খুব তাড়াহুড়া করে বাসায় ফেরে রাশিদুল। দরজায় খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জারা। দুহাতে বাবাকে জড়িয়ে বুকে মাথা গেঁথে দেয়। মা এসে জিজ্ঞেস করে এত দেরী করেছ কেন? মেয়ে দুহাতে বাবার বুকে থাপ্পড় দিতে থাকে। বাবার চশমা ধরে টানাটানি করে। মেয়েকে নিয়ে রাশিদুল ফ্যানের নিচে বসে। বাসের ভীড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গা ঘেমে নেয়ে একাকার। শুধু ঘামাঘামি হলে হত, তুমি দাঁড়িয়ে আছ শতেক ধাক্কা সহ্য কর। শতেক জন এসে পা মাড়িয়ে দিয়ে যাবে। কিছু বলাও যাবে না। কেউ কেউ বলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। মাঝে মাঝে হাতাহাতিও হয়। আসলে কারোই দোষ নাই। সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। কন্ডাক্টর এসে বারবার ভাড়া চেয়ে বিরক্ত করে। আর বসে থাকলে দেখা যাবে আরেকজনের পশ্চাদ্দেশ তোমার মুখের উপর কিংবা তার দুই রানের মাঝামাঝি পয়েন্টটা তোমার গায়ে এমনভাবে সেট করে রেখেছে তোমার বমি পাচ্ছে কিন্তু তোমার কিছু করার নাই। ঐ লোকটারও দোষ নাই। তার পিছনে এমন ঠাসাঠাসি অবস্থা তার নিজের জান ত্রাহি ত্রাহি করছে। সারাদিনের অফিসের শেষে এই সমস্ত ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি পার করে বাসায় এলে মেয়েটা যখন নাকের ফুটোয় দুই আঙুল ঢুকিয়ে দেয় কিংবা চুল ধরে টানা করে তখন রাশিদুলের আর কিছু মনে থাকে না। মেয়ের এখনো কথা ফোটেনি। বায়না ধরতে পারে না। রাগ করতে পারে না। অভিমান করে না। একটু উঁ আঁ আর নাচানাচিতেই রাশিদুলের মনে হয় কত সুখের জীবন। মেয়ের মা চা এনে দেয়। মেয়েকে সাবধানে ধরে চায়ে চুমুক দেয়। উড়ুৎ উড়ুৎ করে চা খায়। এই নিয়ে জারার মা কত হাসাহাসি করে, তবু এই অভ্যাস যায় না তার। কিন্তু আজকে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, রাশিদুলের খেয়াল থাকে না। উড়ুৎ উড়ুৎ করার দরকার পড়ে না। মেয়েকে বুকের মাঝে ঝড়িয়ে ধরে, আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। বউ রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ?’
না শরীর খারাপ না। শরীর তার খারাপ করে না। কিন্তু আজকে জারাকে দেখলেই তার –, তার কি—-? কি, সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিছু একটা করা দরকার? কি করবে? তার কি করার আছে। এই শহরে দেড় কোটি মানুষের ভীড়ে সে কি? খড়কুটা; একটা ধূলিকণা মাত্র। জারা এখন বাবার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। জারার হিসুতে ধূলিকণা ধুয়ে যায় না। জমাট বাঁধে। জারার হিসু পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। বউ এসে জারাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জারা রাশিদুলের মনের ভেতর বেড়ে উঠে বড় হয়ে যায়। জারার চারিদিকে কিলবিল করে ভাইরাস। দৈত্যের মত সে ভাইরাস শুঁড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে এগিয়ে আসে। অসহায় জারা আর্ত চিৎকার করে।বাবা! বাবা!! আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে চিৎকারে। মেয়ের চিৎকারে রাশিদুল কি করে? রাশিদুলের হাতে কোন ভ্যাকসিন নাই। রাশিদুল হাতড়ায়, খালি হাতড়ায়, ভ্যাকসিনের খোঁজে। ভ্যাকসিন পায় না। পায় মোবাইল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। মেসেজ দেয় সবাইকে যে আছে যেখানে। সবাইকে সে রিকোয়েস্ট করে,
“আগামি শুক্রবার (০৪/০৫/২০১৭) সকাল ৯ টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত আমি একজন নাগরিক ও একজন পিতা হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে চাই, হযরত আলি আর আয়শার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে, যারা হযরত আলি আর আয়শা হত্যার বিচার চান আশা করি আপনাদের ও সাথে পাব”।
শুক্রবার সকালে, কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না।
শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা। হাতে তার মত একা একটা প্ল্যাকার্ড, বিষণ্ণ ও বিপ্লবী।
loading...
loading...
কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না। জীবনের গল্প পড়লাম মি. আনু আনোয়ার।
loading...
যে দেশের নাগরিকদের এই অবস্থা, সেই দেশে আপনি বার বার মেয়েদেরকে ধর্ষিতা হতে দেখবেন এবং দেখবেন সেই দেশে বিচারহীনতাই হইল সংস্কৃতি। এবং সমস্ত অনাছিস্টি সেই দেশের সংস্কৃতিতে দিনকে দিন যোগ হতে থাকবে।
loading...
অণুগল্পটির প্রথম ভাগ থেকে শেষতক অনন্য হয়েছে বলবো আনু আনোয়ার ভাই।
loading...
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সুমন ভাই।
আপনার প্রশংসায় আনন্দ পেলাম। শব্দনীড়ে আমার লেখা মানুষজন পড়েন না। আপনার কয়েকজন গুণী পড়েন বলে আনন্দ পাই।
loading...
বরাবরই আপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ হই। এই লেখাটিও তার বাইরে নয়।
loading...
অনেক ধন্যবাদ আপু। শুভ নববর্ষ।
শব্দনীড়ে আমার লেখা খুব কম মানুষজন পড়েন। আপনারা কয়েকজন পড়েন বলেই লিখতে উৎসাহ পাই।
loading...
এটা ঠিক নয়। আপনি নিয়মিত হলে অনেকেই আপনার লেখা পড়বে। লিখুন।
loading...
একাকী এক রাশিদুল আমাদেরই লোক। শূন্য গন্তব্যের মানুষ। কোথাও কেউ নাই।
loading...
একাকী রাশিদুল আমাদের লোক। আর আমরা রাশিদুলের পাশে নাই।
loading...
loading...
সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। তারপরও জীবন যুদ্ধের ডামাডোলে পরাজিত সব সৈনিক অথবা একজন বিমর্ষকায় পিতা অসহায় প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকে সড়কের কোণে। সঙ্গীহীন। বিপ্লবে সামিল যোগের উৎসাহও নেই মানুষের। অদ্ভুত এই সমাজ।
loading...
আজকে বাংলাদেশে পিতারা বড় অসহায়।
loading...