কাব্যগল্প: মধ্যরাতের জোছনা আজ আমার উঠোনে...

মধ্যরাতের জোছনা রুপালি স্নিগ্ধ আলো;
কবির উঠোনে চুয়ে চুয়ে পড়ছে,
জোছনার শিশির বিন্দুর রুপচ্ছটা।
উঠোনের এক কোণে বকুল গাছটির,
পাতায় পাতায় বকুলের মাতাল গন্ধ;
স্নিগ্ধ জোছনার সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়া- মিশে একাকার হয়ে ,
রুপ দিয়েছে ছন্দময় রাত,
এই জোষ্ঠ মাসে এরকম চন্দ্রিমার মায়াবি রুপালি জোছনা
আকাশ ও প্রকৃতির বুককে এক অনাবিল স্বর্গীয় পরিবেশে,
রুপান্তরিত করে তুলবে;
এমন প্রত্যাশাও ছিল না কবির।

কবি বসে আছে উঠোনের ইজি চেয়ারটায় বেশ আরাম করে;
সামনে টি-টুলে সেদিনের সদ্য মুখ খোলা বেনসন প্যাকেটটা,
আর কিছু আঙুর,আপেল ও কিছু পিরিচে রাখা নোনটা বিস্কুত,
আর ফ্লাক্সে করা লাল চা;
কফি বানানো হয়নি, রিভার থাকলে-
এই মধ্যরাতের জোছনাটা আরও আয়োজন করে উপভোগ করা যেত;
ও আজ নেই,তাই নিরিবিলিতে নির্জনে বসে,
এ মধ্যরাতের প্রকৃতি রাঙা শ্বেত জোছনা,
উপভোগ করতে হবে একান্ত চিত্তে নির্জন অনুভবে।

সেদিনের নদী মহানন্দায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যায়;
নীল শাড়ী পরা ওই ভদ্রমহিলার সাথে দেখা হওয়া,
তি-চার বছরের পৃথিবীর অনন্য সুন্দর স্বর্গীয় শিশু,
কবিকে আব্বু আব্বু বলে জড়িয়ে ধরে-
কি বিব্রতবোধ-ই না করে তুলে ছিল?
তারপরেও বুকের ভিতর কী প্রশান্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।
ওই শিশুটিকে মনে হয়েছিল যেন কবিরই মেয়ে!
এমন একটা অনুভূতি কবির মনকে করেছিল-
আবেগের বর্ষার শ্রাবণের জলধারার মত।
আচ্ছা ওই ভদ্র মহিলাকে এত চেনা চেনা মনে হয়েছিল কেন?
শুধু এতোটুকুই বলেছিল সে-
কেমন আছেন কবি সাহেব?
নিবিষ্ট চোখে মায়াবি হরিণী ডাগর রাঙা দৃষ্টিতে;
তাকিয়েছিল দীর্ঘক্ষণ ভদ্র মহিলা;
তার চোখ দুটো যেন মনের সমস্ত কথাগুলো বলতেছিল;
আচ্ছা কি বলতেছিল তার ওই মায়াবি দুটো চোখ যে,
তাকে প্রাণের চেয়েও কাছের,অতি কাছের অস্তিত্ব মনে হয়েছিল!
মনে হয়েছিল কোন স্বপ্ন জগতে তার সাথে,
সুখী এক দাম্পত্য জীবন গড়ে উঠেছিল।
নইলে এতটা আপন মনে হবে কেন?
আর ওই তিন-চার বছর বয়েসের স্বর্গীয় শিশু,
কেন আব্বু আব্বু ডাকছিল?
কি এর রহস্য!
আর ওই ভদ্র মহিলা ফেরার মুহুর্তে কেন শুধু মোবাইল নাম্বারটা চেয়ে বসল?
কবির কাছে সেদিন কাগজ ছিল না;
তাই ডান হাতের তালুতে নাম্বারটা লিখে দিয়েছিল!
এরপর বাসায় এসে আর স্থির থাকতে পারে নি;
সারাক্ষণ কানে বেজে উঠেছে শিশুটির আব্বু আব্বু ডাক;
আর ভদ্র মহিলার মায়াভরা শ্বেত জোছনার মত লাবণ্য মুখ,
এখনো কানে বাজছে, চোখে ভাসছে শিশুটির মুখচ্ছবি।

কবি ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে কাপে নিয়ে মুখে তুলে নিবে,
সহসাই মনে হলো পাজ্ঞাবির পকেটে রাখা চিঠিটার কথা;
চিঠিটা পকেটে পুরে দিয়েছিল শিশুটি মেয়েটি,
দেওয়ার সময় বলেছিল আব্বু এটা বাসায় গিয়ে দেখ;
তাই খোলা হয়নি বাসায় এসেও একবারেও মনে পড়েনি,
চিঠিটির কথা, শুধু মনে পড়েছে শিশুটি ও তার মায়ের কথা;
আচ্ছা কি লেখা রয়েছে ওই চিঠিটাতে?
কবি উঠে রুমের দিকে পা বাড়ায় চিঠিটা আনতে;
কাপটায় চা ঠান্ডা হতে থাকে পূর্বালীর মৃদু হাওয়ায়।
খানিকক্ষণ ফিরে আসে কবি চিঠিটা হাতে নিয়ে;
আবেগের ঘোরে পাগলের মত্ততায় কবি চিঠির মুখ খোলে,
এমনি কি লেখা রয়েছে যে এটায় পাগলামী মত্ততা আছে?

কবি চিঠি খুলে,মধ্যরাতের জোছনার কিরণ চিঠিটায় এসে পড়ে,
স্পষ্ট পড়া যায় আজ চতুর্দশী যৌবনা চাঁদের আলোয়-
অবিভূত হওয়া চিঠিটি; তাতে লেখা আছে-
‘প্রিয় লেখক সাহেব গত পরশু তিন্নির চতুর্থ জন্ম দিন,
তুমি এসো নইলে তিন্নি কেক কাটবে না’
-ইতি তিন্নির আম্মু তামান্না রহমান লিপি
কবি চিঠি পড়ে চমকে যায় মাত্র তিন লাইন!
আরও কিছু তো লিখতে পার তো! লিখেনি কেন?

কবি উঠে দাঁড়ায় মনটা কেমন যেন ক্রমশ: অস্থির হয়ে উঠছে;
বুকের ভিতর কিসের এত টান টান অনুভূতি সারা শরীরকে উতলা করে তুলছে, আর-
মাঝে মাঝে ঝাকিয়ে তুলছে পুরো শরীরটা অদ্ভূত শিহরণে?

মধ্যরাতের জোছনা-সেই কখন শেষ রাতের জোৎস্নায় পরিণত হয়েছে,
গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদ-জোছনা বেরিয়ে আসতে চাইছে কবির উঠোনে,
গাছের পাতার ছায়ায় বিন্দু বিন্দু চাঁদের আলোক রশ্মি;
কবির উঠোন ঝিলমিল ঝিলমিল করে তুলছে আরেক স্বপ্নের মোহ;
কবির SYMPHONY-D70 মডেল মোবাইলটা ইজি চেয়ারের সামনে-
টি টেবিলটায় নীরব হয়ে আছে,
রিভারও কেমন জানি ফোন করলো না;
আজ মধ্যরাতের স্বপ্নিল সোনালী রাঙা জোৎস্নায়,
তাহলে কি ওঁর উঠোনে;
আকাশ ভরা পূর্ণিমা জোছনা বাসার আঙিনায় পড়েনি?
আর ওই ভদ্রমহিলা চিঠিতে এ কি লিখল!
‘তুমি না আসলে তিন্নি কেক কাটবে না’
আমি কি তার ‘হাজব্যান্ড’ নাকি যে…….?
কবি ভাবছে আর উঠোন জুড়ে পায়চারি করছে;
হটাৎ বকুল গাছটির অদূরেই আলো-ছায়ায় দেখা যাচ্ছে-
কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে,
তার সামনে-পাশে হাসনাহেনা ফুলেরা ফোটে;
সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে কবির বাড়ীর পুরো আশপাশ,
সত্যিই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে-কবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,
পড়নে তার রাত্রিকার পোশাক সাদা মিহি গাউন,
মাথার চুলগুলো খোঁপা বেঁধে গেথেছে হাসনাহেনা ফুল
১০গছ দূর থেকে গাছের পাতার ফাঁক ভেদ করে মাধবী জোছনার আলোয়;
বেশ ওই দাড়িয়ে থাকা কেউ একজনকে মায়াবি পরী বলে মনে হচ্ছে কবির,
কবি পা বাড়ায় সেই দাঁড়িয়ে থাকা পরীর দিকে,
পিছনে টি-টিবিলের রাখা মোবাইলটা বেজে উঠে,
এই ফোনটা ধরো না..২..৩..৪ আশ্চর্য…….।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ১৮-০৬-২০২০ | ২১:১৮ |

     ভালো লাগলো।http://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. গোলাম কিবরিয়া সৌখিন : ১৮-০৬-২০২০ | ২২:০৭ |

    লিখার মান যথেষ্ঠ ভালো , বানানের দিকে আরেকটু মনোযোগ দিবেন আশা করি আরো চমৎকার লিখা আপনার থেকে পাব । ভালোবাসা জানবেন কবিা।

    GD Star Rating
    loading...
  3. মুরুব্বী : ১৯-০৬-২০২০ | ৯:১৫ |

    দীর্ঘদিন পর …. পুনরায় একরাশ মুগ্ধতা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...