রঙিন ভালোবাসা - (২য় এবং শেষ পর্ব)

লেলিনা এবং জিওন আমার অনেক ভাল বন্ধু। বলতে গেলে আমরা এক সাথে থাকি, বাসাটা আমার হলেও ফ্রি-তে তারা আমার রুম পাটনার। কুকিং থেকে শুরু করে মুভি দেখা সব চলে আমার বাসায়। লেলিনার বাবা সম্ভবত পর্তুগীজ তবে মায়েরটা বলতে পারব না। এবং জিওন পিওর কোরিয়ান। ওয়েস্টার্ন কালচারের একটা বিষয় আমার ভাল লাগে, এদের ধর্ম, বর্ণ, জাতি নিয়ে মাথা ব্যথা কম। লেলিনা খুব চঞ্চল প্রকৃতি মেয়ে, চুল গুলো সোনালী হলেও তার হাসি দিয়ে ১০১ টা ছেলেকে ঘায়েল করার ক্ষমতা রাখে। কোন মেয়ের হাসি যে এত সুন্দর হতে পারে, লেলিনাকে না দেখলে বুঝতাম না। এই হাসি দেখে কত ছেলে প্রেমে পড়েছে তা লেলিনা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। অস্বীকার করব না, আমি তার প্রেম জলে হাবুডুবু খেয়ে সাঁতার শিখেছি। তবে তা কখনো বলি নি।

জিওনের কথা বর্ণনা করতে গেলে পুরা দিন-রাত মিলিয়ে শেষ করতে পারব না। এরকম কমেডিয়ান ছেলে বিশেষ ভাগ্যে জোটে। সত্যি বলতে তার সামনে আমি কখন মন খারাপ করে থাকতে পারি নি, একেবারে মন ভাল করার মেশিন তার বিশেষ গুণের মধ্যে অন্যতম মানুষ কে কপি করা, সারাদিন কোন মানুষ-টা কেমন করবে সেটা খুব ভাল করে লক্ষ্য করে রাতে আমাদের দেখানো তার প্রধান লক্ষ্য। সত্যি এমন বন্ধু থাকলে জীবন অসাধারণ।

সে বছরের শেষের দিকে কোন এক জরুরী কাজে আমাকে বাংলাদেশে যেতে হয়েছিল তবে সেটি খুব দীর্ঘ নয়, মাএ ১৫ দিনের জন্য। তখন লেলিনা এবং জিওন আমার সাথে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে, আমি ওদের না করিনি। শেষ মুহূর্তে জিওনের বাবা মারা যাওয়া-তে তা হয়ে ওঠেনি। জরুরীভাবে জিওনকে কোরিয়া ব্যাক করতে হয় এ নিয়ে লেলিনার অভিযোগের শেষ ছিল না, আমরা দু-জন এক সাথে চলে গেলে সে কি করবে?
বাংলাদেশে গিয়ে লেলিনা আর জিওনের জন্য খুব খারাপ লাগছিল তারচেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার এই কদিন একবারের জন্য ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।
আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভূদ ঘটনা ঘটে ১৫দিন পর যখন আমি শিকাগোতে ফিরে যাই! কোন ভাবে লেলিনা এবং জিওনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ওদের দুজনের সকল ধরনের কন্টাক্ট বন্ধ! পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে ওদের কোন সন্ধান পায়-নি। এক কথায় হারিয়ে ফেলি ওদের।
তাই ৬-৭ মাস পরে এই রাতে লেলিনার ফোন কল আমাকে যথেষ্ট অবাক করেছে তার সাথে মনে জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের!

হাসপালের গেটে দেখা হয় লেলিনার মায়ের সাথে। লেলিনার ব্যাপার জিজ্ঞাসা করতে সে আমার হাত ধরে নিয়ে যান একটি রুমে। কিছুক্ষণ পর একজন নার্স ফুটফুটে এক নবজাতক আমার কোলে তুলে দেয়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, আমি নিস্তব্ধ, আমি গতিহীন, আমি অনুচ্চারিত, আমার পৃথিবী থেমে গেছে, এতো পরীর বাচ্চা! কিভাবে তার বর্ণনা করব আমার জানা নেই। ছোট ছোট চোখ, নরম তুলতুলে গাল, ঠোঁট এতটাই লাল যা কালো বর্ণ ধারণ করেছে। হৃষ্টপুষ্ট আঙ্গুল গুলো দেখলে চুমু দিতে মন চায়, তার ড্যাব ড্যাব চাহনি ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট। চেহারা দেখে বুঝতে বাকি থাকে না এর বাবা জিওন! ভেতরে ভেতরে এত কিছু, আমি জানতে পারলাম না? জিওন এমন করতে পারে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।সাহস করে বলে ফেললাম,
-আন্টি, জিওন এবং লেলিনা কোথায়?
-জিওন আর ফিরে আসে-নি ! লেলিনের সাথে প্রতারণা করেছে।
-আমি কি একটু লেলিনের সাথে কথা বলতে পারি?
-হ্যাঁ ! A113 নাম্বার কেবিনে চলে যাও ।

কেবিনে ঢুকে দেখি লেলিনা বিছানায় শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে বসতেই আমার হাত জড়িয়ে তার প্রথম কথা,
-আমার একটা উপকার করতে পারবে?
-একটা না দশটা করব।বল কি করতে হবে।
-আমার বাবুর নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে ওর বাবার নাম প্রয়োজন! আমাকে সাহায্য করবে?
-হুম…সমস্যা নেই “পবিত্র হোসাইন” লিখে দিব কিন্তু একটা শর্ত আছে?
-কি শর্ত?
-প্রতিদিন এই পরীর বাচ্চার আঙ্গুলে চুমা দিতে চাই এবং তুমি সেটা মানা করতে পারবে না। বল রাজি কিনা?

লেলিনা অপলক দৃষ্টি-তে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, সে চোখের ভাষা আমি পড়তে পারি। তার মিষ্টি হাসির চাহনি আবার আমাকে মাতাল করে দেয়। আজ স্বার্থপরের মতো সৃষ্টিকর্তার কাছে বলতে চাই জিওন ফিরে না আসুক। কখনই না আসুক আমাদের রঙিন ভালোবাসায়।
১ম পর্ব পড়ুন

(আমি সত্যি অনেক দুঃখিত, আমি আমার কথা রাখতে পারিনি। অসুস্থতার কারণে শেষ পর্ব সময় মতো পোস্ট করতে পারিনি)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৪-০৬-২০২০ | ১১:৪৩ |

    দুই পর্বের বড় গল্প হিসেবে গল্পটিকে সার্থক বলতে পারি। শব্দনীড়ে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ পবিত্র হোসাইন। নিরাপদ এবং ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা রাখলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ০৪-০৬-২০২০ | ১৪:১২ |

    http://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifসুন্দর

    GD Star Rating
    loading...