এক যে ছিল দেশ। সেই দেশ ছিল প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরপুর। সেই প্রাকৃতিক প্রাচুর্য সম বন্টনের জন্য দরকার ছিল অনেক গাড়ী। অনেক গাড়ী যেহেতু দরকার। সেই গাড়ী চালানোর জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক চালক। গাড়ীতো আর যে সে চালাতে পারবে না। তার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। গাড়ী চালকদের জন্য যত মানুষের প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য দরকার প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলেই তো আর চলবে না। তার জন্য দরকার মাস্টার প্রশিক্ষক। মাস্টার প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য যে প্রশিক্ষক হবে সেটা আবার এই দেশে পাওয়া যাবেনা। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে হবে সাত সমুদ্র তের নদীর ঐ পারে। তার জন্য দরকার অনেক টাকা পয়সা। টাকা কোন রকম জুটলেও প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য চাই সেই রকম গুণি লোক। যে সে লোককে তো আর প্রশিক্ষণের জন্য সেই দূরদেশে পাঠানো যায় না। যারা দূরদেশে যাবে তাদের আবার ইংরেজী জানা চাই। এই সব নানা বিষয় নিয়ে দেশের রাজা ছিলেন চিন্তিত।
সৃষ্টি হলো আর এক সমস্যার। যাকে তাকে তো আর ইংরেজী শেখানো যায় না। ইংরেজী শেখাতে হলে চাই
শিক্ষিত লোক। ইংরেজী শেখার মত শিক্ষিত লোক হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু ইংরেজী শেখাবো কে? কোথায় পাওয়া যাবে সেই রকম ব্যক্তি যিনি ইংরেজী শেখাতে পারবেন। সে হয়তো সারা দেশ খুঁজলে কিছু লোক পাওয়া যাবে। তাদেরকে দিয়ে ইংরেজী শেখানো যাবে। কিন্তু যেন তেনো ইংরেজী শিখলে তো আর হবে না। ভাল করে ইংরেজী শিখতে হবে, সেই দূরদেশের উচ্চারণ শিখতে হবে, বুঝতে হবে তাদের উচ্চারণ। তানা হলে ইংরেজী জানা ভদ্রলোকেরা যতটুকু শেখাবে যারা শিখতে যাবে তারা হয়তো ১০ ভাগের এক ভাগ শিখবে। শেখাতে গিয়ে যাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে তাদের হয়তো ১০ ভাগের আট ভাগ শেখাবে। এই ৮ ভাগ থেকে যে প্রশিক্ষকরা শিখবে তারা হয়তো চালকদের ৬ ভাগ শেখাবে। চালকরা মনে রাখতে পারবে ৫ ভাগ। ৫ ভাগ মেধা দিয়ে যতটুকু গাড়ী চালানো শেখাবে তাতে হয়তো এইটুকু শিখবে যে এ গাড়ী গরুতে টানে না, যন্ত্রে টানে।
যন্ত্রনা তো কম নয়। এই গাড়ী গরুতে টানেনা যন্ত্রে টানে তাতে তো তেমন কোন লাভ হবে না। গাড়ী যন্ত্রে চলে এই টুকু শিখতে লাগবে ৬+৩= নয় মাস। ততদিনে দেশেরর সব্য পণ্য পঁচে শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করা যায়।
উপরোক্ত ভাবনা সমূহ ভাবতে ভাবতে দেশের রাজা সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু বেশিক্ষণ খুম হলো না। রাজা সাহেব তো মহা চিন্তায়। এখন কি করবে? গাড়ী যদি না চলে দেশের এক অঞ্চলের মানুষ ধান পাবে সব্জি বা পোষাক পাবেনা। আর এক অঞ্চলের মানুষ সজ্বি পাবে ধান বা পোষাক পাবে না। এক অঞ্চলের মানুষ পোষাক পাবে ধান বা সব্জি পাবে না। শুধু ধান খেয়ে বা শুধু সব্জি খেয়ে বা শুধু পোষাক পরে তো দিন যাবেনা। আগে অন্য দেশের মানুষ এসে বিনিময় করে যেতো এখন তো তারা আর আসেনা। রাজা সাহেব এভাবে বেশ কিছু দিন চিন্তা করলেন। রাত্রে ভাল ঘুমাতে পারেন না। না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চোখের কোণায় কালি পড়ে গেলো। ও দিকে রাণী সাহেবাও রাজা সাহেবের উদ্বিগ্নতা নিয়ে বেশ চিন্তিত। রাজা সাহেবের এই কষ্ট রাণী ও মেনে নিতে পারছেনা। দেশের জনগণও মেনে নিতে পারছেনা।
রাজা সাহেবের এই কষ্ট দেখে রাণী সাহেবা হাওয়া বদলের জন্য নদীর ধারে বাগান বাড়ীতে বেড়াতে নিয়ে গেলো। রাজা সাহেব তো রাণী সাহেবকেও এখন সহ্য করতে পারেনা। দেশের মানুষের কথা ভেবে রাজা সাহেব পেরেষান। দেশের মানুষও তাদের প্রতি রাজা সাহেবের ভালবাসা দেখে তো অবাক। তারা সবাই মসজিদে মসজিদে, মন্দিরে মন্দিরে, গির্জায় গির্জায় প্রত্যেকে নিজস্ব ধর্মালয়ে প্রার্থনা করতে লাগলো। সেই প্রার্থনাতে বোধ হয় আল্লাহ/ভগবান/ঈশ্বর রাজা সাহেবের প্রতি কৃপা করলেন। অবশেষে রাজা সাহেব এক বালকের কাছ থেকে সমস্যার সমাধান পেয়ে গেলেন।
রাজা সাহেব মহা আনন্দে নাচা-নাচি করছে। তাই দেখে দেশের রাণী ও দেশের সকল মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত। রাজা সাহেব বলছেন।
রাজা : রাণী আমি পেয়েছি, পেয়েছি।
রাণী : কি পেয়েছেন?
রাজা :সমাধান পেয়েছি।
রাণী : কিসের সমাধান?
রাজা : এত দিন যে সমাধান আমি খুঁজেছি।।
রাণী : কিভাবে সমাধান পেলেন?
রাজা : বলব, বলব, শুধু তোমাকে একা নয় দেশের সকল মানুষের সামনে বলব। সকলকে একসাথে নিয়ে বলব।
রাজা সাহেবের চাওয়া বলে কথা। সকলেই রাজা সাহেব কি ভাবে সমাধান পেলেন তা জানার জন্য দেশের সব শ্রেণীর মানুষ, সব পেশার মানুষ, সব বয়সের মানুষ আজ সমাগত। আজ রাজা সাহেব তার সেই সমাধান কি ভাবে পাওয়া তার গল্প শোনাবেন। রাজা সাহেব সবার সামনে সমাধান খুঁজে পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে শুরু করলেন –
রাজা : রাণী তুমি জান আমি পরশু একা একা নদীর ধারে বসে ছিলাম। বসে থাকতে থাকতে দেখি বাজার থেকে কিছু মানুষ বাড়ী ফিরছে নদী পার হয়ে। দু’টো বালক ছেলে তাদেরকে কলা গাছের ভেলায় করে নদী পার করে দিচ্ছে। দু’জন বালক দু’টি ভেলায় পৃথক করে দু’জন করে মানুষ নদী পার করছে। একজন বালক একটি ভেলায় একজন মানুষকে বসিয়ে ভেলা ধরে সাতার কেটে নদীর অপর প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। নিতে নিতে কখনও কখনও ভেলা উল্টে যাচ্ছে, আবার ভেলা যদি উল্টে নাও যায় তবে সেই ভেলায় চড়ে ভেলার যাত্রীর পোশাক পরিচ্ছদ ভিজে যাচ্ছে।
রাণী : উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এতে সমাধান কোথায় পেলে? এটা তো সমস্যা।
রাজা :একটু ধৈর্য্য ধর রানী। সকল সমস্যার মধ্যেই তো সমাধান নিহিত থাকে। তাহলে শোন, এই ভাবে যখন ভেলায় একজন যেতে গিয়ে ভিজে যাচ্ছে, তখন ছেলে দু’টি করল কি! দুইটি কলা গাছের ভেলা একসাথে বেঁধে দিলে এবং তখন দুই জন করে যাত্রী পার হচ্ছে কিন্তু আগের মত ভিজে যাচ্ছে না বা ভেলা উল্টেও যাচ্ছে না। এই সাফল্যে উৎসাহ পেয়ে ছেলে দু’টি আরও কয়েকটি কলা গাছ কেটে এক সাথে বেঁধে নিয়ে বড় আকারের ভেলা তৈরী করল এবং তখন অনেকেই এক সাথে নিরাপদে নদী পার হতে পারছে, কাপড় ও ভিজছে না বা ভেলাও উল্টাচ্ছে না। মানুষের সাথে মালপত্রও নিরাপদে পার করে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ ভেলার মত সকলে মিলে আমরা যদি একসাথে চলতে পারি তাহলে আমাদেরও কোন সমস্যা হবে না। আমাদের জীবন চলার ভেলাটাও উল্টে যাবে না।
loading...
loading...
রাজা বুদ্ধি পেয়ে গেছেন। ভেলার কনসেপ্ট তাঁর কাছে পছন্দসই লেগেছে। একতাই শক্তি।
loading...
আমরাও আপনার সাথে একতা নিয়ে আছি, ধন্যবাদ ভাইয়া!
loading...
প্রতীকী লিখা পড়লাম আলমগীর ভাই। আপনি তো দারুণ স্যাটায়ার লিখেন !!
loading...
ধন্যবাদ দাদা, লিখি কেমন জানি না তবে স্যাটারার লিখতে একরকম বাধ্য হচ্ছি বলতে পারেন
loading...
উপস্থাপনের কৌশলে মুগ্ধ হলাম আলমগীর দা।
loading...
ধন্যবাদ রিয়া
loading...
বর্ণিত কাহিনীই আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা।
loading...
ধন্যবাদ ভাইয়া
loading...
অপরিচিত নয়। খুব পরিচিত এই চিত্র। পরামর্শটি দেশের কর্তা সজ্জনরা মাথায় নিলেই হয়।
loading...
হুমম মাথা থাকলে নিত আর কি
loading...
“সকলে মিলে আমরা যদি একসাথে চলতে পারি তাহলে আমাদেরও কোন সমস্যা হবে না। আমাদের জীবন চলার ভেলাটাও উল্টে যাবে না।”
দারুন কথা। এখন সবাই েটা মানলেই হয়।
loading...
ভাল থাকবেন ভাইয়া
loading...
মন রাজার মতো
যদি আমার রাজা হতো
তবে দেশ হতো উন্নত
শির হতো না কোথাও নত !!
loading...