস্ট্রেলিয়ায়।
ভালো থাকবেন।
loading...
প্রবাসের ডায়েরি পড়ে এককথায় মুগ্ধ হলাম প্রিয় কবি আপা। ভালো থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন। আমাদের সকলের শুভেচ্ছা আপনার সাথে থাকবে। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ মুরুব্বি। আপনাদের কমেন্ট না পেয়ে ভাবলাম আপনারা সবাই রেগে আছেন আমার উপর।
যাই হোক স্বস্তি পেলাম।শুভেচ্ছা আপনাদের সবাইকে।ভালো থাকবেন।
loading...