সাজেদুল বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলো। একদিন বাগানের ম্যানেজার জিজ্ঞাস করল; তুমি কোন শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছ। স্যার, ৬ষ্ঠ শ্রেণী, পড়া শোনার ব্যাপারে মা’র সাথে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। ম্যানেজার, দূরত্ব তাকে অফিসে কাজ দেয়ার কথা মনোস্থ করেন। কিন্তু উপর্যুক্ত শিক্ষার অভাবে তাও হলো না। এখন বাগানের কাজ তাকে ভাল লাগছে না। কিন্তু কী করবে ?। সঠিক খাওয়া নেয়ার অভাবে তার শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। একদিন জ্বরে ভীষন অসুস্থ হলো। কাকা বাবু গ্রামের ডাক্তারকে বলে জ্বরের ঔষধ এনে দিয়েছে। কিন্তু ঔষধ খেয়েও শরীরের অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না। সাজেদুলের শরীরে প্রচন্ড জ্বর, মাঝে মাঝে মা-মা বলে মৃদু স্বরে কাতরাচ্ছে। কাকা বাবু সপ্তাহ ধরে সাজেদুলকে নিয়ে মহাবিপদে। এ যেনো মরার উপর খরার ঘাঁ। কারণ কাজে না গেলে তারও চলার সমস্যা। কিন্তু সাজেদুলকে অসুস্থ রেখে কাজে যেতে পারছে না। আজ বাগানে গিয়ে ম্যানেজারকে সাজেদুলের অসুস্থতার কথা জানাল। ম্যানেজার সব শোনে রহিম মিয়াকে বলল; ছেলেটির বাড়ির ঠিকানা জান ? স্যার, তার মুখে শুনেছি। তাহলে ছেলেটিকে বাড়িতে পৌছে দাও। ম্যানেজার স্যারের কথা শোনে রহিম মিয়া নীরবে দাঁড়িয়ে থাকল। সাজেদুল কে বাড়িতে পৌছে দেবার খরচের টাকা তার পকেটে নাই। ম্যানেজারের জিজ্ঞাসা; রহিম মিয়া আর কী কিছু বলবে? স্যার কিছু টাকা লাগবে। ম্যানেজার কত? স্যার-দু’হাজার। ম্যানেজার সাহেব তাকে টাকা দিলেন। এখন সাজেদুলকে বাড়িতে পৌছে দেবার পালা। কিন্তু সাজেদুল খুব অসুস্থ; তাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে ভয় পাচ্ছে। রহিম মিয়া মেসে এসে সাজেদুলকে বলল চল তোমাকে বাড়িতে পৌছে দেই। কাকা বাবুর মুখে বাড়িতে ফেরার কথা শোনে সাজেদুল মুচকি হাসি দিল। সে কিছুক্ষণে মধ্যে শরীরে মোচর-টোচর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। রহিম মিয়া সাজেদুলকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা হলো। সন্ধ্যায় কমলাপুর স্টেশনে নেমে টেক্সিক্যাপে আদাবরে সাজেদুলের বাড়িতে গেল। টেক্সিক্যাপ ছেড়ে গেটে দাঁড়াল দারোয়ান গেট খুলে দিল। দ্বিতলা থেকে ছোট বোন সৌরভি উঁকি দিয়ে দেখল দু’জন লোক এসেছে। কলিং বেল চাপ দেয়া মাত্রই সৌরভি ঘরের গেট খুলে দিল। কয়েক বছর পরে হারানো ভাইকে ফিরে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কাঁদতে লাগলো; আর জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল মা ভাইয়া এসেছে। ছেলে সাজেদুলকে দেখে তার অসুস্থ মা বিছানা থেকে উঠে তাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খেতে লাগল। কিন্তু ভুইয়া সাহেব খুব অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে উপরে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে! সাজেদুল বাড়িতে ফিরেছে তাও বুঝতে পারছে না। ছেলে হারানোর শোকাতুর ভুঁইয়া সাহেব। এদিকে দোকানের কর্মচারীদের হাতে ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পরই সাজেদুলের মা’ রহিম মিয়াকে অভ্যর্থনা জানালো। সাজেদুল বলল; আমি এতদিন এই কাকার কাছেই ছিলাম। রহিম মিয়া সকালে বাসা থেকে চলে যাবেন। কিন্তু সাজেদুলের মা কোন ভাবেই তাকে যেতে দিবে না। হারানো ছেলেকে সংগে নিয়ে আসায় রহিম মিয়ার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সাজেদুলের বাড়িতে রহিম মিয়ার আতিথিয়তার যেনো কমতি নাই। কিন্তু তাকে বাগানে ফিরে যেতে হবে। সাজেদুলের বাড়িতে তার বাবা-মার অবস্থা দেখে রহিম মিয়ার পুরাতন স্মৃতি ফের মনে পড়ে গেলো। মনে মনে ভাবতে লাগল সাজেদুল তার মা-বাবাকে ফিরে পেলো। কিন্তু আমার মা-বাবা কি বেঁচে আছে? ইত্যাদি চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে সাজেদুল টেবিলে দুপুরের খাবার সাঁজিয়ে নিল। কাকা বাবু গোসল সারেন; দুপুরের খাবার খেতে হবে। রহিম মিয়া দুপুরের খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। আর দ্বিতল ভবনের ছাদ থেকে সাজেদুলের পরিবার একচিত্তে রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল; যতদূর চোখে রহিম মিয়া দেখা যায়।# সমাপ্ত
loading...
loading...
অভিমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
বড় গল্পটির প্রত্যেকটি পর্বই পড়লাম বাসেত ভাই। গল্প লিখার প্রয়াস নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার মনে হয় লিখন অথবা চেতনায় আরও পরিশ্রম নিয়ে আসতে হবে।
গুড লাক এ্যাণ্ড নেক্সট টাইম।
loading...
ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ; গল্পটি পড়ে সুপরামর্শ দেবার জন। সত্যিই পরিশ্রম দরকার। কিন্তু আমার জীবন-জীবিকার তাগিদে ৬ সদস্যের পরিবারের ব্যয়ভার এক হাতে সামাল দিতে প্রাইভেট চাকুরি নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকি। এরপরও আমার সাংবাদিকতা পেশা না হয়ে নেশায় পরিণত হয়েছে। মফস্বল সাংবাদিকতায় লাভ নাই শুধু শখের বসে নেশায় করি। ফলে বাড়তি কিছু চিন্তা করার সুযোগ পাই না। তবে আপনার পরামর্শ কাজে লাগাবার চেষ্টা ও প্রয়াস চালিয়ে যাব। ইনশাল্লাহ। আশা করি আমাকে পরামর্শ দিয়ে ভাল লেখক হবার সহযোগিতা করবেন। ভাল থাকবেন এই কামনা।
loading...
আপনার জন্যও শুভকামনা রাখি প্রিয় বাসেত ভাই।
loading...
পড়লাম বাসেতা ভাই-
কথা আর কাহিনীকে গল্পের রূপ দেয়ার জন্য আরও কিছু উপকরন
ব্যাকরন
কিছু শৈলী প্রয়োজন বোধ করছি।
ধন্যবাদ ।
শুভ কামনা
loading...
ধন্যবাদ, সুপরামর্শ দেবার জন্য। ভাল থাকবেন।
loading...