ভারতীয়দের চোখে মুখে তাকানো দায়। তাদের প্রোফাইলগুলো থেকে ঠিকরে যেসব ছবি বেরুচ্ছে তা আমাকে কোনোভাবেই শান্তি দিচ্ছে না। ভারতীয়দের আমি আগাগোড়াই হিংসে করি যদিও এটা খারাপ অর্থে বোঝায় না। স্কুলে থাকতে অনুপ নামের একটা ছেলে ছিলো ক্লাসে। সত্যিকার অর্থে ফটোগ্রাফিক মেমোরী বলতে বোঝায় তার তাই ছিলো। তখন বাংলা ইংলিশ র্যাপিডে গল্প মুখস্থ করার চল ছিলো এবং দ্বিতীয় ও বার্ষিক পরীক্ষায় এসব গল্প লিখতে বলা হতো। আমি তো এমনি ছিলাম ১০ লাইনে গল্প শেষ করে দিতাম পুরো ৬ পাতার উপন্যাস। কিন্তু অনুপ যখন ক্লাশে দাড়িয়ে তোতাপাখির মতো দাড়ি কমা পুঙ্খানুপুঙ্খ ঠিক রেখে অনর্গল বলতো তখন হিংসে না করে উপায় কি! পরীক্ষার রেজাল্টের দিন যখন পিঠে ছালা বাঁধার চিন্তা করতাম বাসায় মাইরের যন্ত্রনা থেকে বাঁচবার জন্য তখন ছেলেটা পারফেক্ট স্কোর নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটতো। এরকম হিংসে করি ভারতীয়দের। তাই যত প্রোফাইল আছে সব ব্লক, ইমোর নম্বরও মুছতে শুরু করি যাতে বজ্জাত পোলাপানের হিস্টোরি দেখতে না হয়।
আজ তাদের মহা আনন্দের দিন যে চাঁদে অত্যাধুনিক রোবট পাঠিয়েছে এবং পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে তারা এই কাজটি করেছে। মঙ্গলের বুকে যখন চীন; ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবেধন এসা নিজেদের রোবটযান হুমড়ি খেয়ে ধ্বংস হয়, নাসা যেখানে তিনবারের চেষ্টায় সফল হয় সেখানে এই ব্যাটারা প্রথম চেষ্টাতেই সফল তাও সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তিতে।
আপনি হয়তো মনে করতে পারেন আমি নিশ্চয়ই খারাপ মানুষ। নিজের ব্যাপারে আমি বারংবারই বলি যেহেতু আমার ওপর ওহী নাজিল হয় নাই, তাই আমি মহাপুরুষ হবো কোন দুঃখে! নইলে দেশের পত্রিকা থেকে শুরু করে ফেসবুক প্রোফাইলের প্রায় অশিক্ষিত শিক্ষিত সবাই পড়ে আছে প্রিয়া সাহার বদনাম আর মাদ্রাসায় নিজের সন্তান কিভাবে তাদের পুটু রক্ষা করবে সেটা নিয়ে গভীর গবেষনায় লিপ্ত।
এখন ফিরে আসি অনুপ প্রসঙ্গে। অনুপ বারংবার প্রথম হলেও দ্বিতীয় হতো রাজকুমার। তার ফটোগ্রাফিক মেমোরী হলেও অনর্গল বলতে গেলে তাকে দু তিনবার থামতে হতো। তার শ্বাসকষ্ট ছিলো না যে দম নিতে হবে। কারন সে ক্রিকেট ফুটবলে স্কুলের টিমে প্রথম সারিতেই থাকতো। তাই বলা যায় তার বুদ্ধিমত্তা অনুপের থেকে কিছুটা কম। আর তৃতীয় হতো আমাদের সবেধন মুসলমানের বাচ্চা মাহী ওরফে আমিনুল ইসলাম বেগ। যারা পত্র পত্রিকায় চোখ রাখেন তারা হয়তো এই নামটা শুনে থাকবেন।
তখন ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কারনে ভারতের মর্দে মুমিনরা তাদের ঈমানী কাজ টিকিয়ে রাখতে দেশের সব মন্দির ভাঙ্গা শুরু করেছিলো। একদিন ছোট ফুপা বোয়ালমারী থেকে সকাল বেলা বাসায় আসলেন। আমি তো ছোট ফুপিকে দেখে বেজায় খুশী। ছোটফুপা রাতে আমাদের সাথে খাবার খেতে খেতে বললেন বোয়ালমারীর সব মন্দির ভাঙ্গা শেষ। এখন ফরিদপুরে কিছু বাকি আছে। তাই ফরিদপুরের ইমাম ও মাদ্রাসার নেতা সহ রাজনৈতিক নেতারা আশেপাশের অঞ্চল থেকে লোক ডেকে এনেছেন যাতে করে ফরিদপুরের মতো বিশাল এলাকার হিন্দুদের ঘর বাড়ী মাদ্রাসাগুলো ভাঙ্গা হয়। এটা শুনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আমি তখন বললাম ওরা কি দোষ করছে? আকাম তো করছে ইন্ডিয়া। আমাকে ফুপা ধমক দিয়ে বললেন ঈমানী দায়িত্বে কখনো পিছুপা হতে নেই। যদিও বাবা পুলিশী ভায় দেখালেন। তখন ফুপা যেটা বললো আরও ভয়ংকর। তারা নাকি ফরিদপুরের ওসির বাসায় কথা বলে এসেছেন। তারা প্রোটেকশন দিবে।
সে যাত্রায় অনুপদের বাড়ী বেঁচে গেলেও তাদের এলাকার মন্দিরটি রক্ষা পায়নি। অনেকদিন সেটা খালি জায়গা হিসেবে থাকলেও ২০০৩-৪ এর দিকে সেখানে বিশাল একটা চক্ষু হাসপাতাল করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভালো উদ্যোগ তাই না? কারন ঐ জমির মালিক সেই মন্দির ভাঙ্গার সময়ই ইন্ডিয়া ভেগেছে ভিটে বাড়ী না বিক্রি করেই। তার পরের বছর হিন্দু শিক্ষক কল্যান স্যার অসুস্থ থাকায় অনুপ রাজকুমারদের ইসলাম ধর্মের ক্লাশে আমাদের সাথেই বসে থাকতে হয়। এরকম মাঝে মধ্যেই হতো, কল্যান স্যার বড্ড ফাঁকিবাজ ছিলেন। তো নন্দাইলের ইউনুস ওরফে আমাদের ইসলাম শিক্ষার হুজুর হঠাৎ বইয়ের পড়া না ধরে ওয়াজ শুরু করলেন। নবী মোহাম্মদের গুন গান। সে কত ভালো মানুষ তাংফাং। যদি আমরা কয়েকজন মিলে খাতায় কাটাকুটি খেলছিলাম কিন্তু হঠাৎ ফার্স্ট বেঞ্চে অনুপ কি যেনো বলে বসলো এবং ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো। পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলে বলে, “অনুপ কইছে ইয়া মোর দ্বীনের নবি, তোমার বস্তার মধ্যে কি!” এটা শুনে নিজেই সেই হাসিতে যোগ দিলাম। হুজুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি পুরো কালো হয়ে গেছে। বেঞ্চে দুটি বাড়ি দিয়ে ক্লাশ শেষ করে চলে গেলেন।
এরপর পরের তিন দিন অনুপ ক্লাসে আসে নাই। বাবাকে এসে বাসায় বললে তিনি বললেন খবর নেবেন। বাবা খবর নিতে গিয়েছিলেন কিনা জানি না তবে পরের সপ্তাহে অনুপ আসলে সে প্রায় নিশ্চুপ ছিলো। কয়েকটা ক্লাস করেই চলে যায়। তাকে আর দেখিনি। অনেকদিন পর বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলে ওরা ইন্ডিয়া চলে গেছে। তবে অল্প কিছুদিনের জন্য।
সে অল্প কিছুদিন এখনো ফুরোয় নি।
বাংলাদেশের ১২৪এ ধারা অনুযায়ী প্রিয়া সাহা রাষ্টবিরোধী কাজ করেছেন কারণ তিনি এমন কিছু কথা এমন জায়গায় বলেছেন যেটা ওখানে বলা উচিত ছিলো না। তবে আমরা সকলেই জানি সেগুলো কতটা সত্য। বাংলাদেশে মোটেই অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। বিয়ের কাবিননামায় ৫ম অনুচ্ছেদ বাতিলের জন্য যেখানে আদালত বায়তুল মুকাররমের খতিবের কাছে মতামত জানতে চায়, যেখানে রাষ্টের মাথায় টুপি পড়ানো প্লেবয় স্বৈরাচারের মৃত্যুতে সবাই শোক প্রকাশ করে বা মদিনা সনদের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা আলোচনায় আনেন খোদ প্রধান মন্ত্রী সেটা রাষ্ট্র সংঘ হতে পারে না, গনতন্ত্র তো নই, একটা ভঙ্গুর থিওক্রেটিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়।
আরও একটা মজার ব্যাপার যেখানে সুন্নতী কর্ম পালন হিসেবে মাদ্রাসার হুজুরগুলো শিশুদের ধর্ষন করে সেই ধর্ষন থেকে বাচতে সেই সুন্নতি কাজ এবং শিশুকামী অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে শিশুদের লোহার ডাইপার (রূপকার্থে) পড়ানোর কথা প্রোফাইলে ভেসে উঠে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবার স্ট্যাটাসে তখন ভারতীয়দের ইসরার চন্দ্রাভিযান দেখলে হিংসা কেন করবো না বলেন একটু?
উল্লেখ্য অনুপ ভারতে গিয়ে ইকোনমিক্সে পাশ করে সেখানকার কাস্টমসের ট্যাক্স অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে এবং আমাদের আমিনুল ইসলাম বেগ ২০১৫ সাল থেকে জেল খানায় তার জঙ্গি কার্যক্রমের কারণে কারাভোগ করছে প্রায় বিনা বিচারে বা আইনী মার প্যাঁচে। আমিনুল ইসলাম বেগ নামে গুগল করলেই বেরিয়ে পড়বে আমাদিয়া ইশতিশাদী বা ফিদায়ী অভিযানের মতো ফরজে কিফায়া পালন করতে গিয়ে বেচারা কিভাবে জেলে পচছে!
আমাদের মতো ধর্ম প্রাণ নপুংসক বাঙ্গালীদের বরং সেটা নিয়েই আক্ষেপ করা উচিত!
হ্যাপী ব্লগিং।
loading...
loading...
কড়া ডোজের তিতা স্মৃতিকথার লিখাটি পড়লাম মি. উদাসী স্বপ্ন। নপুংসক জাতির অহংকার কথাটি বোধ করি রাষ্ট্র যন্ত্রের উপর বর্তাবে। প্রভাব পড়ে বিবেক অন্ধদের উপর।
পোস্ট অপ্রাসঙ্গিক বা ঠিক বললাম কিনা জানি না।
loading...
পরিসংখ্যানে প্রতিমিলিয়নে ভারতের চেয়ে ৫ গুম বেশী ধর্ষন হয় যদিও ভারতে যতগুলোর জন্য কেস হয় বাংলাদেশে তার তিনগুন কম। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পস্ট যে নৈতিক দিক থেকে আমরা কত উচ্চে অন্তত ধর্ষন করার ক্ষেত্রে। আর প্রশাসনিক শাসনের কি অবস্থা।
কল্পনা চাকমা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ৪ বছর আগে। একটু খোঁজ নেন কি অবস্থা। সীমা ধর্ষনের বিচার তো হয়েছে কিন্তু সেই সীমা যখন চাকরী পায়, আমাদের চারদলীয় জামাত ভাইদের কি হাহাকার। সরকারী দলই বা কম কি। কয়েকবছর আগে সাঁওতালদেরঘরে পুলিশ যেভাবে আগুন দিলো। অথচ সরকারী খাস জমিতে অবৈধ মসজিদ মাদ্রাসা বানালে সেখানে হাত দেবার সাহস নেই। তাদের যত সাহস সংখ্যালঘুদের ওপর।
এমন যখন দেশের চরিত্র, সেটা নিয়ে কিছু বললেই যখন দেখি বড় বড় কথা তখন একটা শ্লোকের কথা মনে পরে: ছাল নাই কুত্তার বাঘের ডাক
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
loading...
আপনার কথায় সর্বৈব বাস্তবতা আমার জীবনের অভিজ্ঞতায়ও আছে। মনে পড়ে …
loading...
তারপরও নির্লজ্জ জাতীর লজ্জা নাই। অথচ এরাই যখন পশ্চিমা দেশে গিয়ে মাইয়াবাজ আর মদ ও প্লাকার্ডের কার্ড ঘরে হালাল মাংস খুঁজে তখন মনে হয় জঙ্গি খুঁজতে সিরিয়া কেন যাবো…. কত কোটি কোটি জঙ্গির আধার। অথচ মামুরা ভুলেও সৌদী মাইগ্রেট করবে না
loading...
সব ঠিক হয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা করি। হ্যাপী ব্লগিং ভাই।
loading...
একসময় এই প্রত্যাশা ছিলো এখন মনে হয় দেশটা আফগানিস্তান সিরিয়া হবে শীঘ্রই
loading...
সবাই সবার জায়গায় ভাল থাকুক এই প্রত্যাশা করি সব সময়।
loading...
ধর্মের বেসিসে মানুষকে বিচার করলে বিদ্বেষ বাড়বে বৈ কমবে না এটা মানি কবি বোন। মানুষে ভালোবাসাই প্রধান। আগেই বলেছি আমার মন্তব্য পোস্ট প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। জঙ্গীবাদ বা জঙ্গীবাদীদের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। আমার আশেপাশে মুসলিম যারা রয়েছেন, আমি দেখেছি তারা কখনও ভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হবার চিন্তাই করে না। বহু মুসলিমকে নির্যাতিত হতে দেখেছি। ভিটে মাটি শূন্য হতে দেখেছি। তারপরও মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। তার দেশকে ভালোবাসে। মাটিকে ভালোবাসে।
আমি কোন ধর্মকে ডিফেণ্ড করছি না। বলতে চাইছি তথাকথিত স্বেচ্ছা পলায়নকারীদের বিপক্ষে। এই বিষয়টি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতর বেশী। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
loading...