হরধনু ভঙ্গ ৩

ঝিলমিলঃ গোটা থাকলে ওটা স্কুলের কি উপকারে লাগত?
অমায়িকঃ চুপ! আর কোন প্রশ্ন নয়, নো ফারদার সিলি কোশ্চেন—উত্তর চাই উত্তর। স্যার কি এখেনে ছেলেখেলা করতে এসেছে ? উত্তর না পেলে আমি সবাইকে জেলে পুরব, তাতে যদি উত্তর না পাই পুরে দেব হাজতে। মনে রাখবেন আমার নাম অমায়িক হলেও রেগে গেলে আমি রাক্ষস হয়ে যাই।
ঝিলমিলঃ আপনি আমাকে ধমকাবেন না। আমার সম্মানের ব্যাপারে আপনি রাক্ষসগিরি দেখাতে আসবেন না। আমি তাহলে মহিলা সুরক্ষা আইনে আপনার পেনসন চটকে দেব।
অমায়িকঃ তাই বল—তুমি চক্রান্ত করেই এটা করেছ। আমার বরাবর সন্দেহ হত তুমি যেন কি একটা ভাঙ্গবার চেষ্টা করছ। তবে সেটা যে ওইটা মানে—স্যার, ওটা কি যেন বললেন?
পরিদর্শকঃ এই শেষবারের মত বলছি—হরধনু। বুঝেছেন?
অমায়িকঃ ঊনষাট বছর ছ’মাসে যদি না বুঝি তবে কবে আর বুঝব স্যার?
পরিদর্শকঃ তাহলে বলুন কে ভেঙ্গেছে হরধনু?
অমায়িকঃ আমার এই হিংস্র ষড়যন্ত্রকারী অ্যাসিস্টেন্ট ভেঙ্গেছে স্যার। আপনি চট করে রিপোর্টটা লিখুন আমি ঝট করে দস্তখৎ দিয়ে দিই।
ঝিলমিলঃ (উত্তেজিত) মাইন্ড ইয়োর ওয়ার্ড! আপনি আমাকে যা তা বলছেন আবার মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছেন। আমি কিন্তু এসব সহ্য করব না।
অমায়িকঃ আপনার যা বলার কোর্টে বলবেন। স্যার আমি ওর নামে কেস করতে চাই। আপনি কেসটা লিখে নিন।
পরিদর্শকঃ দ্যুৎ! আমি কেন কেস লিখব? আমি লিখি রিপোর্ট।
পরিদর্শকঃ তাহলে আপনার শেষ কথা হল আপনি জানেন না যে কে হরধনু ভেঙ্গেছে?
অমায়িকঃ জানব না কেন? ঐ ম্যাডাম—আরে উনি গেলেন কোথায়? এই যে এদিকে আসুন—এখন বই উলটে কি বিদ্যা জাহির করছেন? থানা থেকে পুলিশ আসছে তৈরী থাকুন।
ঝিলমিলঃ আপনি তৈরী থাকুন। আমি সময়মত রহস্য ফাঁস করে দেব।
পরিদর্শকঃ না, আর পারছি না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
বাবাঃ কি হয়েছে পরিষ্কার করে বলুন না।
অমায়িকঃ একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল ভেঙ্গে ফেলেছে ভাই।
পরিদর্শকঃ দলিল?
বাবাঃ দলিল কখনও ভাঙ্গে?
অমায়িকঃ সময় খারাপ হলে ঐসব হয়ে যায়।
ঝিলমিলঃ দেখছেন কি রকম অর্থহীন কথা বলে। আবার হয়েছে হেড মাস্টার।
রাজিবুলঃ হয়ত এরও কোন গভীর অর্থ আছে।
ফতিমাঃ বাবা আমি বাড়ী যাব।
বাবাঃ তাহলে আপনি স্বীকার করছেন তো আমার মেয়ে ঐ দলিল ভাঙ্গেনি?
পরিদর্শকঃ উঃ! এবার হয়ত আমিই পাগল হয়ে যাবো। ওরে ভাই, ওটা দলিল নয়।
রাজিবুলঃ উনিও আপনার আসল ভাই নয়।
অমায়িকঃ সব নকল বাবা, সবই নকল। এইরকম পরিপাটি মেয়ের মনে যে এতকূট বিষ আছে তা কে ভাবতে পারে? বলুন না ভাঙ্গার পরে দলিলটা কোথায় সটকালেন?
বাবাঃ মা ফতিমা, এসব কি হচ্ছে বলতো?
কতিমাঃ কি জানি বাবা কি হচ্ছে! আমার খালি বাড়ীর কথা মনে পড়ছে।
বাবাঃ চল মা তোকে বাড়ীতেই নিয়ে যাই (উভয়ের প্রস্থান)
অমায়িকঃ দেখলেন! কি অভদ্র! অনুমতি না নিয়েই চলে গেল। ওদের দেখে না স্যার আমারও বাড়ীর কথা, নলেন গুড়ের কথা মনে ভেসে উঠছে।
পরিদর্শকঃ বাড়ীর কথা?সে তো আমারও মনে পড়ছে। কি কুক্ষণে যে এখানে এলুম!
অমায়িকঃ পুলিশ কেন এখনও আসছে না? ম্যাডাম, একটু দেখুন না ওরা কখন আসবে?
ঝিলমিলঃ আপনার কি লজ্জাও নেই? কি করে বলেন যে আপনি একজন শিক্ষক?
অমায়িকঃ দলিলটা বার করো না। জোড়া লাগাবার চেষ্টা করি সবাই মিলে।
পরিদর্শকঃ আবার বলে দলিল! হরধনু কি করে দলিল হয়?
অমায়িকঃ হরধনু? সে আবার কি?
রাজিবুলঃ হয়ত রামধনুর কাছাকাছি কিছু।
পরিদর্শকঃ কি বললে, কি বললে? রামধনু না কি যেন বললে?
ঝিলমিলঃ রাজিবুল তুমি প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছো। হরধনু হল মহাদেবের দেওয়া একটা ধনুক। যা তিনি দিয়েছিলেন সীতাদেবীর পিতা জনক রাজাকে।
অমায়িকঃ সেকি! জনক রাজা! মহাদেব!
পরিদর্শকঃ আশ্চর্য!
ঝিলমিলঃ তা ভাঙ্গা সাধারণের পক্ষে সম্ভবই নয়। রামচন্দ্র তা ভেঙ্গে সবাইকে অবাক করে দেন।
অমায়িকঃ তাই বলো, রামচন্দ্র ভেঙ্গেছেন। ওর ভাঙ্গা তো ভাঙ্গা নয় তা গড়ার চেয়ে বড়।
রাজিবুলঃ তার মানে? ভাঙ্গা তো ভাঙ্গাই, তার মানে গড়া নয়।
অমায়িকঃ চুপ! একদম চুপ! তুই কালকের ফচকে ছোঁড়া, তুই কি বুঝবি? তুই ভাঙ্গলে বুঝতে পারতিস কত ধানে কত চাল। (ঘুরে) ম্যাডাম, আপনাকে স্যালুট, অভিবাদন—আপনি আমার চিরকালের গর্ব!
ঝিলমিলঃ আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।
পরিদর্শকঃ ওঃ! আপনি যে ব্যাপারটা জানতেন তা বুঝতে পারিনি।
ঝিলমিলঃ না। ভুলে গিয়েছিলাম। আগে প্রাইমারীতে ইতিহাসে ঐ গল্পটা ছিল। পরে আমার মনে পড়ল।
পরিদর্শকঃ শুনে আমারও প্রাণ জুড়িয়ে গেল। আমি ভেবেছিলুম আপনারা হয়ত উত্তরটা দিতে পারবেন না।
অমায়িকঃ কেন পারবে না? ও এম এ করেছে। আপনাকে বলিনি স্যার, ওর মত গুণী ভারতে কেন বাংলাদেশ বা পাকিস্থানেও আর একটি পাবেন না।
ঝিলমিলঃ সত্যি আপনি পালটি খেতে পারেন বটে!
পরিদর্শকঃ ঊনি আপনাকে কতই না ভুল বুঝেছিলেন।
অমায়িকঃ ভুল বুঝিনি স্যার। আমি ওর স্মৃতিকে উসকে দেবার জন্য –হেঃ হেঃ মানে ওকে দায়ী না করলে ও কি আর উত্তর খুঁজত?
পরিদর্শকঃ আমাকে বলতেই হবে যে এখানে একজন যোগ্য শিক্ষক আর বেশ কিছু ভাল ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
অমায়িকঃ আর প্রধান শিক্ষক? তার কথা বলবেন না? চলুন, চলো হে সবাই—আমার বাড়ীতে–নলেন গুড়ের পায়েস খেয়ে তারপর বিচার করবে।
পরিদর্শকঃ কি বিচার?
অমায়িকঃ আমি আর পায়েস এর মধ্যে কোনটা বেশী মিষ্টি। (সমবেত অট্টহাসি)
সমাপ্ত

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০২-০২-২০১৯ | ২৩:১৫ |

    শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী মিলিয়ে বেশ কিছু চরিত্রের উপস্থিতি ছিলো। শিক্ষার্থীদের উপস্থিত প্রশ্নোত্তর পর্ব বেশ জমে উঠলেও শেষার্ধের মূখ্য তিনটি চরিত্রের রূপায়ণ চমৎকার। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০২-০২-২০১৯ | ২৩:১৫ |

    বেশ মজার একটি উপস্থাপনা পড়লাম। আশা করবো নতুন কোন আইডিয়া পুনরায় আসবে। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য বাসু দেব দা। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০২-০২-২০১৯ | ২৩:২৫ |

    সত্য বলতে দারুণ মজা পেয়েছি ধারাবাহিকটি পড়ে। ভালোবাসা বাসু দেব দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...