২৫ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে ““খাগড়াছড়ির পথে…”” রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়িতে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট নিয়ে আমাদের “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শুরু” হয় “আলুটিলা গুহা” দিয়ে। আলুটিলা গুহা দেখে আমরা চলে যাই “রিছাং ঝর্ণা“ দেখতে। ঝর্ণা দেখা শেষে আমরা যাই প্রাচীন শতবর্ষী বটবৃক্ষ দেখতে। সেদিনের মত শেষ স্পট ছিল আমাদের “ঝুলন্ত সেতু“ দেখা। রাতের খাবার পাহিড়ি সিস্টেম রেস্টুরেন্টে সেরে ঘুম দেই রাতের মত।
পরদিন ২৭ তারিখে যাবো খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি। দুই ভাবে যাওয়া যাবে, এক খাগড়াছড়ি থেকে বাসে যাওয়া যাবে রাঙ্গামাটি, দুই চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে। আর একটি পথ আছে দীঘিনালা হয়ে লঞ্চে করে যাওয়ার যাবে কাপ্তাই ভ্রমণ করতে করতে। এই পথটাই আমার বেশি পছন্দের। সিদ্ধান্ত হল শেষের পথটাই ধরার চেষ্টা করা হবে, সেটা যদি না হয় তাহলে দ্বিতীয় পথ চান্দের গাড়ি নেয়া। বাসের পথটা সর্বসম্মতক্রমে বাদ দেয়া হল।
২৭ তারিখ সকাল, আস্তে ধীরে একে-একে সবাই উঠছে ঘুম থেকে। কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে যাব হোটেল ছেড়ে। যাওয়ার ইচ্ছে ছিল “হাজাছড়া ঝর্ণাতে” শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি, কারণ গতকালের ড্রাইভার জানিয়েছে ঝর্ণাতে পানি নেই। “দেবতা পুকুরেও” যাওয়া হবে না, অনেকটা পাহাড়ি পথ হেঁটে উঠতে হবে, প্রথম দিনের ধকলের পর মেয়ে আর শিশুদের কথা বিবেচনা করে সেটাও বাদ দিয়ে দিলাম। আর জানতে পারলাম (হোটেলের ম্যানেজারের কাছ থেকে) দীঘীনালা থেকে লঞ্চে যাওয়ার ব্যবস্থাটা ঠিক হবে না। কারণ এই সময় নাকি কয়েক যায়গায় পানি এতো কম থাকে যে তখন নৌককেই টেনে নিয়ে যেতে হয়। তাই স্বপনকে পাঠিয়ে দিলাম চান্দের গাড়ির রাঙ্গামাটি পর্যন্ত ভাড়া কত নিবে সেটা জেনে আসতে, ও খবর নিয়ে এসেছে ৬০০০ টাকা চায় রিজার্ভ ভাড়া।
সকালের নাস্তা সেরে আমরা প্রথমে চেষ্টা করলাম শাপলা চত্তরের সামনে থেকে চান্দের গাড়ি ভাড়া করতে। ড্রাইভাররা একজোট হয়ে দাম হাকাতে লাগল তাই আমরা সেখান থেকে চলে গেলাম বাস ষ্টেশনে। সেখানেও ড্রাইভাররা সব একজোট হয়ে গেলো, ভাড়া হাঁকাতে লাগলো মনের মত। বাধ্য হয়ে আমরা বাস কাউন্টারে গেলাম, বাসের অবস্থা দেখে দমে গেলাম। তখনই পেছন থেকে একজন বললো –
“৪৫০০ টাকায় আমি নিয়ে যাব কিন্তু এইখান থেকে উঠাতে পারব না, আপনাদের হোটেলের সামনে থেকে উঠাব। কাউকে বলা যাবেনা আমি এই ভাড়ায় যাইতেছি।”
আমরা এক বাক্যে রাজি। ড্রাইভারের মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফিরতে শুরু করলাম হোটেলের দিকে। হোটেলের সামনে এসে দেখি চান্দের গাড়ি হাজির হয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ি গেট
আজ পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে অদভূত ডাস্টবিন যা খাগড়াছড়ির শহরে অনেকগুলি আছে।
যদিও দেখে মনে হয় না তবুও এটা নাকি রাষ্ট্রপতি জিয়ার মূর্তি
হোটেলের লেনদেন চুকিয়ে সবাই ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে উঠলাম চান্দের গাড়িতে। উপর নিচ মিলিয়ে জনা ২৫ লোক নিয়ে চলে এই চান্দের গাড়ি, সেখানা আমরা মাত্র কজন। গাড়ি চলতে শুরু করলো বিশাল ঝাঁকুনির সাথে। লোড বেশি হলে ঝাঁকুনি কিছুটা কম লাগতো হয়তো। আমার মাথা ৪-৫ বার গাড়ির ছাদের সাথে বাড়ি লেগে খুব ব্যথা পেয়ে ছিলাম।
চেঙ্গী নদী
অল্প কয়েক মিনিটে শহরের ভেতর থেকে বেরিয়ে চেঙ্গী নদী পেরিয়ে “চেঙ্গী এপার্টমেন্ট এলাকা”-তে অবস্থিত “অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার” এর সামনে এসে দাঁড়ায় আমাদের গাড়ি। বিহারে ভিতরে বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে, মূলত সেটাই দেখতে এসেছি আমরা। গেটের বাইরে জুতা রেখে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আমরা শুধু এই মূর্তিটার সামনেই গিয়েছি, মন্দিরের ভেতরে যাইনি, তাই ভেতরের কথা তেমন কিছুই জানি না। তবে মূর্তিটা সুন্দর, বিশাল মূর্তিটার গায়ে অসংখ্য ক্ষুদে বৌদ্ধ মূর্তি দিয়ে গায়ের জামা হিসেবে কারুকাজ করা হয়েছে।
শহরের কাছেই এই যায়গায় চলার পথে ঢুমেরে যেতে পারেন, খারাপ লাগবে না। এখানে কিছুক্ষণ ফটশেসানের পরে আবার রওনা হই, অনেক দূরের পথ যেতে হবে। এবারের গন্তব্য রাঙ্গামাটি।
ছবির মত সুন্দর পাহাড়ি পথে চলার শুরু হল আমাদের। চার পাশে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ি সৌন্দর্য। শীতের সময় বলে পাহার কিছুটা রুক্ষ, তারপরও দেখার আছে নয়ন জুড়ানো দৃশ্য।
পাহাড়ি একে-বেকে চলা পথ আর খাঁদ, বেইলি ব্রিজ আর বিপদজনক বাক।
বিজিতলা আর্মি ক্যাম্প, এখানে আপনাকে নামতে হবে না শুধু ড্রাইভার নেমে দেখা করে আসে।
এক সময় পৌছেযাই রাঙ্গামাটি। আমাদের টার্গেট রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজারে কোন একটা হোটেলে উঠার। প্রথমে একটা হোটেলের সামনে থামতেই সাথে এক ফেউ (দালাল) লেগে গেলো। ও আমার সাথে সাথে গেলো হোটেলের রিসিপশানে, হোটেলটি আধা আধি পছন্দ হল। নিচে নেমে আসতেই ফেউটা বলল সমনে ভালো হোটেল আছে ওর পরিচিত, আর ও হোটেলের দাদাল না। ওর একটা বোট আছে তাই আমাদের সাথে সাথে ঘুরতেছে বোট ভাড়ার জন্য, হোটেল থেকে কোন কমিশন ও নেয় না।
ওর দেখানো “হোটেল লেক সিটি”-তে গেলাম। এখনও কাজ কম্পিলিট হয়নি হোটেলের, কিন্তু এর ভিউটা অতি মনোরম। রুমের সামনে খোলা যায়গা, একটা দোলনা আছে, দুটি খরগোশ দৌড়ে বেড়াচ্ছে (বাচ্চারা মহা খুশি) । এখান থেকেই চোখের সামনে বিছানো কাক-চক্ষু জলের সুবিশাল জলরাশি “কাপ্তাই লেক”দেখা যায়। কাপ্তায়ের জল এসে ছুঁয়ে যায় হোটেলের নিচে বর্ষার সময়।
ফাস্ট ফ্লোরে পাওয়া গেলো তিনটি কাঁপল রুম, আর সেকেন্ড ফ্লোরে পাওয়া গেলো একটি টিপল বেডের রুম, কোন সিঙ্গেল রুম নেই। উপরের রুমটার ভাড়া অনেক বেশি কিন্তু অতি চমৎকার। বিশাল রুম, রুমের সাথে বারান্দা, আরা বারান্দাটা ঝুলে আছে লেকের উপরে। এই বারান্দায় বসে সারা রাত কাটিয়ে দেয়া যাবে। যদিও স্বপন একা তারপরেও ওকেই এই বড় রুমটা দেয়া হল, কারণ আধা রাত পর্যন্ত এই রুম আমরাই দখল করে রাখবো………….
loading...
loading...
অদ্ভুত এবং অসাধারণ এক অভিযাত্রা। আজকের পোস্টে ডিটেইল এসেছে।
loading...
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আগামী পর্বে দেখা হবে রাঙ্গামাটিতে।
loading...
খু্ই মজা করেছেন দেখছি। চমৎকার ছবি দা।
loading...
মজাতো কিছুটা থাকেই।
loading...
বিস্তারিত পড়লাম মরুভূমি ভাই। আর পোস্টের জন্য পাঁচ তারকা রেটিং।
loading...
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে বিস্তারিত পড়ার জন্য।
আগামী পর্বে দেখা হবে রাঙ্গামাটিতে।
loading...
প্রিয় দস্যু সর্দার,
আমাদের রাঙামাটি লেকের ফটো কোথায় ? আহা আমার ছোট বেলার কত স্মৃতি রাঙামাটির ! চিটাগাং থেকে আমরা কত যে গেছি ওখানে বেড়াতে। আহা রাঙামাটি লেকে আমাদের সেই নৌকা ভ্রমণ ! এসএসসিতে 'আমার জীবনের স্মরণীয় দিন' -রচনাটা লিখেছিলাম রাঙামাটি লেকের নৌকা ভ্রমণ নিয়ে ! আহাহা !! খাগড়াছড়ির অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারের এই বুদ্ধ মূর্তিটা কবে বানানো ? এটা মনে হলো বেশি পুরোনো নয়। আমি দেখিনি এটা। রাঙামাটিতে আছে এরকম বড়ো একটা বুদ্ধ মূর্তি চাকমা রাজার বাড়ির কাছেই কোথাও মনে হয় আমরা গিয়েছি সেটা দেখতে। সেটা অবশ্য ব্রোঞ্জের মূর্তি যতদূর মনে হয়।
হাহাহা জিয়াওমানকে (আমাদের বন্ধু তমালের অটিস্টিক ভাইটা জিয়াউর রহমানকে সেটা বলতো অনেক ভালোবাসা নিয়ে ) কিন্তু চিনতে পারলাম! খাগড়াছড়ি শহরের হলুদ ডাস্টবিনটা ভালো লেগেছে দেখে। মানুষ সহজেই ঠোঙা, কাগজ, পেপার কাপ বা পানির বোতল ফেলতে পারবে। একটা ছোট শহরে এই ধরণের ডাস্টবিন যে এখন আছে সেটা দেখে ভালো লাগলো। অনেক আগে আমাদের ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় আমি যখন খাগড়াছড়ি গিয়েছিলাম তখন সম্ভবত অচিন্ত্যনীয় ছিল এরকম একটা ডাস্টবিন ওখানে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সেটাই মনে হচ্ছে। সুন্দর। আগামী পোস্টটা রাঙামাটি লেকের ফটো চাই কিন্তু অনেকগুলো।
loading...
খন্দকার ইসলাম ভাই, ভ্রমণ বর্ননায় মাত্রতো রাঙ্গা মাটিতে পৌছলাম। এবার শুরু হবে রাঙ্গামাটি ভ্রমণ, তখনইনা আসবে ছবি রাঙ্গামাটির।
এই ভ্রমণ বর্ননা ২০১৪ সালের। এখন খাগড়াছড়ির অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারের এই বুদ্ধ মূর্তিটার উপরে ছাউনি দিয়ে অন্য রকম করে ফেলেছে।
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ শুরু হবে আগামী পর্বে, তখন অনেক ছবি আসবে। সাথেই থাকুন।
loading...