অপু ও একটি আহত পাখি

একদিন বিকেলে ঘনকালো আকাশ।
চার দিকে ভীষণ ভাবে অন্ধকার হয়ে আলোকিত দিনটাকে যেন গিলে ফেলছে কোন এক অশুভ শক্তি। দিকে দিকে সবাই এক অজানা আশংকায় ভীত !

কালবৈশাখী ঝড় হলো। অপুদের বাড়িতে অনেকগুলো আম গাছ। ঝড়ে গাছের নিচে ঝরা পাতা আর ছোট বড় কাঁচা আমে একাকার হয়ে আছে আমতলা। গাঁয়ের শিশু কিশোর সবাই আম কোড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ছোট গর্তে বৃষ্টির ঘোলা পানি জমে আছে। ঐসব পানি ভরা গর্তের কিনারে গেঁ-গোঁ গেঁ-গোঁ করে গাল ফুলিয়ে ছোট বড় ব্যাঙ ডাকছে। কোথাও ঝি ঝি পোকা গান ধরেছে। কি এক চমৎকার কলরব শোনা যাচ্ছে চতুর দিকে!

ঝড়ের পরে গা শির-শির করা শীতল বাতাসে অপু হাটছে আর এসব দেখছে। এসব দেখে সে খুব মজা পাচ্ছে। ওদের বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে হেটে যেতেই ওখানে গাছের নিচে ঝরে পড়া অনেক পাতার স্তুপের সাথে চুপ করে একটি অসহায়ের মতো ঘুঘু পাখি বসে আছে। পাখিটা দেখে সে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে ধরতে গেলো। না, এটা উড়াল দেয়ার কোন চেষ্টাই করল না । অতি অসহায়ের মতো এটার চোখ দু’টু এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছে। অপু পাখিটাকে আলতো হাতে ধরে হাতে উঠালো। পাখিটার ছোট্ট শরীরটার কুসুম গরম তাপ তার হাতে অনুভূত হলো। ছোট্ট বুকটার ভিতর কি যেন একটা ধোক ধোক, ধোক ধোক করে তার হাতে স্পর্শ করছে বারবার। ছোট্ট অপুর বুঝার বাকি রইলো না। এটা পাখিটার হৃদপিন্ড। ঝড়ে আহত হয়ে প্রাণ ভয়ে এটার হৃদপিন্ডটা এখন এভাবে ধোক ধোক করে কাঁপছে। এই অসহায় পাখিটার জন্য তার খুব মায়া হলো । সে এটাকে আলতো করে হাতের অঞ্জলিতে বসিয়ে বাড়ি নিয়ে এলো।
সে ভাবলো, এটা হয়তো বা তার সাথিটার জন্যই কাঁদছে। সাথিটা কী বেঁচে আছে, না মড়ে গেছে কে জানে! এখন আমাকে পাখিটাকে যত্ন করে বাঁচাতে হবে। পাখিটাকে ফিস ফিস করে সে বললো- তুই এভাবে বুক ধুক ধুক করে কাঁপছিস কেন! শোন! তোর কোন ভয় নেই। আমি আছি না!
আমি তোর বন্ধু। তোর কোন ক্ষতি হতে দেবো না কী আমি? দেখিস, তুই ঠিকই একদিন ভালো হয়ে উঠবি। আবার পাখা ঝাপটিয়ে আগের মতো উড়াল দিতে পারবি। কক্ষনো তোকে আমি খাঁচায় বন্দি করে রাখবো না।
অপু দেখলো, বাতাসের ঝাপ্টায় পাখিটার ডানায় একটু রক্ত জমে আছে। হয় তো বা এটার ব্যাথায় পাখিটা অস্থির হয়ে আছে। সে এটাকে একটি খাঁচায় পুড়ে ঘরের এক কোনে যত্ন করে রাখলো। একটি বাটিতে খাবার ও অন্য একটি বাটিতে পানি ভরে খাঁচার ভিতর রেখে দিলো। পাখিটা খাচ্ছে না। আবার একটু পরে দেখলো; না, এবার একটু একটু ঠোকরিয়ে খাচ্ছে। অপুর মনে খুব ভালো লাগছে। এক দু’দিন এভাবে রাখার পর, দেখলো পাখিটা কেমন যেনো প্রাণবন্ত ও চঞ্চল হয়ে উঠছে। সে খাঁচার কাছে যায়, পাখিটা কেমন যেনো দুচোখে কৃতজ্ঞতা ভরে বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে। এসব দেখে অপুর মন এক নিটোল আনন্দে ভরে উঠল।
পাখিটা এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। এটা আর খায় রাখা ঠিক হবে না। ওকে খাঁচা থেকে বের করে আনলো। দেখলো এটা উড়াল দিয়ে যেতে পারে কী না। না, আর কোন ভয় নেই। এটা এখন সম্পুর্ণ সুস্থ। পাখিটাকে আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে মৃদুস্বরে অপু বললো, যা বন্ধু! তুই এখন সুস্থ। তোর কোন ভয় নেই এখন আর। তুই এখন তোর সাথিকে গিয়ে খুঁজে বের কর। পাখিটি আনন্দে পাখা ঝাপটিয়ে আকাশে উড়াল দিয়ে চলে যাচ্ছে। অপু এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাচ্ছে মনে। অপু পাখিটিকে ডেকে বললো- এই শুন……ভালো থাকিস বন্ধু!, আমাকে ভুলে যাসনে যেন ………!

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১২ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. রিয়া রিয়া : ২২-০৬-২০১৯ | ০:৩৬ |

    ব্লগে আজ দেখলাম অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন অথচ কেউ কারু পোস্ট পড়েছেন বলে মনে হলো না। কেননা পাঠক মন্তব্য নাই। যাই হোক আপনার প্রত্যাশায় শুভকামনা প্রিয় কবি দা।

    GD Star Rating
    loading...
    • এইচ এম শরীফ : ২৫-০৬-২০১৯ | ২২:৪৩ |

      অনেক দেরি হয়ে গেলো রিয়াদি।

      অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

      শুভেচ্ছা জানবেন সর্বদা।

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ২৪-০৬-২০১৯ | ১০:৫০ |

    অণুগল্পটি পড়লাম মি. এইচ এম শরীফ। ধন্যবাদ আপনাকে।

    আমি জানি আপনি ব্যস্ত থাকেন; তারপরও খানিকটা সময় শব্দনীড়ে দিলে খুশি হবো।

    GD Star Rating
    loading...
    • এইচ এম শরীফ : ২৫-০৬-২০১৯ | ২২:৪০ |

      কাছাকাছি পাশাপাশি থাকতে ভালোবাসি;

      তাইতো সবাই শব্দনীড়ে ঘুরে ফিরে আসি।

      শব্দনীড়ের স্পর্সের বাইরে থাকায় অত্যন্ত দুঃখিত আজাদ ভাই।

      ভালো আছেন আশা করছি দাদা। শুভেচ্ছা জানবেন অহর্নিশ।

      GD Star Rating
      loading...
  3. সুমন আহমেদ : ২৪-০৬-২০১৯ | ১১:৫৯ |

    ভালো লিখেছেন কবি শরীফ ভাই। 

    GD Star Rating
    loading...
    • এইচ এম শরীফ : ২৫-০৬-২০১৯ | ২২:২৯ |

      অসংখ্য ধন্যবাদ সুমন ভাই। শুভেচ্ছা জানবেন অনেক।

      GD Star Rating
      loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৪-০৬-২০১৯ | ১৩:২৫ |

    সুন্দর একটি অণুগল্প উপহার দিয়েছেন কবি শরীফ ভাই। ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • এইচ এম শরীফ : ২৫-০৬-২০১৯ | ২২:২৮ |

      সুন্দর মন্তব্যে মন ভরে গেলো সৌমিত্রদা।

      শুভেচ্ছা জানবেন দাদা।

      GD Star Rating
      loading...
  5. শাকিলা তুবা : ২৪-০৬-২০১৯ | ২০:১৫ |

    মায়াভরা একটি লিখা। ভালো লিখেছেন শরীফ ভাই। 

    GD Star Rating
    loading...
    • এইচ এম শরীফ : ২৫-০৬-২০১৯ | ২২:২৫ |

      সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম।

      শুভেচ্ছা জানবেন কবি শাকিলা তুবা।

      GD Star Rating
      loading...
  6. শান্ত চৌধুরী : ২৬-০৬-২০১৯ | ১৯:২২ |

    অসাধারণ লিখেছেন ।

    ধন্যবাদ ও শুভ কামনা ।

    GD Star Rating
    loading...
  7. শান্ত চৌধুরী : ২৯-০৬-২০১৯ | ১৭:০১ |

    খুবই সুন্দর লিখেছেন প্রিয়। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

    GD Star Rating
    loading...