অনুগল্প: ব্যাখ্যাহীন

অপরিচিত : বাহ! আপনি তো বেশ আধুনিক!
আমি : আমাকে কেউ আধুনিক বল্লে আমি কিছুটা অপমান বোধ করি!
অপরিচিত : স্যরি,
আমি : Young Man, No Problem, Don’t Worry!
অপরিচিত : কিন্তু কেন?
আমি : কারণ আধুনিকতা একধরনের রিচুয়্যাল! যার মাধ্যমে পরিবর্তনকে গ্রহণ করা হয়। সেখানে বেশ আধুনিক মানুষ হিসাবে আমাকে থাকতে হয় সহিষ্ণূ; সেটা স্রোতে গাঁ ভাসানো দলের বড়জোর সামনের সারিতে থাকার মত কিছু একটা । তাই আমার কাছে ‘আপনি তো বেশ আধুনিক‘ শব্দটি আত্ম সম্মানহানীকর প্রশংসা মনে হয়।
অপরিচিত : কিন্তু ভাইয়া আত্ম সম্মানহানীর প্রতিশোধটাতো বেশ স্মার্টলি নিলেন।
আমি : আবার তো সমস্যায় ফেলে দিলেন!
অপরিচিত : Sorry ভাইয়া! মন্দ কিছু বল্লাম নাকি?
আমি : না, মন্দ কিছু বলেননি, তবে—
অপরিচিত : তবে..?
আমি : স্মার্ট শব্দটি যে কারণে আমার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেন তাতে মনে হলো আমি সব সময় শব্দের বর্ম নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে প্রয়োজন, প্রয়োগ করি। ‘আপনি তো বেশ স্মার্ট’ শব্দটি তাই কিছুটা শান্তিহানীকর প্রশংসা মনে হয়। বলে আমি হেসে উঠলাম।
আমার হাসি শুনে প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে অপরিচিত ভদ্রলোক কিছুটা জোরে হেসে উঠলেন।
আমি : হেসে উঠলেন যে?
অপরিচিত : কেন এতে আবার কিছু হানি ঘটল নাকি?
আমি : জ্বি,
অপরিচিত : কি হানি ঘটল?
আমি : দৃষ্টি হানী ঘটল!
অপরিচিত : হাসির সাথে দৃষ্টি হানীর কি সম্পর্ক? (বলে হাসতে লাগলেন)।
আমি : হাসতে গিয়ে আমার চশমটা পড়ে গেলো যে, বলে আমি হাসতে লাগলাম।
অপরিচিত : ভাইয়া আর কিছু করব না বা বলব না যাতে আপনার মূল্যবান কিছু হানী ঘটে।
আমি : না করায় ভাল কারণ আজকের আন্ডওয়্যারটা ভাল ব্রান্ডের না।
এইবার ভদ্রলোক সত্যিই জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলেন।
পরিশেষে : এতদিন মনে করতাম যন্ত্রের যন্ত্রনায় কাতর মানুষগুলো হাসতে জানে না; শুধুমাত্র প্রবঞ্চনা, ধাপ্পাবাজী এই সব করতে পারে। আমি বলছি ঢাকার অধিবাসীদের কথা, যদিও জানি না যে ঢাকার আদিবাসীগণ হাসতে পারেন কিনা। এইতো; যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ব্যয়, সারাক্ষণ কাজ আর কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে বিরামহীন হাসি ঠাট্টা চলছেই। সময় ভাল যাচ্ছে না মন্দ যাচ্ছে সেই বিবেচানাটুকু করারও কোন সুযোগ নেই।
তবে, রাজধানীর এই একমাস সময়ের আমার সবচেয়ে অবিচ্ছেধ্য অংশ হলো-আমার মেয়েকে মিস করা, আমার মেয়ে মানে যাকে ছাড়া আমি এই পৃথীবির অস্তিত্ত্বকে এক সেকেন্ডও কল্পনা করতে পারিনা তাকে ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। ওর সাথে ফোনে কথাও বলি না, না সেটা রাগে নয়, অভিমানে নয় বা সময়ের অভাবে নয়, কারণ ফোন দিলেই ও শুধু বলে- বাবা তুমি দর্শনা অফিসে অফিস করনা কেন, তুমি আমার সাথে ঘোরনা কেন? তুমি এখনই চলে আস। এই শব্দ গুলি শোনার পর আমার যা অনুভূতি হয় সেটা কোন ভাবেই ব্যাখ্যারযোগ্য নয়। ব্যাখ্যাহীন জীবনের, ব্যাখ্যাতীত হাজারো বিষয় নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে ব্যাখ্যাহীন ফল পাওয়া যাবে তাই No ব্যাখ্যা…সকলেই ভাল থাকবে!
সকলকে ধন্যবাদ

আলমগীর কবির
লালমাটিয়া, ঢাকা।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২২-০৬-২০১৭ | ১৯:৫৯ |

    আপনি অসম্ভব লিখেন। __ এই সত্যটি ….
    প্রথম পোস্টেই নিজের অবস্থান বা পোস্ট থেকে জানিয়ে দিয়েছেন।

    অভিনন্দন মি. আলমগীর কবির। শুভেচ্ছা ভালোবাসা আপনার এবং মামনি’র জন্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • আলমগীর কবির : ২২-০৬-২০১৭ | ২২:২৬ |

      আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...
  2. আনিসুর রহমান : ২৩-০৬-২০১৭ | ০:৩৭ |

    প্রথম পোষ্টেই আপনাকে প্রথম সারির চিন্তাবিদের কাতারে আবিস্কার করলাম । অভিনন্দন মি. আলমগীর কবির ।

    GD Star Rating
    loading...
    • আলমগীর কবির : ২৩-০৬-২০১৭ | ০:৫৯ |

      আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমি কিন্তু এই নীড়ে অনেক পুরোনো

      GD Star Rating
      loading...
      • আনিসুর রহমান : ২৩-০৬-২০১৭ | ১৩:৩৩ |

        বুঝতে পেরেছি । তবে আমি কিন্তু খুবই নতুন শব্দনীড়ে । আশা করি আমাকে পাশে পাশে রাখবেন।

        GD Star Rating
        loading...