নক্ষত্রে গোধূলি-৬১/২৫০

৮১।
এর মধ্যে তিন দিন অফ গেছে। অপেক্ষায় থেকেছে পরবর্তী অফের দিন মেইল পাবে। তার নয়ন মনিরা সবাই চিঠি লিখবে, তার মনি লিখবে। প্রতি অফের দিনে সাত দিনের প্রতীক্ষিত মেইলের আশায় লাইবেরিতে গেছে। বাড়ি থেকে পাঠানো মেইল মন দিয়ে পড়েছ। এক বার, দুই বার, কয়েক বার পরেছে। মনে হয়েছে কতদিন মনির চিঠি পড়া হয়নি। সেই যে বিয়ের পর মনিকে রেখে বিদেশে চলে গিয়েছিলো তখন। তা প্রায় পঁচিশ বছর তো হবেই। সেই দিনগুলির কথা মনে পরে। মনির চিঠি পেলে কেমন যেন হয়ে যেত। কতবার করে যে পড়েছে প্রতিটা চিঠি। পড়তে পড়তে প্রতিটা অক্ষর তার মুখস্থ হয়ে যেত। তাকে লেখা মনির প্রথম চিঠির কথা স্পষ্ট মনে আছে। তাকে সম্বোধন করতে গিয়ে কয়েকবার কেটে শেষ পর্যন্ত লিখেছিলো। তার মনের মত একটা সম্বোধন লিখেছিলো, এখনও মনে পড়ে। মনি লিখত খুব সুন্দর করে, গুছিয়ে অনেক কিছু লিখত। অনেক বড় হোত চিঠি গুলি। সে নিজেও লিখত। তার লেখা দীর্ঘ চিঠি হয়েছিলো একুশ পাতা। মনির ছোঁয়া বয়ে নিয়ে এসেছে যে চিঠি তা সে ফেলতে পারত না, মনির হাতের গন্ধ মাখা ছোঁয়া পাবার জন্য বালিশের পাশে রাখতো। এখন ঘরে ঘরে ফোন, ইন্টারনেট, হাতে হাতে মোবাইল কত কি! তখন শুধু চিঠির অপেক্ষা। কি ভাবে যে দিন গুলি গেছে পরের চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত, সে যারা ভুক্ত ভুগি তারা ছাড়া কে বুঝবে?

মেয়ে আর মনির লেখা অনুরোধ উপদেশের ঝুড়ি খুলে দেখেছে। তার নিজের রোজ বিবরণী পাঠিয়েছে। কবে কি দিয়ে ভাত খেয়েছে, কি দেখেছে, এদেশের মানুষেরা কি ভাবে কথা বলে, থাকার জায়গা কেমন, কোথায় কি ভাবে কি করতে হয় সব কিছু খুলে লিখেছে। তবুও মনে হয়েছে মনি আর মেয়েদের হাজার প্রশ্নের জবাব দেয়া হলো না। ঘুরে ঘুরে লাইবেরি দেখেছে। এর মধ্যে লাইবেরির স্টাফদের সাথে খাতির হয়ে গেছে। এখন ফাঁকা থাকলে তাকে নির্দিষ্ট এক ঘণ্টা সময়ের চেয়ে বেশী সময় দেয়। একদিন কেও ছিলো না বলে তাকে দুই ঘণ্টা দিয়েছিলো। দুপুরে সময় মত এসে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে গেছে। একদিন ভেবেছিলো অক্সফোর্ড যাবে। বিশ্বের সেরা ইউনিভার্সিটি দেখে আসবে। কিন্তু কে যেন বললো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি নিজের গাড়ি ছাড়া দেখা কঠিন ব্যাপার, কারণ এটা এক জায়গায় না। এক ফ্যাকাল্টি থেকে অনেক দূরে অন্য ফ্যাকাল্টি। সারা অক্সফোর্ড জুড়ে এই ইউনিভার্সিটি। তাই এমনি এক জায়গায় গিয়ে কি দেখবেন? আর যাওয়া হয়নি। এই শহরেই ঘুরে ফিরে দেখেছে। ছোট্ট শহর, তেমন কিছু নেই কিছু দোকান পাট আর দুইটা ব্যাংক ছাড়া। সেদিন দুপুরে কাজ সেরে উপরে আসার সময় বাড়িতে ফোন করেছিলো। অস্থির মেয়েদের আর তাদের অস্থির মাকে নিশ্চিন্ত করার জন্য। অল্পই কথা হয়েছে। কেমন আছ, তোমাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে, আমি ভালো আছি, চিন্তা করবে না। আব্বু তুমি সময় মত খাবে, ঠাণ্ডা লাগাবে না, ওষুধ খাবে মনে করে, আমাদের জন্যে চিন্তা করবে না। এই ধরনের।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ৩০-১২-২০১৯ | ১৪:২৫ |

    জানিনা কোথায় আছেন; তারপরও আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো বন্ধু। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. সাজিয়া আফরিন : ৩০-১২-২০১৯ | ২০:১৫ |

    পড়লাম ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cool.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. সুমন আহমেদ : ৩০-১২-২০১৯ | ২১:৫৩ |

    শুভেচ্ছা কবি খালিদ ভাই। যথারীতি আপনি অনুপস্থিত। Frown

    GD Star Rating
    loading...
  4. রিয়া রিয়া : ৩০-১২-২০১৯ | ২৩:০৫ |

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০১-০১-২০২০ | ১৩:৩৫ |

    প্রাণঢালা ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif​​​​​​​

    GD Star Rating
    loading...