পাশের ঘরে জরিফুল থাকে। অনেক রাত জেগে কাজ করে, ফেসবুকে আড্ডা দেয়, রাতে শোয়ার সময় সে কয়েকবার লক্ষ্য করেছে একই গান বাজছে, হতে পারে জয়ও অনেক রাত জাগে, বই পড়ে, লেখালেখি করে। এইতো প্রায় দু’মাস আগের কথা। জয় প্রথম জয়েন করলো।
কয়েকদিন পর একদিন জরিফুল জয়ের রুমে ঢুকে একটা বই হাতে নিলো, পাতা উল্টিয়ে লেখক পরিচিতি পড়ে কিছুটা আবেগ আল্পুত হয়ে পড়লো, আপনি বই লিখেন স্যার? আমি জানতাম আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন স্যার বই লিখেন, আপনি সেই স্যার! আমি খুব খুশি হয়েছি স্যার, আমি একজন স্যার পেলাম যিনি একজন লেখকও, বলে জরিফুল বইটা নিয়ে বললো, আমি এটা নিই স্যার, পড়ে আবার দিয়ে দিবো।
পরের দিন এক ভদ্রমহিলা জরিফুলকে ফোন করলো, হ্যালো আসসালামুয়ালায়কুম।
ওয়ালেকুম আসসালাম, কে বলছেন প্লিজ!, অপরিচিত মহিলার কণ্ঠস্বর শুনে জরিফুল কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লো।
জয় আপনাদের ওখানে জয়েন করেছে না?
স্যারের কথা বলছেন? হ্যাঁ, ও আপনি ম্যাডাম বলছেন? আসসালামুয়ালায়কুম ম্যাডাম, জরিফুল কথাগুলো না বুঝেই বলে ফেললো।
ওয়ালেকুম আসসালাম। আপনি কি রাতে রেস্ট হাউজেই থাকেন?
জি ম্যাডাম।
আপনার স্যারের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।
জি ম্যাডাম, অবশ্যই।
আর একটা কথা, বলে ভদ্রমহিলা যেনো থমকে গেলো।
জি ম্যাডাম বলুন।
আর আমি যে আপনার কাছ থেকে আপনার স্যারের খোঁজখবর নিই এটা যেনো কেউ না জানে, এমনকি আপনার স্যারও না।
কথাটা শুনে জরিফুল কেমন একটা হোঁচট খেলো, জি ম্যাডাম কাউকে বলবো না।
সেদিনের পর থেকে সেই ভদ্রমহিলা প্রতিদিন রাতে জয়ের খোঁজখবর নেয়, আপনার স্যার সকালে কোথায় নাস্তা খায়, দুপুরে কোথায়, রাতে কোথায়? কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়?
ক’দিন আগে জিজ্ঞেস করলো, আপনার স্যার আরেকটা মোবাইল ফোন কিনেছে নাকি? রাত জেগে মোবাইল ফোনে কথা বলে নাকি? ফেসবুকে আরো এ্যাকাউন্ট খুলেছে নাকি?
জরিফুল অবশ্য সত্যি কথাই বললো, না, স্যার তো কাজ আর কাজ নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকে। তবে ফেসবুকে বসে…
বসে মানে?
ঠিক রাত ন’টায়। অল্প কিছুক্ষণ, এই প্রায় আধ ঘণ্টা।
অ।
সেদিনের পর থেকে ভদ্রমহিলা আগের মতোই খোঁজখবর নিতো। গতকাল রাতেও খবর নিয়েছে, এটা যেনো জরিফুলেরও রুটিন ওয়ার্ক হয়ে গেছে। রাতে স্যারের খবর ম্যাডামকে না দেয়া পর্যন্ত জরিফুলের যেনো দিনটা অসম্পুর্ণই থেকে যায়। কিন্তু আজ প্রায় তিন চার দিন হলো সেই ভদ্রমহিলার কোনো খোঁজখবর নেই, স্যারের সঙ্গে ম্যাডামের ঝগড়া-বিবাদ হলো নাকি?
জয়ের রুমে সেই একই গান বেজেই চলেছে, আমারও পরাণও যাহা চায়।
জরিফুল একবার ঘড়ির দিকে তাকালো, সকাল সাড়ে আটটা বাজে এখনো স্যার ঘুম থেকে উঠলেন না। স্যার তো প্রতিদিন সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠেন, কিছুক্ষণ লেখালেখি করেন তারপর অফিসে এসে বসেন ঠিক সকাল ন’টায়। অথচ আজ সাড়ে আটটা বাজলো স্যার এখনো ঘুম থেকে উঠলেন না।
জরিফুল একবার জয়ের রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। রুমে সেই গানটা বেজেই চলেছে, জরিফুল মৃদু কণ্ঠে কয়েকবার ডাক দিলো, স্যার, স্যার
জয়ের কোনো সাড়া নেই।
জরিফুল জয়ের মোবাইল ফোনে রিং করলো কিন’ জয় ফোন রিসিভ করলো না।
জরিফুল পর পর কয়েকবার রিং করলো কিন্তু জয়ের কোনো সাড়া মিললো না।
ততক্ষণে সকাল ন’টা বেজে গেছে। অফিসের সবাই আসতে শুরু করেছে। জরিফুল প্রথমে খবরটা অফিসের বড় বাবুকে বললো। বড়বাবু বসকে জানালো।
বস আগে কয়েকবার ফোন করলেন, নিজে জয়ের নাম ধরে ডাকলেন কিন’ কোনোভাবেই জয়ের সাড়া মিললো না। অবেশেষে তিনি থানায় ফোন করলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে থানা থেকে পুলিশ এলো। পুলিশ অফিসার সবার উদ্দেশ্যে কিছুটা আদেশের সুরে বললেন, আপনারা কেউ অফিস ত্যাগ করবেন না। রুমের ভেতরেও আসবেন না। তারপর দরজা খোলার ব্যবস্থা করলেন।
পুলিশ অফিসার এবার জয়ের পালস পরীক্ষা করতে শুরু করলেন।
জরিফুলের হঠাৎ করে মনে হলো খবরটা একবার ম্যাডামকে দেয়া দরকার। সে তখনই ভদ্রমহিলাকে ফোন করলো।
চলবে…
আমার এই লেখাটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:আমারও পরাণও যাহা চায়-০১
loading...
loading...
চতুর্থাংশের অংশও পড়লাম প্রিয় জিল্লুর রহমান ভাই।
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ মুরুব্বী। আগামী পর্বে শেষ হবে জয়-ইরার আনন্দ-বেদনা নিয়ে লেখ ছোটগল্প আমারও পরাণও যাহা চায়। শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকবেন।
loading...