অণুগল্প : রুমা’র কষ্ট বা হাসি
রুমা হাতে বই নিয়ে বসে আছে। বসে আছে বলাটা বোধহয় ঠিক হলোনা। বালিশে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে আছে। খুব আগ্রহ নিয়ে বইটা খুঁজে বের করেছে। বইয়ের নাম “The Sins of the father”। লেখকের নাম “Jeffrey Archer”। নাম করা ফিকশন লেখক। তার একটা বই ২৭০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। এক টাকা করে লাভ হলে, একটা বই থেকে ভদ্রলোক ২৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। আমাদের দেশে লেখকদের অবস্থা অন্যরকম…
আফসোস এত ভালো ভালো লেখকদের লেখা বই অনলাইন বিভিন্ন পোর্টালে ফ্রি দেয়া আছে, তবুও আমরা বই পড়িনা। সময় কই? পরচর্চা, কান ভাঙ্গানি, লোক দেখানো আদিখ্যেতা করে কুল পাইনা, বই পড়বো কখন ? তার উপর আছে সংসারের নানান ঝামেলা, আজকে ছেলের ঠান্ডা লেগেছে, কাল মেয়ের বায়ু চড়া, পরশু স্বামীর মেজাজ টং।
রুমাও আমাদের মতো একজন নারী। সারাদিনের নানা কাজ কর্ম সেরে ক্লান্ত সে প্রায়। শখ করে বই নিয়ে বসেছে। কিন্তু এখন বই খুলতে ইচ্ছে করছেনা তার। সে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে অকুল ভাবনায় পরেছে। কেমন করে থাকে তারা মাকে ছেড়ে, ভাই বোন স্বজনদের ছেড়ে। তাদের কি একবারও প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য বুকের ভেতর হাউ মাউ করে কাঁদেনা ? একবার যে যায়, সে আর কোনোদিন ফেরে না।
সবার সকাল হয়, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি আসে। আহা! যে সন্তান চলে যায় সে মায়ের জীবনে ভেতরে ভেতরে কি আঁধার ঘিরে থাকে? কে জানে ? রুমার এসব ভেবে গলা ধরে আসে। মৃত্যু ভাবনা থেকে রুমা এক লাফে শফিকের সাথে তার ঝগড়া লাগার বিষয় নিয়ে – চিন্তায় কপাল কুঁচকে ফেলেছে। রুমার স্বামীর নাম শফিক চোধুরী।
আজকাল রুমার সংসারে মন নেই। মন তার কেমন উথাল পাথাল করে। রুমাকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নাই। আজ বিকেলে পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে অনেকক্ষণ হাসা হাসিও করেছে। কিন্তু কিছুতেই শফিকের উন্মাদনার কথা ভুলতে পারছে না। সেকি রাগ !! রুমার বাবা মা তুলে গাল দিতে ছাড়েনি। মানুষটার হলো কি ? মাথা টাথা কি সত্যি খারাপ হয়ে যাচ্ছে ? একবার ভেবেছে শফিককেই জিজ্ঞাসা করে দেখবে, শরীরে গরম বেশি লাগে কিনা ? একা একা কথা বলে কিনা, জামা কাপড় পরে থাকলে অসহ্য লাগে কিনা? শেষ পর্যন্ত অবশ্য কিছুই বলেনি।
রুমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো। রান্না ঘরের কুট কাট আওয়াজ থেকে। রুমা বই বিছানায় রেখে পাকের ঘরে গিয়ে দেখে, শফিক রান্না বসাচ্ছে। রুমা দেখে একগাল হেসে বললো, “দাঁড়াও এখন কিন্তু ঘুমাবে না ভুনা ঝাল চিকেন কারি বানাচ্ছি, খেয়ে তারপর ঘুমাতে যাবে। ভরা পেটে ঘুমোতে গেলে দেখবে, বিছনায় যেতে না যেতেই তুমি নাক ডাকছো”।
রুমা কি বলবে না বুঝে বললো, ‘খিদায় মারা যাচ্ছি .ভাগ্গিশ তোমার রান্নার শখ হয়েছে। দাঁড়াও আমি সালাদ বানিয়ে দিচ্ছি। আজ কে আমি ‘নো টু ডায়েট’। পেট ভরে খাবো। শফিক শিশুদের মতো হাসছে। রুমার চোখে কোথ্থেকে – কি যে পরলো। রুমা তরি ঘড়ি করে বাথরুমের দিকে গেলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখলো। ওপাশের রুমাকে বড্ডো অচেনা লাগছে …
ওপাশের রুমা, আয়নার সামনে দাঁড়ানো রুমাকে বললো, ‘shame on ইউ’।
রুমার চোখ গড়িয়ে, অশ্রুরা আজ যেন থামছেই না।
রুমা ফিশফিশিয়ে বললো, কি বিপদ !! কষ্টেরা এত নিষ্ঠুর কেন ? একা থাকতেই দেবেনা !!
চোখ মুছে সে প্রতিদিনের রুমা হয়ে একবার আয়নায় নিজেকে দেখলো। ওপাশের রুমা হাসছে। এখন আয়নার সামনের দাঁড়ানো রুমাও হাসছে। হাসি বোধহয় উদার বন্ধু, বাহু খুলে অপেক্ষায় থাকে। এখন অকারণে আমিও হাহা করে হাসছি।
loading...
loading...
স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি … সাধারণের বাইরের একটি উপস্থাপনা। দারুণ হয়েছে মনে করি। অভিনন্দন সাজিয়া আফরিন। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ আজাদ ভাই।
loading...
আপনার লেখনী শক্তি আমাকে মুগ্ধ করলো বোন। আরও লেখা চাই।
loading...
ধন্যবাদ কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী।
পাবেন হয়তো।
loading...
লেখাটি আমার কছে ভীষণ জীবন ছোঁয়া লেগেছে। এমন অনুভব আমার জীবনেও খুব একটা অপরিচিত নয়। সহস্র শুভেচ্ছা দিদি ভাই। ভাল থাকুন।
loading...
আপনাকে ধন্যবাদ রিয়া রিয়া।
loading...