১.
প্রচন্ড মশা আর আবর্জনার দুর্গন্ধ। চারপাশে লোকের সমাগম। কত লোক যাচ্ছে আর আসছে। ট্রেনের ঘন্টা এখন ও পড়ে নি। ভুল হল আজকাল ট্রেনের ঘন্টা আর পড়ে না। আধুনিক যুগে সাউন্ড বক্স- এ বলা হয়। কখন ট্রেন যাবে আর কখন আসবে। শুনেছি টিকিটটাও অনলাইনে কাটা যায়। আজব হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীটা। যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। কত রকম মানুষ আছে এই পৃথিবীতে। কারও মন লাল আবার কারও মন নীল। কেউ ধনী আবার কেউ গরীব। কেউ কষ্টে অর্জিত টাকায় খাবার কিনে ফেলে দেয় আবার সেই খাবার কেউ কুড়িয়ে খায়। সব কিছু নিয়তি। কমলাপুর রেল স্টেশনে বসে কথা গুলো ভাবছে অনিদ্র। ময়লা টি- শার্ট আর ব্লু জিন্স পরার অভ্যাস টা আজও আছে। চাদর টা গায়ে জরিয়ে আলুথালু ভাবে তাকাচ্ছে চারিপাশে। রাত ৯ টাই ট্রেন ছাড়বে। লালমনি এক্সপ্রেস। গরীবের ট্রেন। নন-এসির ট্রেনে আজ কাল ফিট ফাট বাবুরা যায় না। অনিদ্র পকেটে হাত বাড়াল ৫০ টাকাই তার পুঁজি। সান্তাহার থেকে রাণীনগর আরও দশ কিলো। হিসাবটা কষে নিল অনিদ্র। এক টা চা আর সিগারেট খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। বাড়িতে যেয়ে থাকা যাবে কিনা এখনও বলা যাচ্ছে না। অনিদ্র একটা ডার্বি সিগারেট ধরালো। চারিপাশে তাকিয়ে এক চা-অয়ালাকে ডাকল।
-এই এক কাপ চা দাও তো।
চা অয়ালা চা দিয়ে জিগ্যেস করল
-বাবা কই যাইবেন?
-ক্যান চাচা কি হইছে?
(খুব বিরক্তির সাথে অনিদ্র প্রশ্নটা ছুড়ল।)
-না এমনে কলাম।
-সান্তাহার যাব। নাম শুনেছেন?
-শুনমুনা ক্যা? হামার গাও লগা সাপুর(সাহাপুর)। অনেক আগে গেছনু আর যাই না। তো বাবা তোমার বাড়ি কুন্টি?
-রাণীনগর। তো চাচা আপনার চা টা ভাল হইছে।
-হ বাবা দ্যাশের লোক পাইলে ভাল লাগে। আর এক কাপ চা খাও বাবা। টাকা লাগবো না। তুমি আমার দ্যাশের লোক।
-কি কোন চাচা। তাই কি হয়।
-কি কও বাবা তুমি দ্যাশের লোক এটাই বড় কতা।
অনিদ্র চা টা দ্রুত শেষ করল। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল। যতদূর দেখা যায় চা-অয়ালা অনিদ্রের পথের দিকে চেয়ে থাকল। পৃথিবীর মানুষগুলো খুব অদ্ভুত। নিজের গ্রামের প্রতি মানুষের ভালবাসা আর নাই। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কেমন যেন আলাদা হয়। নিজের দেশ বলতে এরা পাগল।
গত সপ্তাহে শরীফের সাথে দেখা। সরকারী দপ্তরের কেরানি। ভালই টাকা করেছে। শোনা যায় ঢাকার সাভারে ফ্লাট ও কিনেছে। কিন্তু অনিদ্র কে দেখে চিনতে পারল না। অনিদ্রই এগিয়ে যেয়ে পরিচয় দিল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল -কি করিস এখন। কাজ টাজ কিছু করিস।। না পার্টিই নিয়ে আছিস।
-এই তো কিছু একটা করছি।
-তাই। তো ভালতো।পার্টি করে কি পাশ জানি না। আজ কাল কি কেও বিরোধী দল করে। দেখ না আমাকে সরকারী দল করি বলে চাকুরীটা হয়েছে। তুই ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলি। অথচ চাকুরী নাই তোর। যাই হোক সরকারী দল কর কিছু একটা হবে। তো যাই মিটিং আছে। চায়ের বিল দিয়ে গেলাম চা খেয়ে নিস।
(চলবে)
loading...
loading...
গল্পের প্রথম ভাগ পর্যন্ত পড়লাম। উত্তরাঞ্চলের মানুষ হিসেবে কাহিনীর স্পট পরিচিত লেগেছে। আগামীতে আরও পড়বার ইচ্ছে রাখি। ধন্যবাদ মি. পাভেল রহমান।
loading...
আপনাদের উৎসাহ থাকলে শেষ করতে পারব ইনশআল্লাহ।
loading...
উৎসাহ নিশ্চিত রইলো। শুভ সকাল।
loading...
গল্প নায়কের নাম অনিদ্র। নামটি ভীষণ সুন্দর হয়েছে। চলুক।
loading...
ধন্যবাদ ভাই
loading...
নিয়মিত হোক।
loading...
অনেকদিন ধারাবাহিক গল্প পড়ার সুযোগ হচ্ছিলো না। আজ মনে হয় শুরু হলো।
loading...
loading...
চলুক দাদা …
loading...
প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা ঘরানার গল্প মনে হলেও পরবর্তীতে বোঝা যাবে গল্পকে আপনি আসলে কোন ডিরেকশনে নিয়ে যাচ্ছেন। ধন্যবাদ ভাই।
loading...
আপনার লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
loading...