পরিদর্শকঃ আপনি বোধহয় এই স্কুলের শিক্ষিকা অথবা কোন ছাত্রের—
ঝিলমিলঃ না, না কোন ছাত্রের নয় স্কুলের—
অমায়িকঃ অন্যতম শিক্ষিকা। বাংলায় বিএ, ভুগোলেও বিএ আবার কিসে যেন একটা এম এ। আমার এই একজন মাত্র হেল্পার স্যার, ভয়ে ভয়ে থাকি কখন ফুস করে চলে যায়।
পরিদর্শকঃ তা আপনার স্কুলে ছাত্র ছাত্রী কত?
অমায়িকঃ তা প্রায় ১২৫ হবে। সবাই ওদিকের ঘরগুলোতে বসে মুখস্থ করছে। আমি এই কয়েকজন উত্তম ছাত্র ছাত্রী নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।
পরিদর্শকঃ মাত্র দু-জন টীচার?
ঝিলমিলঃ ছ’মাস পরে হয়ে যাবে একজন।
অমায়িকঃ তখন আর তোমাকে কে পায়? তুমিই রাজা আবার তুমিইমন্ত্রী। রাজিবুল, একটু এদিকে এসো তো বাবা, ( রাজিবুল আসে) মানে স্যার আপনার আসার কথা শুনে আমার মেয়ে নলেন গুড়ের পায়েস করেছে ওটাই আনতে পাঠাচ্ছি।
পরিদর্শকঃ না, না তার কোন দরকার নেই, রাজিবুল তুমি বসো (রাজিবুল আবার বসে)
অমায়িকঃ হ্যাঁ, স্যার যা বলে তাই করো তবে জীবনে কখনও নখ দিয়ে দাঁত কাটবে না—মনে থাকবে?
ঝিলমিলঃ আপনি একটু খেয়াল করে কথা বার্তা বলুন।
অমায়িকঃ কেন? আ-আমি কি খেয়াল গায়ক যে খেয়াল করব? এটা গুরুচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এখানে খেয়াল, ঠুংরির দরকার কি? বাই দ্য বাই—স্যার, আপনার এখানে আসতে কোন কষ্ট হয়নি তো?
পরিদর্শকঃ না, সে এমন কিছু নয়। আচ্ছা অমায়িকবাবু, আমি কি আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারি?
অমায়িকঃ করুন না- করুন করুন। ম্যাডাম, সব ঠিক আছে তো?
ঝিলমিলঃ আছে আছে। (স্বগতঃ নিজের যে ঠিক নেই সেটা কে বলবে!)
পরিদর্শকঃ কি নাম তোমার?
ফতিমাঃ আমার নাম ফতিমা, আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমার দেশের নাম ভারত। রাজধানীর নাম দিল্লী। রাজ্যের নাম পশ্চিনবঙ্গ রাজধানীর নাম কলকাতা। জেলার নাম দঃ ২৪ পরগণা আর মহাকুমার নাম ডায়মন্ডহারবার।
পরিদর্শকঃ ওকে, ওকে—তোমার নাম?
উৎপলঃ আমার নাম উৎপল ঘরামী, বাবার নাম বলরাম ঘরামী, গ্রামের নাম চাঁদপুর,পাড়ার নাম চৈতন্যখোলা সাত নম্বর।
পরিদর্শকঃ কেন সাত নম্বর কেন?
উৎপলঃ না –মানে—সবাই সাত নম্বর বলে। ছ নম্বর টা চৈতন্য পোলের ওদিকটায়। পাঁচ নম্বরে এই ইস্কুল।
ঝিলমিলঃ ইস্কুল নয়—স্কুল বল।
অমায়িকঃ বলবে আস্তে আস্তে সব বলবে—এইতো সবে শুরু গো মা!
ঝিলমিলঃ কি? কি যে সব বলে!
পরিদর্শকঃ যাকগে যাকগে—তোমার নাম কি?
হামিদাঃ (দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে) আমার নাম হামিদা। আমিও ক্লাস ফোর।
পরিদর্শকঃ আচ্ছা হামিদা, এমন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম করতে পারো যার নামের শেষে দা আছে?
হামিদাঃ আমি কি যে কোন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে দাদা বলে সম্বোধন করতে পারি স্যার?
অমায়িকঃ করোনা যতদূর পারবে চেষ্টা করো।
হামিদাঃ নেতাজী দা, ক্ষুদিরাম দা, —
পরিদর্শকঃ থাক, থাক, আর বলতে হবে না। মাষ্টারমশায়, আপনি কি বলতে পারবেন?
অমায়িকঃ আমি যা বলার পরে প্রাইভেটে বলব। এখন যা বলার আমার অ্যাসিস্টেন্ট বলবে।
ঝিলমিলঃ মাস্টার-দা। এ আর এমন কি শক্ত?
পরিদর্শকঃ হামিদা, ব-দ্বীপ কাকে বলে?
হামিদাঃ প্রদীপের মত কিছু একটাকে হয়ত বলে?
পরিদর্শকঃ না, মোটেই তা নয়—ব-দ্বীপ জ্বলে না।
রাজিবুলঃ তাহলে স্যার হয় সলতে নিভে গেছে নতুবা ওতে তেল নেই।
ঝিলমিলঃ এই চুপ! তোমাকে প্রশ্ন করা হয় নি।
রাজিবুলঃ আমাকে কি প্রশ্ন করা হবে না স্যার?
পরিদর্শকঃ (একমনে কাগজ দেখে—হ্যাঁ হবে, করা হবে) ইয়ে বলত প্রশ্ন কবিতা কার লেখা?
রাজিবুলঃ তালগাছ কবিতার কবির লেখা।
অমায়িকঃ হঠাৎ তালগাছ কেমন করে এল?
পরিদর্শকঃ ছেলেটি বুদ্ধিমান, কিন্তু হঠকারী। এবার আমি আসল প্রশ্নটি করব।
অমায়িকঃ তাই বলুন, এবার আসল—এতক্ষন যা হল সবই ওপরওয়ালার ছল।
পরিদর্শকঃ হরধনু কে ভেঙ্গেছে? (উত্তেজিত) বলুন কে ভেঙ্গেছে হরধনু?
অমায়িকঃ (অতি বিস্ময়ে ও আতংকে) অ্যাঁ? ভেঙ্গে দিয়েছে? বল বল কে এই সর্বনাশ করলি? (রাজিবুলের দিকে চেয়ে) তুই, তুই ভেঙ্গেছিস, তুই হচ্ছিস হঠকারী।
মনে রাখিস কথাটা আমি বলিনি স্যার বলেছে। আর ওপরওয়ালা যখন বলেছে তখন তুই হঠকারী না হলেও হঠকারী। বল বাবা, কেন তুই এই শেষ বয়েসে আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে দিলি?
ঝিলমিলঃ আপনি এত ভেঙ্গে পড়বেন না স্যর? লোকে কি ভাববে?
পরিদর্শকঃ দেখুন, আমাকে ফিরতে হবে। আমার সময় নষ্ট করবেন না। তাড়াতাড়ি জানান কে ভেঙ্গেছে?
রাজিবুলঃ আমি ভাঙ্গিনি স্যার। তবে কেউ না কেউ ভেঙ্গেছে নতুবা ওটা গোটাই থাকত।
(ক্রমশঃ)
loading...
loading...
আমাদের দেশে এমন একটা টিভি বিজ্ঞাপন আছে। ভাল লেখেছে লেখা, অনেকটা নাটকের মতন।
loading...
বেশ লেখেছেন কবি দা
loading...
ধন্যবাদ!
loading...
বেশ লিখেছেন দ্বিতীয় পর্বটিও। সতত গাম্ভীর্য ভরা লিখার ভীরে আনন্দ পেলাম।
loading...
দারুণ জমে উঠেছে বাসু দেব দা। নিয়মিত করবেন কিন্তু।
loading...
আজ শেষ পর্ব দিলাম।
loading...
আমার কাছে দারুণ লাগছে রম্য এই লিখাটি। অভিনন্দন দাদা।
loading...
ধন্যবাদ!
loading...