চিরকুট: ১৩। তারিখ: পহেলা জোষ্ঠ ১৪২৬ বাংলা
প্রিয় সুন্দরী লম্বা নাক ওয়ালী।
পত্রের প্রারম্ভে জানাই জোষ্ঠের অলস বিকেলে পুষ্পরথে মধুমক্ষিকার দিক বিদিক শহরশে ছুটোছুটির ব্যস্ততম শুভেচ্ছা। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত মাদ্রাজ নাভেল বেস স্টেশনে আমার জাহাজ নোঙর ফেলেছে কয়েকদিনের জন্য। মাদ্রাজের এই কোলাহলপূর্ণ নগরের মোড়ে ছোট্ট একটি টেবিলে বসে তোমায় লিখছি।
জানি খুব ভালো আছো। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পর্যুদস্ত মেঘের ক্যানভাসে অনুপস্থিতি বিকেলের পড়ন্ত সোনালী রোদ্দুর আর পাখির আলাপন বেশ জমে উঠেছে এ নগরে খোলা আকাশে। আমি এখন তেইশের কোঠায় দাঁড়ানো তোমার অচেনা মায়াময় রূপের বাঁধনে আবদ্ধ বুক ভাঙা এক উম্মাদ যুবক। রঙ রূপ গন্ধ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমি অনুভব করেছি তোমায়। আমি তোমার সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত বিমোহিত। শুনেছি ভালবাসা নাকি সবকিছুরই দাবীদার, সে দাবীর দোহাই রেখেই বলছি,আমার চিঠির জবাব দাও।
তোমার ঐ অবয়ব রূপ বৈশাখ মাসের পাকা ধান ক্ষেতে তপ্ত গরমে হা করা ফাটা মাটিতে এক পশলা বৃষ্টির প্রথম পরশ। তুমি ফোটা হয়ে বর্ষিত হও আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চাইতেও অনেক গভীরে। সমুদ্রে ভাসমান আমার কিস্তি, কুল কিনারাহীন, ঠিকানা বিহীন, সঠিক সময়ে যদি কিনারায় না পৌছায় তাহলে ডুবে বিনাশ হওয়ার আশংকায় আমি আতংকিত। কবে কেথায় কোন কিনারায় আমার কিস্তি ভিড়বে কেউ জানেনা ওই উপরওয়ালা মনিব ছাড়া। তোমার হৃদয়পটের দ্বীপপুঞ্জে আহবানের অপেক্ষায় আমার কিস্তি। সেথায় নোঙর ফেলতে চায়। তুমি সাড়া দাও, আমি উদ্ধার হই।
গোধূলির ধুয়াশার কক্ষপথে কল্পনার সত্যে অবলোকনে তুমিময় একটি সন্ধ্যের অবসান। ভয় মানুষের চোখে নয়,ভাবনায় আর মনে। মেয়েদের সন্দেহ প্রবণতা যেন জন্মগত, তাই তোমাকে বোঝাতে পারিনি তোমাকে ভুলতে পারবোনা। মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী আমার প্রাণে অপলক চেয়ে মনের মাঝে সন্দেহের ঘুড়ির এলোমেলো উড়োউড়ি। বৃষ্টি আসলে মনে হয় আমি তোমার শূন্যতায় মৌনতা। এই জীবনের নবগঙ্গায় কাগজের নৌকোসম জীবন কিছুদূর গিয়েই ডুবে যায় স্রোতের ঘায়ে। এই শহরের নীলা আকাশে কত দৃশ্যের অবতারণা,সকালে একরকম বিকেলে আরেকরকম। তুমি স্বপ্নের মতো ইচ্ছে ছাড়াই দেখা দাও, ইচ্ছে হলেই চলে যাও।
প্রিয় সুপ্তিতা সন্ধ্যে হলে বড্ড একা হয়ে পড়ি রোজ, তোমার খুনঁশুটিতে আমি খুন হই প্রতিনিয়ত। জলকলস্কে ভেঙে যায় আমার স্বপ্নের দেয়াল, তোমার জন্য হাজারো রঙে গড়া আমার সব কাল্পনিক রোমান্টিক ছবিতা। তোমার আকাশ সমান মনের ঘরে আমার অনুভূতির আলো পৌছায় আর, সে আলো বড্ড ম্লান তোমার মনের মন্দিরে। পাঁজর পোড়া ঘ্রাণে তুমি আনন্দ পাও, আমারও ভালো লাগে বুঝি??
আঘাতের কষাঘাতে জন্মায় ভালবাসা। তোমাকে ভুলে থাকা যায় না এ শহরে। অধরা সুখ হাতড়ে বেড়ায় এই নগরের মোড়ে মোড়ে তুমি ধরা দিয়েও দাও না ধরা। মৃত্যশয্যায় ঘুমিয়ে থাকার অভ্যেস আমার আছে, যদি এই চিঠিটাই তোমায় লেখা শেষ চিঠি হয়। আমি কাছে এলেই হারায় আকর্ষণ, আর দূরে গেলে তুমিও রেখেছিলে আমার খোঁজখবর। দেখো ছেলেটা অনেকখানি বদলে গেছে, সেই আগের মত নেই। তোমায় ভালবাসি বিক্ষিপ্ত আত্মার ছলনাময় প্রলাপে দুর্বোধ্য তুমি, দুর্বোধ্যই থেকে যাবে। আমার মনে হয় তোমার অভিশাপের চেয়ে আমার দুরত্বটাই শ্রেয়। অতি যত্নে চোখের নিচে একটা জলের নদী বানিয়েছি, আমি সে জলে রোজ ভেসে যাই নৌকো হয়ে। ভালবাসা সে আলো লেগেছিলো তোমার চোখের আকর্ষণে। অনুভূতিগুলো শিশিরের মত ঝরে পড়ে আমার পুরনো টিনের চালে, ক্লান্ত নিমের গাঁ বেয়ে বেয়ে। অন্ধ কারাগার শিবিরে বন্দি যত আমার অভিমান,তোমার অভিমান আমার আকাশ সমান। আমার শূন্যতা হয়ত তোমাকেও কাঁদাবে, সে আমার মিথ্যে ভাবনা হলেও মোটেই যে সত্যি নয় তা হয়ত নয়। তোমার মন জয়ের যুদ্ধে আমি হয়ত পরাজিত নাবিক, জয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম সামান্য। তোমার মায়াভরা রূপ ফাঁদে আমি পা দেয়ার অপেক্ষায়।
সে অপেক্ষার প্রহর যেন গভীর সমুদ্রে আরো গভীরে প্রবেশ করছে। না পাওয়ার যন্ত্রণা আমার হৃদয়ের মারাত্মক ফাঁদ মনে হয়। হয়তো তুমি বলবে এসব নিছক পাগলামি। তবে আমি জানি, তোমার নীরবতা আমার জন্য কেবল বিভ্রান্তিই হবে।
তোমার অভিযোগ লিখতে লিখতে আমি চিঠির শেষ প্রান্তে, মস্তিষ্কের আটক করা শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, চোখে ঘুমের ছাপ নিয়ে এখানেই আজ সমাপ্তি দিব ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ভালো থেকো কল্পনার দুর্গেশনন্দিনী।
ইতি:
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া চিরকুট লেখক।
ছবি : মাদ্রাজ ভ্রমণে ব্লগ।
loading...
loading...
এই নিয়ে দুবার আপনার চিরকুট পড়লাম। কাল এবং আজ। সমান মুগ্ধতা নিয়ে। যখন পড়ছিলাম লেখকের জায়গায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। শব্দগুলি শ্বাসের উত্তাপে যেন বাষ্প হয়ে শুন্যে গেল; মেঘ হল; বৃষ্টি হয়ে আমাকে ভিজিয়ে দিলো।
বিষন্ন-সুখ নিয়ে গেলাম!
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় মিড ডে ডেজারট,ভালবাসা জানিবেন প্রিয়। আপনার সুন্দর মন্তব্য আমার জন্য উৎসাহ। আমার চিরকুট স্বার্থকতা পেয়েছে পাঠকের এমন মন্তব্যে।
loading...
শুভ কামনা ভাই
loading...
ধন্যবাদ প্রিয়।
loading...
'পর্যুদস্ত মেঘের ক্যানভাসে অনুপস্থিতি বিকেলের পড়ন্ত সোনালী রোদ্দুর আর পাখির আলাপন বেশ জমে উঠেছে এ নগরে খোলা আকাশে। আমি এখন তেইশের কোঠায় দাঁড়ানো তোমার অচেনা মায়াময় রূপের বাঁধনে আবদ্ধ বুক ভাঙা এক উম্মাদ যুবক।'
আপনার এই সরল সাহিত্যের মূল বলি আর উপজীব্য বলি, সেটা হচ্ছে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় সারল্য। অনুভবের এই অলংকারটুকু না থাকলে লেখক কখনও পাঠক অংশীদার হবেন না। আপনার জন্য একসারি সম্মান মি. শাহাদাত হোসাইন। শুভ সকাল।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয়, ভালবাসা জানিবেন। সবসময় চিরকুটের সাথেই থাকেন আপনি। সুন্দর মন্তব্য দিয়ে আমাকে সামনে লিখার উৎসাহ দেন,আপনার পরিশ্রম সফল হবে একদিন, যেদিন আমি আমার নোবেল একুশে বই মেলায় প্রকাশ করবো,আপনার মত একজন গুনি মানুষের কথাও সেই নোবেলে জায়গা করে নিবে। আমি কাছাকাছি আছি লিখার,শুধুমাত্র বাঁকা পথটি সোজা হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যাবে লিখা। কোন এক নেভী ক্যাপ্টেনের জীবনী চিরকুটের মাধ্যমে লিখা হবে। দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
loading...
আজকের চিরকূটেও মুগ্ধ হলাম শাহাদাত ভাই।
loading...
ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানিবেন প্রিয় সুমন আহমেদ।
loading...
শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় সাজিয়া আফরিন
loading...
অসাধারণ চিরকূট শাহাদাত হোসাইন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় সৌমিত্র, শুভেচ্ছা জানিবেন।
loading...
খুউবি সুন্দর লিখেছেন তো !! লেখা প্রথম পেজে নাই তো কি হয়েছে। আমরা যারা আপনার লেখার পাঠক, তারা ঠিকই খুঁজে নেবো আপনাকে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো দাদা।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় রিয়া,মন্তব্য পড়ে সহজেই অনুধাবন করা যায়,আমার চিরকুট বা লিখার প্রতি প্রবল ভালবাসা রয়েছে তোমার। ভালবাসা জানিবা ভাইয়ের ঠিকানা হতে
loading...
চিঠিতে রাশি রাশি ভালো লাগা রেখে গেলাম।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় মাহমুদ ভাই। ভালবাসা জানিবেন।
loading...
বাহ। বেশ লিখেছেন তো !!!!
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় আবু সাঈদ।
loading...
ওহে মেঠো পথের দুর্গেশনন্দিনী। অসাধারণ লিখেছেন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় শাকিলা তুবা।
loading...