ইন্দু মেয়ের রুমে ঢুকে দেখে -রাহিন ফোন কানে নিয়ে বেসুরে গাইছে, “চূড়া লিয়া টু নে দিল কো”। পরীক্ষা চলছে। দুইদিন বাদে আর একটা পরীক্ষা যে মেয়ের, সে মেয়ে নিশ্চিন্তে ফোন কানে পেতে গান গাইছে। ইন্দুর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে, বহু কষ্টে রাগ সামলে ইন্দু মেয়েকে বললো, কার সাথে কথা বলিস এত রাতে ? রাহিন গানের সুরে মা কে বলে, গান শুনি মা। তুমি শুনবে ?
ইন্দু ছেন ছেন করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আজ ইন্দুর মেজাজ কিন্তু সপ্তমে। রাহিন পড়া শেষ করে সেহরির সময় সবাইকে জাগিয়ে দিয়ে তারপর ঘুমোতে যাওয়ার কথা। ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন। রাহিন পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে, বাড়ির কেউ আজ সেহরি করেনি। বাকিদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না, ইন্দু সেহরির সময় প্রতিদিন প্রেশারের ওষুধ খায়। আজ সে সুযোগ হয়নি। সকাল থেকে তাই আজ রাহিনদের বাড়িতে হট্টগোল; ইন্দু একটু একটু পর অস্থির বোধ করছে। ইন্দু জানে প্রেশারের ঔষধ না খেলে তার প্রেসারে বেড়ে যায়। আজ বাড়ছে না। কেন প্রেসার বাড়ছে না তাই নিয়ে অস্থির ইন্দু। মাথায় এক গাদা তেল দিয়ে ফেনের নিচে বসে আছে।
ওপাশের রুম থেকে, ইন্দুর স্বামী, টিটকারির সুরে বলছে, ওগো তোমার শরীর তো বেজায় খারাপ, চলো তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতাল নিয়ে এই বাড়িতে প্রায় মজার মজার ঘটনা ঘটে। ইন্দু যখনি সবার মনোযোগ চায়, তখনি তার প্রেশার উঠে। একা একা হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সবাই বোঝানোর চেষ্টা করে … আপা আপনার কিছুই হয়নি, বাড়ি যান। ইন্দু হাল ছাড়ে না। যদি প্রেসার বেড়ে যায় তাহলে এক রাত থেকে যাবে। এই চলছে, মমতাময়ী ইন্দুর জীবনে।
রাহিন মোটেও গান শুনছে না। রাত যতো বাড়ে রাহিনদের আড্ডা ততো জমে উঠে। রাহিন এতক্ষণ গ্রুপ কলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। মা রুমে ঢুকলেই, সে আনমনে গান গায়, ফোনের বন্ধুরা বুঝে গেছে, রাহিন গান ধরলে বুঝতে হবে মা রুমে আছে। ওপাশ থেকে সবাই চুপ করে যায়। রাহিনের নতুন বন্ধু ভীষণ দুষ্ট, সে মাঝে মাঝে ফিশফিশিয়ে বলে, দে ফোনটা তোর মাকে, আজ নাহয় তার সাথেও আড্ডা হবে। অপর বন্ধু বলে, আন্টি কিন্তু আজকে বেশি জ্বালাচ্ছে !! রাহিন কোনো কথার উত্তর দেয় নেয়া। একটু পর পর গেয়ে উঠে, রাহিনের গলার স্বর দারুণ মিষ্টি। মাঝে মাঝে বন্ধুরা চুপ করে রাহিনের গান শুনে।
কেউ কখনো খুব একটা প্রশংসা করে না, বন্ধুরা জানে, রাহিন এসবের ধার ধারে না। বিন্দাস নিজের মর্জি মতো চলে। রাহিনের মনটা ভীষণ ভালো তাই বন্ধুরা তাকে ভীষণ ভালোবাসে। রাহিনও বন্ধুদের জান প্রাণ। ভেতরে ভেতরে দারুণ চঞ্চল সে, উপর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। তারা তিন বন্ধু মিলে দারুণ একটা স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নে বিভোর তিন বয়সের তিন বন্ধু মনে মনে চাঁদের কপালে টিপ্ পরিয়ে দিয়ে আসে। মাঝে মাঝে রাহিন বন্ধু আয়নার সাথে চুটিয়ে ঝগড়া করে। একটু পর সব ঠিকঠাক। দেখলে মনে হবে একই মায়ের দুই কন্যা।
ইন্দুর বর্তমান স্বামী কিন্তু রাহিনের নিজের বাবা নয়। বন্ধুরা ব্যাপারটা এখনো জানেনা। প্রয়োজন পড়েনি তাই রাহিনের বলা হয়ে উঠেনি। তার বর্তমান বাবা তার ভীষণ রকম প্রিয় মানুষ। তাদের সম্পর্ক অনেকটাই বন্ধুর মতো। তবুও আজ পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় রাহিনের খুব ইচ্ছে করছিলো, আজ যদি তার নিজের বাবা কাছে থাকতো, নিশ্চয়ই তার সাথে যেত। সারা রাস্তা বাবার সাথে গুটুর গুটুর গল্প করতো। বাবার ঘাড়ে মাথা রেখে আহ্লাদে গদ গদ হয়ে বলতো, বাবা তুমি আমার নীল আকাশের নীল ফানুস।
ঠিক পরীক্ষার আগের দিন অথবা পরীক্ষার দিন রাহিনের বুকের ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়। রাহিন কাউকে কিছু বলে না। মনের ইচ্ছে মনেই রেখে ইচ্ছে ঘুড়ি নীল আকাশে উড়িয়ে দেয়। খুব বেশি কষ্ট হলে, মায়ের কাছে গিয়ে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আজও তাই করেছে, ইন্দু বলেছে, কি হয়েছে, পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালো তো ? পড়াশুনার তো বালাই নেই।
ইন্দু মেয়ের সাথে তেমন করে আল্লাদ করেন না। তার স্বভাবে নেই। রাহিন যেন খুব ছোট বয়সে বুঝে গেছে ওকে তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে। হয়েছেও তাই। রাহিন বয়সের তুলনায় অনেক বুঝদার, তবুও কেন জানি রাহিনের ইচ্ছে করে, মা একটু আলগা আল্লাদ করুক। যদিও রাহিন নিজেকে গুটিয়ে রাখে, সুপ্ত বাসনা আপন মনে বাজতে থাকে। রাহিন আনমনে আলতো করে চোখের ভেজা পাতা মোছে আর মনে মনে বলে; ”আমার আছে সে জন, সাত তারার একটি ধন। যে কিনা অনেক অনেক দূরের তবু যেন কেমন আপন।”
ওয়াসিফের মুখের আদল মনে করে, রাহিন তখন মিষ্টি করে হাসে …
loading...
loading...
”আমার আছে সে জন, সাত তারার একটি ধন। যে কিনা অনেক অনেক দূরের তবু যেন কেমন আপন।” ___ ঠিক এই জায়গাটিতেই পুরো লিখাটির সার্থকতা বসে আছে।
loading...
ধন্যবাদ আজাদ ভাইয়া।
loading...
ইন্দু চরিত্রটি প্রথম দিকে বেশ আলোড়ন তোলায় মনে করেছিলাম তাকে ঘিরেই গল্পটি আবর্তিত হবে। শেষ হলো রাহিনকে দিয়ে। চলতি সমাজের প্রেক্ষাপটে উঠে আসা গল্পটি বেশ লাগলো আমার কাছে।
loading...
ধন্যবাদ কবি সুমন আহমেদ ভাই।
loading...
দারুণ একটি অণুগল্প পড়লাম কবিবোন সাজিয়া আফরিন। ভালোবাসা।
loading...
ধন্যবাদ কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী দাদা।
loading...
রাহিনের জন্য মনটা খারাপ হলো। চাইবে ও ভাল থাকুক। শুভেচ্ছা দিদি ভাই।
loading...
ধন্যবাদ কবি রিয়া রিয়া আপু।
loading...
গল্পের উপস্থাপন সুন্দর হয়েছে।
loading...
ধন্যবাদ কবি শাকিলা তুবা আপু।
loading...
আপা, পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন লেখালেখির কাজ হচ্ছে ছোটগল্প লেখা। আপনি যে একজন কথাশিল্পী তা আপনার লেখাতেই বুঝা যায়। অসাধারণ লিখেছেন আপা।
loading...
ধন্যবাদ এস এম হৃদয় রহমান ভাই।
loading...