শিক্ষা, শিক্ষক ও একজন সোলাইমান স্যার

আভিধানিক অর্থে- শিক্ষা হচ্ছে, শেখা, অভ্যাস, অধ্যয়ন, জ্ঞানার্জন, চারিত্রোন্নতি। সু-অভ্যাস বা ক্রমাগত অনুশীলন শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। ল্যাটিন শব্দ Educo থেকে ইংরেজী Education শব্দের উৎপত্তি। Educo শব্দের মূলগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- E = Out; duco = to lead, to draw out বা পরিচালিত করা, বের করা, প্রতিভাত করা। Education এর তাৎপর্য হচ্ছে, মানব মনের সহজাত বৃত্তি বা সম্ভাবনাকে বিকশিত ও পরিচালিত করাই শিক্ষা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ইউরোপীয় E (ই) উপসর্গের একটা অর্থ অভাব আর এক অর্থ বর্হিগমতা; Educate শব্দের উৎপত্তিমূলক অর্থ বহির্ণয়ন। এই অর্থ-সূত্রেই তিনি বলেছেন, “আমাদের যে শক্তি আছে তাহারই চরম বিকাশ হইবে, আমরা যা যাহা হইতে পারি, তাহা সম্পূর্ণভাবে হইব- ইহাই শিক্ষার ফল।” মোটকথা, মানুষের অন্তর্নহিত গুণাবলীকে স্ফুরিত, নিগরিত ও নিয়ন্ত্রিত করে জীবনের নানা প্রয়োজেনে তাকে উক্ত গুণগুলো প্রয়োগ করার শক্তি ও নৈপুণ্য দান করাই শিক্ষা।

কোন কিছু গড়তে হলে, সৃষ্টি করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও বিবেকবান কারিগরের। যাদের অবদানে পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করেছে অনেক সৃষ্টি। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকই তো গড়বে মানুষ। মহানবী (সা.) নিজে দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক, সেনানায়ক ধরনের কোন অভিপ্রায় প্রকাশ করেন নি। তিনি বলেছেন “আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।”শিক্ষক হচ্ছেন জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগর। পার্সিডেন রেন বলেছেন- “শিক্ষক শুধু খবরের উৎস বা ভাণ্ডার নন, কিংবা প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার তথ্য সংগ্রহকারী নন, শিক্ষক শিক্ষার্থীর বন্ধু, পরিচালক ও যোগ্য উপদেষ্টা, শিক্ষার্থীর মনের বিকাশ সাধনের সহায়ক তথা তাদের চরিত্র গঠনের নিয়ামক।”শিক্ষক হচ্ছে সমাজের দর্পন বা আলো।শিক্ষা দানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারী দের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।যিনি ছাত্রদের ভেতরের শক্তিকে অনুধাবন করতে পারেন। সেই শক্তিকে এমনভাবে বিকশিত করার চেষ্টা করেন যা তার সমস্ত জড়তাকে ভেঙ্গে স্বপ্নযাত্রার সূচনা ঘটায়। যিনি পথে হাঁটতে শেখান, গন্তব্য দেখানো যার কর্ম নয়। তিনি সিদ্ধান্ত দেন না বরঞ্চ শেখান কত কত ভিন্ন উপায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। যিনি সীমাবদ্ধতাকে নয়, সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেন। বই নয় যিনি বাস্তবতাকে মুখোমুখি করবার সাহস দেখান।

কিন্তু সেই শিক্ষকই যখন ছাত্রের অবিভাবকের হাতে শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হন তখন আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করি এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি ? আবার এই ঘটনায় কিছু কিছু শিক্ষক সমর্থনও করেন।তারা আবার কোন শ্নেনীর শিক্ষক ? সোলায়মান স্যার তিনি টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত মীর্জা পুর উপজেলার বাসিন্দা।তিনি ১৯৮৭ সালের এক রৌদ্রাজ্জল ভোরে মালিকান্দা-মেঘুলা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি আমার গনিত শিক্ষক ছিলেন। আমি ১৯৯১ সালে এস.এস.সি পাশ করি। তারপর বহুবার স্যারের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না স্যার চিরকুমার। রাহিম কাকার পোষ্ট থেকে জানতে পারি।তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খুব ভালবাসেন বিধায় বিবাহ পর্যন্ত করেননি!তিনি চিরকুমার। এই বিদ্যালয়ে ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তার কোন নেতিবাচক দিক কেউ বলতে পাববেন না।তাপরও তিনি ছাত্রের পিতার হাতে শারিরীক লাঞ্চনার শিকার হন।শিক্ষক অপমানের প্রতিবাদে ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষকদের বিক্ষোভের মুখে নারিশা উনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন দড়ানী ক্ষমা চান। এই ভদ্রলোকের উদারতা দেখে শিখলাম ক্ষমাই হচ্ছে অন্যতম ভাল এবাদত যার মাধ্যমে মানুষ প্রতিহিংসা থেকে বহুদূরে থাকতে পারে।

চলবে …………

প্রাক্তন ছাত্র
মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল এন্ড কলেজ
ব্যাচ”১৯৯১

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৯-০৭-২০১৭ | ৭:১১ |

    ক্ষমাই হচ্ছে অন্যতম ভাল এবাদত যার মাধ্যমে মানুষ প্রতিহিংসা থেকে বহুদূরে থাকতে পারে। শিক্ষক সোলাইমান স্যার এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

    তবে কি এবং কেন তাকে অপদস্ত হতে হলো বিষয়টি নিশ্চয়ই আগামী পর্বে বিস্তারিত জানতে পারবো।

    GD Star Rating
    loading...
  2. আনিসুর রহমান : ১৯-০৭-২০১৭ | ১১:১৫ |

    ছাত্রের অবিভাবকের হাতে এমন কি নিজের সরাসরি ছাত্রের হাতেও শিক্ষকের শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হওয়ার ঘটনা এদেশে নতুন না এবং সমসাময়িক সময়ে তা যে অনেক বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমরা সভ্যতার মাপকাঠিতে কি দিন দিন সভ্য হচ্ছি নাকি আরও বেশী অসভ্য হয়ে উঠছি ?
    শিক্ষক সোলাইমান স্যার এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি!

    GD Star Rating
    loading...