শ্যামল দেখে, বাবা অন্ধকার কোনো কোণায় হাতজোড় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আচমকা মাওলানার পায়ে হাত দিয়ে ফেলে। জোব্বা ছায়া দ্রুত সরে যায়। তারা ছোটজাত। কুলীন মানুষের পায়ে স্পর্শ রাখা গর্হিত অপরাধ। এরপর কখন কীভাবে কী হয়ে যায়, শ্যামল বুঝতে না বুঝতে দেখে; বাবা কুণ্ডলিত কোনো প্রাণির মতো নিচে বসে আছে। তার দু-চোখে অশ্রুধারা দিঘি অথবা রক্তজবা আগুনের হলকা। মটরসাইকেল আবার ভূমিকম্প তোলে। অন্ধকার থেকে অন্ধকারে বেরিয়ে যায়। শ্যামল কোনো ধুলোরেখা দেখতে পায় না। দেখা যায় না। তার শেখা প্রথম অপমান। বুকে দাগ কেটে জেগে ওঠা আগুনের শিখা। আগুন জ্বলে। অহর্নিশ জ্বালায়। জ্বলতে থাকে। কিছুতেই নেভে না। তারপর থেকে থেকে জানান দেয়, সে আছে, চলে যায়নি; একদিন বেরিয়ে পড়বে। দা’এর চকচকে ক্ষুরধার কোণায় কোণায় প্রতিফলিত প্রতিটি দিন এবং রাত নিশ্চুপ মহাকাব্যের বিষাদ শ্লোকগাঁথা। বাবার জন্য মন পোড়ে। সেই মানুষ সারাদিন সারারাত ঘরের কোণায়, আঙিনায় নিম বা মেহগনি ছায়ার নিচে পড়ে থাকে। ছানিঘোলা দৃষ্টিতে কাউকে চিনে নেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা। নাকি কোনো অভিযোগ বা বিচারহীনতার বিশুষ্ক অপমান প্রতিবাদ অবগাহন কে জানে। শ্যামলের দু-চোখ ভিজে আসে।
কোমরের সঙ্গে বেঁধে রাখা পুটলি। শ্যামলের অস্তিত্ব মূলধন। লক্ষ্মী বার বার সতর্ক করে দেয়, দেখেশুনে যেও। পথঘাট ভালো নয়। কেউ কিছু খেতে দিলে খেও না। শ্যামল কথা রেখেছে। কথা রাখে। রাস্তায় নেমে টাঙায় বসে কতবার সকলের অলক্ষ্যে টাকার স্পর্শ মনে নেই। এবার লুঙ্গির বাঁধন আলগা করে পুটলি খোলে। কাগজের কতগুলো নোট। তেল চিটচিটে ঘামে ভেজা স্যাঁতসেতে নোটের মধ্যে দু-একটি চকচকে রং ঝিলিক মারে। চোখে উৎকট লাগে। টাকা তবু টাকা। মন ভালো করে দেয়। মন ভালো হয়ে যায়। এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে কিছু কিছু মানুষের বিত্ত-বৈভব-ঐশ্বর্যের ঝকঝকে জীবনযাপন যেমন, ভালো লাগে, দু-চোখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতে সাধ হয়; শ্যামলের ঘামভেজা ভাঙাচুরা বেঁচে থাকা ময়লা-আবর্জনা। সে চকচকে টাকা নয়। টাকার মূল্য আছে। তার নেই। টাকা হলো ঈশ্বর। তিনি এই বিশাল পৃথিবী চালান। ভালো-মন্দ ন্যায়-অন্যায় সকল কাজ সকল বিচার তার হাতে।
শ্যামল টাকা গোনে। এক-দুই-তিন। তাক ধিনা ধিন ধিন। মানুষ নাচে। টাকা নাচায়। টাকায় সুখ…মানুষের মুখ। সেই চেহারায় থাকে আনন্দ-হাসি। বেঁচে থাকা স্বর্গসুখ। শ্যামল নরকের কীট। অস্তিত্বের শবাধারে মৃত জঞ্জাল। তার দৃষ্টি বিষণ্ন-উদাস। সে টাকা মানুষের হাতে তুলে দেয়। বুড়োর দু-হাতের মুঠোয় সুখ-আনন্দ। শ্যামলের হাতে কী? উলুফুলের ঝাড়। কাশখড়ের আঁটি। সে শুকনো গাদা টাঙায় তোলে। তাকে যেতে হবে সাত ক্রোশ পথ। দূরের রাস্তা…ধুলোওড়া বালুরাঙা শূন্য তেপান্তর। মাথার উপর রোদ। গনগনে আগুন। সূর্য যেতে যেতে ডুবতে শুরু করে। আগুন নিভে যায়। ফেলে রাখে কাঠ-কয়লা-ছাই জীবন। শ্যামলের মনে আগুন নেভে না। কোনোদিন উসকে ওঠে। কত ছবি ভেসে যায়। আঙিনার উত্তর কোণায় নিমগাছের ছায়ায় শুয়ে থাকে বাবা। মেহগনির দু-একটি বৃন্তচ্যুত পাতা দড়ির খাটে সঙ্গে শুয়ে থাকে। অনেক দূরে শ্যালো-মেশিনের ধুক ধুক শব্দঢেউ। কারও ক্ষেতে নেমে যায় শীতল জলরাশি। বাবা কি ছানিঘোলা বোবা দৃষ্টি তুলে দেখে যায়? জলঢেউয়ের গান শুনে হারানো দিনের কোনো ছবি আঁকে? শ্যামল পারল না। সে পারে না। সেই দৃশ্যছবির মধ্যে অসহায় কোনো কান্না বাতাসের শব্দে মিশে যেতে যেতে দীর্ঘশ্বাস হয়। মনের দেয়ালে আছড়ে পড়ে। সে পালিয়ে আসে। তখন লক্ষ্মী উনুনের ধূসর ছাইয়ে তাকিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখে যায়। তাদের আগামী দিন। শ্যামলের দৃষ্টিতে কোনো আলোছায়া দৃশ্যছবি উঁকি মারে। একটি শিশু আঙিনায় হেঁটে বেড়ায়। তার কোমরের ডোরে সাতফোঁটা পাথরের মাদুলি রোদে ঝিলিক দেয়। শ্যামলের চোখে-মুখে। তার মন-উন্মন অস্থির। লক্ষ্মীর বেশি দেরি নেই।
‘চাচা এই দিনু। এর বেশি দিতে পারমু না বাপ। বেচাবিক্রি নাই।’
‘কি যে বুলছিস ব্যাটা। একেকটা ঝাড়ুর দাম আট-দশ ট্যাকা। তুর ট্যাকা হবে না ক্যানে?’
‘না গো চাচা ব্যবসাপাতি নাই। মানুষজন তো পিত্তিক হাটে ইসব কেনে না। জিলিপি-বুন্দিয়ার দোকান? চায়ের দোকান দিলি পরে কিছু ট্যাকা হয় বটে।’
‘তা তুই দিবার পারিস ভাতিজা। একটো দোকান দিয়ে ফ্যাল্।’
‘ছোটজাত গো। এই হাতে জল খাবি মানুষ? ওমহরা মোর ঝাড়ু কিনবি। বাখ্যান করবি। সেই ঝাড়ু দিয়া জঞ্জাল সরাবি।’
বুড়োর নিষ্পলক দৃষ্টি কি কেঁপে ওঠে? শ্যামল বুঝতে না বুঝতেই আচমকা দমকা বাতাস। আগুনতাপ ঢেউ। মাঠের ঘাস পোড়ে। ক্ষেতের পানি সরসর করে নিচে নেমে যায়। বাতাসের সঙ্গে উড়ে উড়ে মেঘে মেশে। কাদামাটি ফেটে ফেটে নিষ্প্রাণ চৌচির। ক্ষেতের বুকজমিনে কোনো ক্ষত অভিমান। মানুষের চেহারায় তেমন প্রত্নতাত্ত্বিক চিত্রপট। জাতপাতের কুলীন সীমারেখা। আগুন তাকে পোড়াতে পারে না। শ্যামল ঝাড়ুর কারিগর। একসময় ঘরামির কাজ ভালো শিখেছিল। পাঁচ আঙুলের ডগায় নতুন খড়ের আঁটি ধরে ধরে সুতলিতে বেঁধে গেছে মনোরম ছাউনি। সেই ছায়ায় মানুষ শুয়ে থাকে। আরামে ঘুমোয়। কারও জীবনের সকল দিনরাত সুখ-আদরে কেটে যায়। তখন কোনো জাত বিচার থাকে না। শ্যামল জমিতে ধানচারা রোপণ করে। নিড়ানি দেয়। আগাছা উপড়ে ফেলে। শক্তিশালী নষ্ট মানুষের দাপট উপড়ে ফেলতে পারল না। অবশেষে জমি ছেড়ে দিনমজুরের রাতদিন। ঘরামির কাজ। এখন সে ঝাড়ু তৈরি করে। সারাদিন একা একা উলুফুল আর কাশখড়ের নকশি গাঁথে। সুতলিতে চেপে চেপে বেঁধে দেয় মজবুত গিঁট। লক্ষ্মী কখনো সঙ্গ দেয়। সারাদিন খেটে খেটে তৈরী হয় ঝাড়ুর স্তূপ। তারপর হাট-বাজার, রাস্তায় রাস্তায় ফেরি; শহরের দোকানে দোকানে দেয়া। অলিগলি বাড়ি বাড়ি হাঁকডাক। মানুষ কেনে। তারা ঘরদোর আঙিনা পরিষ্কার রাখে। পরিচ্ছন্ন সুখী জীবন। শ্যামল সকল জঞ্জাল সরিয়ে ধরে রাখে নিজের জীবন কাহিনি। জীবনের যত জঞ্জাল। অভিমান চোখের ম্লানরেখায় সভ্যতার আদিগন্ত ভেদাভেদ, দুঃখ-কথা; প্রবঞ্চনা ইতিহাস।
তখন টাঙা ছুটে চলে। প্রলম্বিত দীর্ঘ পথ। কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? আকাশ দিগন্ত প্রান্ত-সীমানায়। দূর-অতিদূর তপ্ত বাতাসের দিশেহারা মায়াঘোর ছায়া। চোখ ঝিলমিল করে। অনেক উঁচু শূন্যে দু-একটি চিল ভেসে ভেসে ঘুরপাক খেতে থাকে। শ্যামল নিজেকে খড়ের স্তূপে এলিয়ে দেয়। কাঁধ থেকে গামছা টেনে চোখে-মুখে ছড়িয়ে রাখে।
শ্যাওড়াতলা তালদিঘির জলে ঝপাত করে নেমে পড়ে কেউ। চারপাশে ছলকে উঠে জলতরঙ্গ রংধনু। শ্যামল চমকে ওঠে। নিশ্চয়ই বড় কোনো রুই-কাতলা অথবা আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো গাছের ডালাপালা। সে হত-বিহ্বল স্তম্ভিত। মা-বাপের বারণ, দুপুর রোদে তালদিঘি ঘোরা যাবে না। সেখানের বাতাস ভালো নয়। বাতাসের ঢেউয়ে অপচ্ছায়া বিড়বিড় গুঞ্জন। শ্যামল কোনোদিন শোনেনি। সেদিন কি হলো? ভয় পেয়েছে? বাঁশঝাড়ের গহিন ছায়ায় সবে ফাঁদ পেতে রাখল। যদি একটি বালিহাঁস কিংবা বনবিড়াল ধরা দেয়। শ্যাওড়ার শাখায় শাখায় পাতার ফাঁকে প্রগাঢ় অন্ধকার। কেউ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। বাতাসের ঢেউয়ে অশরীরি ফিসফিস কী কথা বলে যায়। সে সত্যি চমকে ওঠে। দিঘির জলে নেচে চলে সূর্যের সাতরং। ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে চোখধাঁধানো স্ফুলিঙ্গ। নিজের মধ্যে মগ্ন আনমনা এক জলপরি জলের বুকে সাঁতার কাটে। কি মসৃণ কেটে যায় জলের পাতলা শাড়ি। কে…কে সেই মায়াবিনী? শ্যামলের ভয় ভয় দৃষ্টিতে কৌতূহল নেচে যায়। ফ্যাকাশে বিবর্ণ চেহারায় উৎসুক জিজ্ঞাসা। একটু হেঁটে এসে খুঁজে ফেরে জলের কিনার। জলঢেউ রেখা। কেউ তো নেই। তখনো বাতাস ধরে রাখে চঞ্চল জলের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। ঢেউয়ের বৃত্তাকার রেখায় প্রতিবিম্ব কারও। ক্রমশ সকল মায়াভ্রম ভেবে ঘুরে দাঁড়াতে যাবে, আড়ালের ছায়া থেকে কথা বলে ওঠে কেউ। সেই কি একজন, যে মানুষ কিংবা সে জানে না, কে সে; চকিতে ধরা দেয় দৃষ্টিরেখায়।
‘জাহানাক্ এম নামকেদায়া সেয়ান হড়?’
(কিছু পেলে গো সেয়ানা মানুষ?)
‘ওকোয়? ওকোয় রড়েদা?’
(কে? কে কথা কয়?)
‘ইঞকান গিয়াঞ য়া।’
(মুই গো মুই।)
‘ওকোয়? লক্ষ্মী! আম ননডে দ চেদাক্?’
(কে? লক্ষ্মী! তুই এখেনে ক্যানে?)
‘ননডেনাক দাক্ দ আডি রেয়াড়গেয়া।’
(এখেনের জল বড়ই শীতল।)
‘আমাক্ হড়ম রেয়াক্ সেংগেল দ আড়িচ্এনা?’
(তো শরীরের আগুন নিবেছে?)
‘মেন! আম দ চালাকমেয়া…বাবাহড়কো তাহেন খান চেকাতেঞ উমোক্ আ?’
(হুঁ! তুমি যাও গো…পুরুষমানুষ থাকলে নাইতে পারি?)
‘তালেপুখরি দ মেনখান ভাগে জায়গা দ বাংকানা।’
(তালপুকুর কিন্তুক জায়গা ভালো লয়।)
‘চেদাক্ ভূতকো সাসাপ আ?’
(ক্যান্ ভূতে ধরবি?)
‘ইঞগেঞ সাপ্মেয়া। অকয় হো বানুক্কোয়া।’
(মুই ধরিম। কাঁহো কুথি নাই কো।)
‘হি হি হি বদমাশ কানাম…শয়তান দ! চালাক্মে অকাতেম চালাক্আ।’
(হি হি হি বদমাশ…শয়তান! যাও য্যাঠে যাবার যাও।)
‘নক্অয়ইঞ দনকেদা! হু য়া ও!’
(এই দিনু ঝাপ। হু য়া ও!)
‘আম দ একাল বাম বুজহাউআ চালাক্মে দো আমাক্ কামিতে।’
(এই যা যা তুর কাজে চলি যা।)
‘নাসোয়াক্ ওনডংলেনমে নেলালমগেঞ।’
(একটু বেইরা না ক্যানে, তোক দ্যাঁখো।)
‘ছি ছি ছি চালাক্মেয়া সেয়ান হড় কানাম।’
(ছি ছি ছি তুমি যাও গো সেয়ানা মানুষ।)
‘মিতুম বাম নামলেদা? তালারে মিত্-বার চানদো মেনাক। ইনা তায়োম আঘন।’
(তুই নাম নিতি পারলিনি? মধ্যত্ দু-একটা মাস। তারপর আঘন।)
‘আয়মা মাহা মেনাক্আ য়া।’
(ম্যালা দিন পইড়ে রইচে গো।)
‘ওনাগেঞ মেনা…লক্ষ্মী ও লক্ষ্মী…।’
(তাই তো কই…লক্ষ্মী ও লক্ষ্মী…।)
দিঘির পাড়ে জল-নতমুখি ঝোপ কেঁপে ওঠে। কপট হাসির আশকারা ঝংকার। গামছা-লাল কোনো জলঢেউ অপাঙ্গে ঝিলিক মারে। শ্যামলের প্রবল ইচ্ছে, নির্জন-নিরিবিলি দুপুরের প্রান্তে জাপটে ধরে মৎস্যকন্যা। দিঘির মধ্যখানে, যেখানে ওই পাড়ে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের শিখরছায়া কেঁপে কেঁপে নেমে গেছে; তাকে টেনে যায়। সে পারে না। তার বুক কাঁপে। গলা শুকিয়ে যায়। আকাশের তপ্ত রোদে চোখে জ্বালা ধরে। দিঘির হিমশীতল স্পর্শ বাতাসে দোলা ছড়ায়। সে নিজেকে অথবা তাকে কম্পনের ভগ্নাংশ হতে বাঁচাতে রাস্তায় নেমে পড়ে। দূরে ইটভাটা। কালো চিমনি দিয়ে ধূসর-সাদা ধোঁয়া বেরোয়। নীল আকাশের বুকে ভেসে ভেসে দিগন্তে মেশে। সে পুবে ক্ষেতের সামনে গিয়ে কী ভেবে পেছন ফিরে তাকায়। নিষ্পলক খোঁজে কাউকে। আহা এক জলপরি কত অবলীলায় জলে মেতে উঠেছে। বাতাসে ভেসে আসে জলখেলার শব্দঢেউ।
এমন সেই আবেগ-ভালবাসার দিনক্ষণ কত সহজে ফুরিয়ে যায়। তখন লক্ষ্মী ঘরে এসেছে। কত রাত মৌন-মুখর-শব্দমালায় কেটে গেল। নিরিবিলি নির্ঘুম শব্দকথন। জোছনারাতে কত সময় এসে দাঁড়িয়েছে কদমের ছায়ায়। সে হলো তেপান্তর জাদু-কাহিনি। জীবনকে নতুন করে দেখা। নতুন আলোয় পাওয়া। একজন আর একজনকে বুঝে নেয়ার সময়কাল। লক্ষ্মীর মা-বাবা সকলে রাজশাহি চলে গেছে। শ্যামলের মা নেই। বাবা একলা মানুষ খুব দ্রুত বুড়ো হয়ে গেল। সারাদিন কোথায় থাকে, কোথায় যায়, কোথায় ঘোরে; শ্যামল জানে অথবা জানে না। সে কী করে? দু-দণ্ড সময় নিজের জন্য নেই। কাকভোরে চলে যায়। মানুষের কাজ করে। ফিরে আসতে আসতে সন্ধেরাত। তারপর খুঁজে ফেরা। বাপ গেল কই? কোনোদিন নদীর পাড়, বাঁশঝাড়ের অন্ধকার ছায়ায়; অথবা সেখানে যেখানে মানুষ ফিরে ফিরে আসে। বাবাকে কোন্ মায়া টানে! কেন? এত মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? যা চলে যায়, চলে যেতে দাও; কোনোকিছুই তো ধরে রাখা যায় না। সে আলগোছে বাবার কাঁধে হাত রাখে। মানুষ উদাস-বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুরে দাঁড়ায়। শ্যামল দেখে, একখণ্ড জমি, শস্যক্ষেত; একদিন তাদের ছিল। সেই বাবা আকস্মিক বিছানায় পড়ে গেছে। সেদিন রাতদুপুরে চিৎকার আর্তনাদ। শ্যামল ছুটে গিয়ে দেখে, বাবা মেঝেতে পড়ে অস্থির লুটোয়। মেঝেয় জলকাদা শুকিয়ে গেছে প্রায়। আবদ্ধ হালকা ঝাঁজগন্ধ। অন্ধকার ছায়ায় তার বাঁ-চোয়াল ঝুলে গিয়ে মুখ-চোখ বাঁকা অদ্ভুত লাগে। দরজায় দাঁড়িয়ে অবাক-বিষ্মিত লক্ষ্মী। ভয়ার্ত নিশ্চুপ।
(চলমান)
loading...
loading...
অপার বিষ্ময় নিয়ে বড় গল্পের তৃতীয় খণ্ড পড়লাম মাহবুব আলী ভাই। গল্পের পেটের কাছাকাছি এসে মনে হলো এই পর্বেই শেষ হয়ে যাবে। শেষে দেখি চলমান। ওকে।
loading...
আশা করছি দু-একটি পর্বে শেষ হয়ে যাবে। গল্পের মধ্যে সাঁওতালি কথোপকথন থাকায় দীর্ঘ হয়েছে। এই বিষয়ে মতামত প্রত্যাশায় এটি দেওয়া। ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
loading...
সংলাপ গুলোন পড়ার সময় আমি তো ভয়ের মধ্যেই ছিলাম। ভাগ্যিস বঙ্গানুবাদ জড়িয়ে দিয়েছেন !!
এই পর্বের শেষের দিকে … শ্যামল দেখে, একখণ্ড জমি বাক্যটিতে শ্যামল দেখে, একখ- জমি হয়েছিলো। এডিটিং প্যানেলে গিয়ে ঐ শব্দ খুঁজতে আমারও বিপদ বাড়িয়েছেন আপনি। এনিওয়ে অল দ্য বেস্ট। 
loading...
আপনার প্রতি গোড়া থেকেই বিশেষ মুগ্ধতা কাজ করে। তারপরও এই লিখাটি আমার কাছে বিশেষ মানের মনে হচ্ছে। চলুক মাহবুব আলী ভাই।
loading...
অনেক ধন্যবাদ সুমন আহমেদ, প্রিয় কবি। আপনার বিমুগ্ধ ভালবাসা অক্ষয় হয়ে রইল মনের কোণায়।
loading...
এই পর্বটিও অসাধারণ লিখেছেন পড়লাম।
loading...
নতুন কোনো চরিত্র পেলেন কবি? আপনার পাঠ আমার অনুপ্রেরণা। শুভেচ্ছা জানবেন।
loading...
এতোটাই সুন্দর যে, প্রতিটি লাইন যেন দুবার করে পড়তে ইচ্ছে হলো ভাই।
loading...
আহা বেশ! ভুল-ত্রুটি-অসঙ্গতি দেখলে ভালো হয়।
loading...
মন্তব্য করার অনেক আগেই পড়ে নিয়েছিলাম। গল্পটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
loading...
আমার মন ভরে গেল।
loading...
শ্যামলের হাতে উলুফুলের ঝাড়। কাশখড়ের আঁটি। সে শুকনো গাদা টাঙায় তোলে। তাকে যেতে হবে সাত ক্রোশ পথ। শেষে চমক রেখে দিলেন মাহবুব আলী ভাই।
loading...
অনেক ধন্যবাদ হরবোলা। নাটকীয় আর সিনেমেটিক কাহিনি। ডায়লগ কেমন লাগছে বলবেন।
loading...
অস্সাধারণ দাদা। নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমাকেও বিবেচনায় আনতে পারেন।
loading...
আপনার মন্তব্যই আমি খুঁজি। হয়তো আপনার ব্লগ আর কবিতায় যেমন মুগ্ধতা থাকে। শুভকামনা।
loading...