মুম্বাইয়ে ঝুম বৃষ্টির এক বিকেলে

মুম্বাইয়ে আন্ধেরির একটি হোটেলে বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। বিকেলবেলা। ঝুম বৃষ্টি। থামবার আর নাম নেই। কী বিড়ম্বনা! দুই গ্লাস কোকোম জুস খাওয়া হলো। মুম্বাইয়ে যেয়ে এই একটি জিনিসের প্রেমে পড়েছিলাম বললে ভুল হবে না, কোকোম জুস। খেয়েছিও প্রাণভরে। ওই বিশেষ হোটেলটা তো আছেই। এছাড়াও স্টেশনের প্লাটফর্ম, বিভিন্ন ছোটো রেস্টুরেন্ট, ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকান যখন যেখানে পেয়েছি, প্রাণভরে পান করেছি। প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক দুই লিটার কোকোম জুস খেতাম। ওখানে খুব প্রচলিত এই জুস। সর্বত্র পাওয়া যায়। খেতে কেমন যেন ঝাল ঝাল, দারুণ ভালো লাগে। ওই হোটেলে বিশ রুপি ছিলো দাম। অল্প কদিনেই হোটেলটা আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল। আন্ধেরি রেল স্টেশনের পাশেই। খুব সম্ভবত বাড়ির উঠোনকে হোটেল বানানো হয়েছে। একেবারেই নিরিবিলি শান্ত ঘরোয়া পরিবেশ। অনেকটা ছোটো একটি খোলা মাঠের মতো। মুম্বাই থাকাকালীন খুব গিয়েছিলাম। প্রত্যেকদিন একবার হলেও যেতাম। জুস, কফি, পোহা, বড়া পাও ইত্যাদি খেতাম। সুন্দর কিছু সময় কেটেছে। আর সে সব আজ আনন্দদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে। থাকবেও জীবনভর।

যাই হোক প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো বৃষ্টি চললো একটানা। তারপর কিছুটা কমে এলে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। এ সময় আন্ধেরি স্টেশনে যাবার পথে কিছুক্ষণ হেঁটেছি মাত্র, আবার বৃষ্টি শুরু হলো। ঝুম বৃষ্টি। কী যে বিড়ম্বনা! কয়েকজন মানুষের সাথে পাশের একটি দোকানের ছাদের নিচে কোনও রকমে দাঁড়ালাম। কিছুকাল কেটে গেলো। বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। থামবার আর নাম নেই। বিরক্তি চরমে পৌছেছে। এ সময় পাশের একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোককে দেখলাম, কনুই দিয়ে আমার কোমরে গুতো দিল।
‘কী ব্যাপার?’ বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলাম। ‘ওরকম করলেন কেন?’
‘ওই যে দেখুন।’ জবাবে বললো সে।

তার ইশারার নির্দেশীত স্থানে দেখলাম, একজন মধ্যবয়স্ক লোক ডান্ডা বিহীন অদ্ভুত একটি ছাতা হাতে নিয়ে বেশ বেকায়দায় ছোটাছুটি করছে সড়কে। হয়তো সুনির্দিষ্ট কিছু খুঁজছিল। হা হা হা। সশব্দে হেসে উঠলাম দৃশ্যটা দেখে। লোকটার ছাতায় ছাতা ধরার লম্বা যে ডান্ডা থাকে, সেটা নেই। বৃষ্টিতে মেলে দেয়া ছাতার একেবারে গোড়ায়, সামান্য অবলম্বন কোনও রকমে কষ্টেসৃষ্টে ধরে আছে। ওতেই বেশ কাজ চলে যাচ্ছে। ছাতাটা দিব্যি কাজ করছে। বৃষ্টি পড়ছে না গা’য়ে। কিন্তু ছাতাটা সামলাতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। বাতাসের তোড়ে উড়ে যাবার মতো অবস্থা। ওরকম একটা নষ্ট ছাতা নিয়ে ভদ্রলোক রাস্তায় নেমেছে কেন, মাথায় এলো না কিছু। হতে পারে, চলার পথে হঠাৎ এভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বিপদে পড়েছিল বেচারা।

হা হা হা। আমাদের হাসির সাথে আরও কয়কেজন যোগ দিল উদ্ভূত মজাদার পরিস্থিতি দেখে। যে লোকটি আমাকে দৃশ্যটি দেখিয়েছিল, তার তো দেখলাম তর্জনী নাচিয়ে হাসতে হাসতে একেবারে সেখানে গড়াগড়ি খাবার মতো অবস্থা! সত্যি, দারুণ মজা পেয়েছিলাম দৃশ্যটা দেখে (ব্যাপারটা কিছুতেই মজাদার নয় যদিও)। আমি নিজেও নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি, সশব্দে হেসেছিলাম। কী করবো, মানুষ তো! চেয়ার থেকে কাউকে ‘ধপাস’ চিৎপটাং পড়তে দেখলে আমরা যেমন আনন্দ পাই, কিছুতেই না হেসে পারি না, মুখ টিপে হলেও হাসি। অনেকটাই সেখানে ওরকম পরিস্থিতি আমাদের সবার। সবাই যে যার মতো হাসছি।
সত্যি, দারুণ মজার একটি স্মৃতি। আজ মনে পড়লে নির্মল আনন্দে প্রাণ ভরে ওঠে। ভালো থাক মুম্বাইয়ের বৃষ্টিস্নাত সেই বিকেলের সেই হাসি খুশি সহজ সরল মানুষগুলো। মুম্বাইয়ে এরকম আরও বহু মধুর স্মৃতি আছে। অনেক ভালো সজ্জন মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, তাদের সান্নিধ্য পেয়েছি। আগামীতে সেগুলোও কখনও লিখবো এই আশা ব্যক্ত করছি।

(ছবি: সংগ্রহ)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১৩ টি মন্তব্য (লেখকের ৬টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ৩০-০৩-২০১৯ | ২১:৪৯ |

    হাহাহা। খুবই আনন্দ পেলাম আপনার ভ্রমণ কাহিনী পড়ে। চোখের সামনে যেন ভেসে উঠলো সব। দারুণ বর্ণনা। আরও কিছু থাকলে শেয়ার করবেন নিশ্চয়ই অর্ক ভাই। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:০৮ |

      জি ধন্যবাদ ভাই। আরও অনেক আছে। লিখবো আশা করি।

      GD Star Rating
      loading...
  2. রিয়া রিয়া : ৩০-০৩-২০১৯ | ২১:৫২ |

    মুম্বাইয়ের স্ট্রীট ফুড আমাদের কলকাতার চেয়ে অনেক ভাল। বৃষ্টিটাই বেশী যন্ত্রণার। শুভেচ্ছা অর্ক দা। 

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:০৯ |

      স্ট্রিট ফুড! আন্ধেরির একটি ছোটো রেস্টুরেন্ট।

      ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
    • রিয়া রিয়া : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:৩৭ |

      আমি পড়েছি। Smile কোকোম জুস, জুস, কফি, পোহা, বড়া পাও আইটেম গুলো মুম্বাই স্পেশাল। 

      GD Star Rating
      loading...
  3. শাকিলা তুবা : ৩০-০৩-২০১৯ | ২১:৫৮ |

    মুম্বাই ভ্রমণ পড়তে গিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছি ভাই।

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:১০ |

      ধন্যবাদ বোন। সঙ্গে থাকুন। আরও লিখবো।  

      GD Star Rating
      loading...
  4. সুমন আহমেদ : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:২৩ |

    দারুণ ভ্রমণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩১-০৩-২০১৯ | ১৩:৪৫ |

      ধন্যবাদ। 

      GD Star Rating
      loading...
  5. মুরুব্বী : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:৪০ |

    মুম্বাইয়ে আন্ধেরির হোটেল এবং বৃষ্টি !! ওয়াও মি. অর্ক। দারুণ স্মৃতি শেয়ার করেছেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩১-০৩-২০১৯ | ১৩:৪৬ |

      ধন্যবাদ। 

      GD Star Rating
      loading...
  6. রুকশানা হক : ৩০-০৩-২০১৯ | ২২:৫১ |

    মুম্বাই ভ্রমণের মজার স্মৃতিচারণ পড়লাম।  খুব ভালো লাগলো । 

    GD Star Rating
    loading...
    • অর্ক : ৩১-০৩-২০১৯ | ১৩:৪৬ |

      ধন্যবাদ। 

      GD Star Rating
      loading...