হ্যালো, হ্যালো, আপনি কে বলছেন? প্লিজ আপনার নামটা বলুন।
অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে আসে প্লিজ! কে বলছি সেটা বড় কথা নয়, কি বলছি সেটা একটু ধৈর্য সহকারে শুনুন। রাগে গিড় গিড় করতে থাকে কনা। তারপর দড়াম দিয়ে রিসিভারটা রেখে দেয়। মূহুর্তে আবার এক বুক অনুশোচনার আগুনে জ্বলতে থাকে। কেন লাইনটা সে কেটে দিল ? অপরিচিত একটা লোকের কথা শুনলে কি এমন ক্ষতি হত তার ? এত রাগও বা কিসের জন্য ? লোকটি নিজের নাম বলেনি সেটা ? তবে তার কথা শোনা উচিত ছিল, সেটা মনে মনে ভাবল কনা। ধ্যাৎ মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে গেল, টেলিফোনে সেতো আর আমাকে দেখতে পেত না। পরক্ষণে আবার ক্রিং ক্রিং শব্দ করে বেজে উঠল টেলিফোনটা। দুরু দুরু বুকে কনা রিসিভারটা হাতে তুলে নিল।
হ্যালো হ্যালো বলতেই ও প্রান্ত থেকে একটা পুুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসলো আর এত হ্যালো হ্যালো করতে হবে না। আমি ফোনে স্পষ্ট তোমার কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি। তুমি কনা কথা বলছ। কনা এখন আমি কি বলছি সেটা একটু মনোযোগ সহকারে শোন। বল সুন্দরী স্বামী সংসার নিয়ে তুমি কতটা সুখে আছ ? নিশ্চয়ই পাহাড় সম সুখ তোমাকে ঘিরে আছে, কি ঠিক বললাম তো ? তোমার প্রাণ প্রিয় স্বামী এখন দুবাই বেশ ভালোই আছেন। কিন্তু কনা তুমি সুখে আছ তো ? স্বামী ছাড়া কেন যে তুমি একা একা দেশে পড়ে আছ ঠিক জানি না। তবে তোমার জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তুমি কি সে কথা জান ? জান না। আর জান না, তোমার স্বামী এখন কতটা সুখে আছে।
তুমি হয়ত মনের কাছে প্রশ্ন করতে পার, কে আমি? আর এই আমি কেনই বা তোমার একান্ত ব্যক্তিগত অধিকারে কর্তৃত্ব ফলাচ্ছি। আসলে কি জান কনা, এই অধিকারটা এক সময় আমার বেশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন যে সে অধিকারটা কেড়ে নিল অন্য কেউ। যার ছিল বিশাল সমুদ্রের মত যশ, মান, খ্যাতি। সেখানে আমার মত অপদার্থের স্থান একেবারে নগন্য। তাইতো কনার জীবন থেকে আমি মাইনাস হয়ে গেছি। তবুও দেখ আমি ঠিকই তোমার মঙ্গল কামনা করছি। এবার আরও কিছু শোনার জন্য কনা প্রস্তুত হল। ঠিক সেই মুহুর্তে বিপরীত প্রান্ত থেকে লাইনটা কেটে দিল। কনা দড়াম দিয়ে বসে পড়ল সোফায়। কনা ভীষণ কাঁপছে। একটা দুঃচিন্তায় তার মাথাটা ঘুরপাক খেতে শুরু করল। সে ভাবতে থাকে কে এই অচেনা লোকটা। কায়সার নয় তো ? মূহুর্তে কনার মনে পড়ে গেল ভার্সিটি জীবনে অতীত প্রমিক কায়সারের কথা।
কিন্তু সেটা কেমন করে সম্ভব ? কায়সার তো দেশে নেই। দুই বছর সে জাপানে অবস্থান করছে। দেশে সে বিয়ে করে সস্ত্রীক জাপানে চলে গেছে। সেখানে সে সংসার করছে। দীর্ঘদিন পর সে কেন আমার কাছে ফোন করবে ? তাছাড়া ওই কণ্ঠস্বর তো একবারও বলছে না কায়সারের কণ্ঠস্বর। তাহলে ? কনা আবারও ভাবতে থাকল কে এই অচেনা লোকটি ? আর লোকটি তার ফোন নাম্বার জানলোই বা কিভাবে ? তবে কি কোন অশুভ সংকেত! লোকটির উদ্দেশ্যই বা কি ? একে একে হাজারও প্রশ্ন কনার মনে কাঁটার মতো খচ খচ করে বিঁধতে থাকে। আবার তার স্বামী ফয়সালও প্রায় এক বছর হয়ে গেল কোন যোগাযোগ করে না। কনার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। এতবড় একটা বাড়িতে সে একা একা থাকে। কনার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে এ বাড়িতে থাকছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে তার ছোট দেবরটা এ বাড়িতে আসা যাওয়া করে। এই মাত্র দেওয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দ বাজিয়ে রাত দশটা বাজার সময় সংকেত জানিয়ে দিল। কিন্তু ভয়টা ক্রমেই কনাকে আঁকড়ে ধরেছে। কনা দু’টো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কিন্তু ঘুম যে তার কিছুতেই আসছে না। এক বুক যন্ত্রণায় সে এপাশ-ওপাশ করতে থাকে। এমন সময় বাইরে দরজায় কলিংবেল বেজে উঠল।
কনা থর থর করে কেঁপে উঠে, প্রশ্ন করল কে ? বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো আমি কাজল ভাবি, দরজা খোল। কনা বুঝতে পারল তার দেবর কাজল এসেছে। এগিয়ে যেয়ে সে দরজা খুলে দিল। কাজল বাসায় ফেরার পর থেকে কনার ভয় কিছুটা কমে গেল। তবু মাথাটা তার ঝিমঝিম করছে। সে দ্রুত বিছানায় শুয়ে পড়ল। কোন কিছু তার ভাল লাগছে না। তার চারপাশে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। হঠাৎ আবার টেলিফোনটা বেজে উঠল। ভয়ে ভয়ে কনা ফোন সেটের কাছে আসে। আস্তে করে রিসিভারটা হাতে তুলে নেয়।
কিন্তু কনা তেমনি নিরুত্তর। কোন কথা যেন ওর মুখ থেকে বের হচ্ছে না। ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল হ্যালো হ্যালোকে কনা ?
আচ্ছা কনা, তুমি কী কিছু ভাবছ ? এই ধরো আমাকে নিয়ে। মানে আমিটা কে ? কনা আমাকে তুমি জীবনেও চিনতে পারবে না। শুধু এটুকু বলব, তোমার প্রবাসী স্বামী আমার খুব কাছের বন্ধু। সেই অর্থে আমিও তোমার একজন ভাল বন্ধু হতে পারি। স্বামীর বন্ধু মানেই তো তোমার ও বন্ধু। কী হতে পারি না ? এছাড়া আপাতত তোমাকে দেবার মতো আমার আর কোন পরিচয় নেই। প্রয়োজন হলে আমি মাঝেমধ্যে তোমাকে ফোনে ডাকব কেমন? কনা এতক্ষণে নীরব থেকে অপরিচিত লোকটার কথা শুনছিল। এখন সে আর নীরব থাকতে পারল না। ধমকের সুরেই বলল, কেন পরিচয় দিলে কী এমন ক্ষতি হবে আপনার ?আর আপনিই বা কেন সেধে সেধে আমার সাথে ফোনে আলাপ করতে যাবেন ? আসলে আপনার উদ্দেশ্যটা কী বলুন তো? পরিচয়টা দিলে খুব খুশি হব।
চিৎকার করে উঠল কায়সার, ব্যাস ব্যাস থাক কনা। তুমি আমার পরিচয় পেয়ে মোটেও খুশি হবে না। তাই আপাতত আমার পরিচয় দিচ্ছি না। তোমার শরীর এখন কেমন আছে? আর মনটা, ভাল আছে তো ? এক বুক যন্ত্রণায় জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছো না তো ? তবে আমার দুঃখের আকার বড় বেশি ভারী। সে দুঃখের কোন শেষ নেই। সত্যিই বলছি কনা সব তোমার জন্য।
সেই তখন থেকে কী সব আজে বাজে বক -বক করছেন। ধমকের সুরেই কথাটা বলল কনা। আজ আমার শরীর ভাল আছে। তবে মন ভাল নেই। আপনি যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন, তাতে কী আর মন ভাল থাকে? কিন্তু বুঝতে পারছি না আপনি কে? আর কেনই বা এমন করছেন ?
সবকিছু এত বেশি বোঝা ভাল নয় কনা। তবে আমার দ্বারা তোমার কোন ক্ষতি হবে না। একথা আমি হলফ করে বলতে পারি। তবে তো বললে তোমার শরীর ভাল আছে। বেশ তো, ভাবছি তোমাকে একটা দুঃসংবাদ দেব। ব্যাপারটা তুমি যে কী ভাবে গ্রহণ করবে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। শোন কনা, তোমার স্বামী তার এক আত্মীয়াকে আবার বিয়ে করেছে।
নব দম্পত্তি এখন দুবাই অবস্থান করছে। ছয় মাস হল ওরা বিয়ে করেছে। ওরা দু’জনই ঢাকা ভাসির্টিতে একই সাবজেক্টে পড়ত। তাছাড়া বিউটি সম্পর্কে ফয়সালের মামাত বোন। ছাত্র জীবনে ফয়সাল খুব মেধাবী ছিল। আর তোমাকে বিয়ে করাটা ফয়সালের জন্য একটা দুঃস্বপ্ন ছিল মাত্র। ভাগ্য ক্রমে হঠাৎ ও দুবাই যাওয়ার ভিসা পেয়ে যায়। তখন ওর তিন লক্ষ টাকার খুব প্রয়োজন হয়। যে টাকা ওকে দিতে বিউটির পরিবার অস্বীকার করেছে, সেই টাকা তোমার বাবা মেয়ের বিয়েতে যৌতুকের পনের টাকা হিসেবে দিতে রাজি হলেন। তোমার বাবা দেখলেন তার মেয়ের সুখ। তিন লক্ষ টাকা দিয়ে জামাতাকে বাইরের দেশে পাঠালে তার মেয়ের সুখ হবে। কিন্ত সে ক্ষেত্রে তোমার ভাগ্যে ঘটে গেল ঠিক তার উল্টোটা। কিন্ত কনা, তোমার দেবতা সমতুল্য স্বামী তোমার মতো সুন্দরী স্ত্রী ঘরে রেখে দ্বিতীয় বার বিয়ে করল কেমন করে? সে কথা ভাবছি। তুমি তো কম সুন্দরী নও। যথেষ্ট সুন্দরী তারপরও!
কনা তুমি বিশ্বাস কর আমি একরত্তি ও মিথ্যা কথা বানিয়ে বলছি না। কনা এতক্ষণ অপরিচিত মুখে এসব কথা শুনে কষ্টে একেবারে বাক রুদ্ধ হয়ে গেল। সে ডুকরে কেঁদে উঠল। যখন তার কান্না থামল তখন সে রাগে- ক্ষোভে, অপমানে আবারও কেঁদে উঠে বলল, চুপ করুন আপনি। আমি আপনার কোন কথাই বিশ্বাস করি না। আপনি বলুন যা বলেছেন সবই মিথ্যা কথা। কনা ভীষণ কাঁদতে লাগল। ঠিক তখনই লাইনটা কেটে দিল কায়সার।
কায়সারের খুব কষ্ট হল কনার জন্য। ওর ধারণা ছিল কনাকে ফয়সালের বিয়ের সত্য কথাটা বলে সে শান্তি পাবে। কিন্ত এখন সে দেখল তার উলটোটা হয়ে গেল। কনা কাঁদছে শুনে কায়সার ভীষণ কষ্ট পেল। কাজল কনার পাশে এসে বসল। কিছুক্ষণ পর যখন কনার কান্না থামল তখন কাজল বলল, তোমার কি হয়েছে ভাবি? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? কনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল আমার কপাল পুড়েছে কাজল। তোমার ভাইয়া তার প্রেমিকা বিউটিকে বিয়ে করেছে। আর ওরা এখন একত্রে দুবাই অবস্থান করছে। কাজল ভাবির দু’টি হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, তুমি কেঁদো না ভাবি। ভাইয়া যদি কোন অন্যায় করে থাকে তাহলে তার জন্য অবশ্যই সে শাস্তি পাবে। তুমি মন খারাপ কর না ভাবি। আমি কথা দিচ্ছি, সব রকম সাহায্য তোমাকে করব। তুমি ভেঙ্গে পড়না। ভাবি, তোমাকে শক্ত হতে হবে।
বিউটিকে আমাদের পরিবারে কেউ কোন দিন বউ হিসেবে গ্রহণ করবে না। তুমি আমাদের পরিবারের বড় বউ। তোমার স্থান সবার ঊর্ধ্বে।
কনা অন্যমনস্ক ভাবে বলল, আমি সুইসাইড করব। তোমার ভাইয়াকে মুক্তি দিয়ে যাব। কাজল রেগে গিয়ে বলল, এসব তুমি কী বলছ ভাবি ? তুমি কেন সুইসাইড করবে ? এটা মস্তবড় অন্যায়, সম্পূর্ণ বিধর্মীয় কাজ। এমন পাপ কাজ তুমি কর না ভাবি। বিষয় টা আমি দেখছি। কনা কিছুক্ষণ কাজলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমার জন্য তুমি বা তোমার বাবা-মা আর কী করতে পারবে বল ?তোমরা কী কখনো তোমার ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবে ? পারবে না। কারণ সে তোমার বড় ভাই। তোমার বাবা- মায়ের বড় সন্তান। সে হাজার অন্যায় করলেও তোমরা সেটা মেনে নেবে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কাজল কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, ভাবি কথাটা আমি আরও আগে শুনেছি। কিন্তু তোমাকে বলার সাহস আমার হয়নি। ব্যাপারটা তোমার আরও আগে বোঝা উচিত ছিল।
দীর্ঘ একটা বছর ভাইয়া কেন তোমার সাথে যোগাযোগ করে না? কেন সে টাকা পাঠায় না ? তোমার সহজ সরল মন তাই তুমি এত গভীর ভাবে কিছুই বুঝতে পারনি। কনা বলল, আমি কী করে বুঝবো বল ? তোমার ভাইয়া আমাকে বলেছিল, কনা আমি এক দেড় বছরের জন্য দুবাই থেকে পার্শ্ববর্তী দেশে ব্যবসার কাজে যাব। সে জন্য আমি ভীষণ ব্যস্ত থাকব। আর এর জন্য আমার দশ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমি এ টাকা চাকরি করে ম্যানেজ করে নিচ্ছি। প্লিজ লক্ষীটি! তুমি এই কয়দিন একটু কষ্ট করে চালিয়ে নিও। আমি ব্যবসায় সফল হলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসব। কী খুশি হয়েছ ? অবসর পেলেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করব। তুমি আমাকে নিয়ে ভেব না। আমি ঠিক থাকব। আর তুমি কিন্তু নিজের দিকে বেশি করে মনোযোগ দেবে। কোন কিছুতেই অনিয়ম করা চলবে না। আল্লাহ পাক চায়লে আমাদের সুখের দিন খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে। এখন তুমি বল কাজল, তোমার সেই ভাইয়া কিভাবে আমার সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে পারে? আমার বিশ্বাস হয় না কাজল। আমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। তুমি একবার ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে দেখ না ভাই। ঘটনাটা কী সত্যিই নাকি মিথ্যা ?
কাজল প্রতিবাদ করে উঠল। তুমি যখন ব্যাপারটা জেনেছ ভাবি, তখন ঘটনা সত্যিই। বিষয়টি আমাদের পরিবারে সবাই জেনে গেছে। তবে বিউটি আপার সাথে ভাইয়ার মেলা – মেশা ও প্রেমের ব্যাপারটা আমাদের পরিবারের কেউ ভাল চোখে দেখেনি। সেই বিউটি আপাকে ভাইয়া বিয়ের পর আবারও বিয়ে করল ? এটা সে কী কাজ করেছে ? ভাইয়ার এ বিয়ে কেউই মেনে নেবে না। বিউটি কে আমরা কেউ ভাবি হিসেবে মেনে নেব না। গত এক বছর হল ভাইয়া তোমার সঙ্গে তার সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেন দিয়েছে ? সেই কারণটা কী এখন স্পষ্ট নয় ভাবি ? ভাইয়া বড় ধরণের ভুল করেছে। তবে আমার কী মনে হয় জান ভাবি ? বিউটি খুব উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের। এই বিউটি কে ভাইয়া বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না। আসলে সে আমার কাজিন তো, তাকে খুব ভাল করেই জানি। ভাবি কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ভাইয়ার কিন্তু এটা ভীষণ পাগলামী হয়ে গেল। দেশে এমন সুন্দরী বউ রেখে কেউ এমন পাগলামী করে নাকি ? ভাবি, আমি শুনেছি ভাইয়া দুবাই বিউটির অনুরোধে একটা ক্যাডিলাক গাড়ি কিনেছে। বিউটি নিজেই সে গাড়ি ব্যবহার করে। সে মদ, পার্টি আর বন্ধুদের আড্ডায় মেতে থাকে সারাক্ষণ। তার পোশাক এখন জিন্সের প্যান্ট, ফতুয়া, শর্ট হাতার গেঞ্জি। ভাইয়া নিজের হাতে তাকে ড্রাইভ করা শিখিয়েছে। এক বছর আগের বিউটি, আর এক বছর পরের বিউটির মাঝে এখন অনেক ব্যবধান। কনা দেখল কাজলের আলোচনা যখন তপ্ত থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবে আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঠিক তখন মাঝ পথে সে বাঁধা সৃষ্টি করল। আরে দাঁড়াও কাজল, তুমি বিউটির এত সব খবর কিভাবে জোগাড় করলে ? আমি কেন এতদিন জানলাম না ? তুমিও ভীষণ গ্রীডি ধরণের। তোমরা তো দেখছি সকলে একই রকম।
কাজল ভাবির কথায় চমকে উঠে বলল, ধ্যাৎ ভাবি আসলে আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমার বন্ধু রিপন দুবাই আছে। সে ভাইয়ার খুব কাছেই থাকে। সে তিন মাস আগে ভাইয়া -বিউটির বিয়ের ব্যাপারটা আমাকে জানিয়েছে। ভাইয়া রিপনকে মুখ খুলতে বারণ করেছিল। কিন্তু রিপন আমার ক্লোজ বন্ধু। সে কী ব্যাপারটা আমাকে না জানিয়ে পারে ? এত বড় একটা ঘটনা! কনা আহত বিস্ময়ে কিছুক্ষণ তার দেবরের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। তারপর অস্ফুটে বলল, এ সব তুমি কী বলছ কাজল ? আমার বাবা – মা, ভাই – বোন কেউ নেই। সেই ছোট্ট বেলায় রোড অ্যাক্সিডেন্টে মা, ভাই – বোন সবাই হারিয়ে গেছে। বাবা বেঁচে ছিলেন। তিনি ও কিছুদিন আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। তোমার ভাইয়া ছাড়া আমার তো আর কেউ নেই। সব কিছু হারিয়ে আমি তোমাদের সংসারে এসে আবার সব ফিরে পেয়েছিলাম। এখন তোমার ভাইয়াও আমাকে পর করে দিল। এখন আমি কোথায় যাব ?কার কাছে যাব, বলতে পার ?
কাজল বলল, তুমি আবার কোথায় যাবে ? আমাদের সংসারেই থাকবে। তোমাকে আমরা কোথাও যেতে দেব না। আমার মা – বাবা তোমাকে মেয়ের মতো দেখে। ডুকরে কেঁদে উঠে কনা বলল, সে আমি জানি। আমি নতুন করে বাবা – মা ফিরে পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার কপালে সুখ যে সইলো না কাজল! তোমার ভাইয়া আমার প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারল ?
গর্জে উঠল কাজল। হয় হোক না ভাবি ? তুমিও শক্ত হও। দেখবে ভাইয়া কে আবার তোমার কাছে ফিরে আসতে হবে। তোমাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে ভাবি।
হোয়াট ধৈর্য ? কী বলছ তুমি? ধৈর্য ধরবো আমি? সেটা অনেক পরের কথা। এখন আমি কী করব তাই বল ? তোমার ভাইয়া কে আমার ডির্ভোস দিতে বল। কাল তাকে ফোন করে জানিয়ে দাও। এবং যত দ্রুত সম্ভব হয়, ততোই আমার জন্য মঙ্গল হবে।
কনার মুখ জুড়ে একটা বিষাদের কালো ছাপ। কনা হাসি খুশি একটা উচ্ছ্বল তরুণী। কিন্তু একি হয়ে গেল তার। এই ক’ দিনে সে বড় নীরব হয়ে গেছে। চমকে উঠল কাজল, কী ডিভোর্স ? তুমি ডিভোর্স চাইছ ভাবি ? খুব চিন্তিত কণ্ঠে সে বলল, তুমি আর যাই কর ভাবি এই কাজটি তুমি কর না। তুমি দেখ ভাইয়ার একদিন ভুল ভাঙ্গবে। আমি তোমার ছোট ভাইয়ের মতো। তুমি আমাদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর না ভাবি। কাজলের কথা শুনে কনা একটু অবাক হল। তারপর সে ভাবল, অচেনা লোকটার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। কনা শিওর হল, ফয়সালকে সে তার জীবনে আর ঝুলিয়ে রাখবে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল কনা। এক সময় সে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ল।
loading...
loading...
আমার পড়া স্মরণ কালে সম্ভবত প্রথম উপন্যাস বা বড় গল্প পড়লাম। আশা করবো বাকি খণ্ড বা অংশ সমূহ পড়ার সুযোগ হবে। শুভেচ্ছা প্রিয় কবি হাসনাহেনা রানু।
loading...
বিউটি নামের মেয়েদের চেনা বড়কঠিন খুব সুন্দর লাগল গল্পটা কবি আপু
loading...
লেখা পড়ে পুলকিত হলাম ।
loading...